মাহাবুবুর রহমান: অবশেষে মুখ খুললেন সেনা প্রধান ইকবাল করিম ভুইয়া। বৃহস্পতিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জরুরী ভিত্তিতে সাক্ষাত করে তিনি চলমান সংকট সমাধানে আল্টিমেটাম দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ সময় পেয়েছেন শেখ হাসিনা। এজন্য দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করছেন তিনি। অবরোধ প্রত্যাহারের জন্য সব ধরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য সর্বশেষ তৎপরতা হিসেবে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করা হতে পারে। ইতোমধ্যে খালেদা জিয়া যেখানে অবস্থান করছেন, তার সেই রাজনৈতিক কার্যালয়কে সব ধরণের যোগাযোগ ও নাগরিক সুবিধা থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিদু ্যৎ সংযোগ নেই, পানি, টেলিফোন, মোবাইল, টিভি সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন এখন বেগম খালেদা জিয়া। খাবার সরবরাহও বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকারের মন্ত্রীরা।
এসব তৎপরতার পেছনের খবর হলো গত ২২ জানুয়ারি জাতিসংঘের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবরোধ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক রাজপথে মানুষ হত্যার প্রেক্ষাপটে শান্তি রক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশী সেনা, পুলিশ ও নৌবাহিনী নেয়ার বিষয়টি নেতিবাচকভাবে সিদ্ধান্তের আভাস দেয়া হয়। এরপর গত বুধবার জাতিসংঘ থেকে সেনা প্রধান ইকবাল করিম ভুইয়ার কাছে ফোন আসে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে সেনা বাহিনীকে উদ্যোগী হতে। এ পর্যায়ে সেনা প্রধান বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের উদ্বেগের কথা জানান এবং সংকট সমাধানে সময় বেধে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেনা প্রধানের সাক্ষাতের বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশিত না হলেও ঢাকার অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা বিষয়টি অবহিত। কিন্তু সরকারি ভয়ে তারা তথ্যটি প্রকাশ করতে পারছে না। এ বিষয়ে সেনা বাহিনীর এক কর্মকর্তা ইউএনএন-কে বলেন, সেনা প্রধান ইতোমধ্যে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সহকর্মীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ সময় পাচ্ছে সরকার। এ সময়ে সংকট সমাধান না হলে নতুন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চলার সময় ১৯৯০ সালের ৩ ডিসেম্বর সেনা সদর দপ্তরে সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ শেষে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় ব্যক্তি বা দলের স্বার্থে সেনাবাহিনী আর ব্যবহৃত হবে না। এ সিদ্ধান্তের পর তিন বাহিনী প্রধান প্রেসিডেন্ট এরশাদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ’বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে’ বলে প্রেসিডেন্ট এরশাদের কাছে তারা মতামত ব্যক্ত করেন। জেনারেল এরশাদ সশস্ত্র বাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণের অনুরোধ জানালে তারা তা অস্বীকার করেন। এতে স্বৈরাচারি এরশাদের ক্ষমতা টালমাটাল হয়ে যায়।
এরপর উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনার জন্য তিন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা ৪ ডিসেম্বর বিকেলে ফের বৈঠকে বসেন। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক ব্যক্তি এরশাদ ও সমগ্র জাতির মধ্যে সরাসরি সংঘাতমূলক অবস্থায় এসে দাড়িয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীকে জাতির বৃহত্তর স্বার্থই চিন্তা করতে হবে। সুতরাং সশস্ত্র বাহিনী এরশাদ বা জাতীয় পার্টিকে আর সমর্থন দিতে পারে না। সেনাবাহিনর এই ম্যাসেজ পাওয়ার পর এইচএম এরশাদ বহির্বিশ্বে যোগাযোগ করেন। কোথাও থেকে তেমন আশা ব্যঞ্জক কিছুই পায়নি। দেশে-বিদেশে কোথাও কোন আশার আলো দেখতে না পেয়ে রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
এবারও তেমন শেখ হাসিনার বিদায়ের দাবিতে চলমান আন্দোলন সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন