ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

রবিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮

আল্লামা আহমদ শফীর মুখোশ উন্মোচন করে দিলেন মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্ক ঃ বাংলাদেশ বার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হুবহু বক্তব্য টি

বর্ষীয়ান আলেম হলেই ঈমানের চেয়ে বেশি প্রিয় হতে পারেন না।: মাওলানা নদভী হাফি: প্রসঙ্গ আল্লামা আহমদ শফী।

হেফাজতের মূল আন্দোলন, কওমী সনদের স্বীকৃতি ও আমি হেফাজতের কেউ না। --আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী 

প্রিয় পাঠক মহোদয়গণ: শিরোনামটি শুনে প্রথমে ভড়কে যাবেন না। মহান আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে এই লেখার প্রত্যেকটি অক্ষর লিপিবদ্ধ করছি। প্রথমে তার মোহতামিম পদে বহাল থাকার বিষয়টি উল্লেখ করছি। আজ থেকে ১৩ বৎসর পূর্বে ৪ দলীয় জোট সরকারের সময় যখন আমি ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় মহাসচিব তখন হাটহাজারী মাদ্রাসার হিসাব রক্ষক একটি ওপেন চেক লিখে হযরত মওলানা আহমদ শফীর নিকট আসেন। চেক লেখার নমুনা ছিল এই রকম ১,০০,০০০ । পাঠক ও দর্শক মহোদয়গণ খুব ভালোভাবে অনুধাবন করার চেষ্টা করুন যে, কোন প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপালের নিকট তার হিসাব রক্ষক এরকম একটি ওপেন চেক লিখে আনেন যার নিচে অক্ষরে কিছু লিখা নাই এবং দুই পাশ্বে অংক বর্ধিত করার অবকাশ না থাকার জন্য কোন রেখা নেই যাতে অংক বৃদ্ধি করার সুযোগ থেকে যায়। প্রিন্সিপাল মহোদয় এ অবৈধ ও বেআইনী ওপেন চেকের ওপর দস্তখত করার পর তার হিসাব রক্ষক একটি শূন্য বৃদ্ধি করে দুপাশে দুটি টান দিয়ে নিচে অক্ষরে লিখে দিলেন দশ লক্ষ টাকা মাত্র। এবং তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে দশ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে একলক্ষ টাকা মাদ্রাসায় জমা দিয়ে বাকী ৯ লক্ষ টাকা যোগসাজশ করে মেরে দেন। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সচেতন নাগরিক এই মর্মে অবশ্যই অবগত আছেন যে শরীয়ত ও প্রচলিত আইনের নজরে প্রিন্সিপাল ও হিসাব রক্ষক উভয়ই সমান অপরাধী। প্রিন্সিপালের অপরাধ তার অযোগ্যতা ও গাফিলতী অথবা হিসাব রক্ষককে তহবিল তছরুপের সুযোগ প্রদান। অপরদিকে হিসাব রক্ষকতো অপরাধী বটেই। 

এ অবস্থায় এ ঘটনায় যদি ফৌজদারী মামলা হয় তাহলে প্রিন্সিপাল ও হিসাব রক্ষক উভয়ই সমান সাজা ভোগ করবেন। কিন্তু মজলিশে শুরার প্রভাবশালী বিচক্ষণ সদস্যগণ প্রিন্সিপাল ও হিসাবরক্ষকের বিরূদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করে তাদেরকে জাতির সামনে চোর প্রমাণিত না করার জন্য মজলিশে শুরাভিত্তিক একটি পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তা হচ্ছে- একজন প্রিন্সিপাল যদি চেক লেখার নিয়ম সম্পর্কে এতই অজ্ঞ ও গাফেল থাকেন তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মত এতবড় জাতীয় দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপালের পদে বহাল রাখা কোন দিনই যুক্তিসংগত নয়। তাই তারা মজলিশের শুরার তারিখ নির্ধারণ করে হযরত মাওলানা আহমদ শফীকে প্রিন্সিপালের পদ থেকে অপসারণের প্রস্তুতি গ্রহন করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে হযরত মাওলানা আহমদ শফী আমি মুফতি মুহাম্মদ ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী মহাসচিব ইসলামী ঐক্যজোটের নিকট লালখান বাজার মাদ্রাসায় তশরীফ আনলেন। তিনি বিধ্বস্ত বদনে আমাকে বললেন, তুমি আমাকে রক্ষা কর কারণ তুমি জান যে আমি টাকা চুরি করি নাই। আমি একজন সম্মানিত উস্তাদ হিসেবে তাকে বিশ্বাস করে বললাম, হুজুর আপনি চিন্তা করবেন না। বিষয়টি আমি দেখব। তৎকালীন চলমান ৪ দলীয় জোট সরকারের ৪ মহাসচিবের এক মহাসচিবের কথা ডিসি-এসপি, পুলিশ-বিডিআর সমীহ করাটা ছিল স্বাভাবিক। তার ছেলে মওলানা আনাছ ও অন্যান্য শিক্ষকগণও লালখান বাজার মাদ্রাসায় এসে হযরত মাওলানা আহমদ শফীকে রক্ষা করার অনুরোধ জানালেন। 
জ্ঞাতব্য যে, প্রভাবশালী শুরা সদস্যগণের মধ্যে ছিলেন হযরত মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী (মুহতামিম বাবুনগর মাদ্রাসা), হযরত মাওলানা তৈয়ব (মুহতামিম জিরি মাদ্রাসা), হযরত মাওলানা দেলোয়ার (অন্যতম শুরা সদস্য, লাভলেইন তবলীগ মারকাজ), অন্যতম শিল্পপতি চট্টলার কিংবদন্তী দানবীর চাঁনমিঞা সওদাগর মরহুমের নাতি হযরত মাওলানা ওসমান ও হযরত মাওলানা হাফেজ কাসেম। 
আমি হযরত মাওলানা আহমদ শফী ও হাটহাজারী মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষকগণের সম্মানে হযরত মাওলানা আহমদ শফীর পদরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহন করলাম এইভাবে যে, আমার মেঝ ছেলে মওলানা মুসা বিন ইজহারের শাদী হচ্ছিল হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ) ছোট সাহেবজাদা হযরত মওলানা হাফেজ ক্বারী আতাউল্লাহর কন্যার সঙ্গে। আক্বদ হওয়ার পরিকল্পনা করেছি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। আমি আমার নোহা মাইক্রোতে করে হযরত মওলানা আহমদ শফীকে হাটহাজারী থেকে বায়তুল মোকররম মসজিদে এনে হযরত মওলানা উবায়দুল হক খতিব বায়তুল মোকাররম (রহঃ) কে অনুরোধ করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তার খুৎবা ইমামত ও আমার ছেলের আক্বদের ব্যবস্থা করি। পরে সন্ধ্যায় হযরত মওলানা উবায়দুল হক খতিব মরহুমের বাসায় বসে তাকে বুঝিয়ে বললাম- হযরত মওলানা আহমদ শফী একজন সরল মানুষ (তখন আমি সেরকম বিশ্বাস করতাম)। চেকের ঘাপলায় তিনি জড়িত নন। তার হিসাব রক্ষক জড়িত। অথচ মজলিশে শুরার প্রভাবশালী সদস্যগণ তাকে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে বের করতে চাচ্ছে, আপনি উক্ত শুরার একজন প্রভাবশালী সদস্য তাই আপনাকে উক্ত শুরার বৈঠকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। আমি আপনার জন্য বিমানের ব্যবস্থা, গাড়ীর ব্যবস্থা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার গেট পর্যন্ত বন্দর থানা, ডবলমুরিং থানা, পাঁচলাইশ থানা ও হাটহাজারী থানার পুলিশ বাহিনীর এসকর্ট দিয়ে আপনাকে নিরাপদে পৌঁছাব। খিলগাঁও মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মওলানা নুরুল ইসলামকে দায়িত্ব দিলাম তিনি যেন তার মাদানী নগরের বাসা থেকে এসে খতীব সাহেব হুজুরকে ঢাকা বিমান বন্দরে নিয়ে যান। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য রাত্রে মওলানা নুরুল ইসলামকে ফোন করলে তিনি আমাকে বললেন, রাত্রে টেলিফোনে আমার নিকট অনেক হুমকি এসেছে, আমি খতিব সাহেব হুজুরের বাসা ও বিমান বন্দর পর্যন্ত যেতে পারবনা। আমি উত্তরে বললাম কোনো বাপের ব্যাটার সাধ্য নাই আপনার গায়ে হাত তোলার এবং হযরত খতিব সাহেব হুজুরের সাথে বেয়াদবী করার। 
মজলিশে শুরার বৈঠকের দিন আমি নিজে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে সকাল ৯/১০ টায় হযরত খতিব সাহেব হুজুরকে রিসিভ করলাম। সাথে ছিলেন ফরিদাবাদ মাদ্রাসার বর্তমান মুহতামিম বেফাকের মহাসচিব, আমি অধমের ইফতা বিভাগের ছাত্র (প্রাইভেট) মওলানা আবদুল কুদ্দুসসহ অনেকে। আমরা পুলিশের বিশাল বহর নিয়ে হযরত খতিব সাহেব হুজুরকে নিরাপদে হাটহাজারী মাদ্রাসার গেটে পৌঁছাই। আগের দিন বিজিবি (তৎকালিন বিডিআর) দিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসার চতুর্পাশ্বে পাহারা বসাই। মজলিশে শুরার বৈঠক শুরু হলে হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউ.এন.ও) ও হাটহাজারী থানার ওসি কে আমি টেলিফোনে ডেকে হযরত মওলানা আহমদ শফীর কামরায় নিয়ে আসি।
শুরার বৈঠক শুরু হওয়ার প্রাক্কালে মাদ্রাসার সমস্ত গেইট বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র সদর গেইট খোলা রেখে সেখানে উপস্থিত থাকার জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মুহতামিম হযরত মাওলানা আবদুল ওয়াহাব (রহঃ) সুযোগ্য সাহেবজাদা সাহসী বীরপূরূষ হযরত মওলানা বেদার (রহঃ) ও সাহসী সাংবাদিক জনাব মিজান চৌধুরীসহ আরও অনেককে দায়িত্ব দেই। তারা মাদ্রাসার প্রধান ফটকে উপস্থিত থেকে হযরত মাওলানা আহমদ শফীর বিরোধী শুরা সদস্যগণসহ সকলকে একে একে বের করে দেন। মজলিশে শুরার সিদ্ধান্ত মতে হযরত মওলানা হাফেজ কাসেম সাহেবকে নোটিশ দিয়ে কয়েকমাসের জন্য বিরতি দেয়া হয় ও বিরোধী শুরা সদস্যগণকে বাদ দিয়ে নতুন মজলিশে শুরা গঠন করা হয়। 
প্রিয় পাঠক মহোদয়গণ এ লেখার প্রত্যেকটি অক্ষর মহান আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে লিখছি। একজন উস্তাদের সম্মানে রাজনৈতিক ক্ষমতার বদৌলতে তার জন্য এই যে এতবড় ঐতিহাসিক অবদান রাখলাম, হেফাজত আন্দোলনের মহাসংকটকালে এবং আন্তর্জাতিক ইসলাম বিদ্বেষী শত্রæ মহলের ষড়যন্ত্রে লালখান বাজার মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমাকে আমার বড় ছেলে মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরীসহ ৬-৭ জন অতি নিরীহ বৃদ্ধ শিক্ষকগণের বিরুদ্ধে ৫-৭ টি জঘন্য মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদিগকে গ্রেফতারের মহড়া চালায়। তখন হযরত মওলানা আহমদ শফী টু শব্দটিও করেন নি, গর্জে উঠা তো দূরের কথা মৃদু প্রতিবাদও করেন নি। মনে হয় তিনি তখন এ জগতেই ছিলেন না। এটাই কি ইহসানের বদলা? এটাই কি দ্বীন? এর নামই কি ঈমান? এটাই হযরত মাদানী (রহঃ) এর খেলাফত? এটাই মানবতা? ওই রাত্রে খুব ভয়ংকরভাবে আমার বড় ছেলে মুফতি হারুন তার শশুর বাড়ী হাটহাজারীর বিখ্যাত জান আলী চৌধুরীর বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন। আমি কক্সবাজার জেলার একজন অতি বিশ্বস্ত আলেমে দ্বীনের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করি। এর প্রায় এক বছর পর আমিও গ্রেফতার হই। আমার গ্রেফতারির ১৭ মাসে ও মুফতি হারুনের গ্রেফতারীর দুই থেকে আড়াই বছরে হযরত মওলানা আহমদ শফী কি আমাদের মত অসহায় মজলুমগণের কোন খোঁজ খবর নিয়েছিলেন? মুফতি হারুনের মোহতারমা আম্মা হযরত মুফতি ফয়জুল্লাহ (রহঃ) অতি আদরের প্রিয় বড় নাতনী। তিনি বহুবার হযরত মওলানা আহমদ শফীর নিকট কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করেছিলেন যে “হুজুর আমার বাপ নাই মা নাই, স্বামী, পুত্র ও নিরীহ শিক্ষকগণ জেলে আপনি দয়া করে আমাদের জন্য কিছু করুন”। কিন্তু এই নির্দয় ও অকৃতজ্ঞ মওলানা আহমদ শফী বরাবরই চুপ ছিলেন। কোনো কথা বলেন নি। এবং তার জন্য জান বাজি রেখে যে সাহসী আলেমে দ্বীন হযরত মওলানা বেদার মরহুম যে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছিলেন তরুণ বয়সে তার মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রী ও এতিম ছেলেদের প্রতি মওলানা আহমদ শফী কী কোনো প্রকার মায়া দয়ার আচরণ করে ছিলেন? তারপরও বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদে মওলানা বেদার মরহুমের বড় ছেলে মওলানা ত্বকী উদ্দিন আজিজ ২-৩ বার আমার পত্র নিয়ে তার নিকট গেলে তিনি ওইসব পত্রের আধা পয়সারও দাম দেননি। 
অতীব দুঃখের বিষয় যে, হেফাজত গঠন ও আন্দোলন পরিচালনা এবং ফান্ড সংগ্রহে হযরত মওলানা আহমদ শফীর অবদানের তুলনায় আমি ও মুফতি হারুনের অবদান কোনভাবে কম ছিল না। যা দেশবাসী জানে। এবং মুফতি হারুন হেফাজতের জন্য লাখ লাখ নবী প্রেমিক আল্লাহর বান্দাগণের দেওয়া চাঁদা হিসাবে নিজ হাতে মওলানা আহমদ শফী ও হেফাজতের দায়িত্বশীলদের নিকট দুই-তিন কিস্তিতে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ক্যাশ দিয়ে এসেছিলেন। হযরত মওলানা আহমদ শফী আমাদের ওই মহাবিপদের দিনে একটি টাকাও কি আমাদের দিয়েছিলেন? এক কেজি চাউল বা ১০০ টাকা দিয়ে আমার অসহায় স্ত্রী আর মুফতি হারুনের অসহায় বাল-বাচ্চাকে দেওয়ার জন্য কোনদিন কাউকে পাঠিয়েছিলেন। আমার ও আমার স্ত্রীর সাথে তার উস্তাদ শাগরিদ সম্পর্ক ছাড়াও দেশীয় ও মানবিক বহু বন্ধন আছে। আমার চরম বিপদে এগিয়ে আসার মত বিশাল ধন দৌলতও তার আছে। নেই শুধু দয়া মায়া ও কৃতজ্ঞতাবোধ। পরম উপকারীকে বেমালুম ভুলে যাওয়া আর অতীতকে এক মুহূর্তে অস্বীকার করার অবিশ্বাস্য গুণ তার আছে। আমাদের কলিজা ভাঙা এ আর্তনাদ সমগ্র জাতির নিকট এবং এ প্রশ্ন সমগ্র মুসলিম উম্মাহর নিকট। 
তিনি অনেক সময় কেউ টাকার হিসেব চাইলেই কোন সময় শেখ হাসিনার ভয় দেখান আর কোন সময় ডিজিএফআইয়ে ভয় দেখান। তখন আমি কারাগারে থাকা অবস্থায় কোর্টে আসলে সেখান থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের তদানীন্তন ডিজিএফআইএর জনৈক পরিচালকের নিকট একটি পত্র লিখে হযরত মওলানা আহমদ শফী থেকে শাপলার দুর্ঘটনার পর প্রাপ্ত হেফাজতের ফান্ডের অগণিত টাকা থেকে প্রয়োজন পরিমাণ নিয়ে আমাদের মামলার খরচ বাবদ আমার পরিবারের নিকট পৌঁছাতে বলি। তাতেও কোন লাভ হয় নি। তিনি এক পয়সাও দেননি। এমনকি তিনি কোনো শহীদ বা মারাত্মক আহত পরিবারেও মানুষকে টাকা দিতে নিরুৎসাহিত করেছেন। বলেছেন, এতে তাদের সওয়াব কমে যাবে। এক ব্যক্তি দুই লাখ টাকা তার কাছে নিয়ে গেলে তিনি জমা রাখতে চান, লোকটি সন্দেহ হলে সে নিজেই এক শহীদ পরিবারে ঘর তৈরি করে দেয়। পরে যখন হযরত মাওলানা আহমদ শফীর কাছে এ খবর জানাতে আসে, তখন তিনি বলেন, দিলে তো শাহাদতের ও ধৈর্যের সওয়াব নষ্ট করে। তখন সে লোক বাইরে এসে বলল, দেশে বিদেশের লক্ষ কোটি টাকা আহত নিহতদের না দিয়ে নিজে রেখে দেওয়া এত বড় সওয়াব জানলে প্রবাসীরা আর আমরা বোকার মতো কেন আপনার কাছে এত টাকা জমা করলাম। নিজেরাই টাকা রেখে দিয়ে সওয়াবের ভাগী হতাম। ফলে আমি আমার মহান পিতার সম্পদ থেকে প্রাপ্ত নিজের অংশের সব জমি বিক্রি করে মামলা পরিচালনা করি এবং আমাদের পরিবারের বর্তমান আয়ের সিংহভাগও মামলার পেছনেই ব্যয় করে চলেছি। 
প্রিয় পাঠক মহোদয়গণ হেফাজত আন্দোলন ও শাপলার ভয়াবহ ট্র্যাজিডির পূর্বে যখন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনের তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের সঙ্গে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসকেও সাংবিধানিকভাবে বাতিল করা হয় তখন হাটহাজারী মাদ্রাসার শ্রদ্ধাভাজন হযরত মওলানা মুফতি নুর আহম্মদ, পটিয়া মাদ্রাসার হযরত মওলানা মুফতি আহম্মদ উল্লাহ ও মুহতারাম মওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ দেশের প্রায় শীর্ষ আলেম ও মুফতিগণ এ বিষয়ে আমাকে একটি ফতোয়া লিখতে বললে আমি একজন যোগ্য আলেমে দ্বীনকে সংবিধানের বাংলা ও ইংরেজী কপি দিয়ে একটি প্রশ্নমালা তৈরী করতে বলি। প্রশ্ন তৈরী হওয়ার পর পবিত্র রমজান মাসের ইতেকাফের দশদিনে অসংখ্য কিতাবপত্র ঘেঁটে একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া তৈরি করি। ফতোয়ার সারমর্ম ছিল- “যারা সাংবিধানিকভাবে এ জঘন্য কাজ করেছে তারা কুফুরি কাজ করেছে। এবং সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসকে পূণ:স্থাপন করে তওবা না করলে তাদের মৃত্যু কুফুরি মৃত্যু হওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে।” এ সর্বসম্মত ফতোয়া নিয়ে হযরত মওলানা মুফতি নুর আহম্মদ, মোহতারাম মওলানা জুনাইদ বাবুনগরীসহ আমরা ২০/৩০ জন এ ফতোয়ার ওপর তার দস্তখতের জন্য গেলে তিনি বললেন, “আমি বৃদ্ধ বয়সে জেলে যেতে পারবনা।” মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বাদ দেওয়ার এ জঘন্য সাংবিধানিক অপরাধের ওপর লিখিত ফতোয়ায় দস্তখত না করা কি হযরত হোসাইন আহমদ মাদানীর খেলাফতের শানের সাথে যায়? 
প্রিয় বন্ধুগণ যখন এ কথাগুলো লিখছি তখন অন্তরের বেদনায় আমার কলিজা ফাটছে। কার জন্য সারাজীবন কি করলাম। কার প্রতি দেশের লক্ষ-কোটি মানুষ বিশ্বাস করে নিজেদের ঈমানী আন্দোলনের ঝাÐা তার হাতে তুলে দিয়েছিল? কার প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ করে এত বড় পল্টি খাওয়ার পরও মানুষ বিশ্বাস ধরে রাখতে চেষ্টা করছে? আর কার হাতে শাপলার আগে পরে কোটি কোটি টাকা দিয়েছে, যার কোন হিসাব নিকাশ অধ্যাবধি পাওয়া যায় নাই।
এবার আসুন ক্বওমী সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে, হযরত মওলানা আহমদ শফী ও হযরত মওলানা হারুন ইসলামাবাদীসহ হাটহাজারী পটিয়া এবং দেশের শীর্ষ ওলামায়ে ক্বেরামের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ঘুরে এ কথা বুঝাতে সক্ষম হলাম যে স্বীকৃতি নেয়ার ক্ষতির চেয়ে না নেয়ার ক্ষতি অধিক। কারণ সরকারী আধা-সরকারী সবগুলো মসজিদ আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। পরবর্তীতে ৪ দলীয় জোট সরকার গঠিত হলে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিকট আমার গাড়িতে করে হযরত মওলানা আহমদ শফী, হযরত মওলানা সুলতান যওক নদভী ও হযরত মওলানা উবায়দুল হক খতিব (রহঃ)সহ অন্যান্য শীর্ষ ওলামায়ে ক্বেরামকে নিয়ে গেলাম। তখন বেগম খালেদা জিয়া তার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ডেকে বললেন, চৌধুরী সাহেব! আপনি সম্মানিত হুজুরদেরকে আপনার কক্ষে নিয়ে গিয়ে বিষয়টি সমাধান করুন। আমি সারাজীবন মরহুম শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ওলামায়ে ক্বেরামগণকে সম্মান করি বিধায় ক্বওমী মাদ্রাসার দাওরা হাদীসের স্বীকৃতি দিতে আমার কোন আপত্তি নাই। মরহুম চৌধুরী সাহেব তার কক্ষে আমাদের সবাইকে নিয়ে গিয়ে বললেন আমি যদি ক্বওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বিষয়টি সমাধান করে দিতে পারি, তাহলে আমি ওআইসির মহাসচিব না হলেও আমার কোন দুঃখ থাকবে না। এরপর সরকারী যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অডিন্যান্স জারি হয়ে গেজেট আকারে দাওরা হাদীসের সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়া হয়। বিষয়টি সাংবিধানিকভাবে বিল উত্থাপন করে সংবিধানের অংশ বানানোর জন্য বিএনপি ও চারদলীয় সরকার যথেষ্ট সময় না পাওয়ায় পরবর্তী সরকার সেটি কার্যকর না করে, ফাঁকে ভোটের রাজনীতি শুরু করলেন। আমার পূর্বেও অনেক মুরুব্বীগণ এবং অনেক সংগঠন স্বীকৃতির দাবী আদায়ে ভ‚মিকা রেখেছেন। তাদের অবদান ছোট করে দেখার কোন অবকাশ নাই। শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকার মন্ত্রীসভায় প্রস্তাব পাশ করিয়ে সংবিধানে বিল আকারে কন্ঠভোটে মহান সংসদে পাশ করাবার পর মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংসদের বিগত অধিবেশনে পাশ হওয়া অনেক বিলের ওপর সম্মতি প্রদান করলেও ক্বওমী সনদের বিলের ওপরে এখনও সম্মতি প্রদান করেননি। এতটুকুর জন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ দিতে পারি, শুকরিয়া আদায় করতে পারি কিন্তু এর জন্য মাঠে নেমে শুকরিয়া মিছিল করার কি যৌক্তিকতা আছে। সর্বশেষ বিগত ১ অক্টোবর তারিখে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আমিরে হেফাজতের সভাপতিত্বে বর্তমান সরকার প্রদানকে সংবর্ধনা দেওয়ার যে ঘোষণা দেওয়া হয় তা শাপলার অসংখ্য শহীদগণের পবিত্র আত্মার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। শাপলা ট্র্যাজেডির পূর্বে যে লক্ষ লক্ষ জনতা দলমত নির্বিশেষে রাস্তায় নেমেছিল তা কি শুধু হযরত মওলানা আহমদ শফীর জন্য? মওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর জন্য? মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীসহ অন্যন্য আলেমদের জন্য? না কখনো নয়। তারা জান-মাল নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন মহান নবীজি (সাঃ) ও আমাদের মহান উম্মুল মুমিনীনগণের ইজ্জত হুরমত সংবিধানে স্থাপনের আইন রচনা করে নাস্তিকদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধানের দাবিসহ ১৩ দফা আদায়ের জন্য। সে দাবী কি আদায় হয়ে গেছে? অতএব আজ কোটি কোটি তওহীদি জনতার একটি মাত্র কথা-স্বীকৃতি চাই তবে ঈমান ও আত্মমর্যাদার বিনিময়ে নয়।

একজন মজলুম আলেমের অনুরোধে নিবন্ধটি পোস্ট করা হলো। যাকে তার নিকটজনেরা চিনতে অস্বীকার করে পাগল আখ্যায়িত করেছেন।
#কপি পোস্ট।


#বিঃদ্রঃ এই লেখাটি লিখেছেন হেফাজতে ইসলামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, লেখাটি প্রকাশ করেছেন দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক,বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাংবাদিক, মাওলানা ওবায়দুর রহমান খান নদভী। নদভী সাহেব থেকে সংগ্রহ করেছেন খালেদুল ইসলাম সাইফ
#এই লেখাটা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর ফেসবুক পেইজেও আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন