১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৫: বাদশা আবদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনায় হামাসের শোকের খবরটি সৌদি সরকারি জাতীয় বার্তা সংস্থায় প্রকাশ ছিল অনেকটা অভাবনীয় বিষয়। ইতোমধ্যে দোহায় হামাসের নেতা খালেদ মেশাল ফিলিস্তিনিদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি অব্যাহত সমর্থন প্রদানের জন্য সৌদি বাদশার প্রশংসা করেন। এছাড়া বৈরুতে হামাসের প্রতিনিধি আলি বারাকা সৌদি রাষ্ট্রদূত আলি আসিরির সাথে সাক্ষাৎ করে প্রয়াত বাদশার প্রতি তার শোক ব্যক্ত করেন। হামাস ও সৌদি আরবের মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ উত্তেজনাকর সম্পর্ক চলার মধ্যে বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যু হয়। বাদশা আবদুল্লাহর মৃত্যুকে হামাস দেশটির সাথে সম্পর্ক নবায়নের একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে।
ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের নেতারা গাজা উপত্যকার ওপর নিষ্ঠুর অবরোধের অবসান ঘটানোর উপায় হিসেবে মৃত কূটনীতিকে জীবীত করে নতুন আলোচনায় তাদের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটান। শোকের মুহূর্তকে হামাস সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক নতুন করে গড়ার সুযোগ বলে গ্রহণ করে। সৌদি আরবকে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বলে গণ্য করে হামাস। তাছাড়া দেশটির সাথে ওয়াশিংটন ও কায়রো উভয়ের সুসম্পর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে রিয়াদের এই অবস্থানের কারণে সৌদি আরব ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার শক্তিশালী ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ত্বরিতগতিতে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন ইসমাইল হানিয়া। বাদশা সালমানের সিংহাসনে আরহণের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে আশাবাদের সৃষ্টি হয়।
হামাস মনে করছে, বাদশা সালমানের ক্ষমতা গ্রহণের কারণে তাদের আন্দোলনের প্রতি একটি ইতিবাচক মনোভাবে সৃষ্টি হবে। কারণ যুবরাজ ও গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তার সাথে হামাসের সুসম্পর্ক বজায় ছিল। হামাস বেশ ভালো করেই জানে, সৌদি আরব এই অঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই কারণে হামাস দেশটির সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপনে অত্যন্ত আগ্রহী। হামাস আশা করছে,বাদশা সালমান একটি গতিশীল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নীতি গ্রহণ করবেন যা ফিলিস্তিনি জনগণের স্বার্থের অনুকূলে যাবে। সৌদি আরব সবসময়ই ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে,হামাস এ বিষয়েও বেশ সজাগ রয়েছে। হামাস নেতাদের ধারণা,আঞ্চলিক কয়েকটি কারণে নতুন সৌদি বাদশা ও তার সরকার দেশের বর্তমান নীতিতে পরিবর্তন আনবেন। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইয়েমেনে হাউছিদের ক্ষমতা দখল, তেলের দামের ব্যাপক পতন,ইসলামিক স্টেটের কারণে পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে পরিবর্তনশীলতা আর ফিলিস্তিন সম্পর্কিত আলোচনার ব্যর্থতার কথা নাই বা উল্লেখ করা হলো।
ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন দৃষ্টিভঙ্গির ফলে সৌদি আরব একটি নতুন জোট গঠন ও শক্তিশালী করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সৌদি আরবের নীতিনির্ধারক মহল জানিয়েছে, হামাসের উদ্বেগ নিরসন বিশেষ করে বাদশা সালমান হামাসের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী। যেভাবেই চিন্তা করা হোক না কেন বাদশা সালমান পুরো অঞ্চলকে নিয়েই তার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। এবং হামাসকে নতুন মিত্র গড়ে তোলার আগে অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে,এ কথা বলাই যায়। তবে বিষয়টি কিভাবে গড়াবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এর প্রমাণ হচ্ছে বাদশা আবদুল্লাহর দাফন অনুষ্ঠানে হামাসের অনেক মিত্র উপস্থিত ছিল। অন্যদিকে তার বিরোধীদেরও অনেকে অনুষ্ঠানে যোগদান করেনি। এতে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে; মিসরের ব্যাপারে সৌদি আরবের নীতির নেতিবাচক পরিবর্তন কি হামাসের জন্য ইতিবাচক হবে? হামাস জোর দিয়ে বলছে,তারা এ অঞ্চলের কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না। তারপরও দুবছর ধরে মিসরের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে দেখা গেছে।
বস্তুত মিসরের গোলযোগপূর্ণ কোনো ঘটনার সাথে তার নাম না জড়ানোর জন্য হামাস বহুবার অনুরোধ জানিয়েছে। মিসরের ওপর সৌদি আরবের বড় ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় মিসরের অনেক গোলযোগ মেটাতে রিয়াদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। একটি প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা যায়নি, তা হলো সৌদি আরবের সাথে হামাসের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলে সে ক্ষেত্রে ইরানের সাথে গ্রুপটির আন্তরিক সম্পর্কের ওপর তার কি প্রভাব পড়বে? সিরিয়া,লেবানন,বাহরাইন ও ইয়েমেনের পরিস্থিতির কারণে সৌদি আরবের সাথে ইরানের নানা ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে ফলাফল যাই হোক,হামাস বেশ ভালো করেই জানে,ফিলিস্তিনি সঙ্কট নিরসন ও তার জনগণের দুর্দশা লাঘবে সৌদি আরবের সাথে সুসম্পর্ক জরুরি।
সূত্র: মিডিলইস্ট মনিটর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন