শেখনিউজ রিপোর্টঃ অবৈধ ও গনবিরোধী সরকারের পৈশাচিকতার শিকার হয়েছে পুরো জাতি। জাতির বিরুদ্ধে প্রভুদের নির্দেশে হাসিনা ওয়াজেদের সরকারের এই পৈশাচিকতার শুরু হয় পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনা অফিসার হত্যার মাধ্যমে। এখনি এই অবৈধ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে ব্যর্থ হলে জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। মঙ্গলবার লন্ডনে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সেনা হত্যাকান্ডের নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের বিচারও দাবি করেছেন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশী সাবেক সেনা কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, সাংবাদিক ও আইনজীবীরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লন্ডনের ওয়াটার লিলি অডিটোরিয়ামে সিটিজেন মুভমেন্ট আয়োজিত ‘পিলখানায় সেনা হত্যাকান্ড: একটি জাতীয় বিপর্যয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনরা এই দাবী জানান। জনাব এম এ মালিকের সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান উপস্থিত ছিলেন, তবে তিনি কোন বক্তব্য রাখেন নাই। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রফেসর ড. কেএমএ মালিক, শিক্ষাবিদ সৈয়দ মামনুল মোর্শেদ, শেখ নিউজ ডটকম-এর প্রধান সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান,বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইমরান চৌধুরী, মেজর (অব) সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক, মেজর (অব) ফারুক আহমেদ, মেজর (অব) জহির উদ্দিন, সেভ বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম, আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদুর রহমান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি অলিউল্লাহ নোমান। দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি শাহ সদরুদ্দীন ও কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা শামীম। আলোচনা সভায় সেনা হত্যাকান্ডের ওপর নির্মিত ১৩ মিনিটের একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শণ করা হয়।
বক্তরা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে পঙ্গু করতেই পিলখানায় সুক্ষ্ম কৌশলে সেনা হত্যাকান্ড চালানো হয়। দুনিয়ার কোন যুদ্ধে এক সাথে এত সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার নজির নেই। অথচ অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় সুপারিকল্পিতভাবে পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে সেনা সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আক্রান্ত হওয়ার পর বিডিআর ডিজি শাকিল আহমদ ও কর্ণেল গুলজার বিভিন্ন জনকে ফোন করে সাহাজ্য চেয়েছিলেন। এমনটি সেনা প্রধান এবং সরকার প্রধানের কাছেও তারা ফোন করেছিলেন। তাদের উদ্ধারের জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেন সময় ক্ষেপন করে নিহতের তালিকা দীর্ঘ করা হল এর রহস্য একদিন উদঘাটন করতে হবে।
যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. কেএমএ মালিক বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ড ছিল পরিকল্পিত। এটা আওয়ামী লীগের নীলনকশার অংশ। এ ঘটনার মাধ্যমে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে। আমরা দাবী করবো, বিএনপি ক্ষমতায় এলে জড়িতদের চিহ্নিত করে যথাযথ বিচার করা হবে।
শেখ নিউজ ডটকম'র প্রধান সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজনৈতিক কূটচালের অংশ হিসেবে পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। বিদ্রোহে অংশ নেয়া জওয়ানরা শুধু বিদ্রোহী নয়, তারা আওয়ামী লীগের এজেন্ট হয়ে এই হত্যায় অংশ নেয়। এই হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশী জাতিস্বত্বাকে ধংসের প্রথম ধাপ। হাসিনা ওয়াজেদের প্রতিহিংসার শিকার আজ পুরো জাতি এবং সশস্ত্র বাহিনী। এই পৈশাচিক সরকারকে উৎখাতে ব্যর্থ হলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান বলেন, যারা এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের শাস্তি দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। পিলখানা হত্যাকান্ডের ছয় বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও কেন সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি? সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
শিক্ষাবিদ সৈয়দ মামনুল মোর্শেদ বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ড বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিত বড় ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা বিডিআরকে ধ্বংস আর সেনাবাহিনীর সদস্যদের মনোবল ভাঙার জন্য এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।
বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ বলেন, আমার বাবা-মা সহ দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তি পাব না। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব না। আমরা সবাই জানি, কে বা কারা এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী এবং কারা জড়িত। দুনিয়ায় কোনদিন এর বিচার না পেলেও আখেরাতে বিচার পাব।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইমরান চৌধুরী বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের জন্য কেবল বাইরের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করলে চলবে না। প্রথম এবং প্রধান দায়ী হলো বাংলাদেশের সেনা বাহিনীর একটি অংশ এবং কিছু রাজনীতিক। তাদের চিহ্নিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এবং তৎকালীন সেনা প্রধান এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী জেনেও কেন তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হলো না - এ প্রশ্ন তোলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।
মেজর (অব) সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, তার দায়ভার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিতে হবে। আজকের বাংলাদেশে যখন প্রধানমন্ত্রীর পদে অধিষ্ঠিত থেকে সেনা বাহিনীকে ‘উত্তরপাড়া’ অভিহিত করা হয়, তাতেই প্রমাণিত হয় এই শেখ হাসিনাই সেনা হত্যাকান্ডের প্রধান কুশীলব। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান তিনি।
মেজর (অব) ফারুক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সেনা বাহিনী বহি:শত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে যেমন ভুমিকা রাখে, তেমনি দেশের ভেতরেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভুমিকায় ছিল। পিলখানা হত্যার মাধ্যমে এই দুই অবস্থান থেকেই সেনা বাহিনীকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে।
মেজর (অব) জহির উদ্দিন বলেন, কিছু প্রশ্নের জবাব-ই প্রমাণ করে দেয়, পিলখানা হত্যাকান্ডে কে বা কারা জড়িত। সেদিন প্রধানমন্ত্রী ডিএডি তৌহিদের সঙ্গে কেন দীর্ঘ বৈঠক করলেন? কেন তাকে শেরাটন থেকে খাবার এনে খাওয়ালেন? কেন সেনা প্রধানকে ডেকে নিজের পাশে বসিয়ে রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? কেন সেনা বাহিনী তাদের সহকর্মীদের মৃত্যু থেকে রক্ষায় এগিয়ে গেল না? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সেভ বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পূর্বপরিকল্পনা হিসেবে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। আজকের সেনা বাহিনীকে নিয়ে কটাক্ষ দেখলে সেটা সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনের অবস্থান নিতে তিনি সেনা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চিরতরে বিনষ্ট করতে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। বাংলাদেশের মানুষ আজ তা পুনরুদ্ধারের লড়াই করছে।
টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদুর রহমান বলেন, বাংলার চলমান মুক্তি আন্দোলনে শক্তিশালী সেনা বাহিনীর ইতিবাচক ভুমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, পিলখানা হত্যাকান্ড না হলে আজ এরশাদকে যেভাবে সেনা বাহিনীর অফিসাররা ‘নো’ বলে বিদায় নিতে বাধ্য করেছিল, তেমনি চলমান গণআন্দোলনও আরো আগেই সফল হতো।