10 Jan, 2015 বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনসহ প্রভাবশালী দেশ, সংস্থা এবং ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকরা চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দুই পক্ষের সংলাপের প্রতি জোর দিয়ে সরব হয়েছেন। ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন বিতর্কিত নির্বাচন ইস্যুতে প্রভাবশালী দেশগুলোর অবস্থানের পরিবর্তন না হলেও কিছুদিন কার্যত তারা নীরবতা পালন করে। সরকার প্রচার করে বিদেশীরা বর্তমান সরকারকে মেনে নিয়েই সম্পর্ক উন্নয়ন করছে। কিন্তু ভিতরের প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রভাবশালী পত্রিকাগুলোতে নিবন্ধ প্রকাশ এবং সম্পাদকীয় লেখা হচ্ছে। ৫ জানুয়ারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়ে এবং আমেরিকান ক্লাবে ইউরোপ ও উন্নত বিশ্বের কূটনীতিকরা কয়েকদিন থেকে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তারা বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে বলে জানা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় দায়িত্বরত বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ঘটনায় আমি উদ্বিগ্ন, মর্মাহত, ব্যথিত ও চিন্তিত। তিনি সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সংলাপের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। বিএনপি চেয়ারপার্সনের ওপর পিপার স্প্রে নিক্ষেপের পর ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ ফোন করেন গুলশানে অবরুদ্ধ বেগম জিয়াকে।
ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ায় বাংলাদেশের চলমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। পত্রিকাটির এক নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের এখন দারুণভাবে একটি নতুন রাজনৈতিক ঐকমত্য দরকার। সেটা কেবল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বাভাবিকীকরণের জন্য নয়, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার স্বার্থেও দরকার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতা ঘুচিয়ে ফেলার এখনই সময়। প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজারেও সরকারের প্রতি নমনীয় হওয়ার আহবান জানিয়ে বলা হয়, এ ধরনের পরিস্থিতি চলতে থাকলে সরকার চরম বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়তে পারে। লন্ডন ও নিউ ইয়র্কভিত্তিক প্রভাবশালী পত্রিকাগুলোতেও বাংলাদেশের চলমান সংকট নিরসনে সংলাপের প্রতি জোর দিয়ে সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় ছাপা হচ্ছে।
গত ৬ জানুয়ারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এক বিবৃতিতে জনগণ যাতে অবাধে, শান্তিপূর্ণভাবে তাদের রাজনৈতিক মত প্রকাশ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এ ব্যাপারে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র মনিকা এল শাই গত বুধবার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশজুড়ে সহিংসতার খবরে আমরা উদ্বিগ্ন এবং আমরা সব পক্ষকে সহিংস কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাই। লোকজনের প্রাণহানি, হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে আমরা মর্মাহত। জনগণের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মত প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলকে সংঘাত ও ভীতিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলার আহ্বান জানাই।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড এডামস গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের শক্তির অপপ্রয়োগ, বিরোধী দল দমনে গ্রেফতার, গণমাধ্যমের ওপর অবৈধ নিয়ন্ত্রণারোপ ও সেন্সরশিপ, জনগণের মতকে দমনের বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। অনাকাংখিত এসব ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। আর্থিক খাত ও অর্থনীতি নিয়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক ফিমালাক এস এ এবং নিউ ইয়র্কভিত্তিক হার্টস কর্পোরেশনের যৌথ মালিকানায় পরিচালিত সংস্থা ‘ফিচ রেটিং’ বিবৃতিতে বলেছে, জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে সংঘটিত কর্মকা- দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের উচিত দেশের স্বার্থে, ইতিবাচক অর্থনীতির স্বার্থে সহিংসতা বন্ধ করা এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন করা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ইটিভি’র মালিক আবদুস সালাম এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে পুলিশ যে মামলা করেছে, তা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।
লন্ডনভিত্তিক এই সংস্থার মুখপাত্র আব্বাস ফয়েজ এই গ্রেফতারের ঘটনাকে বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অধিকারের সুস্পষ্ট লংঘন বলে বর্ণনা করেন। সেই সাথে গত বুধবার নোয়াখালীতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি সমর্থকদের সংঘর্ষে দু’জন নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তেরও দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন ছাড়া চলমান সংকট উত্তরণের কোনো পথ নেই। তিনি বলেন, বড় রাজনৈতিক দল দুইটির সমঝোতার জন্য বসতে হবে। অন্যথায় দেশ অজানা গন্তব্যে চলে যাবে।
তিনি আরো বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকা সম্পর্কে আমি কোনো মন্তব্য করব না। কারণ, তারা তো এখন আর ক্ষমতায় নেই। কিন্তু সরকার যা করছে, সেটা সমর্থন করার মতো নয়। এ জন্য একসময় তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক মনে করেন, মধ্যবর্তী নির্বাচনই এখন একমাত্র সমাধান। কারণ, সাংবিধানিকভাবে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে, একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হবে। কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। এ ধরনের নির্বাচন ইতিহাসে নজিরবিহীন।
তার মতে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনমনীয় ভূমিকা দেশকে আরও বেশি সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে। তারা যদি ঠান্ডা মাথায় বসে আলাপ-আলোচনা করে মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে একমত হন, তাতে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে যেহেতু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, তাই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে তাদেরই।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজার একটি সম্পাদকীয় লিখেছে। এতে গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী দল উভয়কে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পত্রিকাটি। তবে এ ক্ষেত্রে শাসকদলের নমনীয় হওয়া বেশি প্রয়োজন বলে মনে করে পত্রিকাটি। সেই সাথে বাংলাদেশে কার্যত জরুরী অবস্থা চলছে বলেও মন্তব্য করেছে।
‘গণতন্ত্রের উদ্বেগ’ শিরোনামে গতকাল প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে আরো বলা হয়েছে যে, গণতন্ত্র মানে কেবল শাসকের অভিপ্রায় নয়, বিরোধীদেরও তাহাতে প্রতিবাদের পূর্ণাঙ্গ অধিকার স্বীকৃত। বিএনপি নেতৃত্ব যদি তাহাদের বয়কট করা নির্বাচনকে অবৈধ আখ্যা দিয়া প্রতিবাদ জানাইতে চায় এবং নূতন করিয়া নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামে, তবে তাহা নিষিদ্ধ করা ও নেতাদের গ্রেফতার করা কেমন ধরনের গণতন্ত্র?
আনন্দবাজার পত্রিকা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে একটি পন্থাও বাতলে দিয়েছে। তারা পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে বলেছে, বিরোধী পক্ষকে দমন করা নয়। গণতন্ত্রের স্বার্থেই নমনীয় হওয়া দরকার। আর শাসক পক্ষের দিক হইতেই নমনীয়তা অধিক জরুরী। নতুবা রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িবার আশঙ্কা প্রবল, মৌলবাদীরা তাহার সুযোগ লইতে পারে। তাহার পরিণাম কেবল দেশের উদীয়মান ও সংকটদীর্ণ অর্থনীতি নহে, দেশের শাসক দলের পক্ষেও শেষ বিচারে বিপজ্জনক।
বাংলাদেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যা ঘটছে তা শুভকর নয়। এমন অবস্থার ফাঁকে অশুভ শক্তি ফাঁদ পেতে থাকে। এ অবস্থায় সমাধানের চাবিকাঠি প্রধান দুই নেতার হাতে। ব্যক্তিগত আক্রোশ বাদ দিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দুই নেতাকেই পথ বের করতে হবে। তাদের এক টেবিলে বসতে হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা তিনি সরকারে আছেন।
এমন অবস্থার মধ্যেই সরকার জার্মানীর নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড. গাব্রিয়েলা গুয়েলিলের নিয়োগকে মেনে নিচ্ছে না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশের এ ধরনের আচরণে জার্মান সরকার হতাশ এবং বিব্রত। যদিও তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন বিবৃতি দেয়া হয়নি। ওয়াকিবহাল কূটনীতিকরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কে কিছুটা হলেও টানাপড়েন চলছে ৫ই জানুয়ারীর বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান রেখে আসছে। জার্মানীর এই কূটনীতিককে নিয়ে টানাপড়েনের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা হলেও সঙ্কটের মুখে পড়বে।
অন্যদিকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পরে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা চালায় সরকার। এতে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু দিল্লীর ক্ষমতার পালাবদলের কারণে তাতে কোনো কাজ হয়নি। ভারতের বর্তমান মোদী সরকারও বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। ভারত ট্রানজিট, সমুদ্র বন্দরসহ সব সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি চায় একথাও যেমন সত্য, তেমনি এদেশে একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকুক তাও তারা চায়। কারণ, ভারত ভালো করেই জানে, বিএনপি ক্ষমতায় এলেও তাদের সুযোগ-সুবিধা কমবে না। এমন কথাবার্তাও তাদের মধ্যে হচ্ছে।
এর ফলে বৈধতার সন্ধান চলতে থাকে নিরন্তর। বিশেষ করে প্রভাবশালী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে নানা কূটনৈতিক চেষ্টা তদবির চালিয়ে যেতে থাকে সরকার। তা সত্ত্বেও ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন যে বৈধ নয়- সে অবস্থানেই ওই দেশগুলো এখনো অটল রয়েছে। বৈধতা অর্জনের জন্য খোদ প্রধানমন্ত্রী কয়েকদফা বিদেশ সফরের পরে ঢাকায় এসে এমন ধারণা দেয়া হলো যে, সমর্থন মিলছে। কিন্তু বাস্তবে তা সঠিক ছিল না। বৃটেন সফর শেষে ঢাকায় এসে বলা হলো- বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন মেনে নিয়েছেন। পরে বৃটিশ পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় লিখিতভাবে জানানো হলো- তারা মেনে তো নেয়ইনি বরং মনোভাব আগের মতোই রয়ে গেছে। একইভাবে ইউরোপে এক সম্মেলন থেকে ঢাকায় এসে বলা হলো, তারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্নই উত্থাপন করেনি। সরকার বোঝাতে চেয়েছিল, যেহেতু প্রশ্ন করেনি সে কারণে মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ। তবে কূটনীতিতে সব মৌনতা যে সম্মতি নয়, সে কথাটি ক্ষমতাসীনরা বেমালুম চেপে গেছে। একইভাবে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ধারণা দেয়া হয় যে, মার্কিনীরা এখন এ সরকারকে মেনে নিয়ে কাজ করতে চায়। কিন্তু বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা তার শেষ সংবাদ সম্মেলনে বলে গেছেন যে, বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারী ২০১৪ এর নির্বাচনের বিষয়ে তাদের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি।
৫ জানুয়ারীর বিষয়ে চীন সতর্ক অবস্থান বজায় রেখেছিল। কিন্তু চীনের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের সরকারী চেষ্টায়ও ভাটা পড়েছে। কারণ, চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ চুক্তি থেকে বাংলাদেশের পিছিয়ে যাওয়া এবং শর্তারোপকে চীন ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সরকারের সম্পর্কোন্নয়নের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে সউদী আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করলেও সম্পর্কের বরফ একটুও গলেনি।
সব মিলিয়ে সরকার বহির্বিশ্বের ব্যাপক চাপে রয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে বিরোধী দল দমন-পীড়নে ক্ষমতাসীনরা যে আরও কঠিন অবস্থানে যাবে তাও স্পষ্ট। ফলে মনে হচ্ছে, সরকার যতোই কঠোর অবস্থান নেবে ততোই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সরকারের যেমন বিচ্ছিন্নতা বাড়বে তেমনি চাপও বাড়তে থাকবে।
উৎসঃ inqilab
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন