চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতায় নেতৃত্বদানকারী জামায়াত নেতা সাইদুর রহমানের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঈনুদ্দীন মণ্ডল। মঙ্গলবার এ অনুষ্ঠানে মণ্ডলের সঙ্গে আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও উপস্থিত ছিলেন। সাইদুর রহমান জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি ও জামায়াতের একজন রুকন। তার বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সহিংসতার ১০টি মামলা রয়েছে। পুলিশের খাতায় সে পলাতক। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা জামায়াত নেতা সাইদুর রহমানকে মঞ্চ থেকে ধরতে পুলিশকে খবরও দেন। কিন্তু পুলিশ তাতে কর্ণপাত করেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঈনউদ্দীন মণ্ডল বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ নই, বিএনপি নই, আমরা জামায়াত নই- আমরা সর্বদলীয় লোক। আমরা সবাই পেট্রলবোমার বিরুদ্ধে। আমরা শান্তির পক্ষে। তিনি সবাইকে সহিংসতা ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আহ্বান জানান।
জামায়াত নেতার অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়া প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক মঈনুদ্দীন মণ্ডল সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, আমি কোনো জামায়াত নেতাকে চিনি না। আমি কোনো সাইদুরকে চিনি না। মোটর শ্রমিকরা আমাকে অতিথি হিসেবে ডেকেছে, আমি সেখানে গিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। কেউ যেন সহিংসতা না করে সে কথা সেখানে বলে এসেছি। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান এই খবরটা সাংবাদিকদের কে দিয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জেলা ট্রাক ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ত্রিবার্ষিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শ্রমিক লীগের পুরো প্যানেলকে হারিয়ে জামায়াত সমর্থিত পুরো প্যানেল জয়ী হয়। সাইদুর রহমান নির্বাচনে সভাপতি ও জামায়াতের কর্মী আবদুল খালেক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত প্যানেলকে জয়ী করতে জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার দলবিরোধী ভূমিকাকে দায়ী করে আসছে পরাজিত শ্রমিক লীগ নেতারা।
বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঈনউদ্দীন মণ্ডল। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রূহুল আমিন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা মাওলানা আবদুল মতিন। অনুষ্ঠানে জামায়াত নেতা সাইদুর রহমানসহ অন্যদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন প্রধান অতিথিসহ সংশ্লিষ্টরা। নতুন কমিটির পক্ষ থেকে অতিথিদেরও দেয়া হয় বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। জানা গেছে, ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর পুলিশ ও বিজিবির গাড়িতে হামলা ও ভাংচুরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাইদুর রহমান। পরের দিন ৬ ডিসেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। বেশকিছু দিন জেলহাজতে থেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন সাইদুর। এরপর গত দুই বছরে সদরে তার নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছে ১২টির বেশি সহিংস হামলার ঘটনা।
সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সারোয়ার রহমান যুগান্তরকে বলেন, সাইদুর পলাতক থেকেই জেলা ট্রাক ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পদে নির্বাচন করেন। নির্বাচনের দিন ভোট দিতেও যেতে পারেননি তিনি। অভিষেক অনুষ্ঠানে তার প্রকাশ্য উপস্থিতি কীভাবে জানতে চাইলে ওসি বলেন, আমাদের কাছে এমন খবর ছিল না। আগাম খবর পেলে পুলিশ নিশ্চয়ই অভিযান চালাত।
যুগান্তরের সৌজন্যে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন