বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ তা’আলার অসীম রহমতের মধ্যে অন্যতম হচেছ মানবজাতির হিদায়েতের জন্যে আম্বিয়া (আ) প্রেরণ।সর্বশেষ মুহাম্মদ (স.)-এর মাধ্যমে মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে বিধায় নবী প্রেরণের প্রয়োজনীয়তাও আর নেই। পৃথিবীতে আল্লাহর রহমতের ধারা মহানবীর উম্মতের মাধ্যমে প্রবহমান থাকবে। সুতরাং ব্যাক্তি,সমাজ,রাষ্ঠ্র সকল ক্ষেত্রেইত্তেবায়ে মুহাম্মদ (স)-ই হচ্ছে মোকাম্মেল দ্বীনের বাস্তবরুপ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন-“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।”
আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য এবং মনোনীত জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে আল-ইসলাম। সকল নবীই ঈশ্বরিক ধর্ম ইসলাম এবং এক ইলাহ আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করেছেন। যুগের পরিবর্তনের সাথে এই ধর্মের বিভিন্ন হুকুম-আহকামের পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়েছে। সর্বশেষ নবী এবং রাসূল সাইয়্যেদুনা মুহাম্মদ (স.) এর মাধ্যমে ইসলাম সর্বাধুনিক, সুনিপুণ, পরিপূর্ণ এবং চূড়ান্ত অবস্থায় আত্নপ্রকাশ লাভ করেছে।
“হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল (স.) বলেন, আমার ও নবীগণের নীতিবর্গ রূপ কাহিনী হচ্ছে একটি প্রাসাদের মতো যা সুন্দরভাবে নির্মিত হয়েছে; কিন্তু নির্মাণের মধ্যে একটি ইটের স্থান ফাঁকা রাখা হয়েছে। প্রাসাদটির পর্যবেক্ষকগণ চারিদিকে ঘুরেফিরে নির্মাণশৈলী দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে; কিন্তু তারা ইটের এই ফাঁকা স্থানটি দেখেনি। অতঃপর প্রাসাদের ঐ ফাঁকা স্থানটি আমার দ্বারা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তেমনি আল্লাহর পয়গম্বরগণের মধ্যে আমাকে দিয়ে পয়গম্বরিত্ব সমাপ্ত করা হয়েছে।” আরেকটি বর্ণনায় তিনি বলেন, “আমিই হচ্ছি প্রাসাদের ইট এবং নবী (আ) গণের সমাপ্তিসূচক সিলমোহর।”
বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সঃ)-
দুনিয়াতে নবীদের প্রেরণের যে কারণ তা শেষ নবী মুহাম্মদ (স)-এর ক্ষেত্রে নেই। তিনি বিশ্ববাসীর জন্যে প্রেরিত। “আর আমি তো কেবল তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” (সূরা সাবা-২৮)তাঁর আগমনের মধ্যে দিয়ে মানব জাতির জন্যে অন্য নবীর প্রয়োজন বিলপ্ত করা হয়েছে। তিনি যে বার্তা নিয়ে এসেছেন তা আজো সংরক্ষিত। তাঁর বাণীসমূহ নিখুঁত ও সম্পূর্ণ এবং তাঁর শিক্ষা, সতর্কবাণী ও আদেশাবলি সর্বজনীনভাবে প্রযোজ্য। মানবসমাজের এমন কোনো দিক নেই যেখানে তাঁর নির্দেশাবলি প্রযুক্ত হয়নি। মানবীয় আচরণ ও কার্যাবলির উন্নয়নে তাঁর উপদেশ সর্বদা উজ্জল ভাস্কর। সুতরাং তিনিই অনন্তকালের অনুসরনীয় আদর্শ।
মুহাম্মদ (সঃ) মানবজাতির জন্য মডেল-
মানব জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে মুহাম্মদ (সঃ) অন্যতম মডেল। আল্লাহ বলেন - ”আসলে তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে ছিল একটি উত্তম আদশর্”। (সুরা আহযাব-২১)মুলতঃ যারা আহ্যাব যুদ্ধে সুবিধাবাদী ও পিঠ বাঁচানের নীতি অবলম্বন করেছিল তাদেরকে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যেই নবী করীম (সা) এখানে আদর্শ হিবেবে পেশ করা হয়েছে।তাদেরকে বলা হচ্ছে, তোমরা ছিলে ঈমান, ইসলাম ও রাসূলের আনুগত্যের দাবীদার। তোমাদের দেখা উচিত ছিল, তোমরা যে, রাসূলের অনুসারীদের অন্তরভুক্ত হয়েছো তিনি এ অবস্থায় কোন ধরনের নীতি অবলম্বন করেছিলেন৷ যদি কোন দলের নেতা নিজেদের নিরাপদ থাকার নীতি অবলম্বন করেন, নিজেই আরামপ্রিয় হন, নিজেই ব্যক্তিগত স্বার্থ সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেন, বিপদের সময় নিজেই পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি করতে থাকেন, তাহলে তার অনুসারীদের পক্ষ থেকে এ দুর্বলতাগুলোর প্রকাশ যুক্তিসংগত হতে পারে৷
কিন্তুরসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থা এই ছিল যে, অন্যদের কাছে তিনি যে কষ্ট স্বীকার করার জন্য দাবী জানান তার প্রত্যেকটি কষ্ট স্বীকার করার ব্যাপারে তিনি সবার সাথে শরীক ছিলেন, সবার চেয়ে বেশী করে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন৷ এমন কোন কষ্ট ছিল না যা অন্যরা বরদাশ্ত করেছিল কিন্তু তিনি করেননি৷ খন্দক খননকারীরে দলে তিনি নিজে শামিল ছিলেন৷ ক্ষুধা ও অন্যান্য কষ্ট সহ্য করার ক্ষেত্রে একজন সাধারণ মুসলমানের সাথে তিনি সমানভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন৷ অবরোধকালে তিনি সর্বক্ষণ যুদ্ধের ময়দানে হাজির ছিলেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও শত্রুদের সামনে থেকে সরে যাননি৷ বনী কুরাইযার বিশ্বাসঘাতকতার পরে সমস্ত মুসলমানদের সন্তান ও পরিবারবর্গ যে বিপদের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল তার সন্তান ও পরিবারবর্গও সেই একই বিপদের মুখে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল ৷ তিনি নিজের সন্তান ও পরিবারবর্গের হেফাজতের জন্যও এমন কোন বিশেষ ব্যবস্থা করেননি যা অন্য মুসলমানের জন্য করেননি৷ যে মহান উদ্দেশ্যে তিনি মুসলমানদের কাছ থেকে ত্যাগ ও কোরবানীর দাবী করেছিলেন সে উদ্দেশ্যে সবার আগে এবং সবার চেয়ে বেশি করে তিনি নিজে নিজের সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন৷ তাই যে কেউ তাঁর অনুসরনের দাবীদার ছিল তাকে এ আর্দশ দেখে তারই অনুসরণ করা উচিত ছিল৷এ দৃষ্টিতেই তাঁর রসূলের জীবন মুসলমানদের জন্য আর্দশ বরং শর্তহীন ও অবিমিশ্রভাবে তাকে আর্দশ গন্য করেছেন৷ কাজেই এ আয়াতের দাবী হচ্ছে, মুসলমানরা সকল বিষয়েই জীবনকে নিজেদের জন্য আর্দশ জীবন মনে করেবে এবং সেই নিজেদের চরিত্র ও জীবন গড়ে তুলবে৷
‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ মুহাম্মদ (সঃ)-
মহানবী (স)-এর নবুওয়াত ও রিসালাত ছিল সর্বজনীন, সকলের জন্যে পরিব্যাপ্ত।রাসূলুল্লাহ (স)-এর পরে আর কোনো নবী আসবে না।মহান আল্লাহ বলেন,“বল, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হিদায়েত লাভ করবে।”
“এ কুরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা করতে পারবে; বরং এটি যা তার সামনে রয়েছে, তার সত্যায়ন এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, যা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে।” (সূরা ইউনুস, ৩৭)
“আর আমি আপনার ওপর কিতাব নাযিল করেছি, শুধু এজন্যে যে, যে বিষয়ে তারা বিতর্ক করছে, তা তাদের জন্যে আপনি স্পষ্ট করে দিবেন এবং (এটি) হিদায়েত ও রহমত সেই কওমের জন্যে যারা ঈমান আনে।” (সূরা নাহল, ৬৪)
আল্লাহ বলেন,“মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নয়; তবে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সূরা আহযাব, ৪০)
আল্লামা যামখুশরী তাঁর তাফসীর গ্রন্থ ‘আল-কাশশাফ’-এ বলেন, ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’ এর অর্থ সকল নবী (আ) এর মধ্যে সর্বশেষ নবী। ইবনে হায়য়ান তাঁর ‘আল-বাহার আল মুহীত’ গ্রন্থে লিখেন, “এর অর্থ এই যে তাঁর পর আর কোনো নবী আসবেন না।” মুহিয়াস-সুন্নাহ হুসাইন ইবনে মাসউদ তাঁর তাফসির গ্রন্থ ‘মা’আলিম আল তানযীল’-এ লিখেন, ‘খাতাম’ অর্থ তাদের মধ্যে অর্থাৎ নবীদের মধ্যে শেষ।
এভাবে আল্লাহ তা’য়ালা মুহাম্মদ (স)-এর সাথে সাথে নবুওয়াতের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছেন। তারপর আর কোনো নবী আসবেন না। হাফিয মইনুদ্দিন ইবনে কাছীর বলেন, “এই আয়াত এই সত্যের সুস্পষ্ট প্রমাণ (‘নাম’) যে মুহাম্মদ (স)-এর পর আর কোনো নবী আসবেন না।” এ সম্পর্কে এক বিপুলসংখ্যক সাহাবি (রা) ও তাবেয়ীনদের মাধ্যমে বহু সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আল্লামা শাহাবুদ্দিন সাইয়াদ মাহমুদ তাঁর ‘রুহুল-মা’আনী’ গ্রন্থে লিখেছেন, “যারা মুহাম্মদ (স)-এর শেষ নবী হওয়া সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে তারা কাফের এবং ইসলামী রাষ্ট্রে তাদেরকে অবশ্যই হত্যা করা বাঞ্ছনীয় হবে।”
মহানবী (স) হচ্ছেন নবীদের সীলমোহর। কারণ তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে অহী বা আল্ল্হা তা’আলার আদেশ নির্দেশ নাযিল হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া তাঁর অনুসারীগণই নবী (আ) গণের সকল মহান দায়িত্ব চিরকাল পালন করে যেতে থাকবেন।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:-“তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। (সূরা, ৩:১১৩) আল্লাহ বলেন-“আর আমি তো তোমাদের সৃষ্টিকূলের জন্যে রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।” (২১:১০৭)
“রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্যে হিদায়েতস্বরূপ এবং হিদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।” (সূরা বাকারা, ১৮৫)
হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়াহ (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল (স.) বলেন, আল্লাহ কর্তৃক আমি যখন শেষ নবী হিসেবে লিপিবদ্ধকৃত তখন আদম (আ) ছিল মাটিতে মিশ্রিত। আমি তোমাদেরকে আমার প্রথম বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করছি: ইবরাহীম (আ)-এর আহবান, ঈসার (আ)-এর সুসংবাদ এবং আমাকে গর্ভে ধারণকালে আমার মায়ের দেখা সু-স্বপ্ন এবং তাঁর গর্ভ থেকে বহিঃগর্ভ আলো যা সিরিয়ার রাজপ্রসাদসমূহ আলোকিত করেছিল।
অতএব এটা যখন স্পষ্ট যে, মুহাম্মদ (স) হচ্ছেন সকল নবী ও রাসূলের মধ্যে শেষ নবী এবং তারপর আর কোনো নবী ও রাসূল পৃথিবীতে আসবেন না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বিশ্বাস সম্পর্কে এখানে একটি বিষয়ের স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন এবং তা হচ্ছে ঈসা (আ)-এর পৃথিবীতে অবতরণ। তিনি ও মহানবী (স)-এর অনুসারী হিসেবেই পৃথিবীতে অবতরণ করবেন।
অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থে মুহাম্মদ (স:)
পৃথিবীতে এমন কোন ধর্মগ্রন্থ নেই যেখানে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর কথা ভবিষ্যৎবানী করা হয়নি। হিন্দুধর্ম সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম বেদ। বেদ এবং অন্যান্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থে অসংখ্যবার হুজুর (সাঃ) এর কথা বলা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে তিনি হলেন মামা ঋষি বা শেষ ঋষি। তাঁর নাম বলা হয়েছে 'নরসংসা' (আহমেদ নামেও তাকে ডাকা হয়েছে)। এটি একটি সংস্কৃত শব্দ, নর হলো, মানুষ আর সংসা হলো, প্রশংসার যোগ্য। অর্থাৎ এমন একজন মানুষ যিনি প্রশংসার যোগ্য। এই নরসংসা কে ইংরেজী করলে হয়, A man who is praiseworthy. আর নরসংসা কে হুবহু আরবি করলে হয়, 'মুহাম্মদ' (সাঃ)। আরও বলা হয়েছে তাঁর পিতার নাম 'বিষ্নুইয়াস', এটিরও হুবহু আরবি করলে দাড়ায় 'আবদুল্লাহ' যা ছিলো হুজুর (সাঃ) এর পিতার নাম। তাঁর মাতার নাম বলা হয়েছে 'সুমতি', যার হুবহু আরবি করলে দারায় 'আমেনা', যা ছিলো হুজুরের মার নাম। হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্যবার হুজুর (সাঃ) এর কথা ভবিষ্যৎবানী করা হয়েছে।
বাইবেলেও অসংখ্যবার হুজুর (সাঃ) এর কথা বলা হয়েছে। ওল্ড টেষ্টামেন্টে বুক অফ ডুইট্রনমি অধ্যায় ১৮, ভার্সতে, আল্লাহ তায়ালা মূসা (আঃ)-কে বলছেন, "আমি তোমার ভ্রাতাদিগের মধ্য থেকে আরেকজন নবী আনবো যে হবে তোমারি মতন। আর সে নিজে কিছু বলবেনা, আমি যা তাকে বলতে বলবো সে শুধু তাই বলবে।" বুক অফ আইজাহা অধ্যায় ১৯ ভার্স নাম্বার ১২, তে বলা হয়েছে, "এবং কিতাবখানি নাযিল করা হবে তাঁর উপর যিনি নিরক্ষর। তাকে বলা হবে পড় তোমার প্রভুর নামে, সে বলবে আমি তো পড়তে জানিনা, আমি নিরক্ষর।"
বিশ্ব মানবতার মুক্তি দুত-
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) তাঁর বিদায় হজ্জের ভাষণে গোটা মুসলিম উম্মাহ এবং তামাম মানব জাতির উদ্দেশে দুটো মৌলিক আমানত রেখে গেছেন। এর একটি হচ্ছে পবিত্র আল কোরআন এবং অপরটি হচ্ছে সিরাতে রাসূল (স)। আল্লাহ তা’আলা খাতামুন নবীঈন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে (স) পরিপূর্ণ ও চূড়ান্ত হেদায়েত সহকারে মানব জাতির কাছে সিরাজাম মুনিরা করে পাঠিয়েছেন। প্রতিটি ঈমানদীপ্ত মুসলমানকে পবিত্র আল কুরআন এবং রাসূলের (স) পথ ও পাথেয় নিবিড়ভাবে অনুসরণ করার মধ্যেই ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তিএবং আল্লাহর রেজামন্দি নিহিত। তাঁর মহোত্তম চরিত্র মাধুর্যকে অনুসরণ করে জীবনকে আলোকিত না করলে আল্লাহর রহমত পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেনঃ “হে রাসূল, আমি আপনাকে বিশ্বজগতের অনুগ্রহ ব্যতীত প্রেরণ করিনি। অন্যত্র বলা হয়েছে, অবশ্যই আপনি উত্তম ও মহৎ চরিত্রের অধিকারী”।
কিতাবুল্লাহর অনুসরন-
হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে ঐশী দিকদর্শন পরিপূর্ণ নির্যাস মন্থিত হয়ে আল কুরআনে।মহানবী (স) তাঁর কর্মময় ও সংঘাতসংকুল সংগ্রামী জীবনের ২৩ বছরে ইসলামের পরিপূর্ণ রূপায়ন করে দেখিয়েছেন যে, ইসলাম নিছক কিতাববন্দী কিংবা আধ্যাতœবাদও নয়। সেই আলোকধারায় পথ চলাই মুসলমানদের জন্য একমাত্র করণীয়। এজন্যই একজন মুসলমান যিনি পবিত্র কালেমা উচ্চারণ করে তৌহিদ ও রিসালাতের সাথে জীবনকে গ্রন্থিত করেন, তার সার্বক্ষণিক এরাদাই থাকে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (স) আদর্শকে অনুসরণ করা। ইসলাম হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ এবং সকল সৃষ্টিজীব, এমনকি প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্যও বাস্তবায়নযোগ্য জীবন ব্যবনস্থা। আকিমুদ্দিন এর প্রতিষ্ঠা ছাড়া এর বাস্তব কল্যাণ ও সৌন্দর্য প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।
উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) রাসূলের (স) জীবন সম্পর্কিত এক ভাষ্যে বলেছেনঃ তোমরা কি কোরআন পড়নি, আল-কোরআনই হচ্ছে তাঁর জীবনচরিত। পবিত্র কোরআনে রাসূলের (স) জীবনকে সিরাজাম মুনীরা, বা উজ্জ্বল দীপ্তিময় আলোকপ্রভা এবং বিশ্ব মানবের মুক্তির দিশারী, সৃষ্টিকূলের জন্য রাহমাতুললিল আলামীন হিসাবে ঘোষণা করেছেন। পবিত্র ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কালাম আত্নস্ত করার আগেই কুরাইশ তাঁর অনুপম চরিত্র মাধুর্য, বিশ্বস্ততা, মানবতা, ও আমানতদারীর জন্য ‘আল আমিন’ অভিধায় ভূষিত হয়েছিলেন। নবুয়তী জিন্দেগীর আগেই যুবক মুহাম্মদ (স) পূণ্যবতী ধন্যাঢ্য নারী খাদিজাতুল কোবরার (রাঃ) ব্যবসা কাফেলার সুযোগ্য ও বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। নবুয়াত প্রাপ্তির পর মক্কার কুরাইশ কাফেররা নবীজিকে (স) হত্যার পরিকল্পনা করলেও তাঁর আল আমিন উপাধি বাতিল করতে পারেনি।
মুহাম্মদ (স:) দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু পবিত্র কোরআন আজও দেদীপ্যামান, উজ্জ্বল দীপ্তিতে ভাস্বর। হযরত জিবরাইল (আঃ) যেভাবে ভাষায় ও বর্ণনারীতিতে আল কোরআনকে রাসূলের (স) কাছে বহন করে এনেছিলেন সেই ভাবেই পবিত্র কোরআন গ্রন্থিত হয়ে অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান। লাখো কোটি মুসলমানের ঘরে ঘরে এবং হাফেজ এ কোরআনের ক্বলবের সুরক্ষিত দুর্গে বিরাজমান। আল্লাহর রাসূল (স) যে মুসলিম উম্মাহ তৈরী করে রেখে গেছেন এবং যাদের প্রতি আল্লাহর রজ্জু সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করে রাসূলের (স) আদর্শ অনুসরণ করার নির্দেশ রেখে গেছেন, মুসলমানরা সে নির্দেশ কতটুকু পালন করতে পারছে? এ প্রশ্ন আজ উঠছে। মুসলমানরা বহু আগেই বিশ্ব নেতৃত্বের অবস্থান থেকে সরে গেছে। কারণ তারা কুরআন ছেড়ে দিয়েছে। এখন মুসলমান পরিচয়টাই যেন মুসলমানদের জন্য দেশ বিদেশে বিপদ ও বিপর্যয়ের কারণ। আল্লাহ বলেন-”আমি এ কুরআন তোমার প্রতি এজন্য নাযিল করেনি যে, তুমি বিপদে পড়বে। (২০:২)
আজ একদিকে পশ্চিমের অমুসলিম বিশ্বে নও মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে মুসলিম দেশসমূহের শাসকবৃন্দ ইসলাম থেকে বিমুখ হয়ে মুশরেক নাসারাদের আদর্শ গ্রহণ করে আপোসের পথ ধরেছে। অ-শিক্ষা,অ-নৈক্য মুসলিম উম্মাহর বড় সমস্যা। এ অবস্থায় সত্যিকার ঈমানদার মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও মুসলমানদের বর্তমানের আজাব গজব থেকে বাঁচতে হলে রিসালাতী আদর্শের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ছাড়া সম্ভব নয়। এটাই সিরাতুন্নবী (স) এর শিক্ষা ।
আজকের দুনিয়ায় ইসলাম-ই হচ্ছে সবচেয়ে গতিশীল, মানবিক ও প্রাকৃতিক জীবন বিধান। ইসলাম সত্য ও মানবতার পক্ষে, বিশ্ব প্রকৃতির শৃঙ্খলার পক্ষে। ইসলাম একমাত্র শোষিত শ্রমিক, শৃঙ্খলিত দাস, ধর্মীয় অনাচার, শোষণে জর্জরিত মানবতা, অধিকারহারা নারী এবং সকল জাতির মজলুম মানুষের মুক্তির পয়গাম নিয়ে এসেছে। ইসলামকে বন্দুকের টার্গেট বানিয়ে দুনিয়া বাঁচবে না, শান্তিও আসবে না। দুনিয়াবাসীকে এ সত্য বোঝানোর দায়িত্ব উম্মতে মুসলিমাকে নিতে হবে।
কুরআনুল কারীম যে কেউ যদি একে কোন মানব রচিত কিতাব নয়।
বিরুদ্ধবাদীদের চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে যে, কেউ যদি একে কোন মানব রচিত কিতাব হয় বলে মনে করে, তবে কুরআনুল কারীমের সূরার অনুরূপ একটি সূরা অথবা একটি আয়াত রচনা করে আনুক। এ চ্যালেঞ্জ আজও বিদ্যমান। কিন্তু কারো পক্ষে তা গ্রহণ সম্ভবপর হয়নি হবেওনা। এ কিতাব তুলনাহীন, অফুরন্ত রহস্যের অধিকারী ও চিরন্তন। এ পবিত্র কিতাবের যত অধিক সংখ্যক তাফসীর গ্রন্থ লেখা হয়েছে অন্য কোন কিতাবের এতো তাফসীর লেখা হয়নি এবং হওয়ারও কথা নয়। এ কিতাব যত তিলাওয়াত করা হয় পৃথিবীতে, অন্য কোন কিতাব ততো তিলাওয়াত করা হয় না। এ পবিত্র কিতাবে মতো অন্য ধর্মগ্রন্থের হাফিজ নেই। পৃথিবীর লাখ লাখ মসজিদের মিনার থেকে যখন আযান-ধ্বনি উচ্চারিত হয় তখন আল্লাহর একত্ববাদের শাহাদাতের পর বিশ্বনবী (স.) এর রিসালাতেরও সাক্ষ্য প্রচার করা হয়। তাঁর নাম বহুল প্রচারিত ও বহুল প্রশংসিত। আল্লাহর আরশেও তাঁর পবিত্র নাম অংকিত রয়েছে। তিনি-ই সকল মানব গোষ্ঠীর নেতা।
সম্মানিতদের সেরা তিনি-
আল্লাহ তা’আলা কুরআন শরীফে তাঁর হাবীবকে অতি সম্মানের সঙ্গে সম্বোধন করেছেন। নবী-রাসূল মুয্যাম্মিল ও মুদ্দাচ্ছির ইত্যাদি উপাধি ব্যতীত কোথাও ‘ইয়া মুহাম্মদ’ তাঁর নাম নিয়ে আহবান করেননি তাঁর দুশমনদের দুর্ব্যবহার ও কটূক্তির উত্তর আল্লাহ্ পাক স্বয়ং দিয়েছেন, “তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাব’- ‘ধ্বংস হোক আবূ লাহাবের দুহাত। ‘ইন্না শানিয়াকা হুয়াল আবতার’- ‘নিশ্চয় তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো নির্বংশ’। ‘মা ওয়াদ্দা আকা রাব্বুকা ওয়ামা কালা’ তোমার প্রতিপালক তোমাকে ত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি’ ইত্যাদি আয়াতে এর প্রমাণ রয়েছে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ (স:)অতি অল্প সময়ে পৃথিবীতে যে বিপ্লব আদর্শ প্রতিষ্ঠা করলেন, সেখানে বর্ণ ও গোত্রের ভেদাভেদ নেই, নেই কোন স্বজনপ্রীতি, নেই দলের লোকদের কোন ছাড়। ইনসাফের বেলায়, নাগরিক অধিকারের বেলায় সবাই সমান। তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন একটি আল্লাহ-ভীরু সমাজ, আখেরাতে বিশ্বাসী আল্লাহ্-প্রেমিক জিহাদী দল; যাঁরা দ্বীনের ব্যাপারে কাউকে ভয় করেন না। সত্যের উপর যাঁরা অটল। ন্যায় বিচার, সাম্য, সদ্ব্যবহার, জনসেবা, আল্লাহর বন্দেগীতে সদা মশগুল; তাওহীদের উপর অটল, শিরক-বিদআত থেকে সম্পূর্ণ মুক্তমন। যারা নবী পাকের জিন্দেগীকে অনুসরছে করছে তাঁরাই পৃথিবীর মানুকে মানব জাতিকে আলোকবর্তিকারূপে কাজকরে-দেখিয়েছেন সত্যেও সেরা রাজপথ।আসুন মুহাম্মদ (স:) জীবনাদর্শ অনুসরন করে একটি কল্যাণকর,সুখী সমৃদ্ধশালী ও শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তুলি।
লেখকঃ সহকারী সম্পাদক, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন