উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রা. বলেন: নবী করীম সা. এর এ রকম অভ্যাস ছিল যে, তিনি যখন ঘরে তাশরীফ আনতেন কোন লৌকিকতা ছাড়াই ঘরবাসীদের সাথে প্রাণ খুলে কথাবার্তা বলতেন। কিন্তু মুয়াজ্জিনের আজান শোনা মাত্রই তিনি এরূপ ব্যাকুল হয়ে উঠতেন যে, সাথে সাথে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে দিতেন এবং নামাযের প্রস্তুতি নিতেন। তখন তাঁর অবস্থা দেখে মনে হত, আমরা যেন তাঁর নিকট সম্পূর্ণ অপরিচিত।
এর কারণ এই ছিল যে, আল্লাহ তায়া’লা এবং তাঁর বান্দার মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র সূত্র হচ্ছে নামায; সুতরাং এই নামাযের জন্য স্ত্রী-পুত্র তো বটেই এমনকি সমগ্র দুনিয়া এবং দুনিয়ায় যা কিছু আছে তার সবকিছু বিনষ্ট হলে ও কিছু আসে যায় না। মহান রাব্বুল আলামীন নামাযী বান্দাদের জন্য কি পুরস্কার রেখেছেন সে সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের কয়েকটি উদ্ধৃতি নিম্নে পেশ করা হল।
১. মহান আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেনঃ
‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক |
[ সূরা আনফাল-৩-৪]
‘‘যারা নামায কায়েম করে এবং আমার দেয়া রিযিক থেকে ব্যয় করে। তারা হল সত্যিকার ঈমানদার। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মান জনক রিযিক |
[ সূরা আনফাল-৩-৪]
২. আল্লাহ তা’য়ালা আরো বলে "আর যারা তাদের নামায সমূহের হিফাযত করে তারাই হবে অধিকারী। অধিকারী হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের তাতে চিরকাল থাকবে। [সূরা মুমিনুন -৯ -১১]
৩. হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
আমি আপনার উম্মতের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছি এবং আমি আমার নিজের সাথে অঙ্গীকার করেছি যে, যে ব্যক্তি যথা সময়ে নামায সমূহের পূর্ণ হিফাযত করবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে নামায সমূহের হিফাযত করবে না, তার জন্য আমার কাছে কোন অঙ্গীকার নেই। [আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ]
৪. একবার রাসুলুল্লাহ সা. সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেনঃ যদি তোমাদের মধ্যে কারো ঘরের পাশ দিয়ে কোন নদী প্রবাহিত হয় যার মধ্যে সে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে, তাহলে বল, তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? সাহাবীগণ আরয করলেন না, তার শরীরে কোন ময়লাই থাকবেনা। নবী করীম সা. বললেন, এরূপ হচ্ছে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত। আল্লাহ তা’য়ালা এসব নামাযের মাধ্যমে তার গুনাহগুলো মিটিয়ে দেবেন |
[বুখারী, মুসলিম]
৫. হযরত আবুযার রা. বর্ণনা করেনঃ একবার শীতের সময় যখন গাছের পাতা ঝরে পড়ছিল, নবী করীম সা. বাইরে তাশরীফ আনলেন এবং গাছের দু’টি ডাল ধরে ঝাঁকি দেয়া শুরু করলেন এবং ঝরঝর করে (শুকনো) পাতা পড়তে লাগল। তখন নবী সা. বললেন, হে আবুযার! যখন কোন মুসলমান একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকতার সাথে নামায পড়ে, তার গুনাহ সমূহ ঠিক এভাবে ঝরে পড়ে যেমন এ গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ছে।
[মুসনাদে আহমদ]
৬. বান্দার চারটি আমল নিয়ে ফেরেশতারা পরস্পরে বলাবলি করে। আমল সমূহ নিম্নরূপ
* নামাযের পর মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করা।
* এক নামায শেষ করে পরবর্তী নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকা।
* জামায়া’তে নামায পড়ার আশায় পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
* এবং অসুস্থ অবস্থায় শীতের কষ্ট উপেক্ষা করেও পরিপূর্ণ অযু করা।
এ চারটি কাজের মাধ্যমে নামাযী ব্যক্তি সুখে-শান্তিতে বাস করবে এবং নেককার বান্দা হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হবে। আর সে সদ্যজাত শিশুর মত নিষ্পাপ হবে। [ মিশকাত]
* নামাযের পর মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করা।
* এক নামায শেষ করে পরবর্তী নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকা।
* জামায়া’তে নামায পড়ার আশায় পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
* এবং অসুস্থ অবস্থায় শীতের কষ্ট উপেক্ষা করেও পরিপূর্ণ অযু করা।
এ চারটি কাজের মাধ্যমে নামাযী ব্যক্তি সুখে-শান্তিতে বাস করবে এবং নেককার বান্দা হয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হবে। আর সে সদ্যজাত শিশুর মত নিষ্পাপ হবে। [ মিশকাত]
৭. হাদীস শরীফে আছে, যে ব্যক্তি ধীরস্থিরভাবে পরিপূর্ণ আদবের সাথে যথা নিয়মে নামায আদায় করবে আল্লাহ্ তায়া’লা তাকে পাঁচটি পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত করবেন।
* তার রিজিক ও জীবিকার যাবতীয় কষ্ট দূর করে দিবেন।
* তার কোন কবর আযাব হবেনা।
* কিয়ামতের দিন আমলনামা তার ডান হাতে প্রদান করা হবে।
* সে বিদ্যুতগতিতে পুলসিরাত পার হতে পারবে।
* সে বিনা হিসেবে আনন্দের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [ফাজায়েলে নামাজ]
* তার রিজিক ও জীবিকার যাবতীয় কষ্ট দূর করে দিবেন।
* তার কোন কবর আযাব হবেনা।
* কিয়ামতের দিন আমলনামা তার ডান হাতে প্রদান করা হবে।
* সে বিদ্যুতগতিতে পুলসিরাত পার হতে পারবে।
* সে বিনা হিসেবে আনন্দের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [ফাজায়েলে নামাজ]
৮. হাদীস শরীফে আছে যে ব্যক্তি নামায পড়ে মসজিদ হতে বের হয়, কিন্তু পরবর্তী নামাযে শরীক না হওয়া পর্যন্ত তার অন্তঃকরণ মসজিদের দিকেই থাকে এবং সে যথাসময়ে নামায সম্পন্ন করে সে ব্যক্তি কিয়ামতের কঠিন দিবসে আল্লাহ্র আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে।
[মিশকাত]
৯. রাসূলে কারীম সা. বলেছেনঃ তোমরা সর্বদা গুনাহর আগুনে জ্বলতেছ। তোমরা যখন ফজরের নামায আদায় কর, তখন উহা নিভে যায়। ফজর হতে জোহর পর্যন্ত আবার পাপের আগুনে জ্বলতে থাক। যখন জোহরের নামায শেষ কর তখন উহা নিভে যায়। পুনরায় জোহর হতে আসর পর্যন্ত আগুন জ্বালিয়ে তার মধ্যে পোড়ার যাবতীয় ব্যবস্থা করতে থাক; কিন্তু আসরের নামায সমাপ্ত করার সংগে সংগে উহা নিভে শীতল হয়ে যায়। আবার আসর হতে মাগরিব পর্যন্ত সময় উহা এমনভাবে জ্বলে উঠে যে, উহার শিখা তোমাদেরকে ছাই করে ফেলতে চায়। কিন্তু মাগরিবের নামায আদায় করা মাত্রই উহা নির্বাপিত হয়ে যায়। তারপর ই’শা পর্যন্ত তোমাদের পাপের আগুন আবার তীব্রভাবে জ্বলতে থাকে এবং যখন তোমরা ই’শার নামায সম্পন্ন কর, তখন উহা সম্পূর্ণরূপেই নিভে যায়। তখন তোমরা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ হয়ে ঘুমিয়ে থাক। ঘুম ভাংগা পর্যন্ত তোমাদের আমল নামায় আর কোন প্রকার গুনাহ লিখা হয়না।
[তারগীব ও তারহীব]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন