অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ের কাছে মানববন্ধন করেছেন সরকার সমর্থিত মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক, শিল্পী, লেখকসহ শতাধিক লোক। এ সময় কার্যালয়ের সামনে চলমান আন্দোলনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ৫৪ জনের একটি তালিকা ঝুলিয়ে দেয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এমপি তারানা হালিমের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। তালিকা ঝুলানোর সময় কার্যালয়ের ভেতর থেকে এর প্রতিবাদ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শাইরুল কবির খান। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ডাকেন। এসময় তার কাছে শাইরুল কবির খান জানতে চান- আপনারা শুধু অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহতদের তালিকা ঝুলিয়েছেন। কিন্তু যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় ক্যাডারদের গুলিতে নিহত হয়েছেন, তাদের তালিকা তো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সামনে টাঙাননি। পুলিশের গুলিতে ২০ দলের শ’ শ’ নেতাকর্মী পঙ্গুত্ব বরণ করে পঙ্গু হাসপাতালে কাতরাছেন তাদের খোঁজ কি নিয়েছেন? আমি আশা করবো- আপনি ক্রসফায়ারে নিহতদের তালিকাও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে টাঙাবেন এবং পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে একটু খোঁজ নেবেন। এর জবাবে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই বিষয়টি আমি দেখবো। গতকাল সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরে মানববন্ধন করেন মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক, শিল্পী, লেখক ও অগ্নিদগ্ধদের স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার শতাধিক মানুষ। এছাড়া ‘সহিংসতা থামাও’ নামে ফেসবুকের একটি গ্রুপের সদস্যরা মানববন্ধনে অংশ নেন। এসময় তারা চলমান আন্দোলনে সহিংসতা বন্ধের স্লোগান সংবলিত বিভিন্ন পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড বহন করেন। মানববন্ধনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, একটি পরিবার তাদের দুর্নীতি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে এই হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। এভাবে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা, মানুষের সম্পদ ধ্বংস করা মেনে নেয়া যায় না। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা চাই এই সহিংসতা, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা বন্ধ করে তারা যেন গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসেন। মানববন্ধন থেকে এটাই আমাদের চাওয়া। অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, আমরা চলমান সহিংসতা বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। ছেলেমেয়েরা যেন নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে, এ জন্য অবরোধ-হরতাল বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আলাপ-আলোচনা করে সমাধান বের করুন। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন সহিংসতা বন্ধ করা। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওহিদুজ্জামান, অভিনেতা হাসান ইমাম, সংসদ সদস্য নাদের চৌধুরী, তুষার খান, চঞ্চল চৌধুরী, চিত্রনায়িকা নাসরিন আক্তার নিপুণসহ শতাধিক লোকজন অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে বেলা ১২টার দিকে অংশগ্রহণকারীরা গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের অভিমুখে মৌন পদযাত্রা শুরু করেন। এসময় তাদের ৮৬ নম্বর সড়কের দক্ষিণপ্রান্তে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ। এরপর পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তারানা হালিমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে কার্যালয়ের সামনে যেতে অনুমতি দেয়া হয়। তারা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে এসে চলমান আন্দোলনে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ৫৪ জনের একটি তালিকা ঝুলিয়ে দেন। তালিকার নিচে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা। তালিকা কেন টাঙানো হলো- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তারানা হালিম বলেন, আমরা একটি তালিকা টাঙিয়ে দিলাম। হয়তো খালেদা জিয়া একবার হলেও এই তালিকা দেখবেন। তার মনে মায়া হবে। মানববন্ধন শেষে আগুনের জবানবন্দি এবং পরে বার্ন ইউনিট নামের দুটি পথনাটক প্রদর্শিত হয়। সেখানে পেট্রল বোমা ও আগুনে পোড়ানো বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতার সমালোচনা করা হয়। এদিকে গতকালও খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ৮৬ নম্বর সড়কের উত্তরদিক দিয়ে ২০ প্যাকেট খাবার নিয়ে আসেন এক শুভাকাঙক্ষী। এসময় তল্লাশি চৌকির সামনে থেকেই তাকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। গত ১১ই ফেব্রুয়ারি রাত থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। তবে খালেদা জিয়ার জন্য তারা আত্মীয়স্বজনের আনা খাবার প্রবেশে অনুমতি দেয়া হচ্ছে।
মানব জমিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন