বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান সমস্যা কোনটি এই প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সচিব এম আসাফউদ্দৌলাহ্ বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনীতির প্রধান সমস্যা হচ্ছে সৎ, নির্লোভ, আদর্শবান সজ্জন রাজনীতিকের প্রকট অভাব। এই অভাবটি আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে ক্রমেই উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে সজ্জন ব্যক্তিদের সংখ্যা না বাড়লে তা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিবেশকে এক গভীর সংকটে ফেলে দিতে পারে যা থেকে উত্তরণ ঘটানো খুবই কঠিন হবে।’ জনাব আসাফউদ্দৌলাহর এই অভিমত দেশের অধিকাংশ মানুষেরই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সম্পৃক্ততা এখন আর নতুন কিছু নয়। আদর্শহীন ও অর্থলোভী অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের চাপে ও প্রভাবে আদর্শের রাজনীতি করা প্রকৃত রাজনীতিবিদরা এখন অনেকটাই কোণঠাসা ও অসহায়। এই অবস্থা দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই চলছে সমান তালে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই এখন ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে বিনিয়োগ করেন রাজনীতিতে যেখানে লোকসানের ঝুঁকি ন্যূনতম নেই। অনেকেই জীবনে কোনদিন রাজনীতি না করেও জনগণের সাথে না মিশেও নির্বাচনের ঠিক আগে কোটি কোটি টাকা খরচ করে শীর্ষ নেতৃত্বকে ম্যানেজ করে এমপি মনোনয়ন কিনে নেন। এদের অনেকেই এমপি হন এমনকি মন্ত্রীও হন। গত প্রায় দুই যুগ ধরেই এমন দৃশ্য নিয়মিত চোখে পড়ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। অথচ আমাদের বাংলাদেশের অতীত রাজনীতির কতো গৌরবগাথা অহংকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে যা নিয়ে আমরা মাথা উঁচু করে গর্ববোধ করতে পারি সারা পৃথিবীর কাছে। বাংলাদেশের মানুষ সারাজীবন গর্ব করে বলতে পারবে এক সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো আদর্শবান জনপ্রিয় ও সজ্জন ব্যক্তিত্বরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। ঐ সময় তাদের যারা রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন তাদেরও অধিকাংশই ছিলেন, সৎ মেধাবী ও আদর্শবান রাজনীতিক এবং সজ্জন ব্যক্তিত্ব। অথচ সেই তুলনায় বর্তমানের বাংলাদেশের রাজনীতির হালচাল ও নেতৃত্বের মানদ- পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই এক বিরাট ও আকাশচুম্বি পার্থক্য। সব দিক থেকেই চরম অবনতি ও অধপতন ঘটেছে বাংলাদেশের রাজনীতির সর্বক্ষেত্রে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সরকার গঠন করা হয়, সেখানেও ছিল আদর্শবান ও সজ্জন রাজনীতিবিদদের ব্যাপক সমারোহ। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলেও যারা রাজনীতি করেছেন এবং ঐ দুই সরকারেই এমপি ও মন্ত্রী ছিলেন তাদের মধ্যেও অধিকাংশই ছিলেন প্রকৃত রাজনীতিবিদ এবং ঐ দুই আমলেও অনেক সৎ ও সজ্জন ব্যক্তিরা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রের নামে সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে মূলত দুর্বৃত্তায়ন, অর্থলোভী, সন্ত্রাসী ও আদর্শহীন ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ আস্তে আস্তে শুরু হয় এবং ক্রমেই তা আশংকাজনকভাবে বাড়তে থাকে। জীবনে কোনদিন রাজনীতি না করেও নির্বাচনের আগে কোটি কোটি টাকা দলকে চাঁদা দিয়ে ও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যক্তিগত চাকর ও স্টাফদেরকে বিপুল অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করে সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন কিনে নেওয়ার প্রক্রিয়া তখন থেকেই শুরু হয় যা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে এখনও। তবে রাজনীতিতে সন্ত্রাসী দুর্নীতিবাজ ও কালো টাকার মালিকদের ভয়াবহ সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পায় মূলত ২০০১ সাল থেকে যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে এখন তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং এই অবস্থা থেকে কোনভাবেই বের হতে পারছে না দেশের দুই প্রধান জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বিশেষ করে ২০০১ সালের পর একটি ভয়াবহ কুপ্রক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে মারাত্মকভাবে প্রবেশ করে তা হলো প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বাসার চাকর ও তাদের গাড়ীবহর ও অফিসে কর্মরত ব্যক্তিগত স্টাফদেরকে কোটি কোটি টাকা উৎকোচ দিয়ে তাদের মাধ্যমে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ ও নীতি আদর্শ বিবর্জিত অর্থ ও ক্ষমতালোভী ব্যক্তি শীর্ষ নেতাদের সমর্থন আদায় করে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে এমপি ও মন্ত্রী পদ কিনে নিয়ে রাজনীতিকে একেবারে কলুষিত করে ফেলেন। দলীয় প্রধানের সাথে থাকা ঐসব কর্মচারী ও তাদের সিন্ডিকেট এক সময় রাজনীতিতেও এতো বেশী প্রভাবশালী হয়ে উঠে যে শুধু ব্যক্তিগতভাবে তারা শত শত কোটি টাকার মালিকই নয়, সরকার ও দল পরিচালনায়ও তারা দলের ও সরকারের সিনিয়র নেতাদের চেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তার করা শুরু করে। এদের দৌরাত্ম্যে এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ২০০৬ সালে রাজনীতির ওপর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ওয়ান-ইলেভেনের টর্নেডো আঘাত হানে।চিন্তাশীল অনেকেই মনে করেন পরিস্থিতির ভয়াবহতায় ঐ সময় ওয়ান-ইলেভেনের মতো একটি ধাক্কা রাজনীতিতে অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। কিন্তু সবচেয়ে হতাশার বিষয় হচ্ছে ওয়ান-ইলেভেনের টর্নেডোর পরেও পরিস্থিতি একটুও বদলায়নি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের।বরং বাস্তবতা হচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই দুই দলই দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ও জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য ঐ সব দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকেই দলীয়ভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে যা দেশের সাধারণ মানুষ কোনভাবেই ভালো দৃষ্টিতে গ্রহণ করছে না। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই দলই এই কাজটি করছে অব্যাহতভাবে এবং শুধু এই একটি মাত্র ক্ষেত্রেই এই দু’দলের মধ্যে আদর্শিক মিল পরিলক্ষিত হচ্ছে। যে কারণে দেশের মানুষ ক্রমেই বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকা-ের ওপর হতাশ হয়ে পড়ছেন। সার্বিকভাবে দেশের রাজনীতির এমন একটি হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যেও একটি ক্ষেত্রে দেশের মানুষ এখনো রাজনীতির মধ্যে স্বস্তিবোধ করেন এবং আশার আলো দেখেনÑ তা হলো দেশের রাজনীতির দুই প্রধান ও শীর্ষ দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মহাসচিব পদে এখনো আসীন রয়েছেন দু’জন সৎ, নির্লোভ, শিক্ষিত ও গৌরবময় পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারক আদর্শবান সজ্জন ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই দু’জনেরই দলমতের ঊর্ধ্বেও সাধারণ সকল মানুষের কাছেই ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের মানুষ রাজনীতিবিদদের কর্মকা-ে ক্রমেই রাজনীতি বিমুখ হওয়ার পরেও তাদের কাছেও সৈয়দ আশরাফ ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরদের মতো সজ্জন ব্যক্তিরাই এখনো আদর্শের প্রতীক। অথচ দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও এই দুই নেতাই তাদের নিজ নিজ দলেই অনেক ক্ষেত্রে অবহেলিত। যেটা আগামী দিনের রাজনীতির জন্য এক অশুভ ইংগিত বহন করছে। এমনিতেই বর্তমানে সৎ ও আদর্শবান রাজনীতিকের প্রকট অভাব। এমন একটি পরিবেশে যদি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো সজ্জন ব্যক্তিরা যথার্থ সম্মান আর মর্যাদা নিয়ে রাজনীতি করতে না পারেন তাহলে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ভালো মানুষের যে সংকট তৈরী হবে, সেই সংকট দেশের রাজনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে সম্প্রতি এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়ার ফলে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতাকর্মী খুশি হলেও দেশের সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তটিকে দেখছেন নেতিবাচক হিসেবেই। বরং কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অন্যান্য বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠার পরেও তাদেরকে মন্ত্রী পরিষদে বহাল রেখে সৈয়দ আশরাফের মতো সৎ ও আদর্শবান ব্যক্তিকে মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়ায় সাধারণ মানুষ আরো বেশি করে সরকারের সমালোচনা করছেন। জনগণের মনোভাব প্রকাশের দৃষ্টিকোণ থেকে সৈয়দ আশরাফের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত সিদ্ধান্ত সরকারের ইমেজের জন্য কোন প্লাস পয়েন্ট পায়নি। একই অবস্থা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরেরও। বিএনপি যখন সাংগঠনিকভাবে চরম বিপর্যস্ত ঠিক সেই ক্রান্তিকালে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব নেন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের দায়িত্ব নিয়েই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এবং মিডিয়ায় দেয়া চমৎকার ও গ্রহণযোগ্য বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন কারণে প্রশ্নবিদ্ধ বিএনপির হারানো ইমেজকে খুব দ্রুততার সাথে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন এবং তার রুচিশীল রাজনৈতিক বক্তব্যগুলোকে সাধারণ মানুষ খুবই আগ্রহের সাথে গ্রহণ করতে থাকেন। বিগত কয়েক বছর ধরেই বিএনপির হারানো ইমেজকে পরিচ্ছন্নভাবে ফিরিয়ে আনার জন্য মির্জা ফখরুল অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। অথচ প্রায় ছয় বছর হতে চললেও মির্জা ফখরুলকে এখনো পর্যন্ত ভারমুক্ত করে দলের পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত দলের ভিতরে এবং বাইরে সর্বত্র। অথচ দলের যে সব নেতা ক্ষমতায় থাকার সময় ব্যাপকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতি ও দলের মূল আদর্শ বিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত ছিলেন এবং যাদের অপকর্মের কারণে দলের ওপর এসেছিল সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ওয়ান-ইলেভেনের আঘাত সেই সব দুর্নীতিবাজ বিতর্কিত নেতারা তাদের পছন্দমতো পদ-পদবি বাগিয়ে নিচ্ছেন বীরদর্পে অনেকটাই বিনা বাধায়। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক এটাকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এক প্রকট দুর্বলতা হিসেবেই দেখছেন। এই সমস্ত দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে দলের সৎ, ত্যাগী ও আদর্শবান নেতারা যেমন হতাশায় রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, ঠিক তেমনি উল্টো দ্বিগুণ উৎসাহে দলে সহজেই জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন সেই সব বিতর্কিত নেতারা। যাদের কারণে দলের ইমেজ দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং দলও ভয়াবহ সাংগঠনিক বিপর্যয়ে পতিত।দেশের রাজনীতিতে সৎ, আদর্শবান ও সজ্জন ব্যক্তিদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে হ্রাস পাওয়ার বিষয় নিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক সচিব ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক এম আসাফউদ্দৌলাহ, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আতাউর রহমান ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন। ইনকিলাবকে দেয়া তাদের প্রতিক্রিয়া নিম্নে দেয়া হলো।ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং রাজনীতিতে সৎ-সজ্জন ব্যক্তিদের অভাবের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও খ্যাতিমান সাংবাদিক, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, “জনসেবার রাজনীতি এবং জনগণের নেতৃত্বের অবর্তমানে সৎ ও দায়িত্বশীল সুশাসনের পরিস্থিতিই দেশে সৃষ্টি হয় নি। দেশে বর্তমানে চলছে পুলিশি মামলার শাসন। পুলিশও তাই অপরাধ, দুর্নীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। সরকারই পুলিশনির্ভর। তাই কে কার বিচার করবে? শিশু রাজনের বর্বরোচিত হত্যাকারীরাও একটু সময় পেলেই পার পেয়ে যেত। এই ব্যর্থতা সমগ্র জাতির। মুক্তিযোদ্ধাসহ প্রকৃত দেশপ্রেমিকরা নীরব বা নিষ্ক্রিয় থাকার ফলে স্বাধীনতা অর্জনের পরও একটি স্বাধীন জাতিকে অসহায় ও অধিকারহীন করা হয়েছে। দেশকে ব্যর্থ সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসন থেকে রক্ষা করতে পারেনি। সর্বত্র দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দৌরাত্ম্য চলছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া জাতিকে রক্ষা করার ভিন্ন কোনো পথ নেই। জনগণকে ভোটাধিকারহীন করা হয়েছে জনবিরোধী শাসন চালিয়ে যাওয়ার জন্য। এই ব্যর্থতা আমাদের সবার, তাই দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের সবাইকে। এ জন্যই আমি জাতির বিবেককে জাগ্রত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সবাই ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। ব্যর্থ শাসনের অযোগ্য নেতৃত্বকে দোষ দিলে রক্ষা পাব না। জাতির জন্য নিরাপদ সুশাসন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকেই নিশ্চিত করতে হবে। জনগণকে অসহায় রাখলেই জনগণ অসহায় থাকে না। তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ গণজাগরণের মাধ্যমে ঘটে। যে কেউ কিছু জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন হলে এ ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে দিতে পারে না। দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকলে সবাইকে ডেকে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে রক্ষার কথা ভাবতেন।”এম আসাফউদ্দৌলাহবিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সচিব এম আসাফউদ্দৌলাহ এই বিষয়ে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, “বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনীতির প্রধান সমস্যাই হচ্ছে সৎ, নির্লোভ, আদর্শবান ও সজ্জন রাজনীতিকদের প্রকট অভাব। এই অভাবটি আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে ক্রমেই উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে সজ্জন ব্যক্তিদের সংখ্যা না বাড়লে তা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিবেশকে এক গভীর সংকটে ফেলে দিতে পারে যেখান থেকে উত্তরণ ঘটা খুবই কঠিন হতে পারে। আমাদের দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থ, আদর্শহীনতা ও পেশীশক্তির প্রভাব এতো বেশী প্রবল যে এই অসুস্থ অর্থলিপ্সার প্রতিযোগিতায় সজ্জন ব্যক্তিদের আর রাজনীতিতে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তবে এই ভয়াবহ রাজনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি আমরা সাধারণ জনগণও কম দায়ী নই। আমরাইতো জেনে শুনেও ঐ সব দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদেরকে ভোট দিয়ে নেতা বানাই, এমপি বানাই, মন্ত্রী বানাই। আমরা মুখে বলি সৎ লোক চাই। অথচ সেই আমরাই নির্বাচন হলে অসৎ, দুর্নীতিবাজ, আদর্শহীন, সন্ত্রাসী ও কালো টাকার মালিকদেরকে ভোট দেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। সবার আগে আমাদের জাতীয় চরিত্র পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের কোন মুক্তি নাই।”ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত (অব.)সৎ, আদর্শবান ও সজ্জন রাজনীতিবিদদের সংকট প্রসঙ্গে মন্তব্য চাওয়া হলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, “সজ্জন রাজনীতিবিদদের প্রকট অভাবের বিষয়টি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আগে যে সব সজ্জন ব্যক্তিরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা দেশের জন্য জনগণের জন্য পুরোপুরি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। অথচ পরবর্তীতে এখন আমরা যে রাজনীতি দেখছি তাতে রাজনৈতিক নেতাদের ডেডিকেশনের বড়ই অভাব। এর মূল কারণ রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের ভয়াবহ প্রভাব। যতোই আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হচ্ছে ততোই রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন বাড়ছে। কালো টাকার মালিকরা রাজনীতিতে বিনিয়োগ করছে। এটা বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়াবহ সিগন্যাল। বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দুর্বৃত্তায়ন যেভাবে বাড়ছে তাতে সৈয়দ আশরাফ ও মির্জা ফখরুল ইসলামের মতো সজ্জন ও ভালো মানুষেরা এই রাজনীতির সাথে মিশতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক। তবে যদি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবদের মতো ভদ্রলোকরা রাজনীতিতে টিকে থাকতে না পারেন তাহলে সেটা শুধু আমাদের রাজনীতির জন্যই নয়, সমাজের জন্যও অনেক খারাপ নজির হবে। আমি মনে করি, সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। রাষ্ট্র পরিচালনায় সবসময় সবক্ষেত্রে শুধু দাপ্তরিক দক্ষতাকে বিবেচনায় নিলে চলবে না। এই ক্ষেত্রে জনগণের কাছে নেতার গ্রহণযোগ্যতা ও ইমেজের বিষয়টিকেও অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হয়। আর মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবের সাথে তার দল বিএনপি যে আচরণ করছে তাকে এক কথায় আমি বলবো অমানবিক। এ রকম একজন ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিকে বছরের পর বছর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব রেখে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব কোনভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। বরং এটা করে তাকে হেয় ও অপমানিত করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত মির্জা ফখরুলের প্রতি তার দলের এই আচরণ দেশের সাধারণ মানুষ মোটেও পছন্দ করছেন না।”ড. আতাউর রহমানবিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আতাউর রহমান এই প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি যেভাবে চলছে তাতে সৎ, আদর্শবান, সজ্জন ইত্যাদি কথাগুলো খুবই কঠিন এবং দুষ্প্রাপ্য। কেউ যদি এখন বলে রাজনীতিবিদ এবং সৎ তাহলে সেটা একেবারে পুরোপুরি বৈপরীত্য। মূলত কিছু খারাপ আর দুর্নীতিবাজ লোককে পৃষ্ঠপোষকতা করতে গিয়ে আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থাই দুর্বৃত্তায়নে জড়িয়ে গেছে। এই পরিবেশে যারা সৎ, আদর্শবান এবং সজ্জন ব্যক্তি তারা খুব বেশীদিন টিকে থাকতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারণ, যতো কিছুই হোক সৈয়দ আশরাফ ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো মানুষেরা অপশাসন ও দুর্নীতির জোয়ারে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে না। এটা তাদের বিবেকের দংশন। রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব না আসা পর্যন্ত এই অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না।”
Daily Inqilab এর সৌজন্যেইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স
লেবেল
- খবর
- মতামত- বিশ্লেষণ
- বিবৃতি
- রাজনীতি
- প্রেস বিজ্ঞপ্তি
- আন্তর্জাতিক
- প্রচ্ছদ
- আইনশৃঙ্খলা
- শোক সংবাদ
- বিবিধ
- স্মৃতি
- আইন-আদালত
- জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- শিক্ষা
- ডেমোক্রেসি
- ইসলাম
- স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
- অর্থনীতি
- ইসলামী আন্দোলন
- সাহিত্য-সংস্কৃতি
- হাদীসের বাণী
- শীতবস্ত্র বিতরণ
- সভ্যতা
- ইতিহাস
- গল্প
- মিডিয়া
- শোকবাণী
- খেলাধুলা
- জাতীয়
- IIUC News
- চিঠি
- কৃষি
- দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
- প্রবাস
- গবেষণা
- আবিস্কার
- কুরআন
- সম্পাদকীয়
- বাণী
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- সাইবার ক্রাইম
- দারসুল কুরআন
- ব্রেকিং নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন