গার্মেন্টস এর মেয়েরা দুপুরে কী খায়? এটা কি কোন প্রশ্ন হল? হা, এটা একটা গুরুত্বপূির্ণ প্রশ্ন।
আমি ২০১৩ সালে বি এস সি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর ইলেকট্রিকেল ডিপার্টমেন্ট গামে'ন্টসে চাকুরী করায় কিচু বাস্তব কাহিনি দেখলাম মেয়েদের। মেয়েরা দিন রাত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতি সচল রাখে যাদের উছিলায় ব্যাঙ্ক, বীমা, শিপিং লাইন্স, ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি চলে তারা দুপুর কী খায় তা আপনাদের জানার অধিকার রয়েছে। লাঞ্চ আওয়ারে আমি অনেক সময় ফ্লোরে ঘোরাঘোরি করি। মাঝে মাঝে খেয়াল করি কে কি খায়। সুইং অপারেটর যারা সেলাই করে তাদের মাসিক বেতন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তারা নিয়মিত ভাতের সাথে একটা ভাজি খায় কখনো কখনো ভাজির বদলে ভর্তা খায়। তারমানে তারা একই সাথে ভর্তা ভাজি খেতে পারে না। আপনারা হয়ত ভাবছেন ভর্তার সাথে ডাল অথবা ভাজির সাথে ডাল হলে তো খাওয়াটা খারাপ হয় না। কিন্তু আপনারা জেনে অবাক হবেন যে তাদের বেশিরভাগ ডাল খায় না মানে ডাল কেনার সামর্থ্য নেই। তারমানে ওদের খাবার শুধুমাত্র ভর্তা+ভাত আর ডালের পরিবর্তে অনেকে লবন পানি মেশায় যাতে খাওয়াটা গলা দিয়ে নামে। শুকনো খাবার সহজে গলা দিয়ে নামে না।
যেসব অবিবাহিত মেয়েদের বেতন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা তারা টাকা পেয়ে প্রথমে বাড়ি ভাড়া দেয়, চট্রগ্রাম অঞ্চলে ইপিজেড এলাকায় সিট ভাড়া ১০০০ টাকার নিচে নেই। ছেলেরা যেকোন স্থানে থাকতে পারে কিন্তু মেয়েরা একটু নিরাপদে থাকতে চায়। এজন্যই ওদের একটু বেশি ভাড়ায় থাকতে হয়। যে আইটেমের খাবারের কথা বলেছি এই আইটেম আপনি যদি নিজে রান্না করেন তাহলেও কম হলেও বিশ থেকে পঁচিশ টাকা খরচ হবে। তাহলে ঘুরে ফিরে মাসে দুই হাজার টাকা খাওয়ার পেছনে চলে যাবে। এইসব মেয়ের প্রত্যেকের টার্গেট থাকে মাসে কপক্ষে দুই হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাবে, তা না হলে বাড়ির লোকজন কষ্টে থাকবে।
এক মেয়েকে লাঞ্চে কখনো খেতে দেখতাম না অথচ সে লাঞ্চের সময় ফ্যাক্টরিতেই থাকে। যারা লাঞ্চের সময় ফ্যাক্টরিতে থাকে তারা সাধারণত খাবার নিয়ে আসে। বাকিরা বাসায় গিয়ে ভাত খায়। ঐ মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম এ ব্যপারে। সে উত্তরে জানাল দুপুর হলে সে পাঁচ টাকার বাদাম খায়। বাদাম খেলে নাকি খিদা লাগে না। সন্ধ্যা সাতটায় ছুটি হলে বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খায়। সকালে বাসা থেকে বেশি করে খেয়ে আসে যাতে দুপুরে সহজে খিদা না লাগে।
একজন মানুষ সকাল সাত টায় যতই পেট ভরে খাক কাজ করতে করতে দুপুর একটায় তার ভাল খিদা লাগবে। মেয়েটার কথায় যুক্তি নেই। অবশ্য যুক্তি থাকলেও কিছু করার নেই, কারণ তার বাড়িতে বাবা অসুস্থ, ইনকাম করতে পারে না। এই মেয়েকে বাড়িতে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পাঠাতে হয়। এই টাকা পাঠাতে হলে তাকে একবেলা না খেয়ে কাটাতে হয়। সন্ধ্যা সাতটার পর ডিউটি করলে যেকোন ফ্যাক্টরি টিফিন দেয়। সেই টিফিন হল সাধারন এক পিস বন রুটি, একটা কলা আর একটা সেদ্ধ ডিম। ফ্যাক্টরি টু ফ্যাক্টরি ভেদে এই টিফিন ভিন্ন হয়। এই টিফিন খেয়ে তাদের ৯টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়। অনেকে আছে এই টিফিন খেয়ে রাতে আর ভাত খায় না শুধু টাকা বাঁচানোর জন্য। আবার অনেকে এই টিফিন বাসায় নিয়ে যায়। টিফিনের সময় পেট ভরে পানি খায়। বাসায় গিয়ে রাতে ভাতের বদলে এই টিফিন খায়। কিছু মেয়ে দেখেছি যারা সকালে বাসায় কিছু খায় না ফ্যাক্টরিতে ভাত নিয়ে আসে। এই ভাত তারা এগারটার দিকে দশ মিনিট ছুটি নিয়ে খায়। তাতে সকালের খাবার হল আর দুপুরের খাবারও হল। এটা হল বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের একটা অংশের খাদ্য তালিকা। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে অন্যান্যদের খাদ্য তালিকার একটা বর্ণনা দিব। মাংশ আর মাছ ছারা আমাদের মুখে খাবার উঠে না। আর সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশের অর্থনিতি সচল রাখা এই মেয়েগুলো কি খায়?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন