১৭৫৭সালের ২৩শে জুন এদেশের স্বাধীনতার সূর্যটি অস্তমিত হয়। শুধু কয়েকজন মীর জাফর, ঘষেটি বেগম, জগৎশেঠ, রায় বল্লভ ও উঁমিচাদরাই এই স্বাধীনতার সূর্যটি ডোবান নি। সেদিন ভাগিরথী নদীর দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে বিপুল সংখ্যক জনতা তামাশা দেখছিল। এই বিপুল সংখ্যক দর্শকদের প্রত্যেকে যদি একটি করে পাথর ইংরেজদের নৌবহরের দিকে নিক্ষেপ করতো, তবে ক্লাইভের বাহিনী নিমিষেই হাওয়া হয়ে যেতো।
তখন অধিকাংশ মানুষের ভূ-রাজনৈতিক বোধ বা রাষ্ট্রীয় বোধ সম্পর্কে সম্যক ধারনা ছিল না। তারা মনে করেছিল যে এই লড়াই সিংহাসন নিয়ে দুই সিংহের মধ্যে লড়াই।
আজ একটা গ্রুপ নিজেদের বৈষয়িক স্বার্থের কারনে অন্ধ হয়ে পড়েছে কিংবা এদেশের মানুষের বোধ ও বিশ্বাসের প্রতি চরম বিদ্বেষের কারনে মীরজাফর ও ঘষেটি বেগমদের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে। একই ফ্যাক্টরির অন্য একটি মতলববাজ গ্রুপ গণতন্ত্রের জন্যে লড়াইকে দুই বেগমের লড়াই হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে যার ফলাফল একই কায়েমী স্বার্থের পক্ষে যাচ্ছে।
আজ আর কোন সন্দেহ নেই যে এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। কোকোর নামাজে জানাযায় যত সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়েছে তা এই উপমহাদেশের অন্য কোন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বেলায় ঘটে নি। এর মাধ্যমে এদেশের মানুষ কিছু ম্যাসেজ যথাস্থানে পৌছে দিয়েছে ( To whom it may concern) ।
জিয়ার পরিবারের প্রতি এদেশের সাধারন মানুষের ভালোবাসা ও সহানুভূতির অনন্য নমুনা পেশ করেছে। এই দৃশ্য
মতলববাজ প্রথম অালোদের কাছে অসহ্য লাগছে। কারন তাদের প্রযোজনায় তৈরি গত সাত আট বছরে সকল কোকো কাহিনী ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হয়েছে।
কাজেই আশা করা যায়
সিরাজ উদ্দৌলার সময়ের মত জনগণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখবে না। প্রয়োজনে লর্ড ক্লাইভ ও মীর জাফরদের প্রতি দু একটা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করবে।
সকল আলামত দেখে মনে হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্যানিক সরকার একটা চরম একশনের দিকে অগ্রসর হতে যাচ্ছে।সরকার হয়তো নিজেও জানে না কী আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছে।
আগুন ইব্রাহীম(আঃ)কে পোড়াতে পারছে না দেখে হতাশ ও প্যানিক নমরুদ চীৎকার করে বলেছিল, ওহে আগুন! তোর আজ কী হলো যে আমার জানি দুশমন ইব্রাহীমকে পোড়াতে পারছিস না?
মানুষের অধিকারকে দলিত মথিত করার কারনে এই ধরনের হতাশার কবলে পড়েছে সকল যুগের সকল
ফেরাউন,সকল নমরুদ, সকল হিটলার । ওদের আগুন, ওদের গেষ্টাপো বাহিনী, ওদের রক্ষীবাহিনী (প্রতিরোধের এক পর্যায়ে ) গণতন্ত্রের জন্যে সংগ্রামরত সৈনিকদের দহন করার শক্তিটি হারিয়ে ফেলে।
সম্ভবত সেই কারনেই শেখ হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে গেছে। পুলিশকে সরাসরি গুলির হুমকি দিয়ে নিজে তার দায় ভার নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন । সত্যি তাঁর কন্ঠে এক ধরনের অসহায়ত্বের সুর।
অনেকটা নমরুদের হতাশাই যেন তার কন্ঠে বেজে ওঠেছে , হে পুলিশ, তোদের কী হলো যে তোদের বন্দুক থেকে গুলি বের হচ্ছে না? আমিই তো তোদের কৃতকর্মের সকল দায়ভার গ্রহন করেছি। তবুও কেন তোরা গুলি করছিস না ?
ক্ষমতার জন্যে নেতা মন্ত্রীরা উন্মাদ হলেও পুলিশ ও র্যাবের (মূলত সেনাবাহিনী) সদস্যরা অান্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসঙ্ঘের মনোভাবটি জেনে গেছে । জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র অনেকটা স্পষ্টভাষায় এর পরিণাম সম্পর্কে মৃদু হুশিয়ারি উচ্চারন করেছেন। নেত্রীর উপর দায় চাপানোর ভরসায় নিজেরা নিরস্ত্র মানুষের দিকে ট্রিগার ছুড়লে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অংশগ্রহনের সুযোগটি নিশ্চিতভাবেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এটা হবে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের নিজেদের নাক কেটে গনতন্ত্রের যাত্রাটি বন্ধ করা।
কাজেই প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়েই পুলিশ গুলি ছুড়বে এমন মনে হয় না।
রাজনৈতিক সমস্যাকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করতে গিয়ে ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিল। আশা করা যাচ্ছে সেই ইয়াহিয়ার মানস সন্তান একই দিকে ধাবিত হচ্ছে।
কাজেই এর পরিণাম বা ফলাফলও ইয়াহিয়া খাঁন থেকে ভিন্ন হবে না। নিজের চূড়ান্ত ধ্বংসের আগে প্যানিক সরকার শেষ মরন কামড়টি দিতে চলেছে। বেগম খালেদা জিয়ার অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সম্ভবত নেতা কর্মীদের থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। সরকার বেছে বেছে এই কাজটি শুরু করেছে শুক্রবারে। কারন তখন পশ্চিমা বিশ্বে উইক এন্ড শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন বিশ্বসংস্থা যাতে সরকারের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে তজ্জন্যেই বোধহয় এই দিন ও সময়টি বেছে নেয়া হয়েছে।
কাজেই গুলশান অফিসে যে সব নেতানেত্রী অবস্থান করছেন তাদের কোন অবস্থাতেই ম্যাডামের অফিস ত্যাগ করা উচিত হবে না। ম্যাডামকে জোর করে গ্রেফতার বা অফিস ত্যাগে বাধ্য করার যে কোন উদোগ যে কোন মূল্যে প্রতিহত করা দরকার। বিশেষ করে মহিলা নেত্রী গণের সক্রিয় অংশগ্রহন এই মুহুর্তে অতি জরুরি ।
বিএনপির পুরুষ নেতাগণ বিভিন্ন সময় যতটুকু ভীরুতার পরিচয় দিয়েছেন, মহিলা নেত্রীগণ ততটুকুই সাহসের পরিচয় রেখেছেন। আশা করা যায় দেশনেত্রীকে গ্রেফতার করতে হলে এদের অনেকের লাশের উপর দিয়েই করতে হবে। এই ডিফেন্স বা woman shield ব্যর্থ হলে সারা দেশে যে আগুন জ্বলবে তা নেভানো দায় হয়ে পড়বে। অান্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও একেবারে চুপ করে থাকবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন