আকাশবাণী দিল্লী এবং কলকাতা থেকে কিছুক্ষণ পরপর ফিল্ড মার্শাল মানেক শ এর কন্ঠে শোনা যেতে থাকে " হাতিয়ার ঢাল দো "। পাকিস্তানী সৈন্যদের আত্মসমর্পন করার জন্যে ঢাকার আকাশে বিমান থেকেও এই নির্দেশ দিয়ে হাজার হাজার লিফলেট ফেলা হতে থাকে।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে বিজয়ের সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই এই হুমকিটি ক্রমাগত প্রচার হতে থাকে । কন্ঠটি একজন বিদেশীর হলেও এদেশের মানুষ তাতে নিজেদের মুক্তির পয়গাম পেতে থাকে।
এমন ধরনের একটি বাক্য কোথা থেকে শোনার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এদেশের চরম আতংকিত ষোলকোটি মানুষ । দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের চেয়েও কম ভয়াবহ নহে । কমপক্ষে সত্তর ভাগ নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে বর্তমান অবৈধ সরকার রীতিমত যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে আছে। এই সত্তর ভাগের অস্থিরতা সহজেই বাকিদের মাঝেও সঞ্চারিত হয়েছে। একবিংশ শতাব্দির কোন রাজনৈতিক দল বা তাদের গঠিত সরকার নিজের পায়ে নিজে এমনভাবে কুড়াল মারে তা ভাবতেও কষ্ট লাগে।
সরকার প্রধানসহ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতারা জনগণকে সরাসরি গুলির হুমকি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চরম উদ্বেগের মাঝেও বিরোধী দলের নেতা ও কর্মীদের ধরে ধরে ক্রসফায়ারে দেওয়া হচ্ছে। র্যাব ও বিজিবি পুরাপুরি রক্ষী বাহিনীর অবয়ব ধারন করে ফেলেছে।
আশার কথা হলো, ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি সরকারের কুমতলবটি ধরে ফেলেছে। সবচেয়ে বেশী সময় এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা এবং এদেশে উদার গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক বিএনপিকে জঙ্গী ও আল-কায়েদা হিসাবে দেখাতে গিয়ে নিজেরাই বিশ্ববাসীর চোখে আল-ফায়েদা হিসাবে গণ্য হয়ে পড়েছে। সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে এখন মনে হচ্ছে, বিশ্ব জনমত ও বিশ্ব শক্তি আল- কায়েদার চেয়ে এই মতলববাজ আল-ফায়েদার উপর কোনভাবেই কম ক্ষ্যাপা ও বিরক্ত নহে।
এমতাবস্থায় জাতিসংঘের মুখপাত্র স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশের বিষয়ে জাতিসংঘ প্রয়োজন অনুযায়ী ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নেবে।
তাঁর এই মন্তব্য জেনারেল মানেক শ এর হাতিয়ার ঢাল দো হুমকিটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। যারা অান্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ক্রিটিকেল মুহুর্তে বিশ্ব শক্তির এই ধরনের শব্দ চয়ন সম্পর্কে ওয়াকেবহাল তারা সরকারের বিদায়ের পদধ্বনী স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছেন । জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেলের মুখপাত্রের কুটনৈতিক ভাষাটি সামরিক ভাষায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, হাতিয়ার ঢাল দো।
কিন্তু আমাদের অধিকাংশ মিডিয়া এই সংবাদগুলি এমন ভঙ্গিতে প্রকাশ করছে যেন ফেল্টুস ছেলে বাপের কাছে তার পরীক্ষার ফলাফল বর্ণনা করছে। পুত্রধন প্রথমে জানায়, কোন কোন বিষয়ে সে ভালোভাবে পাশ করেছে। ফেল করা বিষয়ের নাম আর উচ্চারণ করে না। পুত্রধনের চেহারা দেখে বাবাকে কষ্ট করে বাকি টুকু বুঝে নিতে হয়।
বাংলাদেশ নিয়ে জাতি সংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ অবস্থান ও বক্তব্য নিয়ে একই খেলা খেলছে আমাদের মিডিয়া। ফেল্টুস পুত্রধনের মত খারাপ সংবাদটি যেন দিতে চাচ্ছে না। 'প্রয়োজনে জাতিসংঘ যথাযথ ব্যবস্থা নিবে ' এই কথাটি বেমালুম চেপে গেছে প্রথম আলো সহ তথাকথিত মূল ধারার পত্রিকাগুলি।
কাজেই এই মিডিয়া আওয়ামী লীগের এসেট নয়, এরা লাইয়াবিলিটিজ। এরা আওয়ামীলীগের মত দলকে প্রতিপক্ষের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌছার পদ্ধতিটি ভুলিয়ে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা ঠাট্টা করে একদা ইনুকে বলেছিলেন ( অসাবধানতাবশত তা ব্রডকাষ্ট হয়ে পড়ে) , এখন দেখছি জাসদের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে!
আসলেই গণতন্ত্রের এই মানসকন্যা এখন ইনু,মেনন ও বাদলদের কাছ থেকেই গণতন্ত্রের ছবক নিচ্ছেন । তাদের এই গণতন্ত্রে শত্রু আছে, কিন্তু কোন প্রতিপক্ষ নেই। আওয়ামীলীগ অতি সত্ত্বর উপলব্ধি করবে যে ইনু,মেনন,বাদলদের মত কমরেড বন্ধু থাকলে শত্রুর আর প্রয়োজন নেই।
নির্মম নিয়তি তাঁর জন্যে আজ 'হাতিয়ার ঢাল দো' এই বার্তাটি বয়ে এনেছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন