বেড়েই চলেছে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ভাসমান যৌনকর্মীদের পদচারণা। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, যুবক ও মধ্যম বয়সী থেকে শুরু করে সকল বয়সের সাধারণ মানুষ এসব যৌনকর্মীদের খপ্পরে পড়ে স্বর্বশান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, প্রশাসন অবগত থাকলেও এ ব্যাপারে সামান্যতম পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উপরন্তু এলাকাটিতে সার্বক্ষণিক কতিপয় ডিউটিরত পুলিশ সদস্য সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করতে এসব যৌনকর্মীকে নানাবিধ অবৈধ পন্থায় সহযোগিতা করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, সন্ধা হলেই জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ভাসমান যৌনকর্মীদের পদচারণা চরমভাবে বেড়ে যায়। ইদানিংকালে এসব যৌনকর্মী পতিতা বৃত্তি বাদ দিয়ে ছিনতাইয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। পুলিশ ও তাদের দালালদের সহায়তায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতিনিয়তই তারা ছিনিয়ে নিচ্ছে মোবাইল, ল্যাপটপ ও টাকা পয়সা। জানা যায়, দলবদ্ধভাবে এসব যৌনকর্মী সংসদ ভবন এলাকায় সন্ধার পর থেকেই পায়চারী করার পাশাপাশি খারাপ অঙ্গ-ভঙ্গি করতে থাকে। আর টার্গেট করে পথচারীদেরকে। পছন্দের পথচারী তাদের সামনে দিয়ে যাওয়া মাত্রই তারা তাকে পিছন থেকে ডাক দেয়। ডাকে সারা দেওয়া খরিদ্দারের সাথে তারা তার নিজ বাসায় যেতে চায়। কিন্তু যেসব খরিদ্দার নিজ বাসায় নিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাদেরকে এসব যৌনকর্মী আগে থেকে ঠিক করা ভাড়া বাসায় বা হোটেলে নিয়ে যায়। এরপর যৌন সম্পর্কে না জড়িয়ে তারা খরিদ্দারের কাছে থাকা টাকা-পয়সাসহ যাবতীয় জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু খরিদ্দার দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে তারা রুমের মধ্যে আটকিয়ে রাখে। এরপর ফোন দিয়ে এসব যৌনকর্মী পুলিশ অথবা তাদের দালালদের ডাক দেয়। আশপাশে থাকা দালালরা অতি স্বল্প সময়ে তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছায়। এরপর তাদের সহায়তায় খরিদ্দারকে চরথাপ্পর মেরে তার কাছে থাকা যাবতীয় জিনিসপত্র তারা ছিনিয়ে নেয়। এদিকে যেসব পথচারী এসব যৌনকর্মীদের ডাকে সারা দেয় না তাদেরকে তারা পিছন থেকে ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে পথচারীরা দৌঁড়ানোর চেষ্টা করলে আগে থেকে ওত পেতে থাকা এলাকাটিতে ডিউটিরত কতিপয় পুলিশ সদস্য তাদেরকে ধরে ফেলে। এরপর সংসদ ভবন এলাকার নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ওই পুলিশ সদস্যরা এসব পথচারীর কাছ থেকে টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
মিরপুর-২ নাম্বারের বাসিন্দা কাজী সাজ্জাদুল হক (২৫) কাজ করেন একটি জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকায়। অফিস টাইম রাত এগারোটা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত হওয়ায় প্রায় সময়ই সংসদ ভবনের সামনের রাস্তা দিয়ে অফিসে আসেন। তিনি জানান, কিছু দিন আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংসদ ভবন এলাকার তিনজন যৌনকর্মী পিছন থেকে আমাকে ডাক দেয়। কিন্তু তাদের ডাকে সারা না দিয়ে আমি দ্রুত হাটতে থাকি। এরপর তারাও আমার সাথে সাথে দ্রুত হাটতে থাকে আমাকে ধরার জন্য। তারা আমার কাছাকাছি আসলে আমি দৌঁড় দেই। আমার দৌঁড়ানো দেখে সেখানে ডিউটিতে থাকা এক পুলিশ সদস্য আমাকে ধরে ফেলে। এরপর এলাকাটির পাশেই আমাকে নির্জন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ওই পুলিশ সদস্য। কিন্তু আমি যেতে না চাইলে তিনি জোর করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আমার সাথে ওই পুলিশ সদস্য খুব খারাপ ব্যবহার করে। পরবর্তীতে নিরুপায় হয়ে আমার অফিসের এক বড় ভাইকে ফোন দেই। পরবর্তীতে ওই বড় ভাইয়ের হস্তক্ষেপে আমাকে তিনি ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, আমাকে রক্ষা করার মতো অনেকে আছে জন্য আমি রক্ষা পেয়েছি। কিন্তু যাদের রাজধানীতে রক্ষা করার কেউ নেই তারা অহরহ এসব পুলিশ ও যৌনকর্মীদের খপ্পরে পড়ে স্বর্বশান্ত হচ্ছেন বলে তিনি জানান।
রাজধানী মনিপুরি পাড়ার বাসিন্দা হাসান মাহমুদ (৪৫)। তিনি জানান, কিছু দিন আগে আমি সন্ধার পর
সংসদ ভবন এলাকায় হাটতে ছিলাম। এক
যৌনকর্মী আমাকে ডাক দিলে আমি সাড়া দেই। তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হই যৌন কাজে। পরবর্তীতে ওই যৌনকর্মী আমাকে ফার্মগেটের একটি হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়া মাত্রই আগে থেকেই ঠিক করা তার দালালরা আমাকে ধরে ফেলে। এরপর আমার কাছে থাকা ১৫ হাজার টাকা দামের সামসাং মোবাইল সেট ও
নগদ ৭
হাজার টাকা তারা ছিনিয়ে নেয়। আমি উত্তেজিত হওয়ার চেষ্টা করলে ওই যৌনকর্মীর এক দালাল আমাকে চর
মেরে ধাক্কা দিয়ে হোটেল থেকে বের করে দেয়।
শেরেবাংলা নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিজি বিশ্বাস আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই চেষ্টা করছি সংসদ ভবন এলাকা যৌনকর্মীমুক্ত রাখার। সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে অনেক ভাসমান যৌনকর্মীকে এলাকাটি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। যেহেতু আবার তারা এলাকাটিতে ভিড় জমাচ্ছে তাই পুনরায় অভিযান চালাতে হবে বলে তিনি জানান।আস, বিডিটুডে.নেট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন