‘নেভার’, ‘অফকোর্স’ শব্দ দুটি দু’বার শুনলাম। এরপর একটু উঁচু গলায় কথা-বার্তা। ‘আপনি কোন আইনের বলে হাউসে ফোন করে আমার অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বললেন? আমাকে দেখান।’
‘আছে, আইন আছে।’‘হ্যাঁ সেটাই তো জানতে চাচ্ছি, দেখান।’
‘আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি দেখাতে বাধ্য নই।’
এরপরই আরো উঁচু গলায় কথা বলতে শোনা যায়। ৬ জুলাই ২০১৩ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একুশে টেলিভিশনের জনতার কথা অনুষ্ঠানের রেকর্ডকৃত অংশ প্রচার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পরবর্তীতে জানতে চাইলে এ ধরণের আচরণ করেন জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। কনক সরোওয়ার সেখানে সাহসিকতার সাথে ভূমিকা রাখেন ।
ড. কনক সারোওয়ার। একুশে টেলিভিশনের সাহসী, দক্ষ, যোগ্য ও চৌকষ সাংবাদিক। একুশে’র নিয়মিত আয়োজন ‘জনতার কথা’ অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক। বলা বাহুল্য, এই টিভি প্রোগ্রামটিতে জনসাধারণের মতের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সরকারি বিভিন্ন কার্যক্রমের সমস্যা ও সম্ভাবনাও তুলে ধরা হয়। এখানে সরকার দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের বা চলমান প্রক্রিয়া নিয়ে মুক্তমত প্রকাশের সুযোগ পায় মুক্তকামী সাধারণ মানুষ। এ প্রোগ্রাম দর্শকের পছন্দের। তবে, শাসক গোষ্ঠীর পছন্দের যে নয়, তা আজ প্রমাণিত। কেননা এই টিভি প্রোগ্রামের মাধ্যমে মন্ত্রী-এমপিদের থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসতে শুরু করে। স্বাভাবিক ভাবেই সরকারও এটাকে হুমকি মনে করে।
সেই কারণেই কি গত মাসে গ্রেফতার হন কনক সারওয়ার? আসলে তার অপরাধ কী? তিনি কোন আইন ভেঙ্গেছেন? হাঁ, একটি আইনের আশ্রয়ে তার গ্রেফতারকে যৌক্তিক করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তা সকলের কাছেই হাস্যকর ঠেকেছে। জগদ্দল পাথরের মতো জাতির বুকে চেপে থাকা অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে জনতার কথাকে কনক সারওয়ার ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরেছিলেন। প্রকাশ পায় সরকারের হীন, ঘৃণিত সব কর্মকাণ্ড। কিন্তু ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব হয়ে ওঠা সরকার তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। আর তাই গত ৩ মার্চ মঙ্গলবার ২০১৫ দুপুর ২ টায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি অগ্রহণযোগ্য অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাকে।
যুগে যুগে যারা সাহসের সাথে সাংবাদিকতা করেছেন তাদের উপর নেমে এসেছে অত্যাচার, নির্যাতন, কারাবাসের মতো ভয়াবহ নিপীড়ন। সাংবাদিকদের কারণেই প্রকাশিত হতে থাকে মুখোশের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা দুর্নীতিপরায়ণ, হিংস্রতায় ঢাকা আবরণ। আর বরাবরই অপরাধীরা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আক্রোশে ফেটে পড়ে। লোভনীয় অফার কিংবা জীবনের ভয় দেখিয়ে বন্ধ করতে চায় সৎ সাংবাদিকদের সাহসী পদচারণা।
সরকারও অতীতের মতো একই পথে হাঁটছে। গণমাধ্যম বন্ধ করেছে। দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টিভিকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সম্প্রচারে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে একুশে টেলিভিশন। ঠুনকো অভিযোগে এসকল গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে জনতার কথা বলার অধিকারকে হত্যা করা হয়েছে।
সবাই জানে, সরকার বড় ধরণের ভুল করে চলছে। আর যাই হোক, দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের কৃতিত্বের অধিকারী এই দেশের মানুষকে বোকা ভাবাটাও হবে চরম বোকামি। দেশের কোথায় কী হচ্ছে, তার নেপথ্যে কারা, তা এদেশের মানুষ খুব ভালো করেই জানে। কোন গণমাধ্যম কী কারণে বন্ধ হচ্ছে তা স্পষ্ট করে বলা না হলেও জনতার বুঝতে বাকি নেই। আড়ালের ঘটনা সচেতন প্রত্যেকেই অনুধাবন করছে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন