১১ জানুয়ারি সকাল ৯টা ২০ মিনিট৷ এখনও সূর্যের আলো ভালো করে ফোটেনি৷ বিমান থেকে বাংলাদেশকে ঘোলাটে লাগছে৷ ঘন কুয়াশায় মোড়া রাজধানী ঢাকা৷ প্রবল ঝুঁকি নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাটি ছুঁলো জেট এয়ারওয়েজের বিমান৷ উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্হিতির মধ্যে যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়েই পা রেখেছি বাংলাদেশের মাটিতে৷ এই সংবাদ যখন পাঠাচিছ তখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে গত এক বছরের রাজনৈতিক সমীকরণ৷ গত তিন মাসে সংসদীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লাগাতার সঙঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন দু'শোরও বেশি মানুষ৷ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোট বয়কট করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন আওয়ামি লিগের ২২৯ জন সাংসদ৷ ফের ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামিকাল রবিবার নতুন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করবে৷ কিন্ত্ত এই মুহূর্তে আলোচ্য বিষয়, বিরোধীদের বিলুপ্ত করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ছক কষছেন হাসিনা৷
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় বিএনপি-জামাত জোটকে সরিয়ে এবার বিরোধী দলের আসনে থাকার কথা এরশাদের জাতীয় পার্টির৷ বিরোধী নেত্রী হয়েছেন রওশন এরশাদ৷ কিন্ত্ত দলীয় সূত্রের খবর, বিরোধী দলকেও মন্ত্রিসভায় টেনে আনতে চাইছেন হাসিনা৷ জাতীয় পার্টির সদস্যরা অনেকেই মন্ত্রী হতে চান৷ তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদে মন্ত্রী করার টোপ দিয়ে মন্ত্রিসভায় এনে বিরোধী দলের অস্তিত্বকে কার্যত বিলুপ্ত করে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী৷ আওয়ামি লিগের ২২৯ জন সাংসদের পাশাপাশি এরশাদের পার্টির সাংসদরাও এবার হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় বসতে চলেছেন কি না সেটাই এখন দেখার৷ জাতীয় পার্টি চাইছে মন্ত্রিসভায় তাঁদের দলের কমপক্ষে ভ্লঙ্ম জন মন্ত্রী থাকুক৷ এর থেকে কম হলে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না জানিয়েছেন বিরোধী নেত্রী রওশন এরশাদ৷ একইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "ঐকমত্যে'র সরকার গঠন হবে৷ চাই জাতীয় পার্টি সরকারেও থাকবে, বিরোধী দলেও থাকবে৷" লোক দেখানো বিরোধী দল হিসাবে জাতীয় পার্টি থাকলেও কার্যত তারা হাসিনার অনুগতই থাকবে৷ কোনও বিরোধী দল না থাকলে দেশের রাজনীতি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে এবং দেশ পিছিয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে বাংলাদেশের বুজিীবী মহল৷
অন্যদিকে নতুন মন্ত্রিসভায় যাতে দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই দেওয়া না হয়তার জন্য হাসিনার কাছে লিখিত অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশের ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক৷ গত মন্ত্রিসভায় যাঁরা ভাল কাজ করেছেন শুধু তাঁদের রেখে বাকিদের বাদ দেওয়া হোক, এ কথা জানিয়ে লেখক-শিল্পী-বুজিীবী মহলের তরফে এই অনুরোধপত্র জমা দিয়েছেন হাফিজউদ্দিন খান, হামিদা হোসেন, শামসুল হুদা, আবুল মকসুদরা৷ তাঁদের কথায়, এর আগে নির্বাচনী ইস্তাহারে হাসিনা দুর্নীতিমুক্ত সরকার গঠনের প্রতিশ্রূতি দিলেও গত মন্ত্রিসভায় অধিকাংশেরও বেশি মন্ত্রীই দুর্নীতি, তোলাবাজি, ঘুষ নেওয়ার মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ তাঁদের রোজগারের সঙ্গে সঞ্চয়েরও কোনও সম্পর্ক নেই৷ গত মন্ত্রিসভার পর এবার নির্বাচনের আগে তাঁদের আয়ের হিসাবে দেখা গিয়েছে অনেকেই দেড় কোটি টাকা থেকে ৫০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে গিয়েছেন৷ জমির পরিমাণও ৩০০ একর থেকে হয়েছে প্ত হাজার একর৷ হাসিনা অবশ্য ফের দুর্নীতিমুক্ত সরকার গঠনেরই প্রতিশ্রূতি দিয়েছেন৷
এদিকে নির্বাচন বয়কট করে দেশজুড়ে জামাত হিংসা ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ৷ কিন্তু এই মুহূর্তে জামাতের নাম করে আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন, কর্মী-সমর্থকরাই বিভিন্ন্ জায়গায় সঙঘর্ষে লিপ্ত হচেছ৷ এই অভিযোগের জবাবে শনিবার চিন মৈত্রী সম্মেলন ক্ষেত্রে ‘আন্তর্জাতিক মেলা'র উদ্বোধন করে হাসিনা বলেন, "হামলাকারীরা যে দলেরই হোক না কেন শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্হা নেওয়া হবে৷"
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন