ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলি

নয়ন বাছাড় (২৩)। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবা নেই। পরিবারের একমাত্র সন্তান। চার বছর ধরে ঢাকায় আছেন তিনি। ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বাস থেকে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নামতেই বাধে বিপত্তি। হঠাৎ তাকে ধরে ফেলে গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে নিজের পরিচয়ও তুলে ধরেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে, দাবি নয়নের। গুলিবিদ্ধ নয়ন এখন রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন।

মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক মাসুম (২৮)। মেরুল বাড্ডার নিমতলায় বসে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে তাকেসহ পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর আফতাবনগরে অভিযানের নামে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন মাসুম। তিনিও ভর্তি পঙ্গু হাসপাতালে। 

শুধু নয়ন, মাসুমই নন, ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের মতো অন্তত ১৭ জন, যাদের জীবন এখন হুমকির মুখে। প্রত্যেকেরই পায়ে গুলি। সরেজমিন জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, তাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দলের সদস্য হলেও বেশির ভাগই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। চলমান সহিংসতার সুযোগ নিয়ে পুলিশ এসব গুলির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেছেন আহতদের স্বজনেরা। কড়া পুলিশি পাহারায় তাদের চিকিৎসা চলছে। তবে পুলিশ বলছে এরা বন্ধুকযুদ্ধে আহত। 
পঙ্গু হাসপাতালের এবি ওয়ার্ডে ৬৯ নম্বর জেনারেল বেডে ভর্তি আছেন নয়ন। নয়নের খালাতো ভাই প্রিন্স জানান, নয়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন নয়ন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি গুলিস্তান গিয়েছিলেন জুতা কিনতে। রাত ৮টার দিকে জুতা কিনে ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে গাড়ি থেকে নামেন নয়ন। এ সময় হঠাৎ একটি গাড়িতে আগুন আতঙ্কে ছুটোছুটি করতে থাকেন লোকজন। ওই সময় ডিবি পুলিশ এসে নয়নকে ধরে ফেলে। নয়ন ডিবি পুলিশকে পরিচয়পত্র দেখিয়ে বলেন, আমি পিকেটার নই। আমি হিন্দু ধর্মের অনুসারী। নয়নের কথায় কোনো কর্ণপাত না করে তাকে হ্যান্ডকাফ পরানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে থানা পুলিশেকে ফোন করা হয়। সূত্রাপুর থানা পুলিশ এসে নয়নের বাম পায়ে দু’টি গুলি করে। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার নামে নাশকতার মামলা দেয়া হয়। জানা গেছে, নয়নের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে। 
নয়নের মা শিখা রানী বলেন, ‘ঘটনার সময় নয়নের কাছে মোবাইল ও মানিব্যাগ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। চোখের সামনে একমাত্র ছেলের এই অবস্থা দেখে কী যে কষ্ট হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এখন ঠাকুরই একমাত্র ভরসা।’ 
তিনি বলেন, চিকিৎসক এ পর্যন্ত দু’বার অস্ত্রোপচার করেছেন। আরো একবার নাকি অস্ত্রোপচার করতে হবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের বলে কী হবে, উল্টো আমার ক্ষতি হবে, যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। নতুন করে আর কোনো ক্ষতি চাই না। 
তার ছেলে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, নয়ন খুবই মেধাবী ছেলে। ও কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করার জন্য, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। সব সময় ভয়ে থাকতাম কিন্তু সেই ভয়ই আমার কাল হয়ে গেল। এসএসসি ও এইচএসসিতে এ প্লাস পেয়েছে নয়ন। ওকে নিয়ে আমাদের সবার অনেক আশা-ভরসা ছিল। কিন্তু জানি না ঠাকুর এখন কী করেন। এভাবেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন নয়নের মা। 
আইজে ওয়ার্ডের ১৮ নম্বর জেনারেল বেডে গাড়িচালক স্বপন (২২) ও ইআর ওয়ার্ডের অতিরিক্ত ৯ নম্বর বেডে ভর্তি আছেন মানসিক ভারসাম্যহীন মাসুম (২৮)। স্বপনের মা নাজমা জানান, আমার ছেলে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মাইক্রোবাস চালায়। বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। থাকেন মেরুল বাড্ডায়। নাজমা বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গুলি করেছে পুলিশ। গাড়িচালক হিসেবে ছেলের লাইসেন্স দেখিয়ে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, সাত মেয়ের পর আমার একটি ছেলে হয়েছে। বহু আশা নিয়ে তাকে বড় করেছি। প্রথমে রিকশা চালাত। পরে সিএনজি আটোরিকশা। এরপর তাকে মাইক্রোবাস চালানো শিখিয়েছিলাম। তার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারব না। তিনি জানান, গত ৮ জানুয়ারি মেরুল বাড্ডার নিমতলা এলাকায় বসে কয়েক বন্ধু মিলে চা খাচ্ছিল স্বপন। এ সময় স্বপন, মাসুম, মনির (২৮) ও পিন্টুসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। সবাইকে থানায় নেয়া হয়। কাস্টডিতে দু’জনকে রেখে স্বপন, মাসুম ও মনিরকে নেয়া হয় আফতাবনগরে। সেখানে নিয়ে তিনজনকে গুলি করা হয়। স্বপনের পায়ে দু’টি গুলি করা হয়েছে। এরই মধ্যে মনিরের পা কেটে ফেলা হয়েছে। স্বপনের রিকশাচালক বাবা নূর ইসলামের প্রশ্ন, আমার ছেলে তো রাজনীতি করত না। তাহলে তার এ অবস্থা হলো কেন? তিনি বলেন, গ্রেফতারের পরপরই আমরা থানায় গিয়ে হাজির হই। পুলিশ আমাদের টাকা ম্যানেজ করতে বলে তিনজনকে নিয়ে থানার বাইরে যায়। আমরা সারা রাত থানায়ই অবস্থান করি। পরে পুলিশ আমাদের খবর দেয়, স্বপনসহ তিনজনকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, গুলি করার আগে পুলিশ তাদের চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে। পরে জিজ্ঞেস করে তোদের গুলি করার অর্ডার এসেছে, কোথায় গুলি করব বল। তখন ছেলেরা বলে, আমরা অসহায়। যেখানে ইচ্ছে সেখানেই গুলি করতে পারেন। তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর পুলিশ ছেলেদের কাছে জোর করে এই মর্মে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে যে, তারা নাশকতাকারী।
মাসুমের মা রিনা বেগম জানান, আমার ছেলে সিএনজি অটোরিকশা গ্যারেজে কাজ করত। মানসিক সমস্যা দেখা দেয়ায় তিন বছর ধরে সে কিছুই করে না। সে রাজনীতি বোঝে না। তার বাবা রাজমিস্ত্রি ও বড় ভাই মাইক্রোবাস চালক। তিনি বলেন, একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মনির মাছ বিক্রি করত। তিনি আরো বলেন, যাদের গুলি করা হয়েছে তাদের নামে নাশকতার কোনো মামলা ছিল না। কেবল স্বপনের নামে একটি মোবাইল চুরির মামলা ছিল। ওই মামলায় সে জামিনে আছে।
ইআর ওয়ার্ডের ১৫ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন জামায়াতে ইসলামীর মোহাম্মদপুর থানার রোকন আবুল কাশেম ফজলুল হক (৩৭)। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। তিনি জানান, আমি ও আমার বন্ধু নাজমুল মিলে গত ২ ফেব্রুয়ারি সকালে মোহাম্মদপুরের সলিমুল্লাহ রোড দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি গাড়ি এসে আমাদের সামনে দাঁড়ায়। ওই গাড়ি থেকে কয়েকজন নেমে ডিবি পরিচয়ে আমাদের কাছে জানতে চায় আমরা কোথায় থাকি ও কী করি। এরপর তারা থানায় ফোন করে বলেন, ‘আমরা নাকি শিবির ধরতে পারি না। এবার ধরেছি। ককটেল রেডি করেন।’ এরপর থানায় নিয়ে আমাদের বেধড়ক পেটানো হয়। পরে একটি গাড়িতে করে থানা থেকে আমাদের মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে। আমাদের পরিবার বোধহয় লাশও পাবে না। কিন্তু গাড়ি থেকে নামিয়ে আমাদের দু’জনের হাঁটুতে গুলি করা হয়। পরে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গুলিবিদ্ধ নাজমুল (৪০) এবি ওয়ার্ডের পেয়িং ৬ নম্বর সিটে ভর্তি। তার স্ত্রী ফাহিমা খাতুন একই ধরনের তথ্য জানিয়ে বলেন, নাজমুল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। আবুল কাশেমের বন্ধু হওয়ার কারণেই তাকে গুলি করা হয়েছে। তিনি জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের গৌরনদীতে। তাদের দুই মেয়ে আছে। একজনের বয়স ১০ বছর ও অন্যজনের এক বছর। ফাহিমা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘স্বামীর কিছু হয়ে গেলে দুই মেয়েকে নিয়ে আমি কোথায় যাব?’ তিনি বলেন, আমি এবং আমার স্বামী একসঙ্গে কাওরানবাজার এলাকার একটি গার্মেন্টে চাকরি করতাম। দ্বিতীয় মেয়ে হওয়ার পর আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এখন কেবল নাজমুলের একার আয়ের ওপর আমরা সবাই নির্ভরশীল।


এবি ওয়ার্ডের পেয়িং ১, ২ ও ৩ নম্বর সিটে ভর্তি শহীদুল ইসলাম (২৫), শাকিল (২৫) ও পিয়ার হোসেন (২০)। গুলিবিদ্ধ শহীদুল ইসলাম জানান, ১১ বছর ধরে রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন লিংক রোড গুদারাঘাটের ৬ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাসার মালিক ফিরোজ আহমদের ব্যক্তিগত গাড়ি চালাই। পিয়ার হোসেন আমার বেয়াই। গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পিয়ার, শাকিল, দিল মোহাম্মদ দিলু (২৮) ও দুলাল (২৬) আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। বাড়ির মালিককে না জানিয়ে তারা বাসায় প্রবেশ করে। এ অভিযোগে আমাকেসহ পাঁচজনকে ওই বাসা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পরে থানায় নেয়া হয়। চোখ-মুখ বেঁধে আমাদের তিনজনকে থানা থেকে নেয়া হয় আফতাবনগর এলাকায়। দিলু ও দুলালকে রাখা হয় থানা কাস্টডিতে। আফতারনগরে নিয়ে আমাদের তিনজনকেই গুলি করা হয়। দুইজনকে এক রাউন্ড করে গুলি করলেও আমার হাঁটুতে করা হয় দুইটি গুলি। এ ছাড়াও পুলিশ প্রায় ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। শাকিলের মা সাফিয়া জানান, গুলি করার পর পুলিশ স্থান ত্যাগ করে। এর চার ঘণ্টা পর পুলিশ আবার ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করে আমাদের খবর দেয়।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে যেসব গুলির ঘটনা ঘটছে তার বেশির ভাগই বন্দুকযুদ্ধ। গুলিবিদ্ধদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই নাশকতাকারী সন্দেহে অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারা স্বীকারোক্তিতে পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানদাতাদের নাম বলছে। গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানদাতাদের ধরতে অভিযানে গেলে পুলিশের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। তখনই বন্ধুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটনাও ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাড্ডা থানার ওসি আবদুল জলিল বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমার এলাকার যে দু’টি ঘটনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার একটি ছিল ডাকাতির ঘটনা। গুলশান লিংক রোডের ঘটনায় ডাকাতদের নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলি চালায়। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। এতে তিনজন ডাকাত গুলিবিদ্ধ হয়। মেরুল বাড্ডার ঘটনায় যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ রয়েছে।
দৈনিক নয়া দিগন্তের সৌজন্যে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন