ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৫

ইসলামে কথিত মে দিবস পালন করা কেন হারাম ?

১) ইসলাম কখন মানুষের মধ্যে শ্রেণীবিভেদ তৈরী করেনি। সকল মানুষ এক কাতারে কাধে কাধ মিলিয়ে নামাজে দাড়িয়ে এটাই প্রমাণ করে, ইসলামের দৃষ্টিতে সবাই সমান। তাই ইসলাম কখন ‘শ্রমিক’ ও ‘মালিক’ নামে দুটি শ্রেণী তৈরী করেনি। বরং ইসলামে প্রত্যেক মানুষকেই শ্রমিক বলে বর্ণনা করা আছে । এ সম্পর্কে কুরআন পাকে আছে: “নিশ্চয় আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি পরিশ্রমী বা শ্রমজীবী করে।” (সূরা বালাদ : আয়াত শরীফ ৪)
কিন্তু ইহুদী পূজিবাদীরা সর্বদা চেয়েছে, তাদের সুবিধার্থে সমাজে মালিক-শ্রমিক তথা শোষক ও শোষিত নামে দুটি শ্রেণী তৈরী করতে। তাই ‘পহেলা মে বা শ্রমিক দিবস’ পালনের অর্থই হচ্ছে, সমাজে মালিক ও শ্রমিক নামক দুটি শ্রেণীর উদ্ভব করা।
২) অনেকে বলতে পারে, এ দিবসটি থেকে একজন শ্রমিক যে দৈনিক ৮ ঘণ্টা ডিউটি করবে তার ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে দিনে ৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হবে, এ ধারণা জন্য পহেলা মে পালনের দরকার নেই। কেননা পবিত্র হাদীস শরীফে নবীজি এ সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে আছে: নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনের সময়কে তিন ভাগ (৮ ঘণ্টা+৮ ঘণ্টা+৮ ঘণ্টা) করে নেওয়ার জন্য তালিম দিতেন। এক ভাগ আল্লাহর ইবাদত এবং দীনের ফিকিরের জন্য, এক ভাগ পরিবার পরিজনের সাথে সময় দেয়ার জন্য এবং আরেক ভাগ ব্যক্তিগত কাজ ও নিজের শরীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট করে নেয়ার তা‘লীম দিতেন। (শামায়িলে তিরমিযী, পৃ. ২২)
অর্খাৎ এজন মানুষ দিনের মধ্যে ৮ ঘন্টা বাইরের কাজ করবে, ৮ ঘণ্টা পরিবার পরিজনের সাথে (ঘুম আছে) দিবে এবং ৮ ঘণ্টা ইবাদত বন্দেগী ও দ্বীনের ফিকিরে (তালিম-তালকীন গ্রহণ) থাকবে।

৩) পবিত্র দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ। পবিত্র কুরআন পাকে আছে: “আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম। তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত বা অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।”(সূরা মায়েদা:৩) 
পবিত্র দ্বীন পরিপূর্ণ। এখানে স্পষ্ট করে বর্ণনা করা আছে একজন শ্রমিকের অধিকার কেমন ও কতটুকু হবে, তাই অন্য কারো থেকে শ্রমিকের অধিকার ধার নেওয়ার কোন দরকার মুসলমানদের নেই। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে আছে:
ক) "রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।" (ইবনে মাজাহ)
খ) রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন - "মহান আল্লাহ বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব। যে আমার নামে কোন চুক্তি করে তা বাতিল করেছে। যে ব্যক্তি কোন স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করেছে এবং যে শ্রমিকের দ্বারা পুরোপুরি কাজ আদায় করে নিয়েছে, কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করেনি।" [হাদীস নং ১৩২০ - বুখারী শরীফ]

এখন কেউ যদি, পবিত্র দ্বীন ইসলাম বাদ দিয়ে, আজ থেকে ১২৯ বছর আগে আমেরিকার শিকাগো শহরে কি না কি ঘটেছে, নাস্তিক বামপন্থীরা কি করছে সেটা অনুসরণ করে ‘পহেলা মে’ পালন করে, তবে তা কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা হাদীস শরীফে স্পষ্ট উল্লেখ আছে: “যে যার সাথে মিল রাখে তার হাশর-নশর তার সাথে হবে ”। তাই ইসলাম বাদ দিয়ে যারা নাস্তিক্যবাদীদের পহেলা মে পালন করবে, তার হাশর-নশর নাস্তিকদের সাথে হবে। নাউযুবিল্লাহ মিন জালিক।

সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৫

দ্বীনকে বিজয়ী করে রক্তের শোধ'


জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, জামায়াতকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে হত্যা করেছে। এতে ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় কর্মীদের একবিন্দু পরিমাণ বিচলিত নন।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, জামায়াত -শিবিরের শত শত কর্মী হত্যা করে দেশ থেকে ইসলামী আন্দোলন নিভিয়ে দিতে চেয়েছে আওয়ামী লীগ। এরই ধারাবাহিকতায় সব আইনগত ও মানবিক অধিকার হরণ করে কামারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়েছে। বাংলায় আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করেই শহীদ কামারুজ্জামানের প্রতিফোঁটা রক্তের ঋণ শোধ করা হবে।
মহানগরী আমীর বলেন, কথিত যুদ্ধাপরাধ আইন আন্তর্জাতিক মানে উত্তীর্ণ তো নয়ই বরং দেশীয় মানও রক্ষা করা হয়নি। বিচারপতির স্কাইপ কেলেংকারি, ট্রাইব্যুনাল চত্বর থেকে সাক্ষী অপহরণ, বিচার নিয়ে মন্ত্রীদের আগাম মন্তব্য দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে ট্রাইব্যুনাল ব্যপকভাবে সমালোচিত।
দেশের সর্বস্তরের নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক মহলের আহ্বান, পরামর্শ, মতামত উপেক্ষা করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার তার ঘৃণ্য প্রতিহিংসা বাস্তবায়ন করে চলেছে। সরকার তার এই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে কেবল বাংলাদেশই নয় সারাবিশ্বে এটি একটি নিকৃষ্ট রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকলো।
তিনি অবিলম্বে জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদসহ সকল নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানান।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন- রক্ত ঝড়িয়ে, হত্যা করে কোন আদর্শকে কখনো স্তব্ধ করা যায়নি। আদর্শিক সংগ্রামকে বিজয়ী করতেই যে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল কর্মীরা জীবন রক্ষার জন্য কোন রাজনৈতিক গড়াপেটা করে না, রাষ্ট্রপতির মার্জনার তোয়াক্কা না করে শাহাদতের অমীয় সুধা পান করতেই ফাঁসির মঞ্চে সুস্থীর ভাবে হেঁটে যায় সে আন্দোলনকে বাধা গ্রস্থ করার শক্তি এই সরকাররে নইে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের শাহাদাত স্মরণে রাজধানীসহ সারাদেশে জামায়াতের কর্মীরা দোয়া মাহফিল করেছে। গায়েবানা জানাজায় সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করায় তাদের আন্তরিক মুবারকবাদ জানান তিনি।
তিনি বলেন, দেশের ইসলামপ্রিয় নেতৃবৃন্দকে হত্যার ঘৃণ্য আওয়ামী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে গণআন্দোলনের অংশ হিসাবে সোমবারের হরতালসহ সকল কর্মসূচী সফল করতে রাজপথে নেমে এসে এ কলঙ্কজনক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান রফিকুল ইসলাম।
পাশাপাশি গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের দাফন অনুষ্ঠানঃ এক বিরল অভিজ্ঞতা-মুহাম্মদ আব্দুল আওয়াল

সন্ধ্যার পর থেকেই ভাবছিলাম কিভাবে শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের দাফন অনুষ্ঠানে হাজির থাকা যায়। আমাদের শংকা ছিল শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ভাইয়ের মত একইরুপ আচরন করবে সরকার। রাত ৮ টা পর্যন্ত আমার বাসায় ১০ জনের উপস্থিতি। ঠিক করলাম একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যেতে হবে। রওয়ানা হয়েছি রাত তখন নয় টা। পথিমধ্যে দায়িত্বশীল পরামর্শ দিলেন নিরাপত্তারক্ষীদের চক্ষু ফাকি দেওয়ার জন্য প্যান্টের পরিবর্তে লুঙ্গি পরে যেতে হবে, নইলে ব্যরিকেডে পরার আশংকা আছে। অগত্যা শেরপুর শহরে নিকটাত্বীয়ের বাসায় গিয়ে দুজনে লুঙ্গি সংগ্রহ করে পরে রওয়ানা হলাম। পথিমধ্যে এক ঘন্টা ঝড়বৃষ্টির কারনে বিলম্বে রাত সাড়ে বারটায় কবর স্থানের নিকটে যখন পৌছি, তখনই প্রবেশ পথে আড়াআডি ভাবে র‌্যাবের গাড়ী দাড় করানো। বিকল্প পথে যেতে আবারো ব্যাব পুলিশের বাধা, জানাজা সকালে হবে এখন যাওয়ার দরকার নেই, সেই সাথে গ্রেফতারের হুমকি। অগত্যা কবর স্থান থেকে দুইশত গজ দুরে রাস্তার পার্শ্বে দোকানের টংয়ে এক সাথে চার জনের অপেক্ষার পালা।
রাত তিনটার দিকে হ্যান্ড মাইকে আওয়াজ যারা জানাজার জন্য এসেছেন তারা স্বসন্মানে চলে যান। কবর স্থঅনের পার্শ্বে মাদরাসায় তখন হাজার খানেক লোকের অবস্থান। জনতা যেতে না চাইলে পুলিশের বেপরোয়া লাঠি চার্জ। তখন অনেকেই দৌড়ে পাশেই ধানের চাতালে অবস্থান নেন। ইত্যবসরে রাত সোয়া চারটার দিকে শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের কফিন এসে হাজির। র‌্যাব পুলিশের গাড়ীর বিকট আওয়াজ দর্শনার্থী কাউকেই কাছে যেতে দিচ্ছেনা। সীমিত সংখ্যাক লোকদের উপস্থিতিতে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হলো, তারা বুঝাতে চায় যে জানাজা পড়ার লোকও নেই। দুর থেকেই হাজারো জনতা নিদারুন কষ্ট নিয়ে শুধু তাকিয়েই ছিলাম। আমরাও পাশের চাতালে হাজার খানে লোকের উপস্থিতিতে জানাজা পড়ে নিলাম।
পরে সাহস করে রওয়ানা হলাম কবরের দিকে। তখন সময় ভোর ৫.৪০ টা। কবরে পৌছামাত্র কি এক হ্রদয় বিদারক দৃশ্য। হাজার হাজার মানুষের গগন বিদারী আহাজারী। কবরের মাটি ছুয়ে সেকি কান্না। মনে হলো আল্লাহর আরশ বুঝি কেপে উঠবে। জালিমরা হয়তো এখনি নিঃশেষ হয়ে যাবে। ততক্ষনে মিডিয়া ও আইন শৃংখলা বাহিণীর কিছু গাড়ী সরে গিয়েছে। জামালপুর জেলা আমীরকে প্রস্তাব করলাম, শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের কবরকে সামনে রেখে আরও একটি জানাজা হউক। কিন্তু লোকের এত উপস্থিতি যে স্থান সংকুলান করা সম্ভব হলোনা। অগত্যা ৫০ গজ দুরে পাশের মাদরাসা মাঠে আবারো জানাজা হলো। সেখানেও আইন শৃংখলা বাহিনীর বেপরোয়া আচরন। মাঠের পূর্বের অংশের অর্ধেক লোককে জানাজায় শরীক হতে দিলনা। মাঝখানে ব্যরিকেড দিয়ে রাখলো। উত্তেজিত জনতা নারায়ে তাকবীর শ্লোগানে আকাশ বাতাশ মূখরিত করে তুললো। শান্তি পূর্ণ ভাবেই জানাজা শেষ হলো। যার ছবি বাশের কেল্লায় ছাপা হয়েছে দেখলাম। জানাজা শেষে আবারো মুনাজাত।
উপস্থিত হাজারো মুছুল্লি হ্রদয় নিংড়ানো ভালবাসা দিয়ে শহীদ কামারুজ্জামান ভাইয়ের জন্য দোয়া করলেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। তার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করার প্রতিজ্ঞা করলেন। ততক্ষনে পূর্ব দিগন্তে সূর্য্যরে আলোয় কবর স্থান আলোকিত হয়ে উঠেছে। কোটি তরুনের প্রানোদিপ্ত ও জাগরনী নেতার কবর যেন হাসছে।

হরতালের সমর্থনে নগরীতে চান্দগাঁও থানা জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল


বাংলাদেশ বার্তা: ১৩ এপ্রিল ২০১৫: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরের প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা সোমবারের দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে চান্দগাঁও থানা জামায়াত সোমবার বহদ্দারহাট চান্দগাঁও এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
জামায়াত নেতা আবু জাওয়াদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে জামায়াত নেতা এম. আলতাফ, আর ইসলাম, প্রকৌশলী কে আলম, শিবির নেতা আবু আব্দুল্লাহ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, বিশিষ্ট সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানকে সরকার অন্যায়ভাবে ১১ এপ্রিল রাতে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে। জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করার হীন উদ্দেশ্যেই সরকার জামায়াত নেতৃবৃন্দকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছে।
নেতৃবৃন্দ, মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ঘোষিত কর্মসূচি সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।”

রবিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৫

কামারুজ্জামানের কবরে হাজারো মানুষের ঢল

শেরপুর সংবাদদাতা: ১২ এপ্রিল ২০১৫,রবিবার, ০৬:২৬: 
কামারুজ্জামানের কবরে হাজারো মানুষের ঢল
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফনের পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কড়াকড়ি শিথিল করলে তার কবরের পাশে মানুষের ঢল নামে। তারা কামারুজ্জামানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। এ সময় শোকাতুর এলাকাবাসীর আহাজারিতে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এলাকাবাসীর মাতম দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে।

এখানেই দাফন করা হয় কামারুজ্জামানকে

এর আগে আজ রোববার সকাল ৫টা ২০ মিনিটে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত শেরপুর সদর উপজেলার কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পাশের জমিতে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে রোববার ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে এতিমখানা মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কামারুজ্জামানের ৪/৫জন আত্মীয়সহ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। এ সময় আশেপাশে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হলেও আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা বেষ্টনির কারণে তারা জানাজায় অংশ নিতে পারেননি। দাফনস্থলে গণমাধ্যম কর্মীসহ স্থানীয়দেরকে যেতে দেয়া হয়নি।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর করা নিরাপত্তাবেষ্টনি

শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কুমরী বাজিতখিলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। রোববার ভোর ৪টা ১৬ মিনিটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কামারুজ্জামানের লাশ কুমরী বাজিতখিলা গ্রামে এসে পৌঁছে। এ সময় তাঁর বড় ভাই মো. কফিল উদ্দিন প্রশাসনের নিকট থেকে লাশ গ্রহণ করেন। পরে কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানা মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন বাজিতখিলা দাখিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার ও কামারুজ্জামানের ভাগ্নি জামাই মাওলানা আব্দুল হামিদ।
রোববার ভোর ছয়টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়াকড়ি শিথিল করলে কামারুজ্জামানের কবরস্থানে হাজার হাজার নারী-পুরুষের ঢল নামে। তারা কামারুজ্জামানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করেন। এ সময় শোকাতুর এলাকাবাসীর আহাজারিতে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এলাকাবাসীর মাতম দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে।

কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রাম পুলিশের এক সদস্য

বাজিতখিলা ইউনিয়নের মধ্যকুমরী গ্রামের মজিবর রহমান (৪০) ও আব্দুল কুদ্দুস বলেন, তারা নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনুমতি না দেয়ায় জানাযায় অংশ নিতে পারেননি।
মুনাজাতে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুই যুবক
বাজিতখিলা গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, কামারুজ্জামানের জানাজায় অংশ নিতে কয়েক হাজার মানুষ এতিমখানার আশপাশে সমবেত হয়েছিলেন কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের জানাজাস্থলে আসতে দেয়নি।
কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পরিচালক নূরুল আমিন জানিয়েছেন, জানাজায় শতাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন।
কামারুজ্জামানের বড় ভাই আলমাছ আলী (৬৮) কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার ভাই কামারুজ্জামান ছিলেন নিরপরাধ ও নির্দোষ। বিচারের নামে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য যারা দায়ী আল্লাহর কাছে তাঁদের বিচার চাই।’
কামারুজ্জামানের আরেক বড় ভাই মো. কফিল উদ্দিন বলেন, তার (কামারুজ্জামানের) শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মরদেহ কুমরী বাজিতখিলা এতিমখানার পাশে দাফন করা হয়।
এদিকে রোববার ভোর থেকে এ রিপোর্ট (সকাল সাড়ে ৮টা) লিখা পর্যন্ত বাজিতখিলা ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে ৯টি গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসব জানাজায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জতউল্লাহ, ড. ছামিউল হক ফারুকী, শেরপুর জেলা আমির ডা. মোহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা মো: হাফিজুর রহমানসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
দাফনস্থলে কর্তব্যরত গণমাধ্যম কর্মীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে জানতে চাইলে শেরপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িকভাবে সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। 
নয়া দিগন্তের সৌজন্যে

সোমবার সারাদেশে হরতাল দিয়েছে জামায়াত, রোববার দোয়া

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার সারাদেশে হরতালের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। সেই সাথে রোববার কামারুজ্জামানের জন্য দোয়ার কর্মসূচিও ঘোষণা করে দলটি।
তবে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে জানিয়েছে জামায়াত।
শনিবার রাতে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের পর এক বিবৃতিতে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ।
নিজের বিবৃতিতে জামায়াতের আমির বলেন, ‘সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, লেখক, ইসলামী চিন্তাবিদ, জনগণের প্রিয় নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ১১ এপ্রিল রাত ১০টার পরে হত্যা করেছে।’
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সরকার তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বায়বীয় ও কাল্পনিক অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। এ মামলায় দলীয় লোকদের দ্বারা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে। সাক্ষীদের পরস্পরবিরোধী ও অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য থেকে তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর নিকট উন্মোচিত হয়।
তিনি আরো জানান, যে সোহাগপুরের কথিত ঘটনার অভিযোগে তাকে ফাঁসি কার্যকরের নামে হত্যা করা হলো তার সাথে মুহাম্মদ কামারুজামানের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বারবার বলেছেন, জীবনে কোনোদিনও তিনি সোহাগপুর যাননি। ওই এলাকায় কোনদিন তাকে দেখেছে এ ধরনের কথা কেউ বলতে পারবে না।
সরকার পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে। কামারুজ্জামান তার পরিবারের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে জানিয়েছেন তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার বিচার অবশ্যই আদালতে আখিরাতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নিজ হাতে করবেন।
উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির একজন ছাত্রকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার যে মহাষড়যন্ত্র ও তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার যে ব্যবস্থা আওয়ামী সরকার করেছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

শাহাদাত মুমিন জীবনের কাম্য

মুমিনের নিকট ঈমানের অপরিহার্য দাবী শাহাদাত। সৃষ্টির আদি হতে এ যাবৎ কাল পর্যন- নিয়ন্ত্রণহীন ধারাবাহিকতা, সত্য ও মিথ্যার চিরন-ন সংঘাত, কল্যাণ ও অকল্যাণের রশি টানাটানি, আলো ও আঁধারের বৈপরীত্য সুন্দরের আরোহী কাঠিন্যতার প্রাচীর মাড়িয়ে ফুলের উৎসব অসুন্দরের আস্ফালন ও হীনতার অতল গহ্বরে পতন ঠেকাতে একজন মুমিনের সমগ্র জীবনের প্রকাশ জীবনাচার হবে শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত। তার জীবনের একান- ব্যক্তিগত ও গোপনীয় বিষয়; হৃদয়ের আবেগ অনুভূতির প্রকাশ, সামাজিক তৎপরতায় অংশগ্রহণ, অর্থনৈতিক লেনদেন, রাজনৈতিক প্রতিপত্তি, সাংস্কৃতিক রুচিবোধ ও মননশীলতা, অবসর ও বিনোদন, শয়ন ও জাগরণ সব কিছুই বিল্পবী ঘোষণা দেবে শাহাদাতের চূড়ান্ত- প্রত্যাশা, মুমিনের জীবন চলার প্রতিটি কদম, তাদের প্রতিটি স্পর্শ, চাহনীর প্রতিটি পলক, জিহ্বার প্রতিটি বুলি, লেখনীর প্রতিটি আঁচড়, ব্যয়ের প্রতিটি কপর্দক, সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত, রক্তের প্রতিটি ফোঁটা এবং হৃদয়ের সবগুলো অনুভূতি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করার জন্য থাকে সতত নিবেদিত।
শাহাদাত বা শাহাদাহ শব্দটি অতি ব্যাপক ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি আরবী শব্দ, শাহাদাত শব্দের অর্থ হলো সাক্ষ্য। এ থেকে শহীদ ও শাহেদ শব্দ এসেছে। শাহেদ মানে যে দেখেছে বা সাক্ষ্য দিয়েছে। সাক্ষী সেই দেয় যে নিজে স্বচক্ষে দেখেছে। আশ-শাহিদ মানে আমি দেখার জন্য ঐ স'ানে উপসি'ত ছিলাম, আমি নিজে দেখেছি, এভাবেই দেখা, সাক্ষ্য দেয়া অর্থে শাহাদাত শব্দ ব্যবহার করা হয়।
ইমাম রাগিব ইসপাহানী এবং অন্যান্য আরবী ভাষাতত্ত্ববিদ শব্দটির অর্থ মোটামুটি একইরূপ লিখেছেন।
কেউ লিখেছেন শহদ মানে উপসি'ত হয়ে স্বচক্ষে দেখে কিংবা অন-র দৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করে সাক্ষ্য দেয়া। আবার কেউ বলেছেন- শাহাদাত হচ্ছে এমন জ্ঞান বা জ্ঞানের বিবরণ যা চোখে দেখে বা অন-র দৃষ্টির মাধ্যমে অর্জিত হয়। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি শাহাদাত শব্দের অর্থের সাথে জড়িত রয়েছে নিুাকে্ত শব্দগুলোঃ উপস্থিতি, জানা, দেখা, দর্শন, অন-র্দৃষ্টি, জ্ঞান কিংবা (স্বচক্ষে অথবা জ্ঞান চক্ষু দ্বারা অর্জিত) জ্ঞানের বিবরণ বা সাক্ষ্য প্রদান, মন মগজ ও বিবেক বুদ্ধি দ্বারা উপলব্ধি করা প্রভৃতি।
কুরআনে শাহাদাত শব্দের অর্থ/ব্যবহার: আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে প্রেরণাদাত্রী মহাগ্রন' আল কুরআনের ভূমিকা অপরিসীম। শাহাদাত শব্দটি তাই ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্নভাবে। আমরা এখানে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত কয়েকটি আয়াত নিুে উপস্থাপন করছিঃ
ক) আদর্শের সাক্ষ্য (নমূনা গড়ফবষ ) অর্থে
“হে নবী। আমরা তোমাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা এবং ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে।” (আল-আহযাবঃ ৪৫)
“আর এভাবেই আমরা তোমাদেরকে একটি মধ্যপন'ী উম্মাহ করেছি, যাতে করে তোমরা মানব জাতির উপর সাক্ষী হতে পারো।” (বাকারা ১৪৩)
“যেন রাসূল তোমাদের উপর সাক্ষী হতে পারেন, এবং তোমরা গোটা মানব জাতির উপর সাক্ষী হতে পারো।” (আল-হাজ্জ ৭৮)
খ) আল্লাহর পথে নিহত হবার অর্থেঃ
“তোমাদের উপর এ দুরবস'া এ জন্য চাপানো হয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা এভাবে জেনে নিতে চান তোমাদের মধ্যে কারা সাচ্চা ঈমানদার এবং এইজন্যে যে তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান।” (আলে-ইমরানঃ ১৪০)
“যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে সে ঐসব লোকদের সংগী হবে যাদের নিয়ামত দান করা হয়েছে, তারা হলো-নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সালেহ, আর তাদের সান্নিধ্যই হলো উত্তম।” (আন-নিসাঃ ৬৯)
গ) উপসি'ত থেকে স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা অর্থেঃ
“আর তাদেরকে শাসি- দেয়ার সময় একদল ঈমানদার লোক যেন উপসি'ত থেকে প্রত্যক্ষ করে।” (আল-নূরঃ ২)
ঘ) জ্ঞান, অবগতি ও জানা অর্থেঃ
“আল্লাহ প্রতিটি জিনিসের উপর সাক্ষ্য অর্থাৎ প্রতিটি বিষয়ে তিনি অবগত, তার জ্ঞানের বাইরে কোনো কিছু নেই।” (আহযাবঃ ৫৫)
ঙ) আদালতের সাক্ষ্য অর্থেঃ
“আর যারা পবিত্র চরিত্রের নারীদের সম্পর্কে মিথ্যা দোষারোপ করবে অতপর (দাবীর সপক্ষে) চারজন সাক্ষী উপসি'ত করতে পারবে না তাদের আশিটি কড়া মারো এবং এ ধরণের লোকদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করোনা।” (আন-নূরঃ ৪)
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায় বিচারের ধারক হও এবং আল্লাহর জন্যে সাক্ষী হও, তোমাদের এই সুবিচার ও সাক্ষ্য যদি তোমাদের নিজেদের, তোমাদের পিতামাতার এবং তোমাদের আত্মীয় স্বজনদের বিপক্ষেও যায়।” (আন-নিসাঃ ১৩৫)
এমনি করে বহু জায়গায় আল-কুরআনে শাহাদাত শব্দের প্রয়োগ হয়েছে।
শাহাদাত ঈমানের অপরিহার্য দাবী: মুমিনের নিকট “শাহাদাত” ঈমানের অপরিহার্য দাবী। শাহাদাতের কামনা যদি কোন মুমিন জীবনে থাকে তাহলে সে আল্লাাহর পথে লড়াইয়ে কোন সময় গাফেল হতে পারে না। কারণ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছাড়া শাহাদাতের দ্বিতীয় কোন পথ নেই। একজন ভাল ছাত্র যেমন ভাবে ফলাফলের প্রমাণ দেবার জন্য পরীক্ষা কামনা করে তেমনি একজন মুমিন শাহাদাতের মাধ্যমে বিজয়ী হবার জন্য বাতিলের বিরুদ্ধে হকের সংগ্রামে আপোষহীনভাবে লড়াই করে যাবে। আন্দোলনের কর্মকাণ্ডে বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যদি সে উৎসাহ পায় মৃত্যু অথবা অন্যান্য প্রতিকূলতা তাকে গাফেল করে না রাখে তাহলে বুঝতে হবে শাহাদাতের কামনা তার মধ্যে উপসি'ত রয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর পথে লড়াই প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,
“আল্লাহর পথে লড়াই করা কর্তব্য সেই সব লোকেরই যারা পরকালের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিক্রয় করে দেয়, আল্লাহর পথে যে লড়াই করে ও নিহত হয়, কিংবা বিজয়ী হয়, তাকে আমরা অবশ্যই বিরাট ফল দান করব।” (আন-নিসাঃ ৭৪)
শাহাদাতের মর্যাদা: একজন মু’মিনের শাহাদাতের তামান্নায় সততঃ উজ্জীবিত, শাহাদাতের এই অমিয় সূধা পান করতে কেন এই তীব্র আকাঙক্ষা? কেন জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও তার এই পরম চাওয়া-পাওয়ার শাহাদাত চাই-ই? সব রকম নেকীর উপর আরেকটা নেকী থাকে। সকল কুরবাণীর উপরই কুরবাণী আছে। সকল ত্যাগের উপরই ত্যাগ আছে। কিন' আল্লাহর পথে শহীদ হবার চেয়ে বড় কোন নেকী, এর চেয়ে বড় কোন ত্যাগ ও কুরবাণী হতে পারে না, এটাই মানব জীবনের সকল নেকী ও পুণ্যের চূড়ান- শিখর। আর এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা শহীদকে অকল্পনীয় উচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দান করেন, শাহাদাতের এই দরজা নবুয়্যতের দরজার চেয়ে বড় না হলেও শহীদ হবার জন্য স্বয়ং নবীও তীব্র আকাঙক্ষা পোষণ করেন। এ সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্যেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এবং বহু সংখ্যক হাদীসে বর্ণিত আছে শহীদদের মহা পুরস্কার ও সম্মান মর্যাদার ব্যাপারে। আমরা দেখব শাহাদাতের এ মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা) কী বলেনঃ
১। শহীদরা অমর
ইহলৌকিক এ জীবন থেকে শহীদরা বিদায় নিয়েও পৃথিবীতে তারা অমরত্ব লাভ করেন। আর পরজগতে যাওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালা তাদের জীবিত করে নিজের মেহমান হিসেবে জান্নাতে থাকতে দেন। আলে-ইমরানের ১৬৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
“আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদের মৃত বলো না, প্রকৃত পক্ষে তারা জীবন-, কিন' তাদের জীবন সম্পর্কে তোমরা অনুভব করতে পারো না।” (আল-বাকারাঃ ১৫৪) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, “তাদের প্রাণ সবুজ পাখীর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহর আরশের সাথে ঝুলন- রয়েছে তাদের আবাস। ভ্রমণ করে বেড়ায় তারা গোটা জান্নাত, অতঃপর ফিরে আসে আবার নিজ নিজ আবাসে।” (মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
২। শহীদরা নিহত হবার কষ্ট অনুভব করে না
আপন মালিককে সন'ষ্ট করার জন্য যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে, দয়াময় মালিক তাদের শাহাদাতের আঘাতকে ব্যথাহীন বেদনাহীন করে দেন। শহীদ করার জন্য যতো বড় আঘাতই তাদের উপর হানা হোক না কেন, তাতে তাদের কোন কষ্ট হয় না। তারা পায় না কোন যন্ত্রণা। প্রিয় রাসূল (সা) বলেছেনঃ
“শাহাদাত লাভকারী ব্যক্তি নিহত হবার কষ্ট অনুভব করে না। তবে তোমাদের কেউ পিঁপড়ার কামড়ে যতোটুকু কষ্ট অনুভব করে, কেবল ততোটুকুই অনুভব করে মাত্র।” (তিরমিযী- আবু হোরায়রা)
৩। শহীদের লাশ পচে না
মুয়াত্তায়ে ইমাম মালিকের সূত্রে কুরতুবীতে আলোচিত হয়েছে এভাবেঃ হযরত ইবনে জামুহ (রা) এবং আবদুল্লাহ্‌ ইবন আমর (রা) উভয় আনসার সাহাবীই উহূদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। তাদের উভয়কে একই কবরে সামাধিস' করা হয়। এর চল্লিশ বছর পর একবার প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় তাদের কবর ভেঙ্গে যায়। পানির প্রবল চাপ দেখে যখন অন্যত্র সমাধিস' করার জন্য তাদের কবর খনন করা হলো তখন তাদের ঠিক সে অবস'ায় পাওয়া গেল যে অবস'ায় তাদেরকে দাফন করা হয়েছিল। মুয়াবিয়া (রা) তার শাসনামলে মদীনায় কূপ খনন করতে মনস' করলেন। কূপ খননের আওতায় উহুদ যুদ্ধের শহীদের কবর পড়ে গেল। মুয়াবিয়া (রা) ঘোষণা দিলেন তোমরা তোমাদের আত্মীয় স্বজনের মৃত দেহ অন্যত্র নিয়ে যাও। এ ঘোষণার পর শবদেহ উঠিয়ে ফেলা হলো। দেখা গেল তারা যে অবস'ায় নিহত হয়েছিলেন ঠিক সেই অবস'ায়ই রয়েছেন। খনন কাজের কোন এক পর্যায়ে হযরত হামজার (রা) পায়ে কোদালের আঘাত লেগে গেলে সাথে সাথে তা থেকে রক্ত ক্ষরণ শুরু হয়। এ ঘটনা ঘটে উহুদ যুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পর।
বস'ত এসব ঘটনা দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ তায়ালা শহীদদের লাশ পচতে দেন না।
৪। কিয়ামতের দিন শহীদরা তাজা রক্ত নিয়ে উঠবে
যে ব্যক্তি যুদ্ধ ক্ষেত্রে শাহাদাত বরণ করেন তাকে রক্ত ভেজা কাপড়ে রক্তাক্ত দেখে কোন প্রকার গোসল ছাড়াই দাফন করা হয়। তাকে নতুন কাপড়ের কফিন পরানো হয় না। শাহাদাতের সময় তার দেহে যে কাপড় থাকে সে কাপড়েই তাকে দাফন করা হয়। শহীদদের ব্যাপারে ইসলামের বিধান এটাই। এবং এ অবস'ায়ই তারা হাশরের ময়দানে উঠবে। ক্ষতস'ান থেকে তখনও রক্ত বের হতে থাকবে। রসুলে খোদা (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস-ায় আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে কিয়ামতের দিন সেই আঘাত নিয়েই সে উঠবে আর তার ক্ষতস'ান থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে এবং রং হবে রক্তের মতই, কিন' গন্ধ হবে মিশকের মত।” (বুখারী ও মুসলিমঃ আবু হোরায়রা (রা)। অন্য হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, নবী পাক (সা) বলেন, “কসম সেই সত্তার মুহাম্মদের প্রাণ যার হাতের মুঠোয়, কেউ আল্লাহর পথে কোনো আঘাত পেলে কিয়ামতের দিন সে আঘাত নিয়ে হাজির হবে। আর সে আঘাতের অবস'া হবে ঠিক মিশকের মতো” (বুখারী ও মুসলিম)। এটা শহীদদের কত বড় সৌভাগ্য যে, সে দিন তারা রক্তাক্ত দেহ এবং রক্ত ভেজা কাপড় চোপড় নিয়ে হাশর ময়দানে আল্লাহর দরবারে হাযির হবে।
৫। কবর আযাব থেকে রেহাই এবং সুপারিশ করার অধিকার লাভ
মহান আল্লাহ শহীদদের জন্যে অসংখ্য পুরস্কারের ব্যবস'া রেখেছেন। তাদের জন্যে নির্ধারিত ক্ষমা, মর্যাদা ও বিরাট পুরস্কারের কথা শুনে কার না ঈর্ষা হবে? আমার প্রিয় রাসূল (সা) বলেছেন, আল্লাহর নিকট শহীদদের জন্যে ছয়টি পুরস্কার রয়েছে। সেগুলো হচ্ছেঃ
ক) প্রথম রক্ত বিন্দু ঝরতেই তাকে মাফ করে দেয়া হয় এবং জান্নাত যে তার আবাসস'ল তা চাক্ষুষ দেখানো হয়।
খ) তাকে কবরের আযাব থেকে রেহাই দেয়া হয়।
গ) সে ভয়ানক আতঙ্ক থেকে নিরাপদ থাকে।
ঘ) তাকে সম্মানের টুপি পরিয়ে দেয়া হবে, যার এক একটি ‘ইয়াকুত’ পৃথিবী এবং পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকেও উত্তম।
ঙ) তাকে উপঢৌকন স্বরূপ আয়ত নয়না হূর প্রদান করা হবে এবং
চ) তাকে সত্তর জন আত্মীয় স্বজনের জন্যে সুপারিশ করার ক্ষমতা প্রদান করা হবে (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মেকদাম ইবনে মা’দীকরব)।
আবু আইয়ুব আনসারী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলে করীম (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি শত্রুর সম্মুখীন হলো এবং তার মুকাবেলায় অটল অবিচল এমনকি এমন অবস'ায় নিহত হয়ে গেল তাকে কবরে কোন প্রকার চিন-ার সম্মুখীন হতে হবে না।” (তাবরানী)
৬। শহীদের জন্য রিয্‌কে হাসানা ও সনে-াষজনক জান্নাত: শহীদের বিভিন্ন নিয়ামত এবং অনুগ্রহ রাজির ব্যাপারে আল কুরআনে বহু প্রমাণ মেলে। তাদের সুসংবাদের কোন শেষ নেই। আল্লাহ বলেন,
“যে সব লোক আল্লাহর পথে হিজরত করেছে, পরে নিহত হয়েছে কিংবা মরে গেছে আল্লাহ তাদেরকে রিযকে হাসানা দান করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ উৎকৃষ্টতম রিযকদাতা। তিনি তাদের এমন স'ানে পৌঁছাবেন যাতে তারা সন'ষ্ট হয়ে যাবে।” (আল-হজ্জঃ ৫৮-৫৯)
“তোমরা যদি আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মরে যাও তবে আল্লাহর যে রহমত ও দান তোমাদের নসীব হবে, তা এইসব লোকেরা যা কিছু সঞ্চয় করেছে তা থেকে অনেক উত্তম।” (আলে ইমরানঃ ১৫৭) যারা শাহাদাতের জযবা নিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে অতপর এ সংগ্রামে তারা শহীদ হোক কিংবা গাজী হিসেবে মৃত্যু বরণ করুক উভয় অবস'াতেই আল্লাহর নিকট থেকে তারা সমান প্রতিদান পাবে বলে এ আয়াতগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।
৭। শহীদদের জন্যে রয়েছে মহা পুরস্কার: মুজাহিদরা খোদাদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে শহীদ কিংবা গাজী উভয় অবস'াতেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের জন্য মহা পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন। এই মহা পুরস্কার তারাই লাভ করবে যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে বিক্রি করে দেবার মতো সৎ সাহস রাখে। আল্লাহ ঘোষণা করেন-
“সেইসব লোকদেরই আল্লাহর পথে লড়াই করা কর্তব্য যারা পরকালের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে বিক্রয় করে দেয়, যারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং নিহত কিংবা বিজয়ী হয়। আমরা তাকে অবশ্যই বিরাট পুরস্কার দান করবো।” (আন-নিসাঃ ৭৪)
সূরা আলে ইমরানে শহীদদের প্রাপ্য পুরস্কারসমূহ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন-“তাদের সকল অপরাধ আমি ক্ষমা করে দেব। আর এমন জান্নাত তাদের দান করবো যার তলদেশে রয়েছে সদা প্রবাহমান ঝর্নাধারা; এ হচ্ছে আল্লাহর নিকট তাদের পুরস্কার আর আল্লাহর নিকট রয়েছে সর্বোত্তম পুরস্কার।” (আলে-ইমরানঃ ১৩৬)
৮। আল্লাহর সান্নিধ্য এবং যা খুশী তাই পাবার অধিকার লাভ: কুরআন মজীদে বলা হয়েছে কোন দৃষ্টিই আল্লাহর দর্শন লাভ করতে সক্ষম নয়। কোন নবীও আল্লাহকে দেখতে পাননি কিন' শহীদরা মৃত্যুর পর পরই আল্লাহর দর্শন লাভ করেন। ওহুদ যুদ্ধে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম শাহাদাত লাভ করেন। যুদ্ধের পর রাসূল করীম (সা) শহীদের পুত্র প্রখ্যাত সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহকে সান-্বনা দিতে গিয়ে বলেন- “হে জাবির, আমি কি তোমাকে তোমার পিতার সঙ্গে আাল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাক্ষাতের সুসংবাদ দেব না? জাবির বললেন অবশ্যই দিন হে আল্লাহর রাসূল। তখন তিনি বলেন ঃ আল্লাহ্‌ কখনো অন-রালবিহীন মুখোমুখি কথা বলেন নি। তিনি বলেন ঃ হে আমার গোলাম তোমার যা খুশী আমার নিকট চাও। আমি তোমায় দান করবো।” তিনি জবাবে বলেছেন, “হে আমার মনিব। আমাকে জীবিত করে আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিন আবার আপনার পথে শহীদ হয়ে আসি।” তখন আল্লাহ তাকে বলেন, “আমার এ ফয়সালা তো পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছি যে, মৃত লোকেরা ফিরে যাবে না।” তখন তোমার পিতা আরজ করেন, “আমার মনিব তবে অন-ত আমাকে যে সম্মান ও মর্যাদা আপনি দান করেছেন, তার সুসংবাদ পৃথিবীবাসীদের জানিয়ে দিন।” তখন আল্লাহ নিুাকে্ত আয়াতটি নাযিল করেন।
“যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদের মৃত মনে করো না, তারা জীবিত।” (জামে আত্‌-তিরমিযী, সুনানে নাসায়ী ঃ জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্‌)
৯। শহীদ পরিবারের গৌরব: তিরমিযী, ইবনে মাজাহ হাদীস গ্রনে' মেকদাম ইবনে মাদীকরব বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন, “একজন শহীদকে তার সত্তর জন আত্মীয় স্বজনের জন্য সুপারিশ করার অধিকার দেয়া হবে।”
তাই আল্লাহ তায়ালা যদি কারো সন-ানকে শাহাদাতের মর্যাদা প্রদান করেন তবে তারা শহীদের পিতামাতা হবার গৌরব অর্জন করেন। তাদের জন্য এর চেয়েও খুশীর বিষয় হলো তারা তাদের শহীদ সন-ানের সুপারিশ লাভের আশা পোষণ করতে পারেন। একজন শহীদ যেমন তার বংশে, পরিবারে এক শাশ্বত ঐতিহ্য সৃষ্টি করে যান তেমনি আবার তার অনুসারীদেরকে ছাড়াও তার আপন বংশের লোকদেরকে চিরদিন জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত করে থাকেন। সুতরাং মুমিনদের দৃষ্টিতে শহীদ পরিবার অত্যন- সম্মানীয় এক আদর্শ পরিবার। শহীদের পিতা-মাতা মুমিনদের নিকট শ্রদ্ধাস্পদ, শহীদের সন-ান, স্ত্রী, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনকে সকল মুমিন নিজেদেরই আত্মীয়-স্বজন মনে করে। এসব দিক থেকেই শহীদ পরিবার গৌরবান্বিত।
১০। শাহাদাত উচ্চ মর্যাদার মডেল: শহীদের অফুরন- মর্যাদার আরেক বিশেষ দিক হচ্ছে মহাগ্রন' আল কুরআনে শহীদদেরকে উচ্চ মর্যাদার এক বিশেষ মডেল হিসেবে নির্ণয় করা হয়েছে। যেমন কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,
“যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করবে, সে ঐসব লোকদের সংগী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা নিয়ামত দান করেছেন। তারা হচ্ছেন নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সালেহ লোকগণ। ........প্রকৃত অবস'া জানার জন্যে আল্লাহর জ্ঞানই যথেষ্ট।” (নিসাঃ ৬৯-৭০)
এ আয়াতে পরকালীন উচ্চ মর্যাদার কয়েকটি স-রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে -
অর্থাৎ (১) নবীগণের স-র, (২) সিদ্দীকগণের স-র, (৩) শহীদগণের স-র, (৪) সালেহ বান্দাদের স-র।
রাসূলে খোদা (সা) নিজেও কিছু সংখ্যক লোককে উপরোক্ত লোকদের সাথীত্ব লাভে সক্ষম হবার সুসংবাদ দিয়ে গেছেন। যেমনঃ এ বার এক ব্যক্তি নবী পাকের (সা) নিকট এসে বললো, “ওগো আল্লাহর রাসূল, আমি সাক্ষ্য দিয়েছি আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কোন ইলাহ্‌ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, আমার মালের যাকাত পরিশোধ করি এবং রমযান মাসের রোযা রাখি।” তার বক্তব্য শুনে নবী পাক (সা) বললেন, “তুমি যা বললে এর উপর কায়েম থেকে যে মারা যাবে কিয়ামতের দিন সে নবী, সিদ্দীক ও শহীদগণের সাথে থাকবে” (মুসনাদে আহমদ, আমর ইবনে মুররাহ আল জুহহানী)। এখন আমাদের কাছে একথা পরিষ্কার হলো, শাহাদাত এমন একটি উচ্চ মর্যাদা, যে পর্যায়ে উপনীত হওয়া প্রকৃত ঈমানদার মাত্রেরই কাম্য। সিদ্দীক ও শহীদের চাইতে উচ্চ মর্যাদায় উপনীত হবার আর কোন অবকাশই নেই। সুতরাং শাহাদাত উচ্চ মর্যাদার মডেল।
এ সকল সম্মান ও মর্যাদার কারণেই সাহাবায়ে কিরামগণ শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করার জন্য ছিলেন সর্বদা ব্যাকুল, পাগলপারা। একটি ঘটনাই তার উজ্জ্বল নমুনা, একবার রাবী আবিবকর ইবনে আবী মুসা আশয়ারী (রা) বললেন, “তারা দু’জনেই যুদ্ধের সময় উপসি'ত ছিলেন- রাসূল (সা) বললেন, নিশ্চয়ই জান্নাতের দরজাগুলো তলোয়ারের ছায়াতলে।” একজন লোক দাঁড়িয়ে গেল যার কাপড়-চোপড় তেমন ছিল না, বললো, “হে আবী মুসা, রাসূল (সা) কি বললেন শুনলেন তো? তিনি বললেন, হ্যাঁ শুনলাম। তো তারপর লোকটি বন্ধুদের কাছে গিয়ে বললেন, তোমাদেরকে সালাম দিয়ে যাচ্ছি। আর আসবো না।” তারপর তার তলোয়ারের খাপটা ভেঙ্গে ফেলে দিলেন। এরপর তলোয়ার নিয়ে দুশমনদের দিকে চললেন, তাদেরকে মারতে থাকলেন যে পর্যন- না তিনি নিহত হলেন। শাহাদাতের মর্যাদা পাওয়ার খাঁটি কামনা যারা করবে তাদের জন্য রাসূল (সা) সুসংবাদ দিয়েছেন, “তারা বিছানায় মারা গেলেও আল্লাহ্‌ তাদেরকে সে মর্যাদা দান করবেন।”
উপসংহার
শাহাদাতের রক্ত আল্লাহ বৃথা যেতে দেন না। এটাই আল্লাহর বিনিময়। শহীদের উত্তরসূরীরা যখন সংগঠিতভাবে শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় তখন তাদের সাহায্য করা আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে পড়ে। স্বয়ং আল্লাহ্‌ বলেন, “মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।” বিংশ শতকের কর্মক্লান- সূর্য যখন পাশ্চাত্যের আকাশে বিদায়ের পটে, আমরা বিশ্ববাসী উৎসুক চোখে মহাসাগরের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে সূর্যাসে-র দৃশ্য অবলোকন করছি। পাশ্চাত্য সভ্যতার অহংকার বিশাল টাইটানিক সব কিছুসহ কালের অতল গহ্বরে বিলীন প্রায় অবস'ায় ক্যাপ্টেন টি.সি. ইলিয়ট বিশ্ববাসীকে জরুরী মেসেজ দিয়ে বলেছেন, “ চৎধু ভড়ৎ ঁং হড়,ি বি ধৎব ধঃ ঃযব ঃরসব ড়ভ ড়ঁৎ ফবধঃয .” “আমাদের জন্য প্রার্থনা কর, বাঁচাও আমাদেরকে, আমরা মৃত্যুর দ্বারে।” গোটা মুসলিম বিশ্বও আজ যেন সন্দেহ, অবিশ্বাস, ভোগবাদ, নেশা ও যৌনাচারের এ ভয়াল সমুদ্র থেকে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ঘোষণা করছে কোরআনের সেই অমিয় বাণী- “হে মনিব, তুমি আমাদের এই জালিম অধ্যুষিত এলাকা থেকে বের করে নাও।” এই মজলুম, যৌনাসক্ত, দিশেহারা পথিককে অপসংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহ থেকে ডাষ্টবিন থেকে তুলে এন হেরার রাজতোরণ দেখানোর দায়িত্ব নিতে হবে এমন একদল মর্দেমুমিনকে যারা ঈমানের চেতনায় তেজদীপ্ত এবং শাহাদাতের উদ্দীপনায় সদা উদ্বেলিত, আর যারা বাতিলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে উমার ফারুক, উসমান, হামযা, জাফর বিন আবু তালিব, আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, হুসাইন, মুসাইয়্যিব, সাইয়্যেদ আহমদ ব্রেলভী, তিতুমীর, সালাহ উদ্দীন, ইবনে কাশিম, হাসানুল বান্নাহ, আব্দুল কাদের
আওদাহ, সাইয়্যেদ কুতুব, আবদুল মালেক, সাব্বির, হামিদ, আইয়ুব, জব্বার-এর মত ভুবন কাঁপানো সে ঘোষণা সদম্ভে উচ্চারণ করতে পারে, আল্লাহ্‌ তায়ালা কোরআন পাকে যেমন উল্লেখ করেন- “হে প্রভূ, আমরা তোমার উপর ঈমান আনলাম, আর শহীদদের কাতারে আমাদের নাম লিখে দাও।” বিশ্বজাহানের মালিকের কাছে সিজদাবনত চিত্তে আমাদেরও মুনাজাত, হে আল্লাহ! এই দিক ভ্রান- জাতির কণ্ঠে সত্যের অবিনাশী গান তুলে দিতে আমরাও শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করতে প্রস'ত। আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

কামারুজ্জামানের মামলা: ট্রাইব্যুনাল থেকে রিভিউ পর্যন্ত বিচার যেভাবে

নাজমুল আহসান রাজু : জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন খারিজ করে দেয়া হলে আপিলের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল থাকে। রিভিউর নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাটির বিচার কাজ শেষ হয়। গত ৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দেন। বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতি হলেন, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। দু’দিন পর ৮ এপ্রিল রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ আদেশে স্বাক্ষর করেন আপিল বিভাগ। স্বাক্ষরের পর রায়ের অনুলিপি বিকাল ৪টা ৪৬ মিনিটে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারির পর আদেশের অনুলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পৌঁছে পৌনে ছয়টায়। রিভিউর আদেশে বলা হয় ‘আমরা রিভিউ আবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখলাম যে, আপিল বিভাগের রায়ের বিষয়ে আপাত কোনো ভুল সর্ম্পকে কিছুই বলা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে মি. খন্দকার মাহবুব তার বক্তব্যে রিভিউ আবেদনের সীমাবদ্ধতা অকপটে স্বীকার করেছেন। ফলে তাৎক্ষণিক রিভিউ আবেদনটি খারিজ (ডিসমিসড) করা হলো।’ গত ৫ মার্চ আপিল বিভাগের মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় সাড়ে তিনমাস পর প্রকাশ হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির স্বাক্ষর শেষে রায়টি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা রায়ে ভিন্নমত পোষণ করেন। পূর্ণাঙ্গ রায়টি ৫৭৭ পৃষ্ঠার। রায়ের ৫৭৬ পৃষ্ঠায় ছিল সংক্ষিপ্ত আদেশ। পূর্ণাঙ্গ রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়েছে- আপিল আংশিকভাবে মঞ্জুর হলো। আপিলকারী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে প্রথম অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হলো। ২ ও ৭ নম্বর অভিযোগে তার দন্ড সংখ্যারিষষ্ঠতার ভিত্তিতে বহাল থাকলো। ৩ নম্বর অভিযোগে তাকে সর্বসম্মতভাবে দোষী সাব্যস্ত করা হলো তবে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। ৪ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তার সাজা মৃত্যুদন্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হলো।
আপিলের রায়ে জ্যোষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা রায়ে বলেন, আপিল আংশিকভাবে মঞ্জুর হলো। ২, ৪ এবং ৭ নম্বর অভিযোগে আপিলকারী দোষী না হওয়ায় (মুহাম্মদ কামারুজ্জামান) খালাস দেয়া হলো। ৪ নম্বর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যৃদন্ডের স্থলে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হলো। ২ নম্বর অভিযোগের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে ব্যর্থ। কারণ দোষী প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযুক্তকে খালাস দেয়া হলো। ৩ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডের আদেশ সংশোধন করে যাবজ্জীবন সাজা দেয়াই যুক্তিযুক্ত। কারণ ঘটনাস্থলে অভিযুক্তের উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। ৪ নম্বর অভিযোগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। ৭ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে এই অভিযোগটিও প্রসিকিউশন সন্দেহাতীত প্রমাণ করতে পারেনি। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন ‘কামারুজ্জামান কোনো কোনো দিন সকালে, কোনো কোনো দিন দুপুরে আবার কোনো কোনো দিন সন্ধ্যার পর ডাক বাংলোর ক্যাম্পে আসতো। যদি তাই হয় তাহলে কিভাবে অভিযুক্ত প্রণিধানযোগ্য আল বদর নেতা হলেন? কিভাবে সাক্ষীরা তাকে দেখেছে এবং ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা রয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ বিষয়গুলো আরো বিস্তারিত ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা নিতে পারতো। তাই অভিযুক্তকে খালাস দেয়া হলো। 
তারও আগে গত বছরের ৩ নবেম্বর আপিল বিভাগের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ও বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে সংক্ষিপ্ত আদেশে রায় ঘোষণা করেন। সংক্ষিপ্ত রায়ে প্রসিকিউশনের ৩য় অভিযোগ- শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গণহত্যার অভিযোগে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করলেও মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে। চতুর্থ অভিযোগে গোলাম মোস্তফাকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন আপিল বিভাগ। দ্বিতীয় ও সপ্তম অভিযোগে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া দন্ড সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে বহাল রাখা হয়। দ্বিতীয় অভিযোগে এক শিক্ষককে নির্যাতনের ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছিল। আর সপ্তম অভিযোগে গোলাপজান গ্রামের পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। প্রথম অভিযোগে শেরপুরের কালীনগর গ্রামের বদিউজ্জামানকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিলেও আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়েছে এর মধ্যে ৫ ও ৬ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে অব্যাহতি দিয়েছিল। এই দুটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেনি। আপিল না করায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
ওই রায়ের পর কামারুজ্জামান রিভিউ আবেদন করতে পারেন না বলে ব্যাখ্যা দেন সরকারের এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। কিন্তু কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা জানান রিভিউ করার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। এটা কোনো অবস্থাতেই খর্ব করা যায় না। এরপর রিভিউ সংক্রান্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের আবেদন নিষ্পত্তি হলে সেখানে বলা হয় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে আপিল বিভাগের রায় রিভিউর আবেদন করতে পারবেন দন্ডিত ব্যক্তি ও সরকারপক্ষ (প্রসিকিউশন)। সুপ্রিম কোর্টের রুলস অনুযায়ী রিভিউ করতে ৩০ দিনের মধ্যে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রিভিউর আবেদন নিষ্পত্তি হবে। আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্ত কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। গত ২৪ নবেম্বর রিভিউর এই রায় প্রকাশ হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারক মো. শাহিনুর ইসলাম ২০১৩ সালের ৯ মে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদন্ডের রায় দেয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গত বছরের ৬ জুন আপিল করেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। ট্রাইব্যুনালের রায়:
দুই অভিযোগে মৃত্যুদন্ড : মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগের মধ্যে সোহাগপুর হত্যাকান্ড ও গোলাম মোস্তফা হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল।
সোহাগপুর হত্যাকান্ড : ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানী সেনাদের নিয়ে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। এ ঘটনায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়। প্রসিকিউশনের আনা এই অভিযোগে কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে ট্রাইব্যুনাল।
গোলাম মোস্তফা হত্যাকান্ড : ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট আলবদর সদস্যরা গোলাম মোস্তফাকে ধরে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে আল-বদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে তাকে গুলী করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায়ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে শাস্তি প্রদান করা হয়।
দুই অভিযোগে যাবজ্জীবন : মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে বদিউজ্জামান ও জহুরুল ইসলাম দারাসহ অজ্ঞাত ছয়জন হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। ১৯৭১ সালের ২৯ জুন সকালে শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি থেকে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে নির্যাতন করে পরদিন হত্যা করা হয়। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লখ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমযান ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের টেপা মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে ধরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় আল-বদর ক্যাম্পে নেয়া হয়। পরদিন ওই দু’জনসহ সাতজনকে আল-বদররা গুলী করলে টেপা মিয়ার পায়ে লাগে। তিনি পালাতে সক্ষম হন। অন্য ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায়ও কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করে।
এক অভিযোগে ১০ বছর সাজা : অধ্যক্ষ হান্নানকে নির্যাতনের ঘটনায় মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানকে মাথা ন্যাড়া করে চুনকালি মাখিয়ে পুরো শহর ঘোরানো হয়। এ ঘটনায় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
দুই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি : রায়ে প্রসিকিউশনের আনা পাঁচ ও ছয় নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি উল্লেখ করে কামারুজ্জামানকে ওই দুই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় শেরপুরের চকবাজার থেকে লিয়াকত আলী ও মুজিবুর রহমানকে অপহরণ করে বাঁথিয়া ভবনের রাজাকার ক্যাম্পে নির্যাতনের পর থানায় চারদিন আটকে রাখা হয়। এ ঘটনায় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের নবেম্বর মাসে আলবদর সদস্যরা টুনু ও জাহাঙ্গীরকে ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। টুনুকে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরকে পরে ছেড়ে দেয়া হয়। এ দু’টি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কামারুজ্জামানকে এর থেকে খালাস দেয়া হয়।
মামলার বিবরণ : গত ২০১৩ সালের ১৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মামলার শেষ ধাপে প্রসিকিউশন ও ডিফেন্সের যুক্তি উপস্থাপন সমাপ্ত করে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল-২। এরপর ৫ জুন রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রসিকিউশন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পুনরায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল-১। এরপর ১৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়। ১৬ মে ডিফেন্সপক্ষ এবং ২০ মে প্রসিকিউশনের আইনজীবীরা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ করেন। এরপর ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১২ সালের ১৫ জুলাই থেকে এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আব্দুর রাজ্জাক খানসহ প্রসিকিউশনের ১৮ জন সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে কামারুজ্জামানের পক্ষে গত ৬ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত ৫ জন ডিফেন্স সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হচ্ছেন মো. আরশেদ আলী, আশকর আলী, কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল, বড় ভাই কফিল উদ্দিন এবং আব্দুর রহিম।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয় সুপ্রিম কোর্টের ফটক থেকে। ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।

ফাঁসির মঞ্চেও হাসলেন কামারুজ্জামান

11 Apr, 2015 মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে।
ফাঁসি কার্যকরের সময় তিনি ফাঁসির মঞ্চে হেঁটে যান এবং ফাঁসি দেয়ার কয়েক মিনিট আগে জল্লাদ এর সাথে হেসে হেসে কথা বলেন বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে।
কারাসূত্রে আরো জানা যায়, এর আগে শেষ খাবার হিসেবে মুরগির মাংস ও ইলিশ মাছ দিয়ে সাদাভাত খেয়েছেন কামারুজ্জামান।
তার আগে গোসল করেন। এরপর কেন্দ্রীয় কারাগারের পেশ ইমাম মো. মনিরুল ইসলাম কনডেম সেলে গিয়ে তাকে তওবা পড়ান।
এর আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তার। রাত ১০ টার পরে কার্যকর করা হয় ফাঁসি।
শীর্ষ নিউজ

শেরপুরে কামারুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন

 জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
রোববার ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে তার গ্রামের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের মুদীপাড়ায় তার এতিমখানার পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এরআগে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কামারুজ্জামানের মরদেহ তার পরিবার পরিজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তার বড় ভাই কফিলউদ্দিন মরদেহ গ্রহণ করেন।
এরপর তার ভাগ্নি জামাই মাওলানা আব্দুল হামিদ তার জানাজার নামাজ পড়ান। নামাজে জানাজায় অংশ নেন স্বজন ও গ্রামের লোকজন।


বিশ্ব মিডিয়ায় কামারুজ্জামানের ফাঁসি: যুদ্ধাপরাধী নয়, একজন একজন ইসলামী চিন্তাবিদের মৃত্যু!

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি খবর বিশেষ গুরুত্বের সাথে প্রচার করছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। 
শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে এইসব সংবাদমাধ্যম বলছে, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও একজন ইসলামী নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে! মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পরপরই মিডিয়াগুলোতে এই সংবাদ গুরুত্বসহকারে প্রচার করা হয়। আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এপি, নিউইয়র্ক টাইমস, ইয়াহু নিউজ, এবিসি নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট, ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, জি নিউজ, নিউজিল্যান্ডের এনজিহেরাল্ড, অস্ট্রেলিয়ার ডেইলি টেলিগ্রাফ, মালয়েশিয়ার দ্য স্টার.কম, সংযুক্ত আরব আমিরাতের গালফ নিউজসহ অনেক খ্যাতনামা সংবাদ-সম্প্রচার মাধ্যমে একজন ইসলামী নেতাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে বলে খবর প্রচার করা হয়। এই সব সংবাদ মাধ্যমের বেশিরভাগই সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে কামারুজ্জামানকে একজন শীর্ষ পর্যায়ের ইসলামী নেতা বা জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। বিবিসি তাদের অনলাইনে খবরটির শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতিকের ফাঁসি। এখানে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ঢাকার কারাগারে এক ইসলামী রাজনীতিককে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। এপি কামারুজ্জামানের ফাঁসির খবরটির শিরোনাম দিয়েছে ''যুদ্ধাপরাধের জন্য বাংলাদেশে ইসলামী দলের কর্মকর্তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে।' মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি তাদের খবরে বলেছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত ইসলামী দলের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে শনিবার ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ। আল জাজিরা এ বিষয়ে তাদের খবরের শিরোনাম করেছে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসলামী নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে বাংলাদেশ। খবরটিতে কামারুজ্জামানের পরিবারের ভি চিহ্ন প্রদর্শনের ছবিও প্রকাশ করা হয়। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়াও কামারুজ্জামানকে একজন ইসলামী নেতা বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে খবরটি বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে। এছাড়া, অন্য অনেকগুলো সংবাদমাধ্যম এপি, বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরার বরাত দিয়ে খবরটি প্রচার করেছে। 
তাজা খবর এর সৌজন্যে

দেখা হবে জান্নাতে : কামারুজ্জামান

11 Apr, 2015 ‘চিন্তা করো না, আল্লাহ চান তো তোমাদের সবার সাথে দেখা হবে জান্নাতে। তোমরা সবাই সৎ জীবনযাপন করবে। হালাল রুজি কামাই করবে’- কথাগুলো বলেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। গত ৬ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তার সাথে সাক্ষাত করেন। মনে হচ্ছিল এটাই তাদের শেষ সাক্ষাত। ওই বিবেচনাতেই তিনি কথাগুলো বলেছিলেন।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আব্বা বলেছেন, তার এ মৃত্যু নিঃসন্দেহে শহিদি মৃত্যু। তিনি এজন্য আনন্দিত। এভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। তিনি বলেছেন, কতভাবে কত মানুষের মৃত্যু হয়। যেকোনো দুর্ঘটনা বা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারতেন। কিন্তু এ মৃত্যু আনন্দের। মৃত্যু নিয়ে তিনি ভীত নন। 
গত ৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ওই দিনই কারা কর্তৃপক্ষ দুপুরের পর কামারুজ্জামানের মিরপুরের বাসায় চিঠি পাঠায়। বিকেল পাঁচটার মধ্যে পরিবারের সদস্যদের কারাগারে কামারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাতের জন্য যেতে বলা হয়। কামারুজ্জামানের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নিসহ মোট ১৬ জন সদস্য সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। 
কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামিও ছিলেন এ ১৬ জনের মধ্যে।
হাসান ইকবাল ওয়ামি তার পিতার সাথে ওই সাক্ষাৎ বিষয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আব্বা আমাদের বলেছেন, তার অবর্তমানে আমাদের মা আমাদের অভিভাবক। তিনি আমাদের নসিহত করে বলেছেন, তার মৃত্যুতে আমরা যেন কোনোভাবেই বিচলিত না হই। তিনি বলেছেন, তিনি জুলুমের শিকার। ইসলামী আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা এবং রাজনীতির কারণেই তার আজকের এ পরিণতি। তিনি আমাদের অভয় দিয়ে বলেছেন, চিন্তা করো না, আল্লাহ চান তো একদিন তোমাদের সবার সাথে দেখা হবে জান্নাতে। 
হাসান ইকবাল বলেছেন, একদিন এদেশে ইসলামের বিজয় হবে সেটাই আব্বার আশা। একদিন এ দেশের তরুণরা সত্য ইতিহাস জানবে। 
আপনাদের পক্ষ থেকে তাকে কী বলেছেন জানতে চাইলে হাসান ইকবাল বলেন, আমরা আব্বার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে বলেছি আইনি লড়াইয়ে আমরা তাকে মুক্ত করতে আনতে পারলাম না। এজন্য আমরা দুঃখিত।
উৎসঃ নয়া দিগন্ত

সোমবার জামায়াতের হরতাল

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, লেখক, ইসলামী চিন্তাবিদ মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং নিম্নোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমাদ ১১ এপ্রিল নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন ঃ-
“সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, লেখক, ইসলামী চিন্তাবিদ, জনগণের প্রিয় নেতা জনাব মুহাম্মাদ কামারুজ্জামানকে ১১ এপ্রিল রাত ১০টার পরে হত্যা করেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য সরকার তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বায়বীয় ও কাল্পনিক অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। এ মামলায় দলীয় লোকদের দ্বারা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করে। সাক্ষীদের পরস্পরবিরোধী ও অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য থেকে তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বিষয়টি বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসীর নিকট উন্মোচিত হয়।
যে সোহাগপুরের কথিত ঘটনার অভিযোগে তাকে ফাঁসি কার্যকরের নামে হত্যা করা হলো তার সাথে জনাব মুহাম্মদ কামারুজামানের দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বার বার বলেছেন, জীবনে কোনদিনও তিনি সোহাগপুর যাননি। ওই এলাকায় কোনদিন তাকে দেখেছে এ ধরনের কথা কেউ বলতে পারবে না। সরকার পরিকল্পিতভাবে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে। জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামান তার পরিবারের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে জানিয়েছেন তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার বিচার অবশ্যই আদালতে আখিরাতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন নিজ হাতে করবেন।
উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর একজন ছাত্রকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার যে মহাষড়যন্ত্র ও তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার যে ব্যবস্থা আওয়ামী সরকার করেছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আমরা সরকারের এই চক্রান্ত ও বিভৎস হত্যার নিন্দা, প্রতিবাদ এবং ধিক্কার জানাই।
জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রক্ত বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিকট অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তার রক্ত বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে নিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্।
যারা ষড়যন্ত্র করে তাঁকে হত্যা করেছে এবং ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছে ইতিহাস কখনো তাদেরকে ক্ষমা করবে না। এই জালেম সরকারকে বিচারের নামে অবিচারের এবং পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডের জন্য জনতার আদালতে একদিন জবাবদিহি করতে হবে। আমি জনাব মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার প্রতিবাদে নিম্নোক্ত কর্মসূচী ঘোষণা করছিঃ
১) ১২ এপ্রিল রবিবার শহীদ কামারুজ্জামানের শাহাদাত কবুলের জন্য দোয়া অনুষ্ঠান।
২) ১৩ এপ্রিল সোমবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল।
ঘোষিত এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করে তোলার জন্য আমি জামায়াতে ইসলামীর সকল জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিঃদ্রঃ এ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ী, হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৫

‘উনার কথায় দেশ চলে না, বাবার দাফন শেরপুরেই হবে’

রিভিউ আবেদন খারিজের পর রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা না চাওয়ায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার। মঞ্চ এবং জল্লাদসহ ফাঁসির সকল আয়োজন চূড়ান্ত। এ অবস্থায় ফাঁসি কার্যকরের পর কামারুজ্জামানকে কোথায় দাফন করা হবে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। কামারুজ্জামানের ইচ্ছা অনুযায়ী তার বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি শেরপুরের গ্রামের বাড়িতে দাফন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন জেলার মুক্তিযোদ্ধারা।
দাফনের বিষয়ে হাসান ইকবাল ওয়ামি বলেন, ‘ফাঁসি কার্যকর হলে বাবাকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী শেরপুরের বাজিতখিলা ইউনিয়নে নিজের গড়া এতিমখানার মাদ্রাসা প্রাঙ্গণেই দাফন করা হবে।’
অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের লাশ শেরপুরের মাটিতে দাফন করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। গত সোমবার তারা বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন। পরে মঙ্গলবার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ইউনিট কমান্ডার ও কামারুজ্জামানের স্ত্রীর বড়ভাই এ.এস.এম.নুরুল ইসলাম হিরু স্মারকলিপির মাধ্যমে এই দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন।
কামারুজ্জামানের লাশ দাফন করতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে কামারুজ্জামানের এই আত্মীয় বলেন, ‘আমরা চাই না একাত্তরের নরঘাতক কামারুজ্জামানের লাশ শেরপুরের পবিত্র মাটিতে দাফন হোক। কামারুজ্জামানের দাফন প্রতিহত করতে নকলা, নালিতাবাড়িসহ শেরপুরে প্রবেশের চারটি পথে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেবে।’
শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান তার আপন ভগ্নিপতি এটিকে জীবনের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডি উল্লেখ করে হিরু বলেন, ‘বোনের বিয়ের সময় আমি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু পরিবার বিয়ের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় তাদের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। আদর্শের সঙ্গে আমি কোনো সময়ই আপস করিনি।’
তবে হাসান ইকবাল ওয়ামি বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হওয়ার কারণে তিনি সরকার থেকে বিভিন্ন ধরনের অনুদান ও টাকা-পয়সা পেয়েছেন। ওই টাকা হালাল করার জন্য তিনি বর্তমানে এসব প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।’
কামারুজ্জামানের দাফন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনার (হিরু) কথায় দেশ চলে না। শেরপুরও চলে না। আমাদের এলাকায় কোনো সমস্যা নেই। বাবার দাফন শেরপুরেই হবে।’

কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর


জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আজ রাত ১০টার পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে কামারুজ্জামানের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। 

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষে কামারুজ্জামানের লাশ তার জন্মস্থান শেরপুরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কামারুজ্জামানের লাশ কারাগার থেকে বের করা হয়নি। 
কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরবিষয়ক সরকারের নির্বাহী আদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেলা পৌনে ৩টায় কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। 
দণ্ড কার্যকর উপলক্ষে আজ শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হতে থাকে। বিপুলসংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ, কারারক্ষী এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। কারাগারের আশপাশ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে নির্দিষ্ট কয়েকটি রোডে পুলিশ, সাংবাদিক, প্রশাসনের যানবাহন ছাড়া সব গাড়ি এবং লোকজনকে বের হয়ে যেতে বলা হয়। 

আজ বিকেল ৪টার দিকে কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কারাগারে আসা উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই বিপুলসংখ্যক দেশী-বিদেশী সাংবাদিক জড়ো হন। 

সন্ধ্যা ৭টার পর কারাগারে একটি অ্যাম্বুলেন্স (ঢাকা মেট্রো-চ ৭৪-০১২৭) প্রবেশ করে। 

সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখারুজ্জামান প্রবেশ করেন। ৭টার দিকে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজিপি কর্নেল বজলুল কবির। সোয়া ৭টায় প্রবেশ করেন সহকারী সিভিল সার্জন আহসান হাবিব। 

কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি জানান, আজ সোয়া ১টার দিকে ডেপুটি জেল সুপার তাদেরকে ফোনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আসতে বলেন কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করার জন্য। বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে কামারুজ্জামানের ২২ জন নিকটাত্মীয় কারাগারে প্রবেশ করেন। সাক্ষাৎ শেষে ৫টা ২০ মিনিটে তারা বের হয়ে আসেন। কারাফটকের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের হাসান ইকবাল ওয়ামি জানান, তার বাবা প্রাণভিক্ষা চাননি। তিনি বলেছেন, প্রাণ দেয়ার এবং নেয়ার মালিক আল্লাহ। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার কোনো প্রশ্নই আসে না। 
কামারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাৎকারী পরিবারের সদস্যরা হলেন, বড় ভাই কফিল উদ্দিন, স্ত্রী নুরুন্নাহার, বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী, মেঝ ছেলে হাসান ইমাম ওয়াফী, মেয়ে আতিয়া নূর, ভাইয়ের স্ত্রী আফিয়া নূর, চাচাতো ভাই কামরুল ইসলাম, শ্যালক, ভাতিজা-ভাতিজি, ভাগ্নে-ভাগ্নি, নাতি-নাতনীসহ মোট ২২ জন। 
এর আগে গত ৬ এপ্রিল রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ওই দিনই কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কেন্দ্রীয় কারাগারে ডেকে আনে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন রাতেই কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিচারপতিদের স্বাক্ষরিত রায় কারাগারে না পৌঁছায় দণ্ড কার্যকর করা থেকে বিরত থাকে কর্তৃপক্ষ। এরপর ৮ এপ্রিল রিভিউ মামলার রায়ের কপিতে বিচারপতিদের স্বাক্ষর এবং তা ওই দিন কারাগারে পাঠানোর পর যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর হতে পারে মর্মে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে বলা হতে থাকে। কারাগার সূত্র এবং সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় ফাঁসি কার্যকরের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় ৯ এপ্রিল কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করেন তার আইনজীবীরা। সাক্ষাৎ শেষে অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির সাংবাদিকদের জানান, কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না সে বিষয়ে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে যথাসময়ে জানাবেন। 

এরপর গত শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করেন দুইজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। কামারুজ্জামানের প্রাণভিক্ষা বিষয়ে জানার জন্য তারা কারাগারে যাচ্ছেন কি না সাংবাদিকেরা কারাফটকে জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে কোনো কিছু জানাতে অস্বীকার করেন। 
১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। 
গত ৬ এপ্রিল সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। ৮ এপ্রিল রিভিউ রায়ের কপিতে স্বাক্ষর করেন চার বিচারপতি। এরপর গত রাতে কার্যকর করা হলো তার মৃত্যুদণ্ড। 
৬ এপ্রিল রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরপরই কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখে কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। কামারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের কাছে ওই দিন দুপুরের পর চিঠি পাঠানো হয় বিকেল ৫টার মধ্যে কারাগারে এসে দেখা করার জন্য। তখন খবর ছড়িয়ে পড়ে সেদিন রাতেই কার্যকর হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। তবে বিচারপতিদের স্বাক্ষরিত রিভিউ রায়ের কপি কারাগারে না পৌঁছায় কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকর করা থেকে বিরত থাকে। 
মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেন। গত বছর ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের একটি অভিযোগ বহাল রাখেন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। মৃত্যুদণ্ডের আরেকটি সাজা বাতিল করে যাবজ্জীবন করেন। 
গত ৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত বছর ৩ নভেম্বর যে রায় দিয়েছিলেন তা চূড়ান্তভাবে বহাল থাকে। 
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ : ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। 
ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনালের রায়ে মোট পাঁচটিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেয়া হয়। দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, দু’টি অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং অপর আরেকটি অভিযোগে ২০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। 
নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার এক মাসের মধ্যে আসামিপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করে। গত বছরের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেন। আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। ট্রাইব্যুনালের দেয়া আরেকটি মৃত্যুদণ্ডকে যাবজ্জীবন করা হয়। 
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। 
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বছর ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
কামারুজ্জামানের আপিল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দীন চৌধুরী। 
আপিল মামলায় কামারুজ্জামানের পক্ষে প্রধান আইনজীবী ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মো: মনির।
দৈনিক নয়া দিগন্তের সৌজন্যে

সরকারের উচিত ছিল রায় কার্যকরে বিধি মেনে চলা

জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের প্রধান আইনজীবী এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, সরকার কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার জন্য অনেক তাড়াহুড়া করেছে। তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা সেটা নিয়ে ভাববার জন্য যে সময় চেয়েছিলেন তার পুরোটুকু দেওয়া হয়নি। তাকে আর একটু সময় সরকার দিতে পারতো। সরকারের উচিত ছিল রায় কার্যকরে শুরু থেকে নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া। সেটা হলে সমস্যা হতো না।
তিনি আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, কামারুজ্জমানের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার জন্য শুক্রবার রাতেই সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নেয় বলে আমরা জানতে পারি। গণমাধ্যমেও তা দেখি। পরে শেষ মুহুর্তে তা বাতিল করে। কিন্তু তাদের এই ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া ও কার্যকর করার জন্য আরো অনেক বেশি সতর্ক হওয়ার দরকার ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারা কর্তৃপক্ষকে রায় কার্যকর করার জন্য মৌখিকভাবে আদেশ দিলেও কারা কর্তৃপক্ষ সেই দায়িত্ব নিতে চাননি। তিনি বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিবেন কেন। কারণ মানবতাবিরোধি অপরাধের রায় কার্যকর করার জন্য জেল কোড প্রযোজ্য হবে না। সেটা না হওয়ার কারণে তিনি প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য ৭-২১ দিন সময় পাবেন এমন নিয়ম তার বেলায় প্রযোজ্য হবে না। আর সেটা না হওয়ার কারণে এটর্নী জেনারেল এডভোকেট মাহবুবে আলম বারবার রিজনেবল সময়ের কথা বললেও সময় বলেননি। তবে তারা তাড়াহুড়া করেন।
যেহেতু জেল কোড প্রযোজ্য হবে না সেই জন্য সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে একটি আদেশ দিতে হবে। সেই হিসাবে সরকার চাইলে শুক্রবারেও সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। কিন্তু সেটা তারা করেনি। মৌখিকভাবে চেষ্টা করেছে বলে শুনেছি।
তবে কারা কর্তৃপক্ষ যে শুক্রবার তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর করেনি সেটা তারা ঠিক করেছে। কারণ সরকার আদেশ না দিলে তারা কোন দায় দায়িত্ব নিতে পারবে না। পরে এনিয়ে অনেক জটিলতা তৈরি হতো।
তিনি বলেন, কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করার ব্যাপারে ও বিচার নিয়ে আমরা সব সময় দাবি করে আসছি স্বচ্ছ করার। এছাড়াও আন্তর্জাতিকভাবে মৃত্যুদন্ড কার্যকর না করার ব্যাপারে সরকারের উপর চাপ আছে। কোন কোন দেশে মৃত্যুদন্ড থাকলেও এখন বেশিরভাগ দেশে মৃত্যুদন্ড নেই। এই কারণে আন্তর্জাতিক মহল মনে করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড না হয়ে যাবজ্জীবন হলেই ভাল হয়। সেটা তারা সরকারকেও বলেছে।
কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করা নিয়েও সরকারের উপর চাপ রয়েছে। এই কারণে সরকার পরে হয়তো সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কি মেশানো ছিল সেই খাবারে ?

প্রথম দফা ১০ দিনের রিমান্ড শেষে দ্বিতীয় বারের দশদিনের চার দিন মোট ১৪ দিনের রিমান্ড অতিবাহিত হবার পর অজ্ঞান অবস্থায় মাহমুদূর রহমান মান্না কে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল । এ পর্যায়ে এরকম প্রশ্ন আসতেই পারে তিনি কেন অজ্ঞান হয়েছিলেন ? ঘটনার দিন সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের শেষে রাতের খাবার দেয়া হয় । অতিরিক্ত কাঁচা তেল আর লাল মরীচের গুড়ো মেশানো ''দুর্গন্ধ যুক্ত '' খাবার খেয়েই তিনি বমি করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন । কি মেশানো ছিল সেই খাবারে ? গ্রেফতারের পর ২১ ঘণ্টা কোথায় রাখা হয়েছিল ? এই দুটো প্রশ্নের উত্তর কি কোনদিন জানা যাবে ? ।
ঢাকা মেডিকেলের মেডিকেল বোর্ডের আপত্তি উপেক্ষা করে কারা হাসপাতালে ভর্তির কথা বলে কেন ডিভিশন না দিয়ে , কারা হাসপাতালে ভর্তি না করে সাধারন কয়েদীদের সাথে তাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হল ? কেন ? অসমাপ্ত ছয়দিনের রিমান্ড আমাদের আইনজীবীকে না জানিয়ে কেন গোপনে মঞ্জুর করে রাখা হল ? এ হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে কিন্তু কোথাও ভর্তি করা হচ্ছেনা । বারডেমে নেয়া হয়েছিল , পিজিতেও নেয়া হয়েছিল কিন্তু নানা আইন দেখিয়ে আবার কারাগার । এবার কি হবে ?
সিটি নির্বাচনের বিষয়ে পরামর্শের জন্যে দেখা করার অনুরধ জানানো হলেও দেখা করতে দেয়া হলোনা কোন উদ্দেশ্যে ? টেলিফোন সংলাপ তিনি তো অস্বীকার করেন নাই । এটা তো এখন আদালতের বিচার্য বিষয় হওয়া উচিত তাইনা ? তাহলে ২০ দিনের রিমান্ড কেন ? রিমান্ডে কি প্রস্তাব দেয়া হচ্ছিল ?
রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতনের পর গুরুতর অসুস্থ্য মাহমুদুর রহমান মান্না কে গতকাল জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে আনা হয়েছে । এই ছবির মানুষটি কি গ্রেফতারের এক দিন আগেও দেখতে এমন ছিল ?
তাহলে কি আমরা ধরে নেবো এভাবেই আটকে রেখে একটা স্থায়ী বড় অসুস্থ্যতা সৃষ্টি করে আগামী এক দেড় মাসেই তাকে মৃত্যু বরন করানো হবে। কারন, গ্রেফতার হবার পর ২১ ঘন্টা অজ্ঞাত স্থানে অবশ্যই এমন কারও কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যার হুকুমেই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং সে মান্না ভাইয়ের সাথে এমন আচরন করে ফেলে বা মান্না ভাই এমন কিছু জেনে বা দেখে ফেলেছেন যে সে এটা কোনদিন প্রকাশ হতে পারে এই রিস্ক নিতেই চাচ্ছেনা। তার কাছে হয়ত একজনকে হত্যা করা অত্যন্ত মামুলি ব্যাপার! এদেশে কি সত্য, ন্যায়, দেশপ্রেম আর গনতন্ত্রের কথা বলাদের এভাবেই শেষ করে দেওয়া হবে?