বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ গণভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে সঙ্কটের সুরহার আগেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে আবার সরব হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মহল। তফসিল ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুসারীরা উৎসবের আমেজে মনোনয়নপত্র বিক্রি করছে; অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বাম গণতান্ত্রিক জোট এখনো ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ দাবিতে অটল রয়েছে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে নাকি বর্জন করবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
জাতিসংঘ বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে ইসির ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্টাডি এবং নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছে। মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, জাতিসংঘের অগ্রাধিকার হলো একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, অবশ্যই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণ মূলক হতে হবে। রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে আলোচনা ও উন্মুক্ত মতবিনিময়কে উৎসাহিত করি।
এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার ১৭ নভেম্বর ঢাকায় এসে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রবার্ট মিলারের ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ভূমিকা না রাখার ঘোষণা দিলেও আসন্ন নির্বাচনের ওপর নজর রাখছে চীন। এদিকে ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কুটনীতিকদের সঙ্গে আগামীকাল বিএনপির ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানের সর্বশেষ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে জাতিসংঘ। শুক্রবার জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক এ তথ্য জানিয়ে বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার হলো বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তাই আমরা বাংলাদেশের এসব ব্যবস্থাপনা নিয়ে অব্যাহতভাবে ‘স্টাডি’ করছি। লক্ষ রাখছি এসব অগ্রাধিকার সমুন্নত রাখা হচ্ছে কি না। আমরা এ বিষয়টিই দেখতে চাই। মনে করছি, এটা উপযুক্ত সময়ে হতে পারে।
জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন বড়দিনের সামান্য আগে ২৩ ডিসেম্বর আগামী নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছে। ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে সংলাপে রয়েছে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে একপেশে নির্বাচনী সিডিউলের বিরোধিতা করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলো। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে তারা সবার জন্য সমান ক্ষেত্র (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রশ্নের জবাবে ফারহান হক বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতি নজর রয়েছে জাতিসংঘের। জাতিসংঘ চায়, আগামী নির্বাচন যেন সবগুলো রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য হয়।
গত ৯ নভেম্বর (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত) জেনেভায় জাতিসংঘের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্রে বাংলাদেশের সর্বশেষ তথ্য জাতিসংঘের নজরে রয়েছে এবং জাতিসংঘ তা পর্যবেক্ষণ করছে। জাতিসংঘ চায় যে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য এবং স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হোক। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘ নিয়মিতভাবে খোঁজ-খবর রাখছে। নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক আছে কি না তা আমরা সময়মতো তুলে ধরব।
শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসছে। আমরা অব্যাহত আলোচনা ও উন্মুক্ত মতবিনিময়কে উৎসাহিত করি, যা অবশ্যই অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হবে। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে। ২৩ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর এটিই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম কোনো প্রতিক্রিয়া। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, উন্মুক্ত সংলাপ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কেন্দ্রবিন্দু। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মূল্যবোধকে সমর্থন করি, যা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের নাগরিকদেরই পছন্দের।
ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লম বার্নিকাট চলে যাওয়ার পর ১৭ নভেম্বর ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার। বতসোয়ানায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনরত মিলার বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্সিয়া বার্নিকাটের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৭ জুলাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে এই কূটনীতিকের নাম মনোনয়ন দেন।
বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযোগী এবং বিশ্বরাজনীতিতে প্রভাবশালী চীন বাংলাদেশের নির্বাচনের ওপর নজর রাখছে। গত বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসির) বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হককে এই বার্তাই দেয়া হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় ওই বৈঠকে চীনের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির ভাইস মিনিস্টার কং যুয়াইও।
উৎসঃ ইনকিলাব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন