শীর্ষ নিউজ ডটকম, ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাধীন শেওড়াপাড়া ও টেকনিক্যাল এলাকায় পৃথক ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে শেওড়াপাড়ায় নিহত অজ্ঞাত তিন যুবক ‘গণপিটুনি’ ও টেকনিক্যালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শ্রমিকদলের এক নেতা নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করেছে।
তবে পুলিশের বক্তব্যের প্রমাণ মেলেনি নিহতদের সুরতহাল প্রতিবেদনে।
সুরতহালে প্রতিটি লাশের গায়ে গুলির ছিদ্র পাওয়া গেছে।
এরমধ্যে শেওড়াপাড়ায় নিহত তিন যুবকের শরীরে মোট ৫৬ টি ও টেকনিক্যালে নিহত শ্রমিক দল নেতার শরীরে ৬ টি গুলির চিহ্ন রয়েছে।
রোববার মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাধীন শেওড়াপাড়ায় অজ্ঞাত তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর পুলিশ তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে নাশকতার অভিযোগে ‘গণপিটুনির’ কথা বলেন। তবে তাদের সেই বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়নি সুরতহাল প্রতিবেদনে। সুরতহালে নিহতদের শরীরে পিটুনির জখম ছাড়াও গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।
অপরদিকে টেকনিক্যালে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শ্রমিক দল নেতা ওদুদ নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ দাবি করেছে। তবে সুরতহাল প্রতিবেদনে তার মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ হিসেবে গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শরীরেও বুলেটের ক্ষত পাওয়া গেছে।
শেওড়াপাড়ায় নিহত তিন যুবকের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মিরপুর মডেল থানার এসআই মাসুদ পারভেজ।তিনি সুরতহালে তিনজনের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। তাতে দেখা গেছে প্রত্যেক লাশের শরীরে গুলির ছিদ্র রয়েছে।
অজ্ঞাত (২০) তরুণের শরীরে ২২ রাউন্ড গুলির চিহ্ন রয়েছে। তার বামহাতের কব্জি ভাঙা ও ৪ টি গুলির ছিদ্র রয়েছে। ডানহাতে জখম, বুকে ৮ টি, পেটে একটি ও পিঠে ৯ টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। তার সারা শরীরে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন উল্লেখ করা হয়েছে সুরতহাল প্রতিবেদনে। এই অজ্ঞাত যুবকের পরনে রয়েছে খয়েরি রঙের হাফশার্ট ও নীল প্যান্ট।
অজ্ঞাত (১৯) যুবকের শরীরে ১৮ টি গুলির চিহ্ন রয়েছে। এরমধ্যে গলার বামপাশে ২টি, ডানহাতের কনুইয়ের ওপর ২টি, বাম হাতের বগলের নিচে ২ টি, বুকে ২ টি, নাভির ওপরে ও নিচে ২ টি, পিঠে ৫টি, পাঁজরে ২ টি এবং কোমড়ের বামপাশে একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে।
তার সারা দেহে রক্তের দাগ রয়েছে। নিহত এই তরুণের পরনে হলুদ রঙের হাফহাতা গেঞ্জি ও কালো ফুলপ্যান্ট রয়েছে বলে উল্লেখ করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
অজ্ঞাত (২০) যুবকের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ১৬ টি বুলেটের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এরমধ্যে মুখের থুতনিতে একটি, ডান হাতের কব্জির ওপরে ৮ টি, হাতে একটি, বাম কানে ২টি এবং বুকে ৪ টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার পরনে একটি কালো ও সাদা রঙের চেক শার্ট এবং হলুদ রঙের প্যান্ট রয়েছে বলে উল্লেখ করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
অথচ এদের তিনজনের গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল।
সুরতহালে আরো বলা হয়েছে,“পেট্রল দিয়ে রাস্তায় আগুন ও পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যার চেষ্টাকালে ওই তিনজনকে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে পূর্ব শেওড়াপাড়ার বাইশবাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদের গণপিটুনি দেয়। এরপর পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।”
অপরদিকে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শ্রমিকদল নেতা আব্দুল ওদুদ ব্যাপারীর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মিরপুর মডেল থানার এসআই রফিকুল ইসলাম।
সুরতহালে ওদুদ ব্যাপারীর শরীরের বিভিন্ন অংশে ৬টি বুলেটের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এরমধ্যে বুকের ডানপাশে ২টি, পেটের নিচে ও বাম পাঁজরে ২ টি এবং পিঠের ডান পাশে ২টি। অথচ একই সুরতহাল প্রতিবেদনে ওই মৃত্যুর কারণ হিসেবে গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দু’টি ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মিরপুর মডেল থানায় আলাদা আলাদা মামলা দায়ের করেছে।
টেকনিক্যালের ঘটনায় এসআই রফিকুল ইসলাম বাদি হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ৬০।
শেওড়াপাড়ার ঘটনায় এসআই মাসুদ পারভেজ বাদি হয়ে নিহত ওই তিন যুবকের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর ৬১।
শীর্ষ নিউজ ডটকম/মোস্তাফিজ/আমান
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন