সকল আলামত দেখে মনে হচ্ছে যে সরকার চরম বেকায়দায় পড়ে গেছে। বিএনপি এবং জামায়াত এই দুটি দলকেই ' পয়েন্ট অব নো রিটার্নে ' ঠেলে দেয়া হয়েছে ।
সরকার যে সব অপকৌশল প্রয়োগ করে এতদিন বিরোধী দলগুলিকে দমিয়ে রেখেছিল , একে একে তার সবগুলিই ভোতা বা অকেজো হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কোন কোনটি সরকারের জন্যে বুমেরাং হয়ে পড়েছে।
অান্দোলনে এমন একটা পদ্ধতি বেরিয়ে এসেছে যে মধ্য সারির নেতাদের উপর নির্ভরতা ছাড়াই টপ নেতৃত্ব আন্দোলন পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছেন। এই বিষয়টি আন্দোলনের চেহারা ও মেজাজ আমূল বদলে দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে মওদুদের মতো কিছু সুযোগ সন্ধানী নেতাদের নিয়ে বিকল্প বিএনপি তৈরির সরকারের পরিকল্পনাটিও মাঠে মারা গেছে।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা মেরে সাত জন মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। পুলিশ পাশ থেকে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে কিন্তু আগুন নেভাতে এগিয়ে যায় নি বলে অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে জনগণের সন্দেহের তীরটি সরকারের দিকেই বেশি করে আপতিত হয়েছে।
অবাধ তথ্য প্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ায় এমবেডেড মিডিয়ার উপর থেকে জনগণের বিশ্বাস এমনিতেই উঠে গেছে।
সরকার ও পদলেহী মিডিয়ার দুর্বোধ্য বীজগণিত মানুষ বুঝতে পারে না। তার পরিবর্তে সহজ পাটিগণিতের হিসাব কষে হত্যাকারীদের মোটিভ ও চেহারা ধরে ফেলেছে। ভবিষ্যতে অন্য কোন রেন্টু নিজের ফাঁসি চেয়ে কিছু জানিয়ে দিলে মানুষ মূল রহস্যটি জানতে পারবে। অন্যথায় রোজ কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সাধারন মানুষের বিশ্লেষণী শক্তি এখন আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়ে গেছে। কাজেই বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রতি জনগণকে বিক্ষুদ্ধ বানাতে সরকারের এই পরিকল্পনাটিও বুমেরাং হয়ে পড়েছে। কারন মূল ধারার মিডিয়াকে নিজেদের হাতে নিয়ে ফেললেও বিকল্প সামাজিক মিডিয়ার শক্তি ও কর্মকৌশল সম্পর্কে সরকার সম্যক ধারনা করতে পারে নি।
অন্যদিকে বহির্বিশ্বে সরকারের একমাত্র আশা ও ভরসার জায়গাটিও নড়ে গেছে। ওবামার সাথে মোদি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষেই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। আমাদের দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে এই দুজন এখনও কাজ করে যাচ্ছেন । খবরটি সরকারের পায়ের নিচের মাটি অনেকটাই সরিয়ে দিয়েছে।
হিন্দুত্ববাদী এই নেতার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তিনি যে একটা পর্যায়ের নিচে নামতে পারবেন না - তা স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যতটুকু নিচে নামা দরকার কংগ্রেস সরকার ততটুকুই নিচে নামত। কিন্তু বিজেপি সরকার হুবহু ততটুকু যে নামবে না এটা সুনিশ্চিত । এই অবৈধ ও অনৈতিক সরকারকে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে বিরোধী দলগুলির জন্যে এতটুকুই যথেষ্ট।
তাছাড়া একটা অস্থিতিশীল বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার নিরাপত্তার জন্যেও হুমকিস্বরূপ । ইন্ডিয়া নিজের স্বার্থেই এদেশে গৃহযুদ্ধের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দিবে না। ইন্ডিয়ার নেতৃত্ব আমাদের মত মগজহীন নহেন। এদেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধলে ইন্ডিয়ার সেভেন সিস্টারকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে এটা তারা ভালোভাবেই উপলব্ধি করেন । উদ্ভুত পরিস্থিতি চায়নার জন্যে বিশেষ ভূ-রাজনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করবে যা ইন্ডিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের স্বার্থের সম্পূর্ণ বিপরীতে চলে যাবে। কাজেই তারা নিজের নাক কেটে আমাদের গণতন্ত্রের যাত্রাটি বন্ধ করবে না। নিজের গরজেই তাদেরকে আমাদের গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করতে হবে। এখানেও সরকার একটা পর্যায়ে এসে আটকে গেছে।
যে পুলিশ এবং র্যাবের উপর নির্ভর করে এই সরকার টিকে আছে তারাও ভেতর এবং বাহির থেকে প্রচন্ড চাপের মুখে পড়েছে। আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষী বাহিনীতে আমাদের সেনাবাহিনী ও পুলিশের অংশ গ্রহন প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। জাতিসঙ্ঘের এক মুখপত্র ইতোমধ্যেই একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রেখেছেন। মতলববাজ মিডিয়া এই সংবাদটিকে ফিল্টারড করে ফেললেও সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে দেশের ভেতরে প্রায় সকলের কাছে পৌছে গেছে।
এখানে অান্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভাবনা বা হিসাবটিও স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড । নিজের দেশে যারা অশান্তি সৃষ্টি করে তারা অন্যদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। নিজের দেশে যারা মানবাধিকার লঙঘন করে, অন্য জায়গায় তারা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে না।
ডিজিটাল এই যুগে একটি ঘটনা মুহুর্তের মধ্যেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পুলিশ ও র্যাবের অফিসারগণও নতুন হিসাব নিকাশে পড়ে গেছেন। নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যত ধ্বংস করে এই ডুবন্ত সরকারকে বাচাতে এগিয়ে আসবেন না- এটাই স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী সহ অন্যান্য মন্ত্রী এবং এই সব বাহিনী প্রধানদের সরাসরি গুলির নির্দেশ তাদের নিয়ন্ত্রণহীনতা ও সার্বিক অসহায়ত্বকেই তুলে ধরেছে।
যে সব অতি উৎসাহী অফিসার এ সব কাজ করছেন তারা দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর মনিটরিংয়ে পড়ে গেছেন। তাদের কয়েকজনের নামে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কোর্টে মামলা হয়েছে। মামলার এই ধারাটি অব্যাহত থাকবে। এই ধরনের অমানবিক কাজে জড়িতদের কেউ রেহাই পাবেন না।
গত ৫ই জানুয়ারীতে সরকার যে ভুলটি করেছে এখন পর্যন্ত তার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পেরেছে বিএনপি এবং জামায়াত জোট। মাঝখানে কোকোর মৃত্যু সরকারকে দারুনভাবে উৎফুল্ল করে তুলেছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ় মনোবল এবং কোকোর জানাযায় স্মরনকালের বৃহত্তম জন সমাবেশ পুরো আন্দোলনকে নতুন জীবনীশক্তি দান করেছে। এই শোক এখন মহা শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
সরকারের জঙ্গী কার্ডটিও অকেজো হয়ে পড়েছে। এখন যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে অগ্রসর হলে তা আরও স্ফুলিঙ্গ হিসাবে কাজ করতে পারে। ফলে সেদিকেও যেতে পারছে না সরকার।
সকল দিক বিবেচনায় এই সরকারের পতন এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র I
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন