মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, যাকে গত সপ্তাহে মিশরের একটি আগ্গাবাহি আদালত মৃত্যুদন্ড দিয়েছে, মুহাম্মদ মুরসি। মুরসি সম্পর্কে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ দশটি তথ্য দিয়েছে।
১. প্রেসিডেন্ট মুরসী কুরআনে হাফিজ
একথাটি অনেকেই জানেন না যে প্রেসিডেন্ট মুরসী হাফেজে কুরআন। সুললিত কণ্ঠে তিনি পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন।
একথাটি অনেকেই জানেন না যে প্রেসিডেন্ট মুরসী হাফেজে কুরআন। সুললিত কণ্ঠে তিনি পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন।
২. তিনি পিএইচডি ডিগ্রীধারী ইঞ্জিনিয়ার
মুরসীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেকেরই অজানা। তিনি পিএইচডি ডিগ্রীধারী এবং জাগাজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান ছিলেন। তিনি আমেরিকাতে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করেছেন এবং সেখানে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
৩. তিনি একটি সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টে বাস করতেনমিশরের প্রেসিডেন্টদের জন্য বিভিন্ন বিলাসবহুল প্রাসাদ বরাদ্দ থাকাসত্বেও প্রেসিডেন্ট মুরসী সে সব গ্রহণ করেন নি। তার জন্য বরাদ্দকৃত প্রাসাদে প্রথম ঢুকেই সিদ্ধান্ত নেন, তিনি সেখানে থাকবেন না। তিনি তার অফিসিয়াল কাজকর্ম প্রেসিডেন্টের সরকারী দফতর থেকে পরিচালনা করলেও বাস করতেন একটি ভাড়া করা সাধারণ মানের অ্যাপার্টমেন্টে। বর্তমান বিশ্বে বহু মুসলিম সরকার প্রধানের টয়লেটও প্রেসিডেন্ট মুরসির ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে অনেক বেশি চাকচিক্যময়।
৪. তিনি কখনো বাড়তি রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন নি।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময় মোহম্মদ মুরসীর বোন অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার মরণাপন্ন বোনের উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং মেডিকেলের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় এধরণের সরকারী হেলিকপ্টার ব্যবহারের অনুমতি চান। কিন্তু মুরসী বলেন তিনি তার পরিবারের জন্য কোন বাড়তি সরকারী সুবিধা নেবেন না। তার বোন মিশরেই একটি সরকারী হাসপাতালেই মৃত্যুবরণ করেন।
৫. আজান তার বক্তৃতার আগে প্রাধান্য পেত
একদিন অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেয়ার সময় তাকে জানানো হয় নামাজের সময় হয়েছে। তিনি বক্তৃতা বন্ধ করে জোরে আজানের পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন।
৬. সাধারণ মানুষের প্রতি তার দায়িত্ববোধ
একজন গৃহহারা বিধবা মহিলা রাস্তায় জীবন যাপন করতেন। একদিন একটি গাড়ি তার পাশে এসে থামে যায়। বিধবা মহিলা অবাক বিষ্ময়ে দেখলেন গাড়ি থেকে যিনি নামলেন তিনি স্বয়ং মিশরের প্রেসিডেন্ড মুহাম্মদ মুরসি। প্রেসিডেন্ট মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন কেন তিনি রাস্তায় শুয়ে আছেন। মহিলা তার দু:খের কথা খুলে বললে, প্রেসিডেন্ট আদেশ দেন মহিলাকে যেন সরকারী খরচে একটি বাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
৭.তিনি সাহসিকতর সাথে সর্বদা সত্য উচ্চারণ করতেন
গোটা দুনিয়া জানে বাশার আল আসাদ সিরিয়ার অবৈধ প্রেসিডেন্ট। লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তে রঞ্জিত সিরিয়ার প্রতিটি জনপদ। মুরসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বাশার তাকে অভিনন্দন জানালে প্রতি উত্তরে তিনি বাশারকে জানান, ‘আপনাকে আমি সিরিয়াবাসীর প্রকৃত প্রতিনিধি মনে করিনা’। মুরসি গণহত্যা বন্ধ করে সিরিয়ার জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ জানান।
৮. বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে কম বেতন-ভাতা গ্রহণকারী নেতা
মুরসী ছিলেন এক ব্যতিক্রম নেতা। হোসিনি মোবারকের আমলে প্রেসিডেন্টের জন্য অতিরিক্ত সব বরাদ্ধ ও নিয়ম বাতিল করে তিনি তার জন্য বেতন-ভাতা নির্ধারণ করেন বছরে মাত্র ১০,০০০ ডলার। পরবর্তীতে জানা গেছে তিনি আসলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতাই গ্রহন করেননি। তিনি পুরো সময় বিনা পারিশ্রমিকে দেশের জন্য কাজ করে গেছেন।
৯. তিনি নামাজের ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন
মুরসী নিয়মিত নামাজ আদায়ের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন।মাঝে মধ্যে নামাজে ইমামিত করতেন। হাফেজে কুরআন হওয়ায় রমজান মাসে তারাবির নামাজে ইমামতি করতেন।জুমার খুতবায় তাকে কাদতেও দেখা গেছে।
১০. কোন অফিসে তার ছবি ছিল না
সারাবিশ্বে আমরা দেখি নেতাদের ছবিতে দেয়াল ভরা থাকে। মুরসী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পরই আদেশ জারি করেন, কোথাও তার কোন ছবি টাংগানো বা ঝোলানো যাবেনা। বরং তিনি আল্লাহর নাম দিয়ে দেয়ালগুলো ভরার আদেশ দেন।
মিশরের কারাগারে প্রেসিডেন্ট মুরসি এখন চরম নির্যাতনের শিকার। সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব পৃথিবীর চিরন্তন ইতিহাস। অবৈধ সিসি সরকার হয়ত তাকে ফাসিতে ঝুলাবে। কিন্তু যে আদর্শের ধারক তিনি, একজন নয়, সহস্র মুরসির ফাসিতেও সে আদর্শের মৃত্যু ঘটবে না।
মিশরের ব্যপারে আমাদের মনে রাখতে হবে- মিশর ফেরআউনের দেশ এটা যেমন সত্য, তেমনি মিশর হযরত মুসা (আ:), হযরত হারুণ (আ:) এর দেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন