যৌথ
বাহিনীর অভিযানের ভয়ে বাক্সপ্যাটরা নিয়ে গ্রাম ছাড়ছে লোকজন। গতকাল
শনিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মহদিপুর গ্রামে গিয়ে এ
দৃশ্য দেখা যায়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার যৌথ বাহিনীর
সদস্যরা মহদিপুর ছাড়াও রসুলপুর ও চণ্ডীপুর গ্রামের ৩৫টি বাড়িতে অভিযান
চালান। এ সময় বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। অভিযানের সময় হেলমেট পরা
আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী তৎপর ছিলেন।
অভিযানের সময় সাধারণ মানুষকে মারধর ও ভাঙচুরের
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার বশির আহমেদ
প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানের সময় বেআইনি কাজের কোনো সুযোগ ছিল না। শুধু
আসামি ধরার জন্য কয়েকটি বাড়ির দরজায় ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। এ
ছাড়া ভাঙচুরের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি।’
গতকাল শনিবার সন্ধ্যার ঠিক আগে মহদিপুর থেকে ১৫-১৬ জন নারী-শিশুকে
লেপ-কাঁথা ও বাক্সপ্যাটরা নিয়ে শিবগঞ্জের উজিরপুরের দিকে যেতে দেখা যায়।
তাঁরা জানান, যৌথ বাহিনীর অভিযানের ভয়ে তাঁরা গ্রাম ছাড়ছেন।
গতকাল
বিকেলে শিবগঞ্জের মহদিপুর ও রসুলপুরের ১৬-১৭টি বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুরের
আলামত দেখতে পাওয়া যায়। প্রায় বাড়িতে টিভি, আসবাব, চিনামাটির থালাবাসন
এবং কয়েকটি বাড়িতে ফ্রিজ ভাঙচুর ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য
চোখে পড়ে। একটি বাড়ির খড়ির ঘর ও একটি বাড়ির রান্নাঘর এবং খড়ের গাদা
পোড়ানো দেখা যায়।
নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ও
মহদিপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, এ বাড়ির
ধান রাখার গোলা পোড়ানোসহ তিনটি ঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নজরুল ইসলামের
স্ত্রী সালেয়া বেগম অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পেছনের দরজা
ভেঙে র্যাব ও পুলিশ বাড়িতে ঢুকে তিনটি ঘরে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ভাঙচুর
চালায় ও ধানের গোলায় (বাঁশ ও মাটি দিয়ে তৈরি ফসল রাখার বড় পাত্র) আগুন
দেয়। এতে প্রায় ৩০ মণ ধান পুড়ে যায়।রসুলপুর গ্রামের ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি ইয়াসিন আলীর স্ত্রী চম্পা বেগম অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী কোনো দল করেন না। অথচ তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। নষ্ট করা হয়েছে টিভি, ফ্রিজ, রাইসকুকার, শোকেস ও থালাবাসন। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি মোটরসাইকেল।
তাঁর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া মেয়ে আতিফা জানায়, ২০ জনের
মতো কালো পোশাকধারী লোক তাদের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি করে। এ গ্রামের বিএনপির
কর্মী আবু বাক্কারের বাড়িতেও ভাঙচুরের আলামত দেখা যায়। একই গ্রামের
প্রয়াত হযরতের বাড়িতেও ভাঙচুর হয়। তাঁর মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী জমিলা
খাতুন বলে, ‘কেঁদে কেঁদে হাতজোড় করে র্যাবের লোকজনকে বলেছি, আমার বাবা-মা
নেই, আমরা খুব গরিব, আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর করিয়েন না। কিন্তু তারা
শোনেনি। আমার বড় বোনকে মারধর করা হয়।’
বিএনপির শিবগঞ্জ পৌর কমিটির
সদস্য রসুলপুর গ্রামের মনিমুল হকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে নষ্ট করা ছাড়াও
চারটি শোকেস, দুটি টিভি, দুটি ড্রেসিং টেবিল ভেঙে ফেলা হয়েছে। গ্রামের
লোকজন জানান, মহদিপুর, রসুলপুর ও চণ্ডীপুরের কয়েক শ পরিবার দামি জিনিসপত্র
নিয়ে অন্য গ্রামে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আবারও
অভিযানের ভয়ে গ্রামের সব মানুষই আতঙ্কের মধ্যে আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন