আজ-কাল দীর্ঘ রাত করে ঘুমাতে যাওয়া শহুরে জীবনে একটি সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে,নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশু-বৃদ্ধ,চাকরিজীবী,শ্রমজীবী ব্যবসায়ী সকলের একই অবস্থা। যদি জিজ্ঞেস করা হয়-সচরাচর আপনি রাতে কতক্ষণে ঘুমাতে যান? সবার প্রায় অভিন্ন জবাব এই ১২টা/১টা। শহুরে জীবনে এটাই এখন আধুনিকতা,বাস্তবতা। কোন কোন ক্ষেত্রে তা অবশ্য ফ্যাশন।
একথা সবার জানা যে,গ্রামে বসবাসকারীদের তুলনায় শহরে বসবাসকারীরা সহজে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। গ্রামের মানুষগুলো শারীরিকভাবে অনেক বেশি কর্মক্ষম। এর বাস্তব সম্মত নানাবিধ কারণ আছে। যেমন গ্রামের আবহাওয়া শহরের তুলনায় বিশুদ্ধ,নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য গ্রামে যতটা তরতাজা পাওয়া যায়,শহরে তা পাওয়া যায় কম। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে গ্রামের মানুষ দীর্ঘ রাত জাগেন না,সকালে দীর্ঘক্ষণ বিছানায় শুয়েও থাকেন না।
ঘুম মানব স্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। ঠিকমত ঘুমাতে না পারলে দেহে নানারকম অসঙ্গতি দেখা দেয়। নবজাতক শিশু দৈনিক প্রায় ১৫-১৮ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমায়। শিশুর স্বাস্থ্য বৃদ্ধির জন্য ঘুম অপারিহার্য। বয়ষ্কদের জন্য শারীরিক ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে ঘুমের বিকল্প নেই। শারীরিক নানা জটিলতা প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।
মাঝে মধ্য একান্ত প্রয়োজনে দীর্ঘ রাতজাগা হতে পারে। যেমন বিয়ে-শাদি,পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান ইত্যাদি। কিন্তু এটা অভ্যাসে পরিণত করা উচিৎ নয়। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া নিয়মিত দীর্ঘ রাতজাগা, এটা ভাল অভ্যাস নয়,বরং বাজে অভ্যাস। এই বাজে অভ্যাসটাই এখন শহুরে জীবনে অজ্র মানুষের নানাবিধ রোগের কারণে পরিণত হয়ে পড়েছে।
‘দীর্ঘ রাতজাগা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী’ আজ পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন শাখায় এ রকম একটি লাইনও লিপিবদ্ধ হয়নি। এর বিপরীত নিত্য নতুন ঘুমের ঔষধ আবিষ্কার হচ্ছে। মানুষ যন্ত্র নয়,মানুষের বিশ্রাম দরকার। পর্যাপ্ত ঘুম সর্বোত্তম বিশ্রাম। যাঁরা নিয়মিত রাত ১২টা/১টায় ঘুমাতে যান তাঁরা নিজেরা নিজেকে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন এই দীর্ঘ রাত জাগার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কোন কারণ আছে কিনা?
নিয়মিত আড্ডা দেয়া,টেলিভিশনের সামনে বসে থাকা,বিভিন্ন সিরিয়াল দেখা,চ্যানেল পাল্টিয়ে একই সংবাদ বারবার দেখা,অফিস থেকে বেরিয়ে অনর্থক এদিক সেদিক ঘুরে সময় পার করে বাসায় ফিরা,অফিসের কাজ অফিসে শেষ না করে বাসায় নিয়ে আসা-এই জাতীয় বিষয়গুলো জীবনের জন্য অপরিহার্য নয়। সে তুলনায় ঘুমের প্রয়োজন অনেক বেশি।
ইদানিং দীর্ঘ রাতজাগায় আরো একটা উপসর্গ যোগ হয়েছে-‘টক শো’। যারা রাজনীতির ময়দানে ব্যস্ত কর্মী তাদের জন্য এসব হয়ত প্রয়োজন,সবার জন্য নয়। সাধারণ মানুষ যারা নিয়মিত টিভি সিরিয়াল দেখেন তাঁদের কাছে প্রশ্ন- দীর্ঘ দিন ধরে রাত জেগে এসব দেখে আপনি কতটুকু লাভবান হয়েছেন? এর দ্বারা আপনার জীবনযাত্রায় কী পজিটিভ পরিবর্তন এসেছে? অপরদিকে আপনার মত যারা নিয়মিত এসব দেখেন না,তাঁরা জীবন থেকে আপনার তুলনায় কতটুকু পিছিয়ে পড়েছেন? কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন?
মনে রাখতে হবে,নিয়মিত দীর্ঘ রাত জাগা মানুষের দেহ-মনে নানাবিধ জটিলতা তৈরি করে। গ্যাস্ট্রিক-আলসার,উচ্চরক্তচাপ,হার্টের নানাবিধ সমস্যা,কোষ্ঠকাঠিন্য,নিয়মিত পায়খানা পরিষ্কার না হওয়া,বদহজম, খাদ্যে অরশুচী,শারীরিক শীর্ণতা,শারীরিক স্থুলতা,টেনশন,মেজাজ খিটখিটে হওয়া,অবসাদগ্রস্থতা,বাত,অকাল বার্ধক্য,অকালে চুল পাকা,চুল ঝরে যাওয়া,কর্মস্পৃহা কমে যাওয়া ইত্যাদি বহু রোগের কারণ এই দীর্ঘ রাতজাগা।
একান্ত প্রয়োজন ছাড়া দীর্ঘ রাতজাগা পরিহার করুন। মানব দেহের সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তির অনেকটাই নির্ভর করে পরিমিত ঘুমের উপর। সরা দিন কর্মব্যস্ত শরীরের জন্য রাতের ঘুম অপরিহার্য। ঘুম আল্লাহর বড় নেয়ামত।
আমার এই লেখাটি ২১জানুয়ারী দৈনিক আজাদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন