প্রচণ্ড গরমে ঘামের ফলে অনেক সময় শরীর হয়ে পড়ে পানিশূন্য। পিপাসায় বুক ফেটে যায়। অনেকে তখন কোমল পানীয় বেছে নেন। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী হচ্ছে ডাবের পানি। স্বাস্থ্যের কথা মাথায় থাকলে পিপাসা নিবারণ আর শরীরকে সতেজ রাখতে ডাবের পানির অতুলীয়। ডাবের পানি শুধু পানীয় হিসেবেই সীমাবদ্ধ নয়, এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও নানারকম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা অনেক জটিল রোগ নিরাময় হিসেবেও কাজ করে। ডাবের পানির উপকারিতা ডাবের পানি আমাদের তৃষ্ণা মিটায়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। ডাবের পানি কিডনির পাথর সৃষ্টি রোধ করে। বিশেষ করে ডায়রিয়া, আলসার, গ্যাসটাটাইটিস বা অ্যাসিডিটি প্রভৃতি প্রতিরোধ করে। ডাবের পানিতে অ্যান্টিসেপটিক গুণাগুণ থাকাতে কাটা-ছেঁড়া জায়গায় ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মুখের ক্ষত যেমন- ব্রণ, মেছতা ও ক্ষতস্থান ডাবের পানি দিয়ে ধৌত করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, রিবোফ্লেভিন ও কার্বোহাইড্রেট আছে। ডাবের পানিতে বিশেষ করে স্যালাইন গুণাগুণ থাকে। তাই অধিক ঘাম থেকে শরীরের ডিহাইড্রেশন রক্ষার জন্য ডাবের পানি পান করা হয়। ডাবের পানি ৯৯ শতাংশ চর্বি বা কলেস্টেরলমুক্ত ও বিশুদ্ধ। নারকেলের ভিতরের শাঁসের চেয়ে পানি অনেক বেশি পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর। ডাবের পানিতে মৃদু জোলাপের গুণাগুণ বিদ্যমান থাকায় শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাই নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে মানুষের শরীর সুস্থসহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। দেহে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব হলে এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ হলে ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের ঘনঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে দেহে প্রচুর পানি এবং খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়। ডাবের পানি এই ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ করতে পারে। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং কিডনি-সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ হয়। ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে আয়রনও রয়েছে। রক্ত তৈরি করার জন্য আয়রন হলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এতে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ হবে বেশি শক্তিশালী, ফলে কর্মশক্তিও বাড়বে। দেহে আয়রনের পরিমাণ ঠিক থাকলে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ। ডাবের পানিতে খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতিও উচ্চমাত্রায়। এসব খনিজ লবণ দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত। অনেকের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। মাড়ি কালচে লাল হয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেবে খনিজ লবণ। এই গরমে সবারই দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে ত্বকে ফুটে ওঠে লালচে কালো ভাব। ডাবের পানি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে রাখে ঠাণ্ডা। তারুণ্য ধরে রাখতে এর অবদান অপরিহার্য। এটি সৌন্দর্যচর্চার প্রাকৃতিক মাধ্যম ও চর্বিবিহীন পানীয়। মুখে জলবসন্তের দাগসহ বিভিন্ন ছোট ছোট দাগের জন্য সকাল বেলা ডাবের পানি দিলে দাগ মুছে এবং মুখের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ে। গ্লুকোজ এবং স্যালাইন হিসেবেও ডাবের পানি ব্যবহৃত হয়। পুষ্টি গুণ প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে জলীয় অংশ ৯৫ গ্রাম, মোট খনিজ পদার্থ ০.৩ গ্রাম, আমিষ ২.৩ গ্রাম, শর্করা ২.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০১ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ১-০.১১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম ও খাদ্যশক্তি ২৩ কিলোক্যালরি।
আমার বাংলাদেশ অনলাইন ডটকম এর সৌজন্যে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন