একবার এক সাহসী যুবক একটি সভায় এক শঠ রাজনীতিবিদকে প্রশ্ন করে জর্জরিত করছিল। অবশেষে রাজনীতিবিদ যুবকটিকে এড়াতে পারলেন না। তিনি বললেন, “আমার সাথে আপনার যে অমিল তা কি শ্রোতাম-লীকে বলবেন? নাগরিকের কি উপকার আপনি করছেন?” যুবকটি দাঁড়িয়ে বলল, “গত নির্বাচনে আমি আপনার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছি।” কিন্তু বাংলাদেশে সেই প্রতিবাদের সুযোগটুকু আজ কেড়ে নিয়েছে। ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন গণতন্ত্রের সংজ্ঞাকে পাল্টে দিয়েছে। কার্ল পপার বলেছেন-“কে শাসন করবে এ প্রশ্ন করা সঠিক নয়। কু-সরকারকে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বের করতে হবে এ প্রশ্নই এখন প্রধান। এর মধ্যেই সমাধান। এটাই গণতন্ত্র।” ন্যায়পরায়ণ সরকারের চেয়ে আর কি মহৎ হতে পারে? এমন নেতা নির্বাচিত হবেন তারা শাসক নয় সেবক। এ ধরনের সরকারই কেবল দেশের স্বাধীনতা এবং নাগরিকের সুখ-সুবিধার নিরাপত্তা দিতে পারে। আওয়ামী শাসনামলে দেশ এখন সন্ত্রাস,দুর্নীতি, খুন আর গুমের রাজনীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এখানে এখন ক্রসফায়ার আর পেট্রোল বোমা মেরে জনগণকে হত্যা করে গণতন্ত্রের চর্চা চলছে? মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে, হুমকি-ধমকি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে, শাসকগোষ্ঠী তথ্য প্রবাহের অবারিত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করছে? সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বালুর ট্রাক দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে, বিদ্যুতের লাইন কেটে,পানি,খাবার বন্ধ করে দিয়ে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হচ্ছে? তার বাসার ইন্টারনেট, মোবাইল, ফোন বন্ধ করে দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের ফাইনাল রাউন্ড পরিচালিত হচ্ছে? গণতন্ত্রের আর কত সৌন্দর্য আপনি দেখতে চান? তাও কি জাতি জাগবে না? অন্যায়, অবিচার,জুলুম-নির্যাতনের নিরাময়ের জন্য রাষ্ট্রকে হয় সংস্কার পন্থা অবলম্বন করতে হবে, নয় তো বিপ্লবের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এর কোন বিকল্প আছে কি?
আমাদের জাতীয় জীবনে কালো মেঘের আনাগোনা এখন প্রকট। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এখন হুমকির মুখে। অসুস্থ রাজনীতি ক্ষমতার দাম্ভিকতা আর শাসকগোষ্ঠী ও চাটুকার দলীয় কর্মকর্তাদের কুঠুরীতে বন্দী নাগরিক খাদের কিনারায় দন্ডায়মান। আমাদের বড় দু’দল আর জোটের মধ্যে বিভেদের সমাধান না হলে পরিণতি হবে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভয়াবহ। এমন এক উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দেশের ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যেন আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর খেলনা পুতুলে পরিণত হয়েছে। তা যেন আমাদের রাজনীতিবিদরা বুঝেও না বুঝার ভান করছে। হিটলার লিখেছে, “ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে কাল্পনিক শত্রুর সৃষ্টি করতে হবে। তা করে দেখতে হবে যে দেশ বিপদাপন্ন। এতে জনসাধারণ ভীত হয়ে পড়বে। জনগণ ভীত হলেই তাদেরকে দাসত্বে পরিণত করা সহজ।” জনগণের দুর্ভোগ যত বেশি হবে, ততই রাজনীতিবিদগণ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য শক্তিশালী হবে। স্যার অর্নেস্ট বেন তাই বলেছেন-“বিপদ অন্বেষণ করার কৌশলই হচ্ছে রাজনীতি। বিপদ থাকুক, আর নাই থাকুক, তা খুঁজে নিয়ে তার ভুল ব্যবস্থাপনা করা এবং ভুল প্রতিষেধক প্রয়োগ করা।” বর্তমানে অসুস্থ রাজনীতি গোটা জাতির জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক দল অন্য দলের সাথে প্রতিযোগিতা-তা তো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। এই প্রতিযোগিতা হবে যুক্তিপূর্ণ ও বাকপটুতার লড়াই। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম রাজনীতিবিদদের এমন ব্যর্থতা আর দেখতে চায় না। দেশের সংকট আমাদেরকেই সমাধান করতে হবে। প্রয়োজন জাতীয় সদিচ্ছা আর আন্তরিকতা। আমারা ১/১১ পরবর্তী সময় দেখেছি। দেখেছি ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন। শুনেছি বাকশালের অত্যাচার আর নিষ্ঠুরতার কাহিনী। আহমেদ মূসা তার ‘ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ’ বইয়ের উৎসর্গনামায় মুজিববাদী ঘাতক বাহিনীর অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার বাজিতপুরের ইকুরটিয়া গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক আবদুল আলীর অভিজ্ঞতার বর্ণনা তুলে ধরে লিখেছেন, ‘...ঐখানে আমাকে (আবদুল আলী) ও আমার ছেলে রশিদকে হাত-পা বেঁধে তারা খুব মারলো। রশিদকে আমার চোখের সামনে গুলি করলো। ঢলে পড়লো বাপ আমার। একটা কসাই আমার হাতে একটা কুড়াল দিয়ে বলল, তোর নিজের হাতে ছেলের গলা কেটে দে, ফুটবল খেলবো তার মাথা দিয়ে। আমার মুখে রা নেই। না দিলে বলল তারা তোরও রেহাই নেই। কিন্তু আমি কি তা পারি? আমি যে বাপ। একটানা দেড় ঘণ্টা মারার পর আমার বুকে ও পিঠে বন্দুক ধরলো। শেষে নিজের হাতে কেটে দিলাম ছেলের মাথা। আল্লাহ কি সহ্য করবে?” একই চিত্র এখন দেশে বিরাজমান।
আমরা দেখেছি স্বৈরাচারের দীর্ঘ শাসন আর শোষণ। এ সব পেছনে ফেলে আমাদের এগুতো হবে সামনের দিকে। ১/১১ মহাপ্রলয় থেকে রেহাই পাননি কেউই। আমরা কি আবার দেশকে সেদিকে নিয়ে যাচ্ছি? না তার থেকে ভয়াবহ অন্যকোন দিকে!! আমরা কি বারবার মীমাংসিত ইস্যুগুলো জাগিয়ে জাতিকে বিভেদ আর বিভক্তির দিকে ঠেলে দিব? আজকের সংকটের অন্যতম কারণ কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার বাতিল। দেশের সকল বিরোধী দল, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী এমন কি সরকারদলীয় ব্যক্তিদের মতকে উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা তা বাতিল করেছেন। তাহলে আমরা কি আরেক ২৮ অক্টোবর কিংবা তার থেকে বড় রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছি?
গণতন্ত্র একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার মূলমন্ত্র। উন্নতি, অগ্রগতি ও এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যম হলেও বর্তমান শাসক শ্রেণী তা একেবারে ঘোষণা দিয়ে উপেক্ষা করছে। গণতান্ত্রিক পন্থায় এগিয়ে যাওয়া এই অপরূপ ও অবারিত সম্ভাবনার বাংলাদেশের উন্নয়ন পার্শ্ববর্তী দেশ ও বহিঃবিশ্বের চক্ষুশূল হয়ে উঠে। যার কারণে ভারত, আমেরিকা, চীন সবাই এখানে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। ফলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তি, হিংসা, বিদ্বেষ ও নেতৃবৃন্দের ক্ষমতার লোভ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিকতা আর ৫ জানুয়ারির অগণতান্ত্রিক সরকারের সুযোগকে পুঁজি করে তারা এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
আমাদের রাজনীতিবিদদের বড় অংশই দুর্নীতিবাজ। আর দুর্নীতিপরায়ণ লোক সত্য সম্পর্কে অন্ধ, বধির এবং নীরব। অহংকার দ্বারা তাদের ক্ষমতার আকাক্সক্ষা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই যুদ্ধ, দাঙ্গা এবং বিশৃঙ্খলাই যেন তাদের জীবিকার উপায়। কুশাসন প্রথমে সমাজে আগুন লাগিয়ে দেয়, তারপর আগুন নিভাতে সময় খরচ করে। একে বলা হয় সংকট ব্যবস্থাপনার ধারণা। আর দায়িত্বহীন সরকার নাগরিকদের অসন্তুষ্টির প্রতি উদাসীন থাকে। পাগল ষাঁড়ের মত কুশাসক তার পথ বিঘ্নকারীকে আক্রমণ করে। ন্যায়নীতির পূর্ণ অনুপস্থিতির জন্যেই প্রশাসনে দুর্নীতির যাত্রা সংস্কৃতির গতি সর্বদা উপর থেকে নিচে, নিচ থেকে উপর দিকে নয়। সুবিধাভোগীরাই আজ অপরাধের সাথে জড়িত। কিন্তু সুবিধা থেকে বঞ্চিত লোকেরাই অপরাধের শাস্তি পাচ্ছে। নিকৃষ্ট আইন অত্যাচার এবং পীড়নের নিকৃষ্টতম উদাহরণ। যেখানে আইনের শাসন, জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে দুর্নীতি জীবনের উপায়ে পরিণত হয়। থাকে না মানুষের স্বাধীনতা। আমরা এখন এমন দেশেরই নাগরিক।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্রের শিকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যতটুকু তার থেকে অনেক বেশি পিছিয়েছে এদেশের মীরজাফরদের উত্তরসূরীদের কারণে। এরা জেলি মাছের মত। জেলি মাছ অনেক সময় যেমন শামুক গিলে ফেলে। শামুকের শক্ত আবরণের জন্য সে না মরে বেঁচে থাকে। কিন্তু, তার বাঁচার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। তাই শামুক জেলির পেটের ভিতর থেকেই জেলি মাছকে খেতে শুরু করে। জেলি মাছকে সম্পূর্ণ খেয়ে সে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এজন্য বলা হয় ঘরের শত্রু বিভীষণ। ভিতরের শত্রু সমাজকে খেয়ে শেষে ধ্বংস করে ফেলে। এ সমাজে দুই ধরনের বিশ্বাসঘাতক আছে। (ক) সক্রিয় বিশ্বাসঘাতক। (খ) নিষ্ক্রিয় বিশ্বাসঘাতক। সক্রিয় বিশ্বাসঘাতকরা ব্যক্তিগত লাভের আশায় মাতৃভূমিকে বিক্রি করে দেয়। নিষ্ক্রিয় বিশ্বাসঘাতক মাতৃভূমিকে বিক্রি হতে দেখে নীরব থাকে। তারা সরব হয় না। তাই ব্রিটিশরা যখন সমস্ত বাংলা দখল করার প্রয়োজন মনে করল, তখন মীরজাফর এবং নবাবের উচ্চাকাক্সিক্ষত মন্ত্রীরা তাদেরকে এ বিষয়ে সাহায্য করেছিল। পরবর্তী নবাব হওয়ার লোভে মীরজাফর সিরাজউদদৌলাকে পলাশীর যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে সৈন্য পিছানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন, অথচ সৈন্যরা ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাজিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিল। সিরাজউদদৌলা তাঁর বিশ্বাসী মন্ত্রীর উপদেশ গ্রহণ করে সাম্রাজ্য এবং জীবন উভয়ই হারালেন। মীরজাফর বিশ্বাসঘাতকতা করে মাতৃভূমিকে বিদেশীদের হাতে তুলে দিলেন। লোভ বিশ্বাসঘাতকদের একমাত্র ধর্ম। একজন বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তিগত লাভের জন্য শয়তানের সাথে রাতের খাবার খেতে পারে। আর এই বিশ্বাসঘাতকতার সাথে যুগে যুগে ক্ষমতার লোভে কতিপয় রাজনীতিবিদরাই জড়িয়েছে বেশি। তরুণ প্রজন্মকে নিজেদের প্রয়োজনেই এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।
আমাদের পাল্টাতে হবে বিভেদের রাজনীতি। তরুণ প্রজন্মকে তাদের যোগ্যতা,সততা ও দক্ষতার মাধ্যমে সমাজের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে হবে। গড়ে তুলতে হবে জাতীয় ঐক্য। চিত্রাঙ্কন করতে হবে ক্ষুধা দারিদ্র্য মুক্ত সুখী-সমৃদ্ধশালী একটি বাংলাদেশের। আমাদের রাজনীতি এখন কলুষিত। জীবিত মানুষের কল্যাণের পরিবর্তে এখানে এখন মৃত ব্যক্তিদের নিয়ে গালি-গালাজ চলে অনবরত। অথচ দেশ এবং জাতি গঠনে প্রত্যেক ব্যক্তির অবদানই ইতিহাস স্বীকৃত। কোন আইন আর গালি-গালাজ করে তা পরিবর্তন করা যায় না। তাহলে কেন এতো বাড়াবাড়ি? আমাদের দেশের সংসদ এখন কারো গুণকীর্তন আর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিষেদাগারের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে। অথচ গরীবের টাকায় পরিচালিত এই সংসদ তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারছে। কিন্তু কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। অন্ধ আবেগ আর ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি তরুণরা আর কতদিন থাকবে? আজ আমাদের জাগতেই হবে। পরিবারতন্ত্র, দুর্নীতি, অসততা আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে দুর্বার প্রতিরোধ। কারণ আমাদের বুকে আছে বল, আছে বুদ্ধি আর আছে এগিয়ে যাবার দুরন্ত সাহস। তরুণরা পরাজিত আর পরাভূত হতে জানে না।
মহাকবি ইকবাল কর্তৃক রচিত নিচে ছন্দগুলো সময়োচিত সতর্কতার সংকেত দিয়েছেন এভাবে-”হে! বোকা মানুষ! নিজের দেশকে নিয়ে ভাব,বিপদ সময় দিক চক্রবাল সংকেত স্পষ্ট,মনোযোগ দিয়ে না শুনলে ধ্বংস অনিবার্য।” এ ভাবনায় তরুণদের আজ সম্পৃত্ত হতে হবে। যাদের বিবেক সুপ্ত কিন্তু মৃত নয় তাদের প্রতি জনগণের আহবান উদ্বিগ্ন নাগরিকদেরকে মুক্ত করতে এবং জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিভাধর উৎসুক একদল নাগরিকই কেবল পারে ইতিহাসের গতিপথকে পরিবর্তন করতে। আজ আমাদের অঙ্কন করতে হবে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভিশন। আবিষ্কার করতে হবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার লক্ষ্য। এ জন্য বলা হয় যে,নিজের ভেতরে নিজে নেতা হতে পারে, তখনই সে নেতৃত্ব পায় অন্যদের এবং সমাজের এবং রাষ্ট্রের। Leaded by some Ideal and lead some one to Ideal অর্থাৎ যিনি আদর্শ অনুসরণ করেন এবং আদর্শের দিকে অন্যদের পরিচালনা করেন, তিনিই নেতা। নেতা হতে হয় অনুশীলনের মাধ্যমে। ধর্মীয় নেতাদের কথা আলাদা, তারা God gifted. নেতা বা Leader শব্দটি বিশ্লেষণ তাহলে দেখি : L = Loyal of his Ideology বা আদর্শের প্রতি অনুগত। E = Educated বা বিদ্বান। A = Affectionate of Associates বা অধীনস্তদের প্রতি স্নেহশীল। D = Determind বা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। Dutiful বা কর্তব্যপরায়ণ। Dedicated বা ত্যাগী। Dear to all বা সবার প্রিয়। E = Efficient বা দক্ষ। Enthusiastic বা উদ্দীপিত। R = Responsible বা দায়িত্বশীল। Realiable বা যার ওপর নির্ভর করা যায়। তরুণদের এ সমস্ত গুণ অর্জন করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, মুহাম্মদ বিন কাসিম পেরেছে ১৭ বছরে, সালাউদ্দিন আইয়ুবী পেরেছে, হাজী শরীয়তুল্লাহ, তিতুমীর, খান জাহান আলী, শাহজালাল, শাহ মাখদুম পেরেছে, আমরা তাদের অসমাপ্ত কাজ করতে পারবো না কেন? আমরাও পারবো। কবির ভাষায় ”ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে”।
কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? এক বিড়াল এক বাড়িতে সব ইঁদুর শিকারের নেশায় মত্ত হল। সব ইঁদুর একটি সভা ডেকে এ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় খুঁজল। তারা একজন পরামর্শদাতার উপদেশ নিতে গেল, পরামর্শদাতা উপদেশ দিলেন, “বিষয়টি খুব সহজ। শুধুমাত্র বিড়ালের গলায় একটা ঘণ্টা বেঁধে দিতে হবে যে তোমরা তার আগমন ব্যাপারে সতর্ক হতে পার।” সে তার ফিস নিয়ে যাত্রা করতে উদ্যত হল। তখন একটি ক্ষুদ্র ইঁদুর বলল, “ঘণ্টা কে বাঁধবে। পরামর্শদাতা বললেন, “আমার কাজ শুধু সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেয়া, কিভাবে তা প্রয়োগ করতে হবে তা তোমাদের বিষয়।” ক্ষুদ্র ইঁদুরটি একাগ্রভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করল। পরের দিন এক ঔষধের দোকান থেকে ঘুমের ঔষধ এনে বিড়ালের দুধের সাথে মিশিয়ে দিল। বিড়ালটি যখন গভীর ঘুমে অচেতন তখন সেই বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বেঁধে দিল। সুতরাং উপদেশ অনেক সময় সহজলভ্য, কিন্তু তার প্রয়োগ খুব কঠিন। যারা বেশি কথা বলে তারা কাজ করে না। কেউ কোন কাজের সমাধানের জন্য একনিষ্ঠ হলে, দূরদর্শী হলে এবং তার কল্পনা কাজে পরিণত করার কাজে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলে, সে তার আকাক্সিক্ষত ফল লাভ করবেই। আমরা বিশ্বাস করি, সেই পথ আমাদের উত্তরসূরীরা আবিষ্কার করে গেছেন। আমরাও নতুন প্রজন্ম তা আবিষ্কার করতে পারবো।
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করার মধ্যেই দেশের উন্নতি নির্ভর করে। যারা দেশের কারণে জীবন উৎসর্গ করেন, তারা জীবন্ত লোকের মধ্যে জীবনের স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেয়। চার্লস মরিস-এর মতে কুশাসন থেকে উৎসারিত অন্যায় বিচার, কলুষিতা এবং অত্যাচরকে সহ্য না করার অস্বীকৃতি নীতিবান নাগরিকদেরকে মর্যাদা এবং উন্নতির পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। সততার সাথে যে নেতৃত্ব প্রদান করবে আমাদের সমাজ তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত। নেতৃত্ব প্রদানের জন্য তরুণদের দিকে তাকিয়ে আছে সমাজ এবং রাষ্ট্র। এই নেতৃত্ব দেয়ার অর্থ সবার আগে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলা। নিজে নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ভার গ্রহণ করুন। একবার এক কৃষক তার আপেল বাগানে কীটনাশক ঔষধ ছিটিয়ে দিচ্ছিলেন। তা দেখে একজন পথিক বললেন, “যেভাবে আপনি কীটনাশক ঔষধ ছিটাচ্ছেন, তাতে মনে হয় কীটের বিরুদ্ধে আপনার বিদ্বেষ রয়েছে।” কৃষক উত্তর দিলেন, “না, কীটের বিরুদ্ধে আমার কোন বিদ্বেষ নেই। আমি যা কিছু করছি তা সব আপেলের জন্য।” তিনি আরও বললেন, “আমি সব জায়গায় কীটনাশক ঔষধ ছিটাচ্ছি না। যে সব আপেল কীট দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমি শুধু ঐ সব আপেলে ঔষধ দিচ্ছি।”
নৈতিক মূল্যবোধ হচ্ছে আমাদের মূল কান্ড এবং সফলতা আমাদের পাখা। উভয়ের সমন্বয়ে মূল্যবোধ ভিত্তিক সফলতা অর্জিত হয়। আর এভাবেই অর্জিত হয় প্রকৃত স্বাধীনতা। স্বাধীনতার আলোকবর্তিকাকে পরবর্তী প্রজন্মের নিকট পৌঁছে দিতে হবে এ কার্যসাধনের মাধ্যমে। জাতির মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০০ ভাগ আমাদের যুবকদের দ্বারা গঠিত হয় না। কিন্তু, ভবিষ্যতে শতকরা ১০০ ভাগ গঠন করে যুবকরাই। তরুণ প্রজন্ম আমাদের যুগের নির্মাতা। আজ যারা নির্মাণ করছে তারাও তাদের যৌবনেরই অর্জিত সম্পদ। যুবকর্ইা সমাজের গতিশীলতা, ক্রমিক বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের প্রতীক। আর এই পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে আমদের তরুণ প্রজন্মইকে। শিশু জিহাদকে উদ্ধারে আমাদের রাষ্ট্র তেইশ ঘণ্টায় যেখানে পারেনি,আমাদের কয়েকজন তরুণ তা পেরেছে ২৩ মিনিটে। তাই এই দেশ,জাতি, এবং মানবতাকে উদ্ধারে তরুণ প্রজন্মকেই ক্রান্তিকালে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম তাদের সততা, মেধা, দক্ষতা, দেশপ্রেম ও মানবপ্রেমের চাদরে আবৃত করবে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণী- পেশা সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে তাদের পরিচয় আমরা তরুণ। আমরা বাংলাদেশী। তারুণ্যই আমাদের পুঁজি। তরুণ, করে নাকো ডর, মানে নাকো পরাজয়। এটাই হোক আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্রত্যয়। এটাই হোক মুক্তি আন্দোলনে আমাদের স্লোগান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন