চলমান আন্দোলন অব্যাহত রাখতে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। অবরোধ রেখেই ঢাকায় আবারো সমাবেশের চিন্তাভাবনা চলছে। দলের নীতিনির্ধারকেরা বলেছেন, কৌশলী কর্মসূচি দিয়েই সরকারকে অব্যাহতভাবে চাপে রাখতে হবে। ঢাকায় ২০ দলকে সমাবেশ করতে না দিলে আবারো লাগাতার কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
গত ৫ জানুয়ারি ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে রাজধানীতে সমাবেশ করতে না দেয়ায় খালেদা জিয়া টানা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই দিন তিনি বলেন, ‘সমাবেশ করতে দেয়া না হলে অবরোধ চলবে’।
খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানিয়েছেন, দ্রুত নির্বাচনের এক দফা দাবিতে খালেদা জিয়া রাজধানীতেই সমাবেশ করতে চান। শিগগিরই সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর অনুমতি পেলেই কেবল চলমান অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে। অন্যথায় অবরোধ চালিয়ে যাওয়া হবে। প্রথম পর্বের ইজতেমা শেষে অবরোধ কর্মসূচি আরো জোরালো করতে নানামুখী কৌশলও আঁটা হচ্ছে।
কর্মসূচি লাগাতার রাখতে ২০ দলীয় জোটের প্রধান খালেদা জিয়া অনড় অবস্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অসুস্থ হয়েও গতকাল বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকজন নেতাকে আন্দোলন প্রশ্নে দলের চিন্তাভাবনার কথা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেছেন, ৫ জানুয়ারির একটি বিতর্কিত নির্বাচনের পরও সরকার আলোচনার পথ বন্ধ করে রেখেছে। সে অবস্থায় আন্দোলন প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলন চললেও নতুন নির্বাচন নিয়ে কার্যকর যেকোনো আলোচনায় সাড়া দেবে দলটি। সমঝোতার দরজা খোলা রেখেই তারা টানা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। আন্দোলনের প্লাটফর্ম বড় করতে সমমনা আরো বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। শিগগির আন্দোলনে ‘অন্যরকম’ মাত্রা যুক্ত হবে বলে সিনিয়র নেতারা বলছেন।
ঢাকায় সমাবেশের বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব:) মাহবুবুর রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, সমাবেশ একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। কিন্তু সরকার এই কর্মসূচি পালন করতে না দেয়ার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আর গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে লড়ছে বিএনপি। তাই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকায় সমাবেশ করার কথা ভাবা হচ্ছে।
দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেছেন, যতণ দাবি মেনে না নেয়া হবে, ততণ অবরোধ চলবে।
চলমান অবরোধ কর্মসূচির বিষয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে রিজভী বলেন, সারা দেশে সরকারের দমনপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। গতকালও তিনজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন তাদের নিষ্ঠুর নির্যাতনে সারা দেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা আহত হচ্ছেন।
এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, যতণ পর্যন্ত আমাদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ করা না হবে, যতণ আমাদের সমাবেশের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে না দেয়া হবে, যতণ নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবি মেনে না নেয়া হচ্ছে, ততণ আমাদের অবরোধ অব্যাহত থাকবে।
অবরোধ কর্মসূচি গণতান্ত্রিক উল্লেখ করে রিজভী বলেন, বিরোধী দলকে সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। দমননীতির মাধ্যমে তারা গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
এ দিকে টানা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে কাজ করছেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। জানা গেছে, প্রভাবশালী দেশগুলোর কাছে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কার্যকরভাবে তুলে ধরছেন তারা। গত বুধবার বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ ফোন করে অসুস্থ খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানিয়েছেন, চলমান পরিস্থিতিতে কূটনীতিকেরা উদ্বেগে রয়েছেন। তারা আলোচনা-সমঝোতায় সঙ্কটের দ্রুত সমাধান চান।
উৎসঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৯ জানুয়ারি ২০১৫, শুক্রবার,
্
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন