রাজধানীর যাত্রাবাড়িতে পুলিশের এসআই’র নেতৃত্বে বাসে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ওই ডাকাত চক্র নারায়নগঞ্জগামী বিআরটিসি’র একটি বাস থামিয়ে এক যাত্রীর কাছ থেকে ১৯ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। ঘটনা জানাজানির পর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (পুর্ব) অভিযুক্ত ওই এসআই রফিকুল ও তার মাইক্রোবাস চালক লুৎফর রহমানকে গ্রেফতার করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অপর চারজন ও টাকা উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গত শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় যাত্রাবাড়ি শনির আখরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারকৃত এসআই রফিকুল রাজধানীর কাফরুল থানায় দায়িত্বরত ছিলেন। এ ঘটনায় রাতেই যাত্রাবাড়ি থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন ভূক্তভোগী যাত্রী মোঃ নাজমুল।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত শনিবার সকালে পুলিশের টহলরত একটি মাইক্রোবাস যাত্রাবাড়ি শনির আখড়া এলাকায় ঢাকা থেকে নারায়নগঞ্জগামী ( ঢাকা মেট্টো চ- ১১ ০৮৯৪) বিআরটিসি বাসের গতিরোধ করে। ওই মাইক্রোবাসে এস আই রফিকুল ইসলাম পুলিশের পোষাক পরা ছিলেন। তার সাথে সিভিল ড্রেসে ছিলো আরো ৪/৫ জন। এসআই রফিকুল বাসের চালককে বলেন, এই বাসে আসামী রয়েছে। আমরা তাকে ধরতে এসেছি। এই বলে তারা সবাই হুড়মুড় করে দ্রুত বাসে উঠে পড়েন। কয়েকজন যাত্রীকে নামে মাত্র চেক করে সোজা চলে যান বাসের যাত্রী ব্যবসায়ী নাজমুলের কাছে। তারা নাজমুলের হাতে থাকে একটি ব্যাগে টেনে নেয়ার চেষ্টা করে। নাজমুল বাঁধা দিলেও ১৯ লাখ টাকা ভর্তি ওই ব্যগটি ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত বাস থেকে নেমে যায়। এসময় বাসের যাত্রীরা বুঝতে পারেন যে এটা আসামী ধরা নয় ডাকাতি। পুলিশ বাস থেকে নামার সাথে সাথে নাজমুল চিৎকার শুরু করেন। এসময় বাসের যাত্রীরা ওই ডাকাত পুলিশদের ধাওয়া করে। কিছু দূর গিয়েই তারা মাইক্রোবাসটিকে ধরতে সক্ষম হয় । তারা মাইক্রোচালক লৎুফরকে আটকে ফেললেও বাকীদের ধরতে পারেনি। পরে ওই চালককে যাত্রবাড়ি থানায় হস্তান্তর করা হয়। ঘটনার খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের দল লুৎফরকে গ্রেফতার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে লুৎফর ঘটনার মূল হোতা হিসেবে কাফরুল থানার এস আই রফিকের নাম প্রকাশ করে।
সূত্র আরো জানায়, রাতে এস আই রফিককে কাফরুল থানা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। তাকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অকপটে টাকা লুটের কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরদের (৪ জন ) নাম প্রকাশ করে। তবে ওই চারজন পুলিশ সদস্য নয়। এ ঘটনায় রাতে যাত্রবাড়ি থানায় একটি ডাকাতি মামলা হয়। ঘটনায় প্রথমে বাইরে জানাজানি না হলেও পুলিশ বিভাগে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। পোশাক পরে পেশাদার অপরাধীদের নিয়ে বাস আটকে এ রকম ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের উধ্র্তন মহলে শুরু হয় নানা গুঞ্জন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সম্প্রতি পুলিশ ডিবি ও র্যাব পরিচয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে অপহরন, লুট, ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে বেশ কিছু অপরাধের ঘটনায় পুলিশ বিভাগকে ভাবিয়ে তুলেছে। এস আই রফিকের এসব অপকর্মের ফলে ভূয়া পুলিশ পরিচয়ে অপহরন ডাকাতি, ছিনতাইসহ অপরাধ করা সহজ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে অপরাধী চক্রের।
জানতে চাইলে গোয়েন্দা বিভাগের ডিসি (পূর্ব) মাহবুবর রহমান জানান, কাফরুল থানার এস আই রফিকুলের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী নাজমুলের ১৯ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় যাত্রবাড়ি থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের হয়। আগ থেকে গ্রেফতার থাকা মাইক্রোচালক লুৎফরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রাতে ঘটনার মূল হোতা কাফরুল থানার এস আই রফিককে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে থেকে জড়িত আরো ৪ জনের নাম ও বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা কেউ পুলিশের লোক নয় বলে জানিয়েছে এস আই রফিক। লুন্ঠিত টাকা ও জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। তিনি আরো জানান, ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া এস আই রফিকুল ইসলাম ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোচালক লুফরকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। তিনি আরো জানান, কি কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছে এস আই রফিকুল তার কি উদ্দ্যেশ ছিলো তা সবই জানতে চাওয়া হবে তার কাছে।
দৈনিক নয়া দিগন্তের সৌজন্যে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন