কারাগারে যারা থাকেন তাদেরও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কারাগারে নির্ধারিত নিয়মে খাবার সরবরাহে বাধ্যবাদকতা রয়েছে। কারাবিধিতে স্পস্ট লিখিত আছে প্রত্যেকের জন্য দিনে কতটুকু খাবার প্রাপ্য। সেই প্রাপ্য নিশ্চিত করার দায়িত্ব হচ্ছে সরকার তথা কারা কতৃপক্ষের। কিন্তু ইদানিং আমরা দেখতে পাচ্ছি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার সরবরাহে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। পত্রিকার পাতায় প্রতিদিন নিউজ আসছে বিরোধী দলীয় জোট নেত্রীর অবস্থান স্থলে খাবার সরবরাহে বাঁধা। সর্বশেষ গতকালের অনলাইন গুলোতে খবর ছিল সাবেক কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা খাবার নিয়ে এসেছিলেন। তারা এসেছিলেন সাবেক সেনা প্রধানের স্ত্রী হিসাবে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য খাবার নিয়ে। তাদের খাবারও পৌছাতেও বাধা দেয়া হয়। পুলিশ কেড়ে নিয়েছে সেই খাবার। এর আগে আরো অনেকেই খাবার পৌছাতে চেয়েছিলেন সেখানে। কিন্তু পুলিশি বাঁধার কারনে পারেননি। খাবার সরবরাহে বাঁধা নিয়ে কথা উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্টে এনিয়ে কথা বলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। তিনি অত্যন্ত ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছেন রাজনৈতিক কার্যালয়ে খাবার যাবে কেন? প্রশ্ন হচ্ছে জেলখানায় খাবার যেতে বাঁধা নয়, বরং আইনি বাধ্যবাদকতা রয়েছে। কারাগারে খাবার সরবরাহে বাধ্যবাদকতা থাকলে কারো রাজনৈতিক কার্যালয়ে খাবার যেতে আপত্তি কেন! নিশ্চয়ই কোন অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে এখানে।
একদিকে খাবারে বাঁধা দিয়ে বিরোধী দলীয় জোটের নেত্রীকে শারিরীক ভাবে দুর্বল করার চেস্টা। অন্যদিকে আন্দোলন দমনের নামে চলছে নিয়মিত রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড। গত শনিবারও অনলাইন পত্রিকা গুলোতে খবর ছিল বরিশালে যুবদলের দুই নেতা কথিত ক্রসফায়ারের নামে টর্গেট হত্যার শিকার হয়েছেন। পুলিশের টার্গেট হত্যা, গ্রেফতারের পর পায়ে গুলি এখন নিয়মিত ব্যাপর হয়ে গেছে। মানুষের জীবনের এখন কোনই মূল্য নেই এই জনপদে। খাবার সরবরাহে বাঁধা, টার্গেট হত্যা সরাসরি মানবাধিকারের লঙ্ঘন। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিতে এখন টার্গেট হত্যা আর খাবার সরবরাহে বাঁধা নিয়মিত খবরে পরিণত হয়েছে। এসব নিয়ে ঠাট্রা বিদ্রোপ করা হয় জাতীয় সংসদে দাড়িয়ে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের নামে বিনা ভোটে সংসদ ও সরকার গঠনের পর ভালই কাটছিল। বিরোধী দলীয় জোটের রাজপথে উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। তবে সভা সমাবেশ করা হয়েছে বিরোধী জোট নেত্রীর পক্ষ থেকে। দেশের বিভিন্ন জেলায় সফর করেছেন বিরোধী জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এসব জনসভায় মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। যেখানেই তাঁর উপস্থিতি সেখানেই মানুষের ঢল। মানুষের এই ঢল দেখেই সরকার আন্দাজ করতে পেরেছে সবকিছু। তাই ঢাকায় যাতে বিরোধী জোট নেত্রী জনসভা করতে না পারেন সেই কৌশল নেয়া হয়। সর্বশেষ জনসভা ছিল গাজিপুরে। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর এই জনসভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জনসভাস্থল প্রথমে ছাত্র লীগের মাধ্যমে ৩দিন আগেই দখলে নেয়া হয়। তারপর ১৪৪ ধারা জারি করানো হয় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে। বরাবরের মতই বিরোধী জোট হাত গুটিয়ে ঘড়ে উঠে যায়। জনসভা স্থগিত ঘোষনা করা হয় আগের রাতে। এর পর আর কোন জনসভা করতে দেয়া হয়নি।
৫ জানুয়ারী ভোটার বিহীন নির্বাচনের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কালো দিবস ঘোষণা দিয়েছিল বিরোধী জোট। সেই দিন ঢাকায় কালো পতাকা হাতে প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন বিরোধী জোট নেত্রী। তাঁর জনসভার ২দনি আগেই অথাৎ ৩ জানুয়ারী রাতে বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে দেয়া হয়। তিনি রাতে কার্যালয় থেকে বের হতে চেয়েছিলেন। যেতে চেয়েছিলেন রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। তাঁকে আর যেতে দেয়া হয়নি সেখানে। সকালে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের গেইটের নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। গেইটের সামনে এনে রাখা হয় ইট-বালুর ট্রাক। এর পর থেকে দলীয় কিছু নেতা-কর্মী নিয়ে কার্যালয়েই অবস্থান করছেন বিরোধী জোট নেত্রী। তবে গত ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে কার্যালয়ে খাবার সরবরাহে বাঁধা দিচ্ছে পুলিশ। তারা এখন অনেকেই অনাহারে, অর্ধাহারে দিনা যাপন করছেন। এতে বিরোধী জোট নেত্রীর শারিরীক শক্তি ক্রমে দুর্বল হবে এটাই স্বাভাবিক। বয়স ৭০-এর ঘরে পা রাখা একজন নারী তিনি। নিয়মিত খাবার এবং শারিরীক সমস্যা গুলোকে নজরদারি করেই তাঁকে এখন চলার কথা। কিন্তু বাসার বাইরে রাজনৈতিক কার্যালয়ে খেয়ে না খেয়ে কতদিন অবস্থান করবেন এটাই হচ্ছে প্রশ্ন। সরকারও হয়ত চাইছেন বিরোধী জোট নেত্রীকে এই পথেই ঠেলে দিতে।
কার্যালয়ে অবস্থানরত অবস্থায় বিরোধী জোট নেত্রী তাঁর ছোট পুত্রকে হারিয়েছেন। মালয়েশিয়ায় অবস্থানকালে তিনি হঠাৎ ইন্তেকাল করেন। গ্রামে গঞ্জে এমনিতেই কোন বাড়ি কেউ মারা গেলে সেখানে কয়েক দিন রান্না হয় না। পাড়া প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজনরা সেই বাড়িতে খাবার পাঠায়। এটা পল্লী অঞ্চলের একটি রীতি। সরকার এই রীতিটাও পালন করতে দেয়নি বিরোধী দলীয় নেত্রীর ক্ষেত্রে। তাঁর কার্যালয়ে অবস্থানরতদের জন্য নিয়ে আসা খাবার আটকে দিচ্ছে পুলিশ। প্রশ্ন হচ্ছে বিরোধ জোট নেত্রীর কার্যালয় কি তাইলে কারাগারের চেয়েও অধম! এখানে খাবার সরবরাহ করতে বাধা দিতে হবে!
লেখক: দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন