ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

বুধবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

পেট্রলবোমা নয়, রূপা দগ্ধ হয় চুলার আগুনে

গ্যাসের চুলা থেকে জামায় আগুন লেগে মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় শিশু মরিয়ম আক্তার রূপাকে (৭) স্বজনরা গাজীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন গত ৩ ফেব্রুয়ারি। শ্বাসনালি ফুলে যাওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরদিন রাতে রূপাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। রূপা গাজীপুর শহরের বরুদা এলাকার জয়নাল আবেদীনের বাসার ভাড়াটে গার্মেন্টকর্মী নার্গিস আক্তারের মেয়ে। কিন্তু বার্ন ইউনিটে ভর্তি হওয়ার পর কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার হতে থাকে- ৪ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুরের নলজানিতে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হয়েছে রূপা। রূপার মায়ের বরাত দিয়েই ওই খবর প্রচারিত হয়। দগ্ধ মেয়ের মায়ের আহাজারি দেখে টেলিভিশনের অনেক দর্শকও চোখের পানি মুছেছে। একই ঘটনা উল্লেখ করে পরে একাধিক জাতীয় দৈনিকেও দগ্ধ রূপাকে নিয়ে হৃদয়গ্রাহী মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে ওই বাসার অন্য ভাড়াটে, এলাকার বাসিন্দা এমনকি স্বজনরাও। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলে, গ্যাসের চুলার আগুনে পোড়ার ঘটনাকে, বাসে পেট্রলবোমা হামলা বলে ঠিক করেননি রূপার মা নার্গিস আক্তার।
ওই বাড়ির মালিক জয়নাল আবেদীন (৬৫) কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। পরে বাড়ি এসে জানতে পারি আগুন পোহানোর সময় রূপা গ্যাসের চুলার আগুনে পুড়েছে। বাড়ির সব ভাড়াটেই এমন তথ্য জানিয়েছে। রূপা বাসে পেট্রলবোমা হামলায় পুড়েছে বলে টেলিভিশন ও পত্রিকায় যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তা ঠিক নয়।'
বাড়ির ভাড়াটে লোকমান হোসেন (৭৫) বলেন, 'টেলিভিশনের খবর শুনে আমরা তো হতবাক। সত্য ঘটনাকে কেন মিথ্যা করা হলো বুঝতে পারছি না। রূপা এতিম বাচ্চা, ওর শরীর মারাত্মকভাবে পুড়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসার সমস্যা হলে বাড়ির মালিককে জানাতে পারত। তিনি ভালো মানুষ। ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ করার মতো মন তাঁর আছে। তা ছাড়া আমরা গরিব হলেও তো মানুষ। মহল্লায় চাঁদা তুলে হলেও টাকা জোগাড় করতে পারতাম।' স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, রূপার গায়ে গ্যাসের চুলার আগুন লাগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায়। অন্যদিকে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের নলজানি এলাকায় ঢাকাগামী বলাকা পরিবহনের বাসে পেট্রলবোমা হামলা হয় পরদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে। এতে বাসের ছয় যাত্রী সবুজ মিয়া, রাকিব, নূরুন নবী, মঞ্জুরুল, সোহেল ও নাজমুল দগ্ধ হয়।
বরুদা এলাকায় গিয়ে জানা যায়, রূপার বাবা আবদুল মতিন খোকনের (৭০) দুই সংসার ছিল। দুই বছর আগে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র সন্তান রূপাকে নিয়ে নার্গিস আক্তার গাজীপুরে চলে আসেন। গাজীপুর শহরের বরুদা এলাকায় তাঁর ছোট এক বোন ও ভাই আগে থেকেই বাস করতেন। পরে স্থানীয় একটি গার্মেন্টে চাকরি নেন নাগির্স আক্তার।
রূপার খালাতো বোন কাকলী আক্তার (১৩) জানায়, ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে বারান্দায় রূপা ও তার সমবয়সী আরেক শিশু সামিয়া খেলা করছিল। ওই দিন খুব শীত থাকায় রূপা ঘর থেকে দিয়াশলাই এনে কাকলীদের ঘরের বারান্দার গ্যাসের চুলা জ্বালায়। পরে দুজনে মিলে আগুন পোহানোর সময় হঠাৎ রূপার সোয়েটারে আগুন ধরে যায়। তার চিৎকার শুনে অন্য ভাড়াটেরা গিয়ে শরীরে পানি ঢেলে আগুন নেভায়।
রূপার খালু আবুল কালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি করার পর রূপার মা নার্গিস আক্তারকে (৪০) মোবাইল ফোনে জানানো হয়। শ্বাসনালি ফুলে যাওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শে পরদিন বুধবার রাতে গাজীপুর থেকে রূপাকে তার মা ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যান। রাতে টেলিভিশনের খবরে জানতে পারি রূপা গাজীপুরে বুধবার রাতের পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পত্রিকায় ছবি দিয়েও এমন খবর ছাপা হয়েছে। কিভাবে এমন মিথ্যা খবর ছাপা হয়েছে, জানেন না। ঢাকায় যাওয়ার পর নার্গিস আক্তারের মোবাইল ফোনও বন্ধ।'
রূপাকে গাজীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় ৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায়। রেজিস্টার অনুযায়ী সে ১১৪৯ নম্বর রোগী। পরে তাকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক শংকর চন্দ্রের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। ওই ওয়ার্ডের নার্স নাজমা আক্তার জানান, ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রূপাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর তারা রিলিজ নিয়ে চলে যান। তবে হাসপাতালে থাকার সময় শিশু ও তার মা জানিয়েছিলেন, গ্যাসের চুলা থেকে জামায় আগুন লেগে শিশুটি দগ্ধ হয়েছিল।
রূপার মা নার্গিস আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঘটনার সময় আমি গার্মেন্টে ছিলাম। সবাই আমারে যা বলছে, আমি তাই বলছি। তারা তো বলল বাসের আগুনে পুড়ছে।'
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজমল হোসেন ভুঁইয়া জানান, ৩ ফেব্রুয়ারি বাসায় গ্যাসের চুলা থেকে জামায় আগুন লেগে রূপার শরীর পুড়ে যায়। অথচ ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রূপাসহ পাঁচ বাসযাত্রীকে পেট্রলবোমা হামলা করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জয়দেবপুর থানার এএসআই রেজাউল করিম বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন।
মামলার বাদী এএসআই রেজাউল করিম বলেন, 'ওই দিন ঘটনাস্থলের আধা কিলোমিটার দূরে মোবাইল ডিউটিতে ছিলাম। বাসে পেট্রলবোমায় আহত যাত্রী ও তাদের আত্মীয়স্বজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি বাদী হয়ে মামলা করেছেন। রূপা বাসে পেট্রলবোমায় পুড়ে না থাকলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চয়ই তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেবেন।'
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জয়দেবপুর থানার এসআই মনির হোসেন জানান, হরতাল-অবরোধের কারণে এখনো তদন্ত শুরু করতে পারেননি। প্রাথমিক তদন্ত না করে এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবেন না তিনি।
জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল হাসান রেজা বলেন, 'মামলা হয়েছে বাসে পেট্রলবোমা হামলার অভিযোগে। এটা নাশকতা। রূপা কিভাবে দগ্ধ হয়েছে তার চেয়েও বড় কথা অবুঝ শিশুটি মারাত্মকভাকে পুড়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। দেশবাসীর মতো আমরাও চাই সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। সে সেরে উঠলে কথা বলে এবং দগ্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছ থেকে ডাক্তারি প্রতিবেদন পাওয়ার পর তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।'
 উৎসঃ কালের কন্ঠ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন