বাংলাদেশ বার্তাঃ র্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদ, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোখলেসুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশের ৭০ জন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল।
আলাল বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য পুলিশের দলবাজ ও রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারি কর্মকর্তাকে নির্বাচনী দায়িত্ব না দেয়া জন্য বলেছি। পুলিশের ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপারের মতো পদধারী ৬০ জনের বেশি কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। যারা সমতল মাঠকে অসমত করার কাজে ব্যস্ত, তাদের নাম, পদবি, কর্মস্থলসহ সকল তথ্য নির্বাচন কমিশনের দিয়েছি।
তিনি বলেন, সিইসি আজ নিরপেক্ষ থাকার জন্য পুলিশকে আহ্বান জানিয়েছেন। আহ্বান জানানো মানে অনুরোধ করা। তিনি তো নির্দেশ দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।
সরকারের এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টাতার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ওনাদের কাছে দালিলিক কাগজপত্র উপস্থাপন করেছি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা যে কাজগুলো করতে পারে না, সে কাজগুলো অনবরত করা হচ্ছে। তার কয়েকটি উদাহরণ ওনাদের কাছে তুলে ধরেছি এবং প্রতিকার চেয়েছি।
ভবিষ্যতে যাতে এসব কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না হয়, এজন্য তাদের বিরেুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিবদ্ধকতার যেগুলো আমাদের চোখে পড়েছে তার মধ্যে কয়েকটি হলো- মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, ওনার পুত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। বঙ্গভবনে এলাকার লোকজন নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের রাষ্ট্রীয় খরচে আদর-আপ্যায়ন করা হয়েছে, যেটা প্রভাব বিস্তারের একটা অন্যতম উদাহরণ হিসেবে আমরা মনে করি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব এবং চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারদের ডেকে গত ১৬ নভেম্বর বৈঠক করেছেন। পরবর্তীতে ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিট্রন পুলিশের কমিশনার, তার এলাকার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের ডেকে কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব ঘটনা নির্বাচন আইনের লঙ্ঘন হয়েছে।
এনটিএমসি এবং বিটিআরসি বিতর্কিত দলকানা কর্মকর্তা কর্মচারিরা আছেন। তারা কিছুদিন আগে থেকেই কার্যক্রম শুরু করেছেন। তারেক রহমানের স্কাইপিতে কথপোকথন বন্ধ করেছেন। গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের আশেপাশে ইন্টারনেট কার্যক্রম বন্ধ কেরেছেন। যেটাও আচরণ বিধির লঙ্ঘন।
ব্যাপকহারে গ্রেফতার এখনো চলছে। গতকাল রাতেও বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতার চলেছে। তারমধ্যে আমাদের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও রয়েছে। যে নির্দেশনা পোস্টার বিলবোর্ডসহ প্রচারণা সামগ্রী সরানোর যে নির্দেশনা কমিশন থেকে দেয়া হয়েছিল, এখনো ঢাকা শহরের বহু জায়গায় নৌকা এবং লাঙ্গলের পোস্টার রয়েছে। এজন্য প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।
উপরন্তু সিটি করপোরেশন ও আরো কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরকারের উন্নয়ন কর্মের নামে নৌকার পক্ষে প্রচার কাজ অবিরাম চালানো হচ্ছে। এটা বন্ধ করার দাবি করা হয়েছে।
গণহারে আওয়ামী পন্থী কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের নির্বাচন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে। এদের সঙ্গে জনপ্রশাসনের দলবাজ কর্মকর্তাদেরও প্রত্যাহার চাওয়া হয়েছে।
আলাল বলেন, আমরা ঢালাও অভিযোগ করি না। আজকে লিখিতভাবে সব তথ্য প্রমাণসহ দিয়ে গেলাম।
প্রত্যাহারের দাবি ওঠা অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ইকবাল বাহার, নৌ-পুলিশের ডিআইজি শেখ মো. মারুফ হাসান, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফরুক, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন, কেএমপি’র কমিশনার হুমায়ন কবির, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, সিএমপি’র কমিশনার মাহবুবুর রহমান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মির রেজাউল আলম, ঢাকা সিটি এসবির ডিআইজি মো. আলী মিয়া, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাশ ভট্টাচার্য, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, হেড কোয়ার্টারের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, খ. মহিদউদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন, আরএমপি’র ডিআইজি হাফিজুর রহমান, ডিএমপির ডিআইজি আব্দুল বাতেন, র্যাব-৪ এর অধিনায়ক চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, খুলনা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি এ কে এম মাহিদুল ইসলাম, পুলিশ হেড কোয়ার্টারের এডিশনাল ডিআইজি মনিরুজ্জামান, সিলেট রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, ঢাকা রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান, ডিবির জয়েন্ট কমিশনার মাহবুব আলম, সিআইডির এসপি মোল্লা নজরুল ইসলাম, টুরিস্ট পুলিশের এএসপি আলতাফ হোসেন, তেজগাঁও এর ডিসি (ডিএমপি) বিপ্লব কুমার সরকার, ডিএমপি’র ডিসি হারুন-অর রশিদ, রমনার ডিসি মারুফ হোসেন সরদার, সিএমপির ডিসি এসএম মেহেদী হাসান, ডিএমপির ডিসি খন্দকার নুরুন নবী, সিএমপির ডিসি ফারুকুল হক, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের ডিসি প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, ডিএমপির ডিসি এসএম মুরাদ আলী, ডিএমপির এডিশনাল ডিসি শিবলি নোমান।
এছাড়া এসপিদের মধ্যে রয়েছেন— ঢাকার এসপি শাহ মিজান সফি, নারায়ণগঞ্জের মো. আনিসুর রহমান, মুন্সীগঞ্জের এসপি যায়েদুল আলম, নরসিংদীর মিরাজ, টাঙ্গাইলের রঞ্জিত কুমার রায়, মাদারীপুরের সুব্রত কুমার হাওলাদার, ময়মনসিংহের শাহ আবিদ হোসেন, শেরপুরের আশরাফুল আজিম, সিলেটের মনিরুজ্জামান, বরিশালের সাইফুল ইসলাম, ভোলার মুক্তার হোসেন, খুলনার এসএম শফিউল্লাহ, সাতক্ষীরার সাজ্জাদুর রহমান, বাগেরহাটের পঙ্কজ চন্দ্র রায়, যশোরের মঈনুল হক, ঝিনাইদহের হাসানুজ্জামান, কুষ্টিয়ার আরাফাত তানভির, চট্টগ্রামের নূরে আলম মিনা, নোয়াখালীর ইলিয়াস শরিফ, ফেনীর এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, কুমিল্লার সৈয়দ নরুল ইসলাম, রংপুরের মিজানুর রহমান, দিনাজপুরের সৈয়দ আবু সায়েম, ঠাকুরগাঁওয়ের মনিরুজ্জামান, রাজশাহীর শহীদুল্লাহ, চাপাইনবাবগঞ্জের মোজাহেদুল ইসলাম, নওগাঁর ইকবাল হোসেন, নাটোরের সাইফুল্লাহ, বগুড়ার আশরাফ আলী, সিরাগঞ্জের টুটুল চক্রবর্তী এবং পাবনার এসপি রফিক ইসলাম।
শীর্ষ নিউজ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন