বাংলাদেশ বার্তা:বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সরকারী বাহিনীর দ্বারা অফিসে অবরুদ্ধ অবস্থায় বিজেপির প্রেসিডেন্ট অমিত শাহের টেলিফোনে আলাপের বিষয়টি ১০০ ভাগ সঠিক বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ভারতীয় দুতাবাসের বরাত দিয়ে দাবি করেছেন অমিত শাহ কোন টেলিফোন করেন নাই। এরমধ্যে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে আজ ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের টেলিফোন নিয়ে এই জাতীয় পর্যায়ের মাতামাতি কেন? এটি কি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের সাথে সমার্থক? নাকি দুই দলই ভারতীয় আধিপত্য মেনে নিয়ে জন আকাংখার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে?
বেশ আগে থেকেই অর্থাৎ ২০০১ সাল থেকেই বাংলাদেশে রাজনীতিতে সকল দলের ভেতরেই ভারতের উপর নির্ভরতা বাড়তে থাকে। মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ভারতীয় আধিপত্যের কাছে পরাজিত জনগোষ্ঠির সামনে যখন একজন বীর হিসেবে আবির্ভুত হলেন তখন থেকেই জাতীয়তাবাদী চেতনা দানা বাধে। এই চেতনার মূলমন্ত্র হলো কোন আগ্রাসী বা আধিপত্যবাদী ও শক্তিধর রাষ্ট্র এবং নিজস্ব সংস্কৃতির জন্য হুমকি এমন প্রতিবেশীর কাছ থেকে নিজের সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রেখে ইজ্জতের সাথে জাতি হিসেবে বিশ্বকে নিজের অস্তিত্ব জানান দেয়া। এই চেতনার নামই হলো জাতীয়তাবাদ। বাংলাদেশী জনগোষ্ঠির জন্য এমন ধারার একটি রাজনৈতিক সংগঠন চালুর পরে জিয়াউর রহমানকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বাংলাদেশকে একটি স্ট্র্যাটেজিক ভাবে শক্ত ভিত্তি দেন। এমন একটি প্রতিরক্ষা লাইন তিনি গড়ে তোলেন যার ব্যুহ ভেদ করা ভারতের মত বিশাল ও শক্তিশালী রাষ্ট্রের জন্যও ছিলো অসম্ভব। এমনকি তার খাল কাটা কর্মসূচির সাথেও প্রতিরক্ষা নীতি সম্পর্কিত ছিল।
জিয়াউর রহমানের সেই বিএনপি এখন ভারতের মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের প্রেসিডেন্টের টেলিফোনকে সম্বল করে রাজনৈতিক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েছে ভারতের চিহ্নিত দালাল গোষ্ঠী আওয়ামী লীগের সাথে। এটি কেন হচ্ছে এবং এর দ্বারা বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাড়াতে পারে তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। জিয়াউর রহমান যে জনগোষ্ঠিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই জনগোষ্ঠী কি ভারতের সাথে সম্পর্কিত বা নতজানু কোন বিনেপিকে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী দোল হিসেবে মেনে নিবে কিনা, সেটি ইতিহাস ও সময়ই বলে দেবে। তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশী জনগোষ্ঠির জন্য যে আশু নিরাপত্তাহীনতা ও অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে সেটি বিশ্লেষনের দাবি রাখে।
যে জিয়াউর রহমান প্রতিরক্ষাবাহিনীর ডকট্রিন তৈরী করেছিলেন এবং প্রতিরক্ষা বন্ধু সহ লাইন অফ ডিফেন্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আওয়ামী লীগের আমলে সেটি ধংস করে দেয়া হলেও বিএনপি তার বিপরীতে কোন শক্তিশালী ভুমিকাতো রাখেই নাই এমনকি তাদের শাসনামলেই ভারতীয়দের সাথে সম্পর্কিত সেনা অফিসারদের প্রমোশন দিয়ে দিয়ে গুরুত্বপূর্ন পদে বসিয়েছে, এমনকি তারা সে কারণে নিজেরাও বিপদগ্রস্থ হয়েছে। আজকের বিএনপির রাজনৈতিক যে অবস্থা সেটিও সেই অসাবধানতার ফসল। বিএনপির সময়েই ভারতকে নৌ ট্রানজিটের মত সুবিধা দেয়া হয়। যা জিয়াউর রহমানের সময় কল্পনা করাও ছিল অসম্ভব।
বিএনপির সময়গুলোতে সেনাবাহিনীতে এমন এমন লোকজন প্রবেশ করতে সক্ষম হয় যা ছিল ভয়ানক রকমের দুর্যোগ। এমনকি জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত এবং মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত সেনা অফিসারের সন্তানেরাও সেনাবাহিনীতে ঢুকে পড়ে। যারা বেগম জিয়ার বাসভবন থেকে উচ্ছেদের সময়ে এবং তারেক রহমানকে নির্যাতনের সময় তাদের প্রকৃত চরিত্র দেখিয়ে ভুমিকাও রেখেছে। এমনকি জিয়াউর রহমানের হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী ভারতের এজেন্ট হিসেবে খ্যাত ড. কামাল সিদ্দিকী তিনবার বেগম জিয়ার মুখ্য সচিব ছিলেন। যেই কামাল সিদ্দিকী আজ যুক্তরাজ্যে বসেই বেগম জিয়া আর তারেক রহমানের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে প্রতিদিন। 'র' এর এজেন্টরা বিএনপির চরিত্র হরণ করছে বিএনপির ভেতরে বসেই মাকড়সার মত। যুক্তরাস্ট্রের জনৈক সিরিয়াল অপরাধী জাহিদ সর্দার সাদী যে ৬জন কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতির পরেও তার বিরুদ্ধে বা যুক্তরাজ্যে সাদির কর্মকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে এই লেখা প্রকাশ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা জনগণ জানে না। তারেক রহমানের আসেপাশে 'র' ও ডিজিএফএই লোক নিয়োগ দিয়েছে ও শ্রবনযন্ত্র বসিয়েছে সেটি কেউ আমলেই নেয় না। কিন্তু কাদের পরামর্শে। এগুলো যারা বোঝে না তারা দেশ চালাবে কি করে? এদের হাতে নিজেদের প্রতিরক্ষায় নিরাপদ নয় ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী জনগোষ্ঠির নিরাপত্তা থাকবে কি করে? এগুলোর রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।
সেনাবাহিনীতে ভারতীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আরো অনেক ভয়াবহ তথ্য রয়েছে যা এখন এই রাজনৈতিক যুদ্ধের সমযে প্রকাশ বাস্তব সম্মত নয়। তবে একটি বিষয়ে আমাদের যারা নিজেদের দেশপ্রেমিক ভাবি তাদের অন্তরের কথা যদি বিএনপি বুঝতে না পারে তবে বিএনপি একসময়ে এই জনগোষ্ঠির নেতৃত্ব হারাবে এটা তাদের মাথায় রাখা উচিত। যারা ভাবেন বিএনপি ছাড়া উপায় নেই, তাদের ভাবা উচিত জিয়াউর রহমান কিন্তু কোন জনসমর্থন নিয়ে আবির্ভুত হন নাই. তার ভূমিকার কারণেই এই মাটিতে থাকা আধিপত্যবাদ বিরোধী মানুষগুলো তাকে সমর্থন করেছে। যে সমর্থন লাভে জেনারেল এরশাদ চেস্টা করে ব্যর্থ হয়েছে।
দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী কেন এখনো বেগম খালেদা জিয়াকে সমর্থন করে ? এর সবচেয়ে বড় কারণ তার ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী সত্যিকারের ভুমিকা। তারেক রহমান যদি সেই স্পিরিটকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হন তবে এই জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব সংকটে পারবে যার আলামত স্পস্ট। সকল আলামত আরো পরে এবং প্রয়োজনে জনগোষ্ঠির সামনে প্রকাশ করা হবে। কোন কোন ভারতীয় এজেন্ট তারেক রহমানকে ভুল পথে পরিচালনা করতে চাচ্ছেন, কোন কোন ব্যক্তি তারেক রহমানের গায়ে ভারতীয় আনুগত্যের লেবেল লাগিয়ে দিচ্ছেন তাদের পুরো চরিত্র ও পরিচয় প্রকাশ করা হবে জাতীয় স্বার্থে। কিভাবে বিএনপির ভেতরে একটি প্রজন্ম গড়ে উঠেছে শাহবাগীদের ধাঁচে। কেন এরা রাজনৈতিক মিত্রদের সাথে বিএনপির দুরত্ব বাড়াচ্ছে, মিত্রহীন করার চেষ্টা করছে।
তারেক রহমানকে স্মরণ করতে হবে জিয়াউর রহমানের রণনীতি ও রণ কৌশলকে। সেই অনুযায়ী রাজনীতি ও কর্মসূচি না চললে জাতির অংশ হিসেবে আমরাও আমাদের সেই চিরায়ত পথেই হাটবো এটাই স্বাভাবিক। কারণ দেশপ্রেমিক জনগোষ্ঠী ভারতীয় আধিপত্য ও দালালি মেনে নেবে না; এরা চেস্টা করবে ভারতীয় যে কোন দালালির প্রচেষ্টা ধংস করে দেবে।
লেখক: রাজনৈতিক ও সংবাদ কর্মী এবং স্ট্র্যাটেজিক বিশ্লেষক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন