নাগরিকদের অজান্তে তাদের মোবাইল এবং কম্পিউটারের তথ্য চুরি করার বিতর্কিত প্রযুক্তি কিনছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আর এই প্রযুক্তি যে দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে তার একটি ইসরাইলি কোম্পানি। হ্যাকিংয়ের সরঞ্জামদির কার্যক্ষমতা হাতেকলমে দেখিয়ে দিতে ইতোমধ্য ‘নাইস সিস্টেম’ নামের ইসরাইলি কোম্পানি এবং ‘হ্যাকিং টিম’ নামের ইতালীয় কোম্পানির প্রতিনিধিরা ঢাকা সফর করে গেছেন।
বিশ্বখ্যাত দ্য ইন্টারসেপ্ট ম্যগাজিন বুধবার তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এসব তথ্য জানিয়েছে। এই প্রযুক্তির ক্রেতা র্যাবকে বুঝাতে ইন্টারসেপ্টের রিপোর্টের শিরোনামে ‘ডেথ স্কোয়াড’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। ভেতরেও র্যাবের পরিচয়ে বলা হয়- “(বাংলাদেশের) একটি আধা সামরিক বর্বর বাহিনী যেটি বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের জন্য সুপরিচিত।”
সম্প্রতি একটি হ্যাকিং গ্রুপ উল্লিখিত দুটি কোম্পানির বেশ কিছু সংখ্যক ইমেইল হ্যাক করে। এসব ইমেইল পর্যালোচনা করে দ্য ইন্টারসেপ্ট তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকার ও সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক অবৈধ হ্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহারের তথ্য উঠে এসেছে।
এই প্রযুক্তি ইন্টারনেটের মাধ্যমে এবং অন্যান্য উপায়ে ব্যক্তির স্মার্টফোন ও কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়িয়ে যাবতীয় তথ্য এবং কথোপকথন রেকর্ড করে নিয়ে যেতে সক্ষম। বিভিন্ন দেশের সরকার অবৈধভাবে তাদের নাগরিকদের ওপর নজরদারি করতে এটি ব্যবহার করছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লংঘন এবং অযথা হয়রানির অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ধরনের হ্যাকিং কার্যক্রমের কড়া সমালোচনা করে আসছে। কয়েকটি দেশে মানবাধিকার কর্মী এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চাপের মুখে রাখতে কর্তৃত্বপরায়ন সরকার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে হ্যাকিং টিম এবং নাইস সিস্টেমস গোপনে এই প্রযুক্তি বিক্রি করে আসলেও কখনো তা স্বীকার করেনি। এখন প্রমাণ হিসেবে তাদের গোপনীয় হাজার হাজার ইমেইল প্রকাশ হয়ে পড়ার পরও এই অস্বীকার নীতিই অবলম্বন করছে কোম্পানিগুলো।
ইন্টারসেপ্টের প্রতিবদনে ‘হ্যাকিং টিম’ কোম্পানির এক প্রতিনিধির ইমেইল থেকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “গত মাসে বাংলাদেশ থেকে হ্যাকিং টিমের একজন মধ্যস্থাকারী জানিয়েছেন যে, তিনি র্যাবের কাছে বিক্রি সংক্রান্ত চুক্তির কাগজপত্র হস্তান্তর করেছেন এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যবহার করে আমাদের অফারটি গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন।”
র্যাবের কর্তাদেরকে এই হ্যাকিং প্রযুক্তির কার্যক্ষমতার নমুনা বাস্তবে দেখাতে ওই প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
প্রযুক্তি বিক্রেতা কোম্পানির পরিচয় সম্পর্কে ইন্টারসেপ্ট জানায়, মূল কোম্পানি ‘হ্যাকিং টিম’-এর অন্যতম করপোরেট সহযোগী হচ্ছে নাইস সিস্টেমস। ইসরাইলি সেনাবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে নাইস সিস্টেমস-এর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এই কোম্পানির সিইও বারাক ইলাম ইসরাইলি সেনাবাহিনীর স্পেশাল গোয়েন্দা ইউনিট ‘সিগনাস ইন্টিলিজেন্স কোর’-এর সাবেক কর্মকর্তা।
(সূত্র- LonDon Bangla news)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন