সারাদেশে কারা বোমা বানাচ্ছে? কারা বোমা ফাটাচ্ছে? গণমাধ্যমে কড়া সরকারী হস্তক্ষেপ থাকা স্বত্তেও আবছাভাবে প্রচার হয়েছে দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পুলিশ তাদের ধরে পরিচয় পাওয়ার পর ছেড়ে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে নিয়মিত।
অনেকেই বলছেন ধরা পড়লেই বাস্তবে দেখা যায় এরা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী-সমর্থক। অন্যদিকে সারাদেশে যারা বড় বড় দূর্ঘটনা এবং নাশকতা ঘটাচ্ছে তারা ধরা পড়ছেনা। নাশকতাকারীরা ধরা না পড়লেও প্রচার মাধ্যমগুলো এবং আওয়ামীলীগ দিব্যি ঢালাওভাবে প্রচার করছে এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াত দায়ী! বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের পেট্রোলবোমা নাশকতার সাথে জড়িত সন্দেহে অথবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশতঃ অথবা সরকারবিরোধী জোটের আন্দোলন দমানোর জন্য এনকাউন্টারের মাধ্যমে ভয়-ভীতি দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা চলছে!
একদিকে সারাদেশে পেট্রোলবোমায় নৃশংস ভাবে মানুষ মরছে আবার এনকাউন্টারে বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। সরকারের সকল মহল ও আওয়ামীলীগের তরফ থেকে বলা হচ্ছে নাশকতা দমনে বিরোধী জোটকে গুলি করা হোক। কেউ কেউ শরীরের কোন কোন অংশে গুলি করবেন তাও যৌথবাহিণীকে বলে দিচ্ছেন। যৌথবাহিণী প্রধানরাও রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে নিজেদেরকে রাজনীতির সাথে জড়াচ্ছেন ওতপ্রোতভাবে। কোন কোন এমপি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা গুষ্টিশুদ্ধ শেষ করার শপথে বলিয়ান হচ্ছেন! কোন কোন পুলিশ কর্মকতা যেভাবে দেশের কিছু গ্রামকে পুরুষশূণ্য করেছেন, একই কারণে নারীশূণ্য করার হুমকি দিয়ে শেখ হাসিনার মত সকল কিছুর দায়দায়িত্ব নিজের কাধে নেয়ার হলফ করেছেন!
সবাই ১৫ লক্ষ পরিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ও দেশের কথা ভাবছেন। কিন্তু কার কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা তারা বলতে নারাজ। সুশীল সমাজের বেচারারা দেশ ও দশের তরে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে কিছু করার প্রয়াসে সংলাপের প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা স্বয়ং শেখ হাসিনার রিয়্যাকশান দেখে রীতিমত বিষ্মিত! শেখ হাসিনা পুত্র জয় বলেছেন যারা সংলাপ চায় তারা পাগল!
যারা টকশোতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে একটু আধটু কথা বিড় বিড় করে বলেন তাদেরও দেখে নেয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে চুড়ান্ত হুমকি দেয়া হচ্ছে। দেশের অনেক জনপ্রিয় টিভি টকশো ইতোমধ্যে অজানা কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে প্রধাণমন্ত্রী পোড়া রুগীদের দেখতে গিয়ে কড়া ভাবে গণমাধ্যমকে কি প্রচার করবে আর কি প্রচার করবে না তা নির্দেশ দিলেন!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢামেকে রুগীদের দেখে দেখলাম অঝোড়ে কাঁদলেন। এই কাঁদা আসল কি মেকি সেটি আমার প্রশ্ন নয়। এর উত্তরও জানতে চাইনা। শুধু জানতে চাই তিনি আগুনে মৃত ও দ্বগ্ধ স্বজনদের সাথে কথা বলেছেন, স্বান্তনা দিয়েছেন, নিজে ব্যথিত হয়েছেন! কিন্তু রাতের আঁধারে বাসাবাড়ী থেকে কিশোর-তরুন-যুবকদের শিবির করার অপরাধে অথবা প্রমান হওয়ার আগে শুধুমাত্র বিরোধী জোটের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে যাদের এনকাউন্টারে হত্যা করা হচ্ছে তাদের স্বজনদের রোনাজারী কি তিনি শুনেছেন? যাদের ক্রন্দনে সারাদেশের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে! আপনি বার্ন ইউনিটের রোগীদের সান্তনা দিচ্ছেন, টাকাও দিচ্ছেন, খুব বাহবা কুড়ানোর মত রাষ্ট্রের ভূমিকা। এটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু যাদেরকে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে হত্যা করা হয়েছে তাদেরকে স্বান্তনা কে দিবে? কে তাদের সন্তান হারানোর ক্ষতি পূরণ দেবে? তাদের হত্যার বিচার কে করবে?
এখন নতুন করে সরকারের সব মহলে জঙ্গিতত্বের ধামাকা বক্তব্য চলছে। বিরোধী জোটকে রীতিমত জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হিসাবে আখ্যা দেয়া হচ্ছে। ইচ্ছা করেই যেন তারা টেনে হিচড়ে দেশটাকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চায়। সরকার দেশের ভিতর জঙ্গি আস্তানার খবর দিচ্ছেন বিদেশীদের কাছে।
সরকার প্রধানের আশে পাশে যারা থাকেন ও শলাপরামর্শ দেন তারাও ওনার কাছে বাহবা কুড়াতে গিয়ে দেশের আসল খবর জানান না। এভাবে চলতে থাকলে আওয়ামীলীগ দল হিসেবে পরাজিত হবে শুধু তাই নয়, দেশ হবে ব্যর্থ রাষ্ট্র। ব্যর্থ হবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অর্জন বৈষম্য থেকে বাঁচার মৌলিক নাগরিক অধিকার। নিশ্চই কেউ চায়না সেই বৈষম্যের বাংলাদেশ।
যদি ধরেও নেই যে সকল নাশকতার সাথে জড়িত ২০ দল, তাহলে প্রশ্ন হলো আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের যারা পেট্রোল বোমা নিয়ে ধরা পড়ছে, বাসাবাড়ীতে বোমা বানাতে গিয়ে কব্জি উড়ে যাচ্ছে, তাদের গাড়ীতে ও অফিসে অস্ত্র ও পেট্রোল বোমা পাওয়া যাচ্ছে, তারা কি কারণে এসবের পৃষ্টপোষণ করছে?
যে পেট্রোল বোমায় শুধুমাত্র জড়িত সন্দেহে বিরোধী জোটের নেতা কর্মীদের ঢালাও এনকাউন্টার দেয়া হচ্ছে সেই পেট্রোল বোমাসহ সরাসরি আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা ধরা পড়ার পরেও তাদের জন্য কেন এনকাউন্টার নয়?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন