বাংলাদেশ বার্তাঃ ষড়ঋতুর বাংলাদেশে এখন চলছে হেমন্তকাল।শীতের আগমনী বার্তা ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে। অপরূপ এই হেমন্তের আজকের দিন শেষে সন্ধ্যায় গণভবনে বসতে চলেছে এক ব্যতিক্রমী সংলাপ আয়োজনের। দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে যে সংলাপের আয়োজন হতে যাচ্ছে- এ সিদ্ধান্তকে সকল মহল থেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সফলতা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ ও সংশয়।
আসলে আজ আমরা গভীর রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে আছি। আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিপন্ন পরিস্থিতি চলছে। আমাদের বর্তমান বিপন্নতাকে কাটাতে যদি সততার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যকর সংলাপ সংঘঠিত হয় তাহলেই এই উদ্যোগ প্রকৃত সাফল্য পাবে। সংলাপের সফলতা বহুলাংশে নির্ভর করছে অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা, দূরদৃষ্টিতা ও বিচক্ষণতার ওপর। বিশেষ করে সরকার পক্ষের সদিচ্ছার ওপর। ড. কামাল হোসেন স্পষ্ট করে বলেছেন যে, ঐক্যফ্রন্টের উপস্থাপিত সাত দফার ভিত্তিতে আলোচনা চান তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জবাবে সংবিধান সম্মত যে কোন বিষয়ে আলোচনার আগ্রহের কথা বলেছেন। একটু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- এই সাত দফার অধিকাংশ বিষয়ে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে আলোচনা সম্ভব। তবে সেজন্যপ্রয়োজন সদিচ্ছা এবং আলোচনাকারীদের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা। জাতীয় ঐক্যের সাত দফা কিংবা জামায়াতে ইসলামীর আটদফার একটি দফাও বাদ দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। সেজন্য সাত দফার পক্ষের নেতৃবৃন্দকে এ দফাগুলোর কোন একটিতেও ছাড় দেয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। তারপরও বিশেষ করে ১ম দফা- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে। ২য় দফা- গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। এই দু’দফার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ছাড় দিলে পুরো সংলাপই অর্থহীন হয়ে পড়বে বলে দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন।
কারো কারো ধারনা মতে, সরকারপক্ষ আন্তর্জাতিক মহলকে আশ্বস্ত করার জন্য চালাকির আশ্রয় নিয়ে সাত দফার ১ম দফার আংশিক যেমন- জাতীয় সংসদ বাতিলের বিষয়টি মেনেও নিতে পারে। এরকম আরো ছোট-খাটো কিছু দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে পরবর্তীতে সেগুলো বাস্তবায়নেও গড়িমসির আশ্রয় গ্রহণ করা হতেও পারে।
সুতরাং সার্বিক বিষয়ের উপরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে একটি কার্যকরী সংলাপ বাস্তবায়নের ওপরই বর্তমান সংকট থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সুতরাং সংলাপে অংশগ্রহণকারী সম্মানিত ১৬জন প্রতিনিধিদেরকে দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভাষা উপলব্ধি করতে হবে। তাদের প্রাণের আকুতি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আর এটা সফল হতে পারে সাত দফা দাবি আদায় করে পুরোপুরি বাস্তবায়নের ওপর।অতীতে আমরা আমাদের দেশে কখনো সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের নিষ্পত্তি হতে দেখিনি। এর নিষ্পত্তি হয়েছে
রাজপথে গণআন্দোলনের মাধ্যমে। তারপরও আজকে সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায় গণভবনে অনুষ্ঠিতব্য সংলাপের সাফল্য কামনা করছি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন