দুই বছর বয়সী ছোট ছেলে জালাল দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় শোকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন আইনবি বেগম। পুত্রশোকে শেষ পর্যন্ত নিরুদ্দেশ হয়ে যান তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান পাননি পরিবারের লোকজন। তারপর পেরিয়ে গেছে ৩০টি বছর। অবশেষে গতকাল রোববার যশোরের মনিরামপুর পৌরশহরের হাকোবা এলাকায় মা আইনবি বেগমের খোঁজ পান বড় ছেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের বিরহাটাবো গ্রামের আইনুল মিয়া।
পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ছেলের হাতে গর্ভধারিণী মাকে তুলে দেন মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন। রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের বিরহাটাবো গ্রামের নুরু মিয়ার স্ত্রী আইনবি বেগম ১৯৮৫ সালে ছোট ছেলে জালালের মৃত্যুতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। তখন বড় ছেলে আইনুল মিয়ার বয়স ছয় বছর। নুরু মিয়াও ২০০৫ সালে মারা যান। এতদিনে আইনবি বেগমের কথা ভুলতে বসেছে পরিবার।
এদিকে ২২ বছর আগে ১৯৯৩ সালের দিকে মনিরামপুর পৌর শহরের গরুহাট মোড়ে আইনবি বেগমকে অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয় হাকোবা এলাকার গৃহবধূ রাশিদা বেগম নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। আইনবি বেগম তখন সম্পূর্ণ মানসিক ভারসাম্যহীন।
রাশিদা বেগম জানান, সেই থেকে আইনবি বেগম তার বাড়ি এবং প্রতিবেশী মনছোপ হালদারের বাড়িতে থাকতেন। হঠাৎ করে গত মাসে আইনবি বেগম কিছুটা ভারসাম্য ফিরে পান। মনে করতে পারেন তার গ্রামের নাম, স্বামী ও বড় ছেলের নাম।
মোনছোপ হালদারের ছেলে কণ্ঠশিল্পী ফারুক হোসেন আইনবি বেগমের সুস্থতার কথা জানান মনিরামপুর পৌরসভার মেয়র শহীদ ইকবাল হোসেনকে। তারা সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবেই হোক খুঁজে বের করবেন আইনবি বেগমের ঠিকানা-বাড়িঘর। কয়েকদিন আগে তারা খোঁজ পান গ্রামটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে।
গত ২৯ জানুয়ারি অলোক কুমার দেসহ তিনজন নারায়ণগঞ্জের বিরহাটাবো গ্রামে গিয়ে আইনবি বেগমের ছেলে আইনুলকে খুঁজে বের করেন। মায়ের খোঁজে আইনুল সৎ ভাই আল-আমিনসহ আরও দুই প্রতিবেশীকে নিয়ে ছুটে আসেন মনিরামপুরে। রোববার দুপুরে হাকোবা গ্রামের ফারুক হোসেনের বাড়িতে এসে আইনুল মিয়া মাকে দেখেই চিনতে পেরে বুকে জড়িয়ে ধরেন। দীর্ঘ ৩০ বছর পর মিলন ঘটে মা-ছেলের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন