সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইউরোপভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংগঠন সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকে‘র আহ্বায়ক এম এ মালেক। বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে অবস্থান করে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনে চাপ প্রয়োগের জন্য বৃটিশ সরকারের প্রতি দাবি জানান।
সমাবেশে সিটিজেন মুভমেন্ট ইউকের আহ্বায়ক এম এ মালেক বলেন, দেশ এখন এক গভীর সংকটে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের প্রধান নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার নানাভাবে হয়রানী করছে। তার স্বাধীন চলাফেরায় বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। ৫ জানুয়ারীর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। ক্ষমতা দখলের পর থেকেই অবৈধ শেখ হাসিনা বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের হত্যা, খুন, গুম অব্যাহত রেখেছেন।
ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের উপর অত্যাচারের স্টীম রোলার চালাচ্ছেন। এই সরকারকে জনগণ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
এম এ মালেক বলেন, ভোটারবিহীন হাসিনার অবৈধ সরকার এখন বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করার চক্রান্ত করছে। তাদের মনে রাখা দরকার, ক্রসফায়ারের নামে বেপরোয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের পরও আন্দোলনকারীরা যখন থামেনি এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের অপচেষ্টা শেখ হাসিনার পতন ডেকে আনবে।
এম এ মালেক বলেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সরকার আদালতের মাধ্যমে তার বক্তব্য গনমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশে বাধার সৃষ্টি করছে। যেখানে আদালত মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা সেখানে বাকস্বাধীনতা হরণের পক্ষে এভাবে আদালতের পক্ষে অবস্থান নেয়া নজীরবিহীন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে একদলীয় বাকশালী শাসন চলছে। রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে আওয়ামীকরণ করা হয়েছে। এম এ মালেক বলেন, বিএনপি‘র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও সিনিয়র নেতাদেরসহ সারাদেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারান্তরীণ করে বর্তমান অবৈধ সরকার গায়ের জোরে দেশকে দখলে রেখে ভয়াবহ দুঃশাসন চালিয়ে যাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে নাশকতা সৃষ্টি করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমগুলোকে কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। তিনি অবিলম্বে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান।
বিএনপির আন্তজার্তিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান বলেন, দেশ এখন কঠিন সংকটে। ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে যে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছেন চলমান আন্দোলনে তার পতনের মাধ্যমে হাসিনা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে। তিনি গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত তা চালিয়ে যাবার আহ্বান জানান।
ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি শাহ সদরুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের অখন্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেশপ্রেমিক জনগণ কখনো মেনে নেবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অখন্ডতার বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নেয়, যারা আঁতাত করে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চায় - জনগণ তাদেরকে বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করবে। মুফতি শাহ সদরুদ্দিন বলেন, উচ্চ-আদালত ঘোষিত রংহেডেড শেখ হাসিনার সঙ্গে জনগণ নেই। তার ভরসা একটি বিশেষ অঞ্চলের কতিপয় র্যাব ও পুলিশের বন্দুক। তারা একটি বিশেষ অঞ্চলের পুলিশ দিয়ে আওয়ামী লীগ এখন জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। বর্তমানে খুনী বাহিনী হিসাবে দেশে বিদেশ পরিচিত র্যাব বাহিনী প্রধান একটি বিশেষ অঞ্চলের, বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর প্রধানও একটি বিশেষ অঞ্চলের, ঢাকা মহানগর বর্তমান
পুলিশ কমিশনার একটি বিশেষ অঞ্চলের, ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রায় প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অর্থাৎ ওসিও একই অঞ্চলের। তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। শেখ হাসিনাকে অচিরেই এইসব অপকর্মের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
সেভ বাংলাদেশ ইউকের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, পেট্রোল বোমা, গান পাউডার, গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষ পোড়ানো এবং লগি-বৈঠার তান্ডবে লাশের ওপর নৃত্য ইত্যাদি সর্বনাশা মরণখেলা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। জনগণের কণ্ঠনালী কেটে গণতন্ত্রকে কবরস্থ করার ঐতিহ্য এদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগেরই। তারা গণতন্ত্রের খোলসে আসলে বাকশালকেই কায়েম করছে। অবৈধ শেখ হাসিনা সরকার বেগম জিয়াকে বন্দী করার নানা ফন্দি করে বাকস্বাধীনতার আইনগত অধিকারকে শূলে চড়িয়ে গণমাধ্যমকে শুধুমাত্র সরকারের সকল বার্তা প্রচারের নির্দেশ দিয়েছে। ব্যারিস্টার নজরুল বলেন, সরকারের নীতিনির্ধারকরা আন্দোলনরত নেতা-কর্মীদের বুকে গুলি করতে বলেছেন। গোয়েন্দা পুলিশরা বন্দুক যুদ্ধের গল্প বানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাহবা পাচ্ছেন। আন্দোলন ঠেকাতে প্রতিরোধ কমিটির নামে বেসামাল সশস্ত্র ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীদের লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতকিছুর পরেও অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, এই সরকার যে ভয়ঙ্কর গণদুশমন তার আরও একটি প্রমাণ হলো-কথিত বন্দুকযুদ্ধে আন্দোলনরত নেতাকর্মীদেরকে হত্যার জন্য পুলিশকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সমর্থন দেয়া। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যেনো হিটলারের সহযোগী নাৎসী আইকম্যানের ভূমিকা পালন করছেন। তিনি বলেন, নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে কেউই ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, এ অবৈধ সরকারও পারবে না। শেখ হাসিনার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
প্রফেসর সালেহ আহমেদ বলেন, মানুষের বাক স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করেছে এই সরকার। কোন সংবাদ ছাপানো বা প্রচার করা যাবে না, টক শোতে কি আলোচনা করা যাবে না, কাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না - এসবই এখন নির্ধারণ করে দিচ্ছে সরকার। তিনি এই সরকারকে ইসলামের শত্রু আখ্যায়িত করে গণতন্ত্র পুণরুদ্ধার ও ভোটের অধিকার ফিরে পেতে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠনের জন্য ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে আন্দোলন শুরু শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত সে আন্দোলন চালিয়ে যাবার আহ্বান জানান।
ব্যারিষ্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারের দুর্নীতি, অন্যায় এবং অত্যাচার এখন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যেসব বাহিনী রয়েছে তাদেরকে বিরোধী দল ও মতের নেতাকর্মীদের দমনের জন্য ব্যবহার করছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দুঃশাসন টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্র এখন ভয়াল ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারহীন একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সরকারী কর্মচারীদের দলের আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেখানে নিরপেক্ষতার ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন করা যায় না। বাংলাদেশে চোখের ইশারাও যদি সরকারবিরোধী মনে হয় তাহলেও নিপীড়নের শিকার হতে হবে, সেই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে বিরাজ করছে। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বৃটিশ এমপিদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যমেরন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
সমাবেশে আরোও বক্তব্য রাখেন তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার এম এ সালাম, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি আখতার হোসেন, আনোয়ার হোসেন খোকন, শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন, প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন, নাসিম আহমেদ চৌধুরী, শামসুর রহমান মাতাব, আতিকুর রহমান চৌধুরী, জাভেদ ইকবাল, কামাল উদ্দিন, খসরুজ্জামান খসরু,প্রমুখ
উপস্থিত ছিলেন ব্যারিষ্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন, ড. সাইফুল আলম চৌধুরী, জাহিদ চৌধুরী, রহিম উদ্দিন, আফজল হোসেন, মুজিব চৌধুরী, মসুদ আহমেদ, মাহমুদ আলী, খলিলুর রহমান, টিপু আহমেদ, হাসিম মিয়া, সোহেল মিয়া, নুরুল হক, সেলিম আহমেদ, খোকন মিয়া, আব্দুল বাছিত বাদশা, মঞ্জুর আশরাফ খান, শাহরিয়ার হোসেন জুনেদ, মুনিম ইমন, মাহবুবুল আলম লাহিন, ময়না মিয়া, টিপু আহমেদ, বাবর চৌধুরী, তাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম রিবলু, সালেহ গজনবী, তপু শেখ, সুজাত আহমেদ, সাবেক ছাত্রদল নেতা নাসির আহমেদ শাহীন, আমিনুর রহমান আকরাম, রিয়াজ আহমেদ, এমাদুর রহমান এমাদ, জিল্লুর রহমান, রওশন , এম এ সালাম,নাজমুল হোসেন চৌধুরী, মোঃ জাহিদুল আলম, শহিদুল ইসলাম স্বপন, রাজিব আহমেদ খান, ইউসুফ রায়হান গোলাপ, টিটু আহমেদ, আরমানুল আরোফিন, মোঃ সুলেমান খান, মীর জুবায়ের আহমেদ, মৌলানা মোঃ শামীম, সেলিম আহমেদ, মিছবাহুল ইসলাম বাবু, হাসনাত কবির খান রিপন, মোঃ আলিম আল রাজি, মাহমুদ হোসেন সুজন, জুয়েল রহমান, আতাউর রহমান, জুনেদ আহমেদ চৌধুরী, সিদ্দিকুর রহমান সোহাগ, জিয়াউর রহমান, আকমল হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম শিমু, সৈয়দ মুহিবুল ইসলাম রিপন, রাজু আহমেদ খান, আসাদুজ্জামান মুকুল, শাহাব উদ্দিন মজুমদার সাবু, সাইফুল ইসলাম মেরাজ, ইমতিয়াজ এনাম তানিম, মাসুদুর রহমান, হুমায়ুন কবির হিমু, নওমি, আবু নাসের শেখ, শেখ নাসের, হেলাল উদ্দিন, মীর মাসুদ শেজান,জুল আফরোজ মজুমদার, রনি আহমেদ, খান পাবেল, আমিনুল হাসান, মাহবুবুর রহমান, সোহেল রানা, সোহেল সরকার, শফিউল আলম প্রমূখ। সূত্র-ওএনবি, লন্ডন, ঢাকার নিউজ