ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০১৫

"একটি জাতির আত্মহত্যার মহড়া"......!!! মিনার রশিদ


বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে বলে সংসদ ও জাতিকে অবগত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার কথার সূত্র ধরে তথ্যমন্ত্রী ইনু আরো সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন, ঈদের পরপরই এই বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কাজটি শুরু করা হবে। আমাদের সংবিধানের যে অলিগলি বা চোরাগলি এবং আমাদের সার্বিক নীরবতা আজ শেখ হাসিনা ও ইনুকে এই মহা শক্তিশালী করেছে তা আলোচনা করা জরুরি। 

২০২১ সাল খায়েশান্তরে ২০৪১ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে সমস্ত পথের কাঁটা সরাতে এ ধরনের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের কোনো বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে শুধু এ ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠনেই হাসিনা-ইনুরা সক্ষম নন, তার পটভূমি রচনার সব উপায় এবং কলাকৌশলও তার পূর্ণ এখতিয়ারে রয়েছে। চাহিবামাত্রই অনুগত প্রশাসন, পুলিশ মিডিয়া, বুদ্ধিজীবীর আড়ালে সংস্কৃতি ও বিনোদন জগৎ এবং নিজের বিশাল কর্মীবাহিনী এই পটভূমি রচনায় নিজ নিজ সার্ভিসটুকু দিতে প্রস্তুত রয়েছে। ফলে তার বিরুদ্ধে যেকোনো আন্দোলনকে হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিতে এখন আর মাশাআল্লাহ কোনো সময় লাগবে না। পৃথিবীর বড় বড় স্বৈরাচার যে ধরনের নিষ্ঠুর উপায়ে বিরোধী শক্তিকে দমন করেছে, শেখ হাসিনার কৌশল তা থেকে ভিন্ন নয়।
বিষয়গুলো অনেক আগে থেকেই আমরা বলতে চেষ্টা করেছি। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই হুমকি দেয়ায় ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটুকু আরেকটু খোলাসা হয়ে পড়েছে। স্পষ্ট হয়েছে যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সৃষ্ট এই ট্রাইব্যুনালই শেষ ট্রাইব্যুনাল নয়, এটা শুরু মাত্র। 
১৯৭১ সালে যে বাঙালি মেজর সাহেব সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পাকবাহিনীকে কমান্ড করেছেন, সেই প্রাণ কোম্পানির মালিক তুরিন আফরোজদের তুড়ি মেরে সহি-সালামতেই নিজের জন্য স্বাভাবিক মৃত্যুকে নিশ্চিত করে ফেলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একখানা শোকবাণীও তার থালার মতো বড় কপালে জুটে গেছে। কাজেই অপার রহস্যটি বুঝতে বড় দার্শনিক বা বুদ্ধিজীবী হওয়ার দরকার নেই।
কিন্তু সমস্যা হলো কেউ মুখফুটে বলতে পারে না, বলে না। কাজটি শুরু করা হয়েছে মহান স্বাধীনতার আবেগমিশ্রিত যুদ্ধাপরাধের বিচারটি দিয়ে। এটা নিয়ে সামান্য উসখুস করলে ‘অন্য’ অর্থ হয়ে যেতে পারে। সব কিছু বুঝেও, সব কিছু জেনেও দেশের বিবেক বলে ঘোষিতরা চুপ মেরে রয়েছেন। ফলে সংবিধান ও দেশের বিচারব্যবস্থার যতটুকু ক্ষতি করার তা করা সম্পন্ন হয়ে গেছে। দেশের মানুষকে স্বৈরাচারের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একমাত্র যে নেত্রী রয়েছেন, তিনি নিজেও আজ অরক্ষিত হয়ে পড়েছেন। 

কাজেই এ কাজটি (খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন) এখন শেখ হাসিনার জন্য আসলেই পানিভাত হয়ে পড়েছে। সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে এমন অবস্থায় নেয়া হয়েছে যে, এখন তা ১৬ কোটি মানুষকে রক্ষা করার চেয়ে একজন ব্যক্তির মর্জি, খায়েশ বা বাসনা পূরণের হাতিয়ার হয়ে পড়েছে। এর ভয়াবহ পরিণতি এখনো আমাদের অনেকের উপলব্ধিতে আসছে না, বরং এখনো শৃগালের মতো ভাবছি, গাছের আগায় পানি উঠলে দেখি কাক (রাজাকার) কী করে থাকে? 

বিবেক ও সব মানবিক প্রজ্ঞা আজ আত্মবিধ্বংসী চেতনা, সুবিধাবাদ ও অন্ধ আক্রোশের কাছে হার মেনেছে। সংবিধানের মূল স্পিরিটকে অবজ্ঞা করার যে প্রবণতা নতুন করে শুরু হয়েছে, তা ১৬ কোটি মানুষকে যারপরনাই নিরাপত্তাহীন ও অরক্ষিত করে তুলেছে। এই ধ্বংসাত্মক প্রবণতাটি যদি আমাদের সার্বিক সচেতনতা ও প্রজ্ঞায় প্রতিরোধ করতে না পারি, তবে আমাদের জন্য সামনে ভয়াবহ দুর্যোগ অপেক্ষা করে আছে।
আমাদের সংবিধানে কিছু অনুচ্ছেদ আছে, যেগুলোকে বলা যায় সংবিধানের চড়ষব ঝঃধৎ বা ধ্রুবতারা। কারো জন্য স্থান বা জায়গা পরিবর্তন করবে না। এগুলোই আসলে ১৬ কোটি মানুষের রক্ষাকবজ। নিজের সুবিধামতো সংবিধানকে কেউ যেন ব্যবহার না করতে পারে সেজন্য এই ধারাগুলো ধ্রুবতারার মতো সব সময় একই জায়গা থেকে আলো বিতরণ করে যাচ্ছে। তবে আমাদের সীমাহীন অজ্ঞতা, অমার্জনীয় নীরবতা ও অজানা ভীতি সেই আলোটির মাঝখানে একটি মেঘ তৈরি করে দিয়েছে। আর এ কারণেই আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে এই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। 
প্রিয় পাঠক, আমাদের সংবিধানের সেই অমূল্য রতœগুলোর দিকে একবার চোখ বোলান। তাহলেই বুঝতে পারবেন কেন এই ধারাগুলোকে সংবিধানের পোল স্টার বা ধ্রুবতারা বলা হচ্ছে।
সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের দফা (২) তেমনি একটি ধ্রুবতারা। এখানে বর্ণিত আছে : 
‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামাঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।’
তেমনিভাবে অনুচ্ছেদ ৩১-এ উল্লেখ আছে :
‘আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষত আইন অনুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন,স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।’ 

এ শব্দগুলো আসলেই সংবিধানের প্রাণ। এগুলোর সাথে যদি, কিন্তু, যেহেতু, সেহেতু ইত্যাদি যোগ করা যাবে না। অন্য কোনো দফা বা ধারা দিয়ে এই প্রাণের স্পন্দনটি নষ্ট করা যাবে না। এই রক্ষাকবজের জন্য আজ যেমন শেখ হাসিনা বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে নিজের খায়েশমতো ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারেন না তেমনি কোনো রাজনৈতিক পালাবদলে বেগম খালেদা জিয়াও ভবিষ্যতে একই ধরনের কাজ করতে পারবেন না। 
অত্যন্ত পরিতাপের সাথে বলতে হয়, সাংবিধানিক এই রক্ষাকবজগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। মূলত যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতো একটি মহৎ কাজ করতে গিয়েই সাংবিধানিক এই রক্ষাকবজগুলোকে আরো বেশি করে অসার বা অকেজো করে ফেলা হয়েছে। যে খেলাটি ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ (মূল যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদের অক্সিলারি ফোর্সদের বিচার করা হচ্ছে) নিয়ে শুরু হয়েছে, অচিরেই তা অন্যদের নিয়ে শুরু হবে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের হুমকি তারই অংশ। কাজেই বাবা মারা গেছে সেটা নিয়ে তেমন দুঃখ নেই। টেনশনটি হলো যম যে বাড়ি চিনে গেছে।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এর দফা ২-এর ওপর ভিত্তি করেই সংবিধানের পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম সংশোধনী বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। নির্মোহ দৃষ্টিতে চিন্তা করলে যে যুক্তিতে পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম সংশোধনী বাতিল হয়েছে, সেই একই যুক্তিতে ৪৭ (৩) ও ৪৭ক-এর (১) ও (২) দফা বাতিল (ঠড়রফ) হয়ে যায়। আকাশের ধ্রুবতারার মতো সংবিধানের ৭(২) ও ৩১ অনুচ্ছেদ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য জায়গা পরিবর্তন করবে না। কারণ, এ দফাগুলোর কারণে যারা বা যাদের নিকটপরিজন সুবিচার পায়নি বলে মনে করছে (জুডিশিয়াল কিলিং বা সাংবিধানিক কিলিং গণ্য করছে) তারা ভবিষ্যতে কোনো আদালতের শরণাপন্ন হলে ইতোমধ্যে সৃষ্ট রায়ের নমুনা (অহধিৎ ঐড়ংংধরহ ঠং ইধহমষধফবংয ৪১ উখজ (অউ)) এবং উত্থাপিত এ প্রশ্নগুলো এড়ানো কঠিন হবে। কারণ, এ সরকারই শেষ সরকার নয় এবং এ আদালতই শেষ আদালত নয়। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছেন, তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি যে সব কিছু একদিন এভাবে পাল্টে যেতে পারে। ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে আমরা কেউ শিক্ষা নিই না। এ দেশের মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, কোনো একটি দল বা গোষ্ঠীকে আজীবনের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
আরো একটি বিষয় সাংবিধানিক ও আইনগত প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে, আইন মন্ত্রণালয়ের ২৫ মার্চ ২০১০ এবং ২২ মার্চ ২০১২ সালে প্রকাশিত দু’টি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও অন্য বিচারপতিদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ওই নিয়োগের মাধ্যমেও প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণœ করা হয়েছে। নজর দিন সংবিধানের ১০৭ অনুচ্ছেদের দফা (৩)-এ। সেখানে স্পষ্ট বর্ণিত আছেÑ ‘এই অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত বিধিসমূহ সাপেক্ষে কোন্ কোন্ বিচারক লইয়া কোন্ বিভাগের কোন্ বেঞ্চ গঠিত হইবে এবং কোন্ কোন্ বিচারক কোন্ উদ্দেশ্যে আসন গ্রহণ করিবেন, তাহা প্রধান বিচারপতি নির্ধারণ করিবেন।’ 

এবং
৯৪ অনুচ্ছেদের দফা (৩) :
‘প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকগণ কেবল উক্ত বিভাগে এবং অন্যান্য বিচারক কেবল হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করিবেন।’

আইসিটির এই দুর্বলতাগুলো নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও মানবাধিকার সংস্থা তাদের অস্বস্তি প্রকাশ করলেও সরকার তাতে কোনোরূপ কান দেয়নি। 
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে ৪৭(৩) ও ৪৭ক অনুচ্ছেদের ১ ও ২ দফাটি তুলে ধরা হলো। 
৪৭ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় বর্ণিত আছে, ‘এই সংবিধানে যাহা কিছুই বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্যে কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দিকে আটক, ফৌজদারিতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান-সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনো বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।’

অনুচ্ছেদ ৪৭ক-এর ১ দফায় বর্ণিত : ‘যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের অধীন নিশ্চয়কৃত অধিকারসমূহ প্রযোজ্য হবে না।’
অনুচ্ছেদ ৪৭ক-এর ২ দফায় বর্ণিত : ‘এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) ধারায় কোন আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবে না।’
এখন মনে হচ্ছে, যে ধারাগুলো দিয়ে ১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়েছে, সেই ৪৭ (৩), ৪৭ক-এর (১) ও (২)-এর অনুরূপ কোনো খড়গ বেগম জিয়া এবং তার দলের অন্য নেতাদের ওপর প্রয়োগ করা হবে। এই সিলসিলা যদি শুরু হয়ে যায় তবে এই ভূখণ্ডে কেয়ামত পর্যন্ত আর কোনো দিন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। প্রতিটি দল চাইবে তার বিরোধী পক্ষের ওপর ৪৭(৩) এবং ৪৭ক-এর (১) ও (২) প্রয়োগ করতে। মনে হচ্ছে, জাতি হিসেবে আমরা এক আত্মহত্যার মহড়া শুরু করে দিয়েছি। 
কোনো দল পারবে না অন্য কোনো জনসম্পৃক্ত দলকেই সমূলে বিনাশ করতে। এ বিষয়টি যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করব ততই আমাদের মঙ্গল হবে। এ দেশে সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকতে হবে।
ওপরের এসব সাংবিধানিক ও আইনের বাইরেও কিছু কথা রয়েছে। মানুষের জন্যই আইন, আইনের জন্য মানুষ নয়। নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে সমগ্র পৃথিবী মাতোয়ারা। কিন্তু সেই নেলসন ম্যান্ডেলার অনেক আগেই প্রথমে বঙ্গবন্ধু ও পরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া ক্ষমার বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু ক্ষমার মূল কাজটি করে গেছেন এবং পরবর্তীকালে এর ফিনিশিং টেনেছেন শহীদ জিয়া। ‘বাঙালি ক্ষমা করতে জানে’ বলে বড়গলায় বড়াই করে গেছেন। সবচেয়ে বড় যুদ্ধাপরাধী ভুট্টোর সাথে গলাগলি করে বিষয়টির সমাপ্তি টানতে চেয়েছেন। এ দু’জনই পরবর্তীকালে নিহত হয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকার কর্তৃক নিহত হননি।

এ ধরনের যুক্তি দেখালে অনেকেই পাল্টা প্রশ্ন করেন, তিনি সবাইকে ক্ষমা করেননি। যারা সরাসরি হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের মতো কাজ করেছে, বঙ্গবন্ধু সেসব অপরাধীকে ক্ষমা করে যাননি। যারা এসব অপরাধ করেছিল, অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে ভিক্টিমরা তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে। মজার ব্যাপার হলো, ১৯৭৩ সালের কোলাবরেটর বা দালাল আইনে যে ২৮ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, আজকের অভিযুক্তদের (জামায়াত ও বিএনপি থেকে অভিযুক্ত) একজনও সেই তালিকায় ছিলেন না বলে জানিয়েছেন তখনকার চিফ প্রসিকিউটর খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার এই দাবিকে কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি। ডিজিটাল এই যুগে বিশ্ববাসীকে অন্ধকারে রাখার সুযোগ নেই। সরকার যাকে বহির্বিশ্বের চাপ বলছে তা মূলত আন্তর্জাতিক মহলের যথাযথ উদ্বেগ। 

মাইকেল ক্রস নামক এক ব্রিটিশ নিউজ এডিটর লিখেছেন, Beyond the obvious point that any miscarriage of justice involving the death penalty should be a matter of concern, the Dhaka tribunal raises two issues. One is the abuse of the term ÔinternationalÕ which should be reserved for war crimes proceedings under genuinely international jurisdiction. The other is the potential for political over-spill. Jamaat-e-Islami is a political force in some parts of UK, and while I have little sympathy with its members I would not like them to be handed a victim card to play.
অর্থাৎ স্পষ্টতই ন্যায়বিচারের কোনোরূপ স্খলন হেতু যদি কোনো মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, তবে তা আন্তর্জাতিক মহলের জন্য দারুণ উদ্বেগের কারণ হবে। ঢাকার ট্রাইব্যুনালটি দু’টি প্রশ্নের উদ্রেক করে। প্রথমটি হলো আন্তর্জাতিক শব্দটির অপব্যবহার। কারণ, এ পরিভাষাটি শুধু আন্তর্জাতিক জুরিসডিকশনের তদারকিতে অনুষ্ঠিত অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জন্যই সংরক্ষিত থাকা উচিত। অন্যটি হলো সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাজ্যের কোনো কোনো অংশে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এদের সদস্যদের প্রতি আমার খুব সামান্যই সহানুভূতি রয়েছে, কিন্তু এরা কারো হাতে অবিচারের শিকার হোক তা আমি চাই না। 
মাইকেল ক্রস তার সেই নিবন্ধে নুরেমবার্গ বিচারের প্রধান প্রসিকিউটর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারপতি রবার্ট জ্যাকসনের একটি উদ্ধৃতি টেনেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের আগে আগে রবার্ট জ্যাকসন বলেছিলেন, It would be better to shoot Nazi leaders out of hand than pervert the process of law by setting up a sham court. তিনি আরো বলেছেন, You must put no man on trial under the forms of judicial proceedings if you are not willing to see him freed if not proven guilty.

অর্থাৎ ‘প্রহসনের আদালতে বিচারের পুরো প্রক্রিয়াটিকে বিকৃত বা কলঙ্কিত করার চেয়ে অভিযুক্তদের কোনো বিচার ছাড়া গুলি করে মেরে ফেলাই উত্তম।’ আর ‘যদি অপরাধ প্রমাণিত না হলে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকো, তবে কাউকে বিচারের আওতায় এনো না।’ 

আজ পৃথিবীজুড়ে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত প্রবল হচ্ছে। যে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের মতো চূড়ান্ত সাজা দেয়া হচ্ছে তার খুঁটিনাটি প্রতিটি বিষয়ে বিশ্ববাসীর মনোযোগ পড়ছে। 
এই আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডের দু’টি রায় ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। কয়েকজন কারাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। কাজেই আমাদের পক্ষে এর মধ্যবর্তী একটি ফলাফল অনুধাবন করা সহজ হয়েছে।
এখন কয়েকটি প্রশ্ন, 
১) এই দু’জনকে ফাঁসি দেয়ার ফলে কি সমাজে আইনের শাসন (যা এই বিচারের মূল উদ্দেশ্য বলে প্রচার করা হয়েছে) আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে?

২) নারীদের ওপর যে সহিংসতা বা ধর্ষণ এখনো অব্যাহত রয়েছে, অভিযুক্ত বাকি কয়েকজনকে ফাঁসি দিলে কি সমাজ থেকে ধর্ষণ কর্মটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে কিংবা কমে যাবে? 
৩) এদের কয়েকজনকে ফাঁসি দিলে কি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে যাবে কিংবা শেয়ারবাজারের লুণ্ঠিত টাকা ফেরত পাওয়া যাবে? 
৪) এদের গলায় দড়ি ঝোলালে কি সমাজে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ঘুষ, হত্যা কমে যাবে? 
ওপরের বেনিফিটগুলো না এলেও একক জাতিসত্তার চমৎকার এ রাষ্ট্রটি স্থায়ীভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ছে। আমার বন্ধুরা যারা দেশে কিছু সহায়সম্পদ কিনেছিল এবং একটা ক্ষীণ আশা ছিল যে একদিন এই দেশে ফিরে আসবে, তারা সেসব সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছে। দেশে মোটামুটি ভালো চাকরি থাকার পরও বিদেশে চলে যাওয়ার পাঁয়তারা অনেকেই করছেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত এই দেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখতে পেরেছি, তা আজ হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।

আসুন এসবের পেছনে মূল কারণটি খুঁজে বের করি। গুটিকয় মানুষের ‘হাড় কড়মড়ে’ রোগ (সতিনের ছেলেকে কতলের নিমিত্তে বিছানার পাটির নিচে কঞ্চি রেখে রানীর সেই রোগের মতো) সারানোর জন্য পুরো জাতিকে এ অবস্থায় ঠেলে দেয়া হয়েছে। সামনের হানাহানিটুকু আরো স্পষ্ট হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থা থেকে এখনো যারা দেশটিকে উদ্ধার করতে পারেন তাদের কাছে একান্ত নিবেদন, এই দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। কয়েকজন মানুষকে কতলের উদ্দেশ্যে আমাদের সব মানবিক প্রজ্ঞা ও বিবেক যেন কতল না করে ফেলি। এরা যদি জুলুমের শিকার হন, তবে এদের আত্মার অভিশাপ পড়বে সমগ্র জাতির ওপর। 
আমাদের আজকের অবস্থা নিঃসন্দেহে আমাদের সম্মিলিত পাপের ফসল। ১৬ কোটি মানুষ ও তাদের অনাগত বংশধরদের রক্ষাকবজ সংবিধানের ধ্রুবতারাগুলোর সম্মুখের মেঘগুলো সরিয়ে ফেলুন। তা না হলে ইতিহাস আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না বা ছাড়বে না। কোনো বিশেষ ব্যক্তির জন্য কাজ করার দরকার নেই। আমাদের সংবিধানের পোল স্টার বা ধ্রুবতারাগুলোকে শুধু আপন মহিমায় জ্বলতে দিন। পুরো জাতি যে আত্মহত্যার মহড়ায় শামিল হয়েছে, তা থেকে এ জাতিকে উদ্ধার করুন।(মিনার রশিদ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন