# প্রধানমন্ত্রীর লম্বা বক্তৃতায় বিশেষ কোনো সমাধান পাইনি, আন্দোলন চলবে---- ড. কামাল
# আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট নই --- মির্জা ফখরুল
# দাবি মানা না মানা সরকারের বিষয়, আন্দোলন চলবে--- রব
# ঐক্যফ্রন্টের দাবি মেনে নিতে গণভবনের সামনে প্ল্যাকাড-ব্যানার নিয়ে শ্লোগান
বাংলাদেশ বার্তাঃ ‘ আমরা সরকারকে আমাদের দাবি দাওয়া গুলো জানিয়ে দিয়েছি, সেগুলো মানা না মানা তাদের ব্যাপার। দাবি আদায়ে আমাদের চলমান আন্দালন অব্যাহত থাকবে’। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিার বাসভবন গণবভনে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপ রাতে বেইলি রোড়ে নিজের বাসায় এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সংলাপ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমরা সংলাপ থেকে বিশেষ কোনো সমাধান পাইনি। উল্লেখ্য, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলকভাবে অনুষ্ঠানের জন্য ৭ দফা দাবি ঘোষণা করে। একইসাথে ১১টি লক্ষ্যও ঘোষণা করেন।
গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়ে এ সংলাপ শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টায়। সংলাপ থেকে বের হবার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বহুল আলোচিত সংলাপের পর দুই রকম বক্তব্য এসেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দুই শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছ থেকে। গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, ভালো আলোচনা হয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে কি আপনি মনে করেন- জবাবে তিনি বলেন, ফলপ্রসূ হবে। অন্যদিকে জোটের সবচেয়ে বড় দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল গণভবন থেকে গাড়িতে ওঠার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা (আলোচনায়) সন্তুষ্ট নই। গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আর কোনো নেতা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণভবনে সাংবাদিকদের বলেছেন, খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে সবার কথা শুনেছেন। একটুও অধৈর্য হননি। গণভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু বলেন, বরফ গলতে শুরু করেছে।
গণভবন থেকে বেরিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে আসেন বেইলী রোডে অবস্থিত সংগঠনের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের বাসায়। শীর্ষ নেতারা প্রায় ২০ মিনিট ড. কামালের বাসায় একান্তে কথা বলেন। তারপর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোটের নেতারা সাংবাদিক সম্মেলনে আসেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে শুরুতেই বক্তব্য রাখেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক, দেশের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। এসময় তার পাশে বসা ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতেই ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা পধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে আজ (বৃহস্পতিবার) গণভবনে গিয়েছিলাম। আমরা তিন ঘন্টা সেখানে ছিলাম। আমরা সেখানে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। সবাই যার যার মতো করে বক্তব্য, মতামত ও অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা শূনেছেন। এরপর তিনি একটি লম্বা বক্তৃতা দিলেন। তার বক্তৃতায় আমরা সভা-সমাবেশের বিষয় ছাড়া অন্যকোন বিশেষ সমাধান দেখতে পাইনি। ড. কামাল বলেন, আমরা সংলাপের সুযোগ পেয়েছি। আমরা আমাদের কথা বলে এসেছি উনাকে। উনি জানতে পেরেছেন। উনি উনার কথাগুলো বলেছেন, উনার মনের কথা আমরা কিছুটা জানতে পেরেছি। এই কথা বলে তিনি গণফোরামের কার্যকরি সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে সভার বিষয়বস্তুসহ একটি সারসংক্ষেপ বলতে বললেন।
সুব্রত চৌধুরী সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসনার সাথে অনুষ্ঠিত সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্যন্টের পক্ষ থেকে সূচনা বক্তব্য রাখেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। এরপর জোটের আরেক শীর্ষ নেতা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঐক্যফ্রন্টের দদফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এরপর ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। আমাদের বক্তব্য শোনার পর প্রধানমন্ত্রী বললেন, এখন থেকে দেশের কোথাও সভা-সমাবেশ বা রাজনীতিক কর্মসূচিতে কোনো ধরণের বাধা ধাকবে না। একইসাথে কর্মসূচি সফল করতে তিনি আইনশৃৎঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিবেন বলেও জানালেন।
সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দায়ের, গায়েবী মামলা এবং গ্রেফতার প্রসঙ্গে জানিয়েছি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বললেন, গণগ্রেফতার, গায়েবী মামলা-এসবের যদি হয়ে থাকে তাহলে আমাকে একটি তালিকা দেন। আমি অবশ্যই বিবেচনা করবো যাতে হয়রানি না হয় তা বিবেচনা করব। ভবিষ্যতে যাতে আর হয়রানি না করা হয় সে ব্যাপারে তিনি নির্দেশ দেবেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, উত্থাপিত দাবি-দাওয়া নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা অব্যাহত থাকবে বলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীকে এসব বলেছি। এ্ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তিনি ( প্রধানমন্ত্রী) সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু বলেননি। তিনি বলেছেন যে, এই বিষয়গুলো নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা হতে পারে।
এসময় বিএনপি মহাসচিবের কাছে প্রশ্ন ছিল সংলাপে আপনারা সন্তুষ্ট কি-না? জবাবে তিনি সাথে সাথেই বললেন, আমি তো আগেই বলেছি, সংলাপে আমরা সন্তুষ্ট না।
তফসিল পেছানোর বিষয়ে আপনারা দাবি দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সরকারকে বলেছি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা কওে নির্বাচন কমিশন। এটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবেন। তখন প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, তফসিলের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ইখতিয়ার।
সংলাপে আপনারা সন্তুষ্ট না, তাহলে আপনারা কি করবেন এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ঐক্যফন্টের কর্মসূচি চলবে। একইসাথে তিনি বলেন, সব অর্জন তো সাথে সাথেই হয়না।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম দাবি সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কিনা জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা আমাদের কথা বলে আসছি। আমাদের ৭ দফা দাবি জানিয়েছি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছন, উনি দাবিগুলোর বিষয়ে পরে জানাবেন। আমরা দাবি দিয়েছি, সেটি মানা না মানা তাদের ব্যাপার। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তবে সংলাপে সভা-সমাবেশের বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য ছাড়া বিশেষ কোনো সমাধান আমরা পাইনি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র আসম আবদুর রব বলেন, আমরা ৭ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। মানা না মানার দায়িত্ব সরকারের। আমাদের কর্মসূচি আমরা দিয়েছি এ নিয়ে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এই কথা বলে ড. কামাল হোসেনে উদ্দেশে রব বলেন, ঠিক আছে না স্যার? তখন ড. কামাল হোসেন ‘হ্যাঁ’ সূচক সম্মতি দেন। সংলাপ থেকে কী আপনারা পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সবসময় কী সব কিছু অর্জন হয় নাকী? আসম রব বলেন, একদিনে সব পাওয়া যায় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন