22 Jan, 2015 বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে আর্ন্তজাতিক মহলে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়ছে। আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দ্রুত সংলাপে বসার আহবান জানানো হয়েছে। একই সাথে রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের (ইপি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রতিনিধিদল। সত্যিকারের সংলাপ করারও আহ্বান জানানো হয় এতে।
এক বিবৃতিতে ইপির দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী প্রতিনিধিদলের প্রধান জ্যাঁ ল্যাম্বার্ট বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিকে ‘মারাত্মক গোলযোগপূর্ণ’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ব্রাসেলস থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোনো ধরনের ব্যতিক্রম ছাড়া সব রাজনৈতিক দলকেই সমাবেশ করা, বক্তৃতা করা এবং চলাচল করাসহ মৌলিক অধিকারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে।
বিবৃতিতে সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষ সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা ও বিকাশ যাতে আর বিপন্ন না হয় সেজন্য সত্যিকারের সংলাপের প্রতি আগ্রহ প্রদর্শন করতে হবে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সহিংসতার শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশের সব পক্ষের প্রতি সংযম ও মধ্যপন্থা অবলম্বন, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং একসঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। হাউস অব কমন্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেপরোয়াভাবে গণতন্ত্রের সঙ্গে খেলছেন, ব্যাপকভাবে এমন অভিযোগ উঠছে। এতে বলা হয়, তবে গণতন্ত্রের প্রতি খালেদা জিয়ার অঙ্গীকারের আন্তরিকতার বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বহু বিশ্লেষক।
অনেকেই ভাবছেন, প্রকৃতপক্ষে খালেদা জিয়া হয়তো তার বর্তমান রাজনৈতিক কৌশলে সেনাবাহিনীকে মধ্যস্থতায় বাধ্য করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে আরও একবার ক্ষমতা থেকে সরানোর প্রত্যাশা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোন কিছু ঘটার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বাংলাদেশের সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র মধ্যে চলমান রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যেও বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেছে ইউকে পার্লামেন্ট। হাউস অব কমন্সের এক প্রতিবেদনে আজ উল্লেখ করা হয়, প্রায় অব্যাহত রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার মধ্যেও, বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে বহু চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, সামাজিক উন্নয়ন ইস্যুতে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা এবং গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করে দেয়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গত ৫ই জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার যে সূত্রপাত হয়, তা অব্যাহত থাকায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোও।
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতা তীব্রতর হওয়ায়, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। গত মঙ্গলবার দেয়া ওই বিবৃতিতে বৃটেনভিত্তিক এ সংগঠনটি বলেছে, গত তিন সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য শহরের রাজপথে সরকারি ও বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকরা সহিংস সংঘাতে জড়িয়ে পড়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারকে মূলত ৪টি বিষয় নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জানানো আহ্বানে অ্যামনেস্টি বলেছে, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকা-ের সব ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়ার আওতায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। কেবল স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার চর্চার জন্য যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা যাতে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ না করেন এবং যেখানে তারা শক্তি প্রয়োগ করবেন, তা যাতে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে হয়, তা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান যাতে মানবাধিকার ইস্যুতে বাধ্যবাধকতাসমূহ মেনে চলে, যার জন্য বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ তা নিশ্চিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ওই বিবৃতির শুরুতে বলা হয়, রাজপথে অব্যাহত সহিংসতায় প্রাণহানি বাড়ছেই এবং আহত হচ্ছে মানুষ। এর মধ্যে বিরোধী দলের চাপিয়ে দেয়া সড়ক অবরোধও চলছে। একই সময়ে সহিংসতার সঙ্গে কোন সম্পৃক্ততার প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও, বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে সহিংসতা উস্কে দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারের অনুকূলে নয়, এমন সংবাদ প্রকাশের জন্য গণমাধ্যমের সম্পাদক ও নির্বাহীদের বিরুদ্ধে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। সন্দেহভাজন যে কোন বোমা বহনকারীকে গুলি করার ঘোষণা দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীসমূহ। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আদালত অবমাননা আইনকে দৃশ্যত যেভাবে ব্যবহার করছে, তাতে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। উৎসঃ অন্যদিগন্ত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন