মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরের পর থেকেই দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন নতুন খেলা শুরু হয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সাবেক গোয়েন্দা প্রধানের কন্যা সুজাতা সিংয়ের চাকুরিচ্যুতি, মিসেস হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদীর টেলিফোন, চীন কর্তৃক পাকিস্তানকে একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু ঘোষণা এবং হাসিনা কর্তৃক রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে বিরোধী হত্যায় ইনডেমনিটি ঘোষণা। এসবের পাশাপাশি একটি জাতীয় সরকার গঠন নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন এক খেলা যে খেলাটি ভারতের 'বি' টিমের হাতে রাষ্ট্রকে তুলে দেয়ার নীল নকশা বলে স্ট্রাটেজিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
এদিকে ঘোষণা দেয়ার ২৪ ঘন্টা না পেরুতেই বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে মধ্যরাতের পরেই। র্যাব গ্রেপ্তার করেছে রুহুল কবির রিজভীকে।অবরোধের মধ্যে ৭২ ঘন্টা হরতালের আহবান করে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেই র্যাব রিজভীকে গ্রেফতার করলো। গুরুত্ব না পেলেও একসময়ে বিএনপি সরকারের অতি গোপন মিশনের দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রদূত আখতার উল আলমের আইনজীবী কন্যাকে বাসার ভেতরে হত্যা করা হয়েছে; কিন্তু কোন সম্পদ খোয়া যায়নি। আখতার উল আলম ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন বহুদিন।
ড: মঈন খানের বাসায় মার্কিন দুতাবাস কর্মকর্তার বৈঠকের পাশাপাশি বেগম জিয়ার সাথে ড: কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্নার বৈঠকের পর থেকেই ধীরে ধীরে সরকারের কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। একালের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হিসেবে খ্যাত এনজিও দের অধিপতি ব্রাকের ফজলে হোসেন আবেদ এর নেতৃত্বে ভারতের সাথে সুসম্পর্কিত বিভিন্ন সাইড লাইনে থাকা নিরাপদ রাজনীতিবিদ, আমলা ও বুদ্ধিজীবিদের সমন্বয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠনের কাজ শুরু হওয়ার কথাও হাসিনা জেনে যায়। সুজাতা সিংয়ের বরখাস্তের পর তাদের টনক নড়ে. এখন যে কোন সময় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণেরও দুর্ভাগ্য নেমে আসতে পারে মনে করা হচ্ছে। তাই তাড়াহুড়ো করে পুরো দৃশ্যপট নিজের হাতে নিতে মরিয়া হয়ে পরেছে হাসিনা। অনেক স্বার্থের বিনিময়ে ভারতের মোদী সরকার মার্কিনীদের সাথে হাত মেলানোয় শংকিত হাসিনা শরণাপন্ন হয় রাশিয়ার। ঢাকায় পূর্ব থেকেই রাশিয়া তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক, প্রযুক্তি এবং লোকবল প্রায় ৪ গুন বৃদ্ধি করে। সেগুলো এখন হাসিনার পক্ষে নেয়ার জন্যই কাজ শুরু হয়েছে। তাছাড়া রাশিয়ার সাথে হাসিনা পরিবারের রয়েছে বিশাল অর্থনৈতিক স্বার্থ। ইউরোপের কারনে অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত রাশিয়া বাংলাদেশে তাদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলতেই মাথে নেমেছে। সাথে চীনকে পাওয়ার হিসেব তাদের রয়েছে, তবে তা নির্ভর করবে পাকিস্তানের ভুমিকার উপর।
বিদ্যুত লাইন এবং পরবর্তীতে পানি সরবরাহ লাইন কেটে দিয়ে সরকার মূলত বেগম খালেদা জিয়াকে বাসায় নিতে চাচ্ছে। যাতে করে তাকে গৃহে অন্তরীণ করা সহজতর হয়। দেশব্যাপী ধরপাকড় করে বিরোধীদের দমনের জন্য গত ১ বছরে নতুন ৯ টি কারাগার বানানো হয়েছে। যে কারনে এতো গ্রেপ্তার করেও স্থানাভাব হচ্ছে না। তাছাড়া ক্রসফায়ার অব্যাহত রয়েছে ভীতি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। ইতিমধ্যেই যাদের টার্গেট করে বাসায় খোজা হচ্ছে তাদের পাওয়া না গেলে তাদের পিতা-মাতা ভাইবোনদের মারপিটের অভিযোগ উঠেছে র্যাব ও পুলিশের বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রামসহ কয়েক স্থানে পঙ্গু পিতাকে মারধর এবং যুবতি নারীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এমন সব পরিবারের সন্তানেরা এতোটাই ক্ষুব্ধ যে তাদের হাতে যে কোন সময় র্যাব বা পুলিশের অফিসার বা তাদের পরিবারের লোকক্ষয় শুরু হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখন বেগম জিয়াসহ সকল বড়বড় নেতাদের ধরে জেল জরিমানা নির্যাতন, জামায়াত শিবিরের কয়েকশ নেতাকে সরাসরি হত্যা এবং জামায়াতকে যেকোন সময় নিষিদ্ধের ঘোষণা নিয়ে হাসিনা গং কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন বাহিনীর যারা হাসিনা ও ভারতের স্বার্থে কাজ করেছেন তারা নিজেদের ও তাদের পরিবারের ভবিষ্যত ভেবে আতঙ্কিত হয়েই হুমকি ধামকি ও হত্যাকান্ড শুরু করেছে যা সরাসরি হাসিনাকেই বিপদগ্রস্থ করে দিচ্ছে প্রতি মুহুর্তে।
এদিকে স্ট্র্যাটেজিক বিশ্লেষকদের তথ্যানুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় নিরাপদ একটি ঘাঁটি হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করেছে। কারণ একমাত্র বাংলাদেশের জনগণই কখনোই মার্কিনীদের স্থাপনায় হামলা করবে না। এদেশের জনগণ এরূপ সংস্কৃতি বহন করে না। তাছাড়া ভারতের চেয়ে তাদের কাছে মার্কিনীরা বেশি গ্রহনযোগ্য। তাই যুক্তরাষ্ট্র সময়মতই তাদের খেলা শুরু করেছে। হাসিনা সরকারকে পতনের জন্য তারা মোদী অস্ত্র কাজে লাগাচ্ছে। মোদী সরকারও সম্ভাব্য চীনা হামলা ঠেকাতে এবং বিশাল আন্তর্জাতিক ও সামরিক সুবিধা নিতে মার্কিনী খেলায় সামীল হয়েছে। উল্লেখ্য চীন ভারতের কাছে ৮০ হাজার বর্গমাইল ভূমি দাবী করছে। ৬২ সালের যুদ্ধে ৬৫ হাজার বর্গমাইল ভূমি চীন দখল করে নিয়েছে।
ড: এমাজউদ্দিন আহমেদ জাতীয় সরকারের কথা বলার পরে অনেকেই এটিকে গুরুত্বহীন ভাবলেও ক্রমান্বয়ে জাতীয় সরকারের ইস্যুটি সামনে চলে আসে। এখন প্রশ্ন জেগেছে বর্তমান সংবিধানে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব কিনা? বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নিরপেক্ষদের নিয়ে এই সরকার কিভাবে একটি জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে পরিচালিত হবে? এই ক্ষেত্রে সংবিধানকে নির্বাসনে পাঠিয়েই একটি জাতীয় সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে যা বাস্তবায়নের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছে ব্যাপকভাবে। হাসিনা গং হীন একটি সরকার হবে এরুপ ধারণা থেকে বিএনপি জাতীয় সরকারের কনসেপ্ট গ্রহণ করতেও পারে বলে গেছে। তবে এই জাতীয় সরকার ভারতীয়দের 'বি' টিম হলে তাতে জাতি হিসেবে বাংলাদেশীদের কতখানি স্বার্থ রক্ষা হবে সেটি নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে। কারণ সেই সময় সামরিক বাহিনীর ভূমিকার উপর জাতীয় সরকারের লাইফ লাইন নির্ভর করবে। তবে হাসিনা কিভাবে নিজেদের কত কম সর্বনাশ করে বিদায় নেবেন এখন সেটিই দেখার বিষয়। আর হাসিনা গংদের সর্বনাশের মাত্রার উপর নির্ভর করবে সামনের দিনগুলোর রাজনৈতিক ভবিষ্যত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন