গরমে শরীরে নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হয়। তন্মধ্যে পানি শূণ্যতা অন্যতম। প্রচুর ঘামের কারণে শরীর থেকে লবণ বেরিয়ে যায়। লবণের ঘাটতি জনিতকারণে হিট রিলেটেড উপসর্গসমূহ দেখা দেয়। এমনকি প্রতিবছর হিট-স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এমতাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। পানি শূণ্যতা রোধে বশি পরিমাণে তরল পানীয় গ্রহণের বিকল্প নেই। হতে পারে সাধারণ পানি, ভেজিটেবল জুস বা ফলের রস।
মানবদেহের স্বাভাবিক গঠন ও সুস্থতা রক্ষায় পানির বিকল্প নেই। মানব শরীরের ৫০-৬০ভাগই পানি। মানুষকে প্রত্যহ অবশ্যই নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের দৈনিক ন্যূনতম আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। পানি পানের পরিমাণ বেশি হতে পারে, কম হওয়া মোটেও উচিৎ নয়। গরম কালে তা আরো বেশি।
গরমে পিপাসা বেড়ে যায়। এ সময় সবাই ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান করতে চায়। তাই গরমকালে ফ্রিজের রাখা ঠান্ডা পানীয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। বাসা-বাড়িতেও সবাই ফ্রিজে পানি রাখেন, প্রচুর পরিমাণে ঠাণ্ডা পানি পান করেন। গরমে বাচ্চাদের প্রথম পছন্দ আইসক্রিম ও ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানীয়।
ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি স্বাস্থ্য সম্মত নয় বরং নানা ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে গরমে। পান করার জন্য স্বাস্থ্য সস্মত হচ্ছে পানি গরম এবং ঠাণ্ডার মাঝামাঝি। এটা পরিমাপের বা বুঝার সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ঘরের স্বাভাবিক যে তাপমাত্রা তা খেয়াল করা। অর্থাৎ ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষিত পানি হচ্ছে একজন সুস্থ মানুষের জন্য আদর্শ পানীয়।
অনেকে চলতি পথে কোন দোকন বা কুলিং কর্নারের সামনে দাঁড়িয়ে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি বা বিভিন্ন কোম্পানির কোমল পানীয় গ্রহণ করে। বাচ্চাদের দেখা যায়, গরমে বাইর থেকে এসেই ফ্রিজ খুলে ঠাণ্ডা পানি পান করে। শরীরে ঘাম নিয়ে বা গরমের উত্তাপ থাকা অবস্থায় ঠাণ্ডা পানি পান শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। বিশেষ করে যারা টনসিল, পলিপ, সাইন্যাস ও বিভিন্ন প্রকার এলার্জিতে ভোগেন।
গরম-ঠাণ্ডা মিশ্রণে সর্দি-কাশি, জ্বর প্রভৃতি উপসর্গ বৃদ্ধি পায়। এমনকি গলা বসে যেতে পারে। অনেকের তাই হয়। একটানা দীর্ঘক্ষণ কথা বললে বা চিৎকার করে কথা বললে যেমন কণ্ঠ বসে যায়, ‘স্বরভংগ’ উপসর্গ দেখা দেয়, গরমে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করলেও একই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। ঠাণ্ডা পানির আর একটা ক্ষতিকর দিক হচ্ছে, ঠাণ্ডা পানীয় হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যদের হজমশক্তি দুর্বল তাদের জন্য ঠাণ্ডা পানীয় ক্ষতিকর। শিশুদের ব্যপারে বিষয়টি আরো বেশি জরুরি। গরমকালে শিশুদের টনসিল প্রদাহসহ হিটরিলেটেড নানাবিধ জটিলতায় দেখা গেছে অধিকাংশ শিশু দিনে একাধিকবার ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান করে থাকে। কিন্তু, গরমে ঠাণ্ডা পানীয় সবার পছন্দ। এমতাবস্থায় ফ্রিজ থেকে বের করেই ঠাণ্ডা পান না করে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন, তারপর পান করুন।
বাইর থেকে এসেই ঠাণ্ডা পানীয় পরিহার করুন। কিছু সময় অপেক্ষা করুন, শরীর ঘাম শুকিয়ে যাক, সামান্য বিশ্রাম নিন, তারপর ঠাণ্ডা পানীয় গ্রহণ করুন। আরো ভাল হয় হয়, ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি সরাসরি পান না করে স্বাভাবিক তাপামাত্রায় সংরক্ষিত পানির সাথে মিশ্রণ করে পান করা। অন্য সময়ের চাইতে গরমে শরীরে লবণ ও পানিশূণ্যতা দেখা দেয়ার সম্ভানা সবচেয়ে বেশি। এ সময় প্রস্রাবের রঙ এর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। প্রসাবের রং বিকৃত হয়ে যাওয়া মানে আপনি সঠিক পরিমাণে পানি করেন নি। স্বাভাবিক রঙ ঠিক রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। যদি পর্যাপ্ত পানি পানের পরও প্রস্রাবের রঙ স্বাভাবিক না হয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অফিসে, কর্মস্থলে, বা কোথাও যাবার সময় পানির বোতল সাথে রাখতে পারলে ভাল। পিপাসা হলেই পানি পান করা যায় সহজে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন