ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শনিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৫

পুলিশের গুলি, গুন্ডাদের লাঠি আর ইট বালুর ট্রাকের চাকায় পিস্ট গণতন্ত্র অলিউল্লাহ নোমান

আওয়ামী লীগের ভাষায় ৫ জানুয়ারী গণতন্ত্রের বিজয়ের দিন। এই দিনে রাজপথে পুলিশের গুলিতে ৪জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ প্রহরায় আওয়ামী সাংবাদিকদের তত্ত্বাবধানে গুন্ডাদের লাঠির তান্ডব দেখা গেছে জাতীয় প্রেসক্লাবে। প্রেসক্লাবের পবিত্রতা রক্ষার জন্য শেখ হাসিনার উপদেস্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলসহ কতিপয় আওয়ামী সাংবাদিক নেতাকে সরকার দলীয় গুন্ডাদের লাঠি হামলার তদারকি করতে দেখা গেছে। তারা হয়ত ভূলে গেছেন এই প্রেসক্লাবই গণতান্ত্রিক আন্দোলন গুলোর সূতিকাগার ছিল। রাজনৈতিক নেতারা পাকিস্তান আমল থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য প্রেসক্লাব ব্যবহার করেছেন। এখান থেকেই ঘোষণা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। তবে ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কার্যালয় থেকে বের হতে না দেয়া, গতিরোধ করতে কার্যালয়ের গেইটে পুলিশের তালা ঝুলানো, সামনের রাস্তায় ইট-বালুর ট্রাক রেখে পথ রুদ্ধ করা যদি গণতন্ত্রের বিজয় উৎসব হয় তাহলে ইকবাল সোবহান চৌধুরীরা সঠিক পথেই আছেন। কারন তারা এই গণতন্ত্রেই বিশ্বাসী। শেখ হাসিনার উপদেস্টা হয়েও তিনি প্রেসক্লাবের পবিত্রতা রক্ষায় নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখছেন! যারা শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের বিজয় উৎসবের বিরোধীতা করবে সেই সাংবাদিক এবং পেশাজীবীদের লাঠিপেটা করতে গুন্ডা বাহিনীর তদারকিতে তাদের সাংবাদিকতার নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন হয় না। বরং নিরীহ মানুষের উপর পুলিশের গুলি, গুন্ডাদের লাঠিপেটা, আওয়ামী লগি-বৈঠার তান্ডবের বিরুদ্ধে যারা লিখবে তারা নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলেন। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, দু:শাসন আর গুন্ডামির চিত্র যারা তুলে ধরে তারা কখনো নিরপেক্ষ নয়। তারা হয় বিএনপি পন্থি নতুবা রাজাকার। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি, দু:শাসন, লগি-বৈঠার তান্ডব দেখেও চুপ থাকতে পারলে আর বিএনপি এবং ইসলামের বিরুদ্ধে লিখতে পারলে নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সনদ পাওয়া যায়। নিরপেক্ষ এবং পেশাদার সাংবাদিক হিসাবে সনদ পেতে হলে বলতে হবে আওয়ামী লীগ যা করছে সবই গণতন্ত্র। বাকীরা যে যাই বলুক সেটা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
আওয়ামী গণতন্ত্রের বিজয় উৎসবে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকায় পোষা পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে বেগম খালেদা জিয়াকে। রাষ্ট্রীয় টাকায় টাকায় বেতনভুক্ত পুলিশ ইকবাল সোবহান চৌধুরীদের মতই পবিত্র দায়িত্ব পালন করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার গতিরোধ করতে তাঁর কার্যালয়ের গেইটের বাইরের রাস্তা বালু আর ইট পাথরের ট্রাক দিয়ে রুদ্ধ করা হয়েছে পবিত্র দায়িত্বের অংশ হিসাবে। আওয়ামী নেতারা এনিয়ে তামাশাও কম করেননি। খোদ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার জন্যই এই বাড়তি আয়োজন। রাজপথে লাঠিধারী গুন্ডা বাহিনীর নেতৃত্বদানকারী শেখ হাসিনার মনোনীত মন্ত্রী মোফজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন বাড়ির সংস্কারের জন্য বেগম খালেদা জিয়া নিজেই এই ইট-বালুর নিয়ে এসেছেন। তিনি আগে আনেন না, চালাকি করে সময় মত নিয়ে আসেন। এসব উক্তি জাতির সাথে এসব রাষ্ট্রীয় তামাশা ছাড়া অন্য কিছু নয়।
বেগম খালেদা জিয়া অবশ্য রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, পারলেন না। প্রধান ফটক বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দিয়ে গণতন্ত্রের বিজয় উৎসবের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছে পুলিশ। বাইরে থেকে শুধু গেইট তালাবদ্ধ করে রাখা হয়নি, ভেতরেও শান্তিতে দাড়াতে দেয়া হয়নি বেগম খালেদা জিয়াকে। ৩ বার-এর প্রধানমন্ত্রী ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে লক্ষ্য করে পুলিশ পিপার স্প্রে করল। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর ব্যাক্তিগত ডাক্তার এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গেছেন। তবে কার্যালয়ে টানা অবস্থানের কারনে তাঁর নাওয়া-খাওয়ায় বিঘœ ঘটছে। এতে তিনি শারিরীকভাবে আরো দুর্বল হয়ে পড়ছেন।
গণতন্ত্রের বিজয়ের এই নমুনা দেখে এর প্রকক্তাদের বিদেহী আত্মা হয়ত: হাসছে। তারা বেঁচে থাকলে হয়ত: গণতন্ত্রের নতুন সংজ্ঞা নির্ধারনের জন্য কাগজ কলম নিয়ে বসতেন। আজব গণতন্ত্রের বিজয় উৎসব নিয়ে রচনা করতেন পুস্তক। পুরাতন সংজ্ঞার জন্য কিঞ্চিৎ ক্ষমা চাইতেন গণতন্ত্রের প্রবক্তা আর রাষ্ট্রচিন্তকরা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ইলেকশনের নামে সিলেকশনের আয়োজন দেখে অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়েছে গোট দুনিয়া। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারী গণতন্ত্রের বিজয় বার্ষিকীতে আবারো ইট, বালুর ট্রাক। আবারো রাজপথে গুলি, প্রেসক্লাবে হামলা।
২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর ২০ দলীয় জোট গাজিপুরে একটি জনসভার আয়োজন করেছিল। এই জনসভা ঘিরেই উত্তেজনার সূত্রপাত। ভোটার বিহীন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন শাসক গোষ্ঠীর অঙ্গ সংগঠন জনসভার মাঠ ৩ দিন আগে থেকে দখল করে নেয়। তারা ঘোষনা করল ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গাজিপুরে জনসভা করতে দেবে না। অপর দিকে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা করল যে কোন মূল্যে গাজিপুরের জনসভা সফল করা হবে। দুই পক্ষের অনঢ় অবস্থানের কারন দেখিয়ে জেলা প্রশাসন জনসভাস্থলে জারি করলেন ১৪৪ ধারা। আইনের কেতাব অনুযায়ী এই ধারা জারি হলে সংশ্লিস্ট এলাকায় সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকে। যে কোন মূল্যে সফল করার ঘোষণাওয়ালারা কৌশলের আশ্রয় নিলেন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হল আন্দোলনের কৌশলের অংশ হিসাবে গাজিপুরের জনসভা স্থগিত করা হয়েছে। ১৪৪ ধারা জারির প্রতিবাদে ঘটা করে গাজিপুর জেলায় হরতাল এবং তীব্র নিন্দা জানানো হল। অনেকেই সেদিন প্রশ্ন রেখেছিলেন শুধু গাজিপুর জেলায়ই যদি হরতাল ডাকতে হয় তবে একটি দলের মহাসচিব কেন ঘোষনা দিতে হবে। এর জন্যতো সংশ্লিস্ট জেলার নেতারাই যথেস্ট ছিলেন।
তীব্র নিন্দা আর কৌশল ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল গড়ে উঠা আন্দোলনের সময় থেকে দেখে আসছে দেশের মানুষ। বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে গুম করার প্রতিবাদে সারা দেশ ফুসে উঠেছিল। ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলালাকায় প্রতিবাদী মানুষের উপর পুলিশ গুলি চালালে ৭জন নিহত হয়। হঠাৎ করে তখন সন্ধ্যার পর জনমানবহীন রাস্তায় একটি গাড়িতে ভৌতিক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় জড়িয়ে সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিল পুলিশ। মামলার পরই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে শুরু জরে সিনিয়র নেতারা চলে গেলেন আত্মগোপনে। বলা হল আন্দোলনের কৌশলের অংশ হিসাবে এই আত্মগোপন। তুঙ্গে উঠা একটি আন্দোলন শেয়ার মার্কেটের সূচকের ধ্বসের মত পতন ঘটল। থেমে গেল সবকিছু। সরকার উল্টা কৌশল পেয়ে গেল। আন্দোলনের নাম নিলেই নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। আর নেতারা চলে যায় কৌশলে আত্মগোপনে। নিরীহ কর্মীরা পুলিশের তাড়া খেয়ে হয় বাড়িছাড়া, নতুবা গ্রেফতার হয়ে রিমান্ড শেষে কারাগারে। এসব মামলায় নেতারাও কারাগারে গেছেন। কিন্তু, রাজপথ থেকে নয়। বীরের বেশে রাজপথে এসে কেউ পুলিশের হাতে ধরা পড়েননি। বরং জামিনের জন্য বোরকা পরিধান করে, কেউ মুখে সফেদ কৃত্রিম দাড়ি লাগিয়ে রাঁতের আধারে উচ্চ আদালত প্রাঙ্গনে প্রবেশের কথা চাউড় রয়েছে। এবার মানুষ আর এই ধরনের কোন কৌশল দেখতে চায় না। আন্দোলনের খেসারত হিসাবে দু:সহ যন্ত্রণায় ভুগতে চায় না নিরীহ কর্মী সমর্থকদের পরিবার। কর্মীদের পাশে রাজপথে নেতৃত্বে দেখতে চায় নেতাদের।
গত ৪ জানুয়ারী আন্দোলন আবার তুঙ্গে উঠেছে। কোন কৌশলের নামে আবারো শেয়ার মার্কেটের সূচকের পতনের ঘটনার মত কিছু ঘটে কিনা সেটা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন। ইতোমধ্যে বিশ্ব ইজতেমার নামে আন্দোলন স্থগিত করার একটি কৌশল বাতাসে ভাসছে। এই কৌশলের অংশ হিসাবে ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিশ্ব ইজতেমার প্রতি বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের একধরনের আবেগ, অনুরাগ রয়েছে। সুতরাং এই বিষয়ে সুক্ষ্ম পরিকল্পনা এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
এই দেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে টালবাহানা করেছিল তৎকালীন সামরিক শাসকগোষ্ঠী। ভোটের অধিকারের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছিল তারা। এর প্রতিরোধেই শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সেই ভোটের অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই চলছে। এই লড়াইকে একটি সুষ্ঠু পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব। আওয়ামী পুলিশের গুলি, বালু আর ট্রাকার চাকায় পিষ্ট গণতন্ত্রকে উদ্ধারে থাকতে হবে সকলের দৃঢ় প্রত্যয়।

লেখক: দৈনিক আমার দেশ-এর বিশেষ প্রতিনিধি, বর্তমানে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন