বাংলাদেশ বার্তা: বিএনপির চলমান আন্দোলনকে সফল করার জন্য ৫ স্তরের নেতৃত্ব গঠন করা হয়েছে। এই সব নেতাদের একের পর একজন আটক হলে তারা এক একজন করে সামনে আসবেন। আর আন্দোলনের হাল ধরবেন। তবে তাদের নাম ও পরিচয় আগেভাগে প্রকাশ করা হচ্ছে না। এমনকি কয়েকজন নেতা ছাড়া অন্য কোন নেতাকেও সেটা বলা হয়নি। যে ৫টি স্তরে নেতারা রয়েছেন তারা কেবল স্ব স্ব বিষয়ে জানেন। আর কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সমন্বয় করার জন্য তারা বিষয়টি অবহিত। বাকিরা এই বিষয়ে কেউ জানেন না। এছাড়াও তাদের উপরে রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারা ৫ স্তরের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সময় সময় পরিস্থিতির খবর নির্দেশ ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, এবার তাদের কাছে আগে থেকে খবর ছিল সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনকে যেকোনো মামলায় বিশেষ করে জ্বালাও-পোড়াও কিংবা হত্যামামলার মতো কোন মামলায় আসামি করে মামলা দায়ের করে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। কিংবা অবরুদ্ধ করতে পারে কিংবা তাকে গৃহবন্দি করে রাখতে পারে। এই জন্য তিনি যদি কারো সঙ্গে কোন কারণে যোগাযোগ রক্ষা করতেও না পারেন এবং কাউকে কোন নির্দেশনা নাও দিতে পারেন তাতে যাতে আন্দোলন থেমে না যায় সেই প্রস্তুতিও আগেই নিয়ে রেখেছেন। তিনি তার ছেলে তারেক রহমানকে সব পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত বলে রেখেছেন। এছাড়াও ৫ স্তরের যেসব নেতা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের ৫ জনকেও বলেছেন। কোন কারণে বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হলে তারেক রহমান আন্দোলনের পুরো দায়িত্ব নিবেন। লন্ডন থেকেই এর সমন্বয় করবেন। তার নির্দেশে নেতারা কাজ করবেন।
এদিকে ওই ৫ স্তরের নেতাদের মধ্যে কারা কারা রয়েছেন এটা বের করার জন্য চেষ্টা করা হয়। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, এই নামগুলো প্রকাশ করে দিলেই সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে ফেলবে। আর তখন সমস্যা হবে। এই কারণে তাদের নাম আপাতত প্রকাশ করা যাবে না। আস্তে আস্তে প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, প্রথম স্তরে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি তার সাধ্যমতো করে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকার তাকে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছেন। তাহলেও নতুন নেতা সহসাই আসছেন। তিনি এখন মাঠের আন্দোলনের সমন্বয় করবেন। পরবর্তী নির্দেশগুলো পালন করবেন।
এদিকে সূত্র জানায়, ৫ স্তরের নেতাদের মধ্যে একটি স্তরে রয়েছেন বিএনপির ৬৪ জেলার গুরুত্বপূর্ণê ও প্রভাবশালী নেতারা। সরকার সব আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে ও চার স্তরের নেতাদের গ্রেপ্তার করে ফেললে আন্দোলন সফল করার দায়িত্ব পড়বে ওই ৬৪ জেলার নেতাদের ওপর। যারা তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ। যেই সব নেতাদের তিনি বিশেষভাব তৈরি করেছেন। যাদের তিনি এতদিনে ধরে আন্দোলনের কৌশল শেখাচ্ছেন ও দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। যাদের সঙ্গে তার ২০০৪ সালে সখ্য গড়ে উঠে। ওই সময়ে দেশের ৬৪টি জেলাকে ২০টি ভাগে ভাগ করে তৃণমূল পর্যায়ে ২০টি সম্মেলন করেছিলেন। ওইসব নেতাদের তিনি ধরে রেখেছেন। তাদের অনেকেই এখন দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করছেন।
সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড থেকে আন্দোলন সফল করতে যেই সব নেতারা কাজ করছেন ওই সব নেতাদের জন্য নির্দেশনা রয়েছে ঢাকায় যেকোনো মূল্যে একটি সমাবেশ করার ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করানোর। এছাড়াও ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও আন্দোলন করার। সেই হিসাবে নির্দেশনাও দিয়েছেন। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সব স্তরের নেতাকর্মীদের। নেতাদের বলা হচ্ছে- সরকারের বিরুদ্ধে ২০ দলীয় জোট নেত্রীর ডাকে গত মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে আন্দোলন শুরু হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না করা পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তাদেরকে বলা হচ্ছে- চলমান এ আন্দোলনের গন্তব্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সরকারের বিদায় এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তাদের বলা হচ্ছে- এই আন্দোলন শুধু বিএনপি কিংবা ২০ দলীয় জোটেরই নয়, এ আন্দোলনের পক্ষে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষের সমর্থন রয়েছে। নেতাদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোর জন্য বলা হচ্ছে। তাদেরকে বলা হচ্ছে- গণবিরোধী জনসমর্থনহীন এ সরকার আন্দোলনে প্রচণ্ড ভয় পায়। এই জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। প্রেসক্লাব থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপি এবং জোটের বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনেককে হয়রানি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারের বাহিনী এবং তার দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের কারণে দেশের কোন জেলায় বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা অফিসে বসে রাজনৈতিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। তারেক রহমানের কোন বক্তব্য প্রচার করা যাচ্ছে না। সরকার মনে করছে এভাবেই আন্দোলন দমন করা যাবে। কিন্তু তা ঠিক নয়।
তারা দল ও জোটের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো মূল্যে চলমান আন্দোলন সফল করার জন্য বলছেন। সেই হিসাবে এটাও বলছেন, এই আন্দোলন সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ভোটে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সেই হিসাবে তারা প্রচার করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন