বাংলাদেশ বার্তা: ১৩ জানুয়ারী ২০১৫: সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান আন্দোলনে এবার সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানা গেছে। জোটের বাইরে অবস্থানকারী এসব দল রাজপথের আন্দোলনে শরিক হলে বিরোধী জোটের আন্দোলনের পালে নতুন করে হাওয়া লাগবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া এসব দলের পাশাপাশি দেশের সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনগুলোও সরকারকে সংলাপসহ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তবে এ ক্ষেত্রে তারা জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির বিরুদ্ধে। তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে।
এ লক্ষ্যে চলমান আন্দোলনে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে খালেদা জিয়া নিবিড়ভাবে কাজ করছেন বলে দলীয় সূত্র জানায়। কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আন্দোলনের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গঠনের ওপরও জোর দিচ্ছেন তিনি। তার নির্দেশনায় দলের হাইকমান্ড এসব দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলেও জানা গেছে। অপরদিকে, দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)সহ বিভিন্ন এনজিওভিত্তিক সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে দাবি করা হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যে এসব সংগঠনও সরব অবস্থায় সঙ্কট নিরসনে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এতদিন তারা দশম জাতীয় নির্বাচনকে একটি বিতর্কিত নির্বাচন বলে দাবি করে আসছিলেন। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন সভা-সেমিনার এমনকি আন্দোলনও করছিলেন। এবার দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক জোট সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আন্দোলন করছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৬ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। আর এ কর্মসূচিকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে রাজপথের আন্দোলনে নামছে দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জনকারী দল এবং তাদের নেতৃত্বাধীন জোট।
এর মধ্যে রয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
ইতিমধ্যে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের লক্ষ্যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা চলছে। শিগগিরই এ জোট আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানা গেছে। আর এই জোটের সঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যে যুগপৎভাবে মাঠে নামছে রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম এমন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
এসব দল ও জোটই মনে করে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার পরিবর্তে একতরফাভাবে হয়েছে। এর ফলে যে রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়েছে, নতুন নির্বাচন নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত তা নিরসন হবে না। এই পটভূমিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনের সঙ্গেও তারা একমত। তবে এ ক্ষেত্রে তারা জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচির বিরুদ্ধে। তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও জঙ্গিবাদ বাদ দিয়ে সমঝোতা হলে তারা মাঠে নামবে।
২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা এই দলগুলো ইতিমধ্যে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সোচ্চার হয়েছে। নিজ নিজ দলীয় পরিমণ্ডলের বাইরে এখন তারা মনোযোগী হচ্ছে জোটগত আন্দোলনে। লক্ষ্য একই দ্রুত সবার অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন নিশ্চিত করা। বিএনপির হাইকমান্ডও আন্দোলন ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে এসব দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে জানা গেছে।
এর ধারাবাহিকতায় ৩ জানুয়ারি রাত থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকায় বি চৌধুরী তার সঙ্গে দুইবার দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে তিনি দেখা করতে পারেননি। এ ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ বি চৌধুরী বলেন, আমি বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেব বাংলাদেশে কী হচ্ছে? তথাকথিত সংসদীয় গণতন্ত্রের বর্তমান অবৈধ সরকারের আচরণ কেমন। তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রের একজন সিনিয়র সিটিজেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি। আমাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। পুলিশের এহেন আচরণ ও দেশের একজন বিরোধীদলীয় নেত্রীকে এভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা গণতন্ত্রের জন্য অশুভ সংকেত বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বলেন, আমি বিকল্পধারার রাজনীতি নিয়ে কিছু না বললেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে বলব দেশে বর্তমান যে আন্দোলন চলছে তা জনগণের আন্দোলন। গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন। আর এই আন্দোলনে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে এবং রাখা উচিৎ বলেও মনে করি।
এদিকে, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর অনেক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু বিষয়ের কারণে তারা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ রয়েছেন। তারা জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে যদি শুধু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রশ্নে যুগপৎভাবে আন্দোলনের জন্য তাদের আহ্বান জানানো হতো তাহলে তারা ভেবে দেখতেন। কিন্তু নির্বাচনের পর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে আরেকটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ নিয়ে কোনো আলোচনাই করা হয়নি।
কয়েক শীর্ষ নেতা জানান, বিএনপি নেত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করলে অন্তত এই দাবিতে তারা আন্দোলনে অংশ নিতেন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে এক বছরেও যোগাযোগ করা হয়নি।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সরকার যেমন আরেকটি নির্বাচনের ব্যাপারে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি, ঠিক তেমনি বিএনপিও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে অবাধ নির্বাচন কিভাবে হতে পারে ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আন্দোলন নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি। এটা অবশ্যই বিএনপির ভুল। বামপন্থি এ প্রবীণ নেতা আরো বলেন, বিএনপির উচিত ছিল সাত দফা দাবি দেয়ার আগে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসা কিন্তু তারা তা করেননি।
তবে সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে এসব দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। ফলে তাদের ক্ষোভও অনেকটা প্রশমিত হচ্ছে। যার কারণে এ দলগুলো এখন আন্দোলনে সরব ভূমিকা পালন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, সবার অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচনের দাবি কেবল বিএনপির নয়, এ দাবি জনগণের। তার দল এ দাবির পক্ষে জনগণকে সক্রিয় করছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেকের সঙ্গেই তো আমার ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ব্যাপারে আলোচনার আহ্বান দলীয়ভাবে দেয়া হয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে আমরা আশাবাদী, অচিরেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচনের দাবিতে বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠবে।
উৎসঃ মানব কণ্ঠ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন