সামছুল আরেফীন : আবদুল কাদের মোল্লার প্রথম শাহাদাত বার্ষিকী আজ। গত বছরের এই দিনে রাত ১০টা ১ মিনিটে রশিতে ঝুলিয়ে তার ফাঁসি কার্যকর করে সরকার। জাতিসংঘের মহাসচিব থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকার সংগঠনের অনুরোধ উপেক্ষা করেই ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়। এক্ষেত্রে মৌলিক মানবাধিকারের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে বলে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। নানা কারণে শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা বিশ্বজুড়ে একটি আলোচিত এবং ঘটনাবহুল মামলা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলাটি। এ মামলাকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনার কারণে বারবার বিশ্ব মিডিয়ার শিরোনাম হয় মামলাটি। আবদুল কাদের মোল্লাকে ‘সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে’ উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই দিনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
জন্ম ও শৈশব: আবদুল কাদের মোল্লা একটি নাম, একটি বিস্ময়কর প্রতিভা ও একটি জীবন্ত ইতিহাস। আবদুল কাদের মোল্লা ১৯৪৮ সালের ২ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলাস্থ সদরপুর উপজেলার চর বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের জরিপের ডাংগি গ্রামে নিজ মাতুলালয়ে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সানাউল্লাহ মোল্লা ও মাতার নাম বাহেরুন্নেসা বেগম। আবদুল কাদের মোল্লা ছিলেন নয় ভাইবোনের মাঝে ৪র্থ।
তিনি মেধাবী একজন ছাত্র হিসেবে ১৯৫৯ ও ১৯৬১ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনিস্টিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণীতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হন। ফরিদপুরের বিখ্যাত রাজেন্দ্র কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ১৯৬৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৮ সালে তিনি একই কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। কিন্তু প্রবল আর্থিক সংকটের কারণে এরপর তাকে শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করতে হয়। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া হয়নি তখন আর। ফরিদপুরের এস এস একাডেমি নামক একটি স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেন কিছু কাল।
১৯৬৯ সালের পদার্থ বিজ্ঞানে এমএসসি করার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। মিষ্টভাষী ও আকর্ষণীয় চারিত্রিক মাধুর্যের অধিকারী হওয়ায় আব্দুল কাদের মোল্লা হয়ে উঠেছিলেন তার সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সবার প্রিয়পাত্র। মুক্তিযুদ্ধের কারণে ১৯৭১ সালে মাস্টার্স পরীক্ষা না হওয়ায় তিনি বাড়ি চলে যান।
২৩ মার্চ, ১৯৭১-এ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জেসিও মফিজুর রহমানের ডাকে এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং-এ অংশগ্রহণ করেন শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা। ১ মে তারিখে হানাদার বাহিনী ফরিদপুরে পৌঁছার দিন পর্যন্ত তার এ ট্রেনিং অব্যাহত থাকে।
পরবর্তীতে তিনি ১৯৭২ এর নবেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। যুদ্ধের সময় প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা না হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই আরো অনেকের মত আবদুল কাদের মোল্লার লেখাপড়াতেও ছন্দ পতন ঘটে। ১৯৭৪ সালে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই ই আর বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে তিনি শিক্ষা প্রশাসনের ডিপ্লোমায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রথমশ্রেণী তে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে আবার ১৯৭৭ সালে শিক্ষা প্রশাসন থেকে মাস্টার্স ডিগ্রীতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন।
আবদুল কাদের মোল্লা ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে যোগ দান করেন। এম,এড পরীক্ষার রেজাল্টের পরে তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন এবং পরে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এ সংস্কৃতি কর্মকর্তা হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে রিসার্স স্কলার হিসাবে বাংলাদেশ ইসলামী সেন্টারে যোগ দেন।
জনাব মোল্লা বেগম সানোয়ার জাহানের সাথে ১৯৭৭ সালের ৮ অক্টোবর তারিখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দুই পুত্র ও চার কন্যার সুখী সংসার তাদের। সব সন্তানই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
সাংবাদিকতা: একজন নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন আবদুল কাদের মোল্লা। বর্ণাঢ্য জীবনের শেষ দৃশ্যে তিনি আমাদের কাছে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও জীবনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল সময়টা অতিবাহিত করেছেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে। গৌরব-সাফল্যের ধারাবাহিকতায় উদয়ন উচ্চ-বিদ্যালয়, রাইফেল পাবলিক স্কুল এবং মানারাত স্কুলের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮১ সালে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় সাব-এডিটর পদে যোগদান করেন তিনি। শিক্ষকতা পেশায় যে সত্যের পরশ পেয়েছিলেন, তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তিনি সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অত্যন্ত অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনি পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এ সময়ে তাঁর ক্ষুরধার ও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রকাশ হতে থাকে দেশের জাতীয় দৈনিকসমূহে। ‘বীক্ষণ’ ছদ্মনামে তার লেখা আর্টিকেলগুলো সচেতন পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে।
আবদুল কাদের মোল্লা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য ছিলেন। সাংবাদিকতা ও লেখালেখির পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন সাংবাদিকদের দাবি আদায়ের সংগ্রামে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালে পরপর দু’বার তিনি ঐক্যবদ্ধ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্তরে দ্রোহ আর বিপ্লবের চেতনা লালন করেও সদা হাস্যোজ্জল এ মানুষটি ছিলেন সাংবাদিক আড্ডার প্রাণ কেন্দ্র।
কিন্তু একজন সাংবাদিকের জীবন সাধারণভাবেই কুসুমাস্তীর্ণ হয় না। কখনো সমাজের বিপথগামী অংশ, কখনো কায়েমি স্বার্থান্বেষী মহল আবার কখনও বা প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক শক্তির রোষানলে পড়তে হয় তাকে। সত্য-মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্বে উৎসর্গিত হয় সাংবাদিকের জীবন। চারপাশের চেনাজন, পরিচিত বন্ধুমহল একসময়ে পরিণত হয় তার শত্রুতে। হানে প্রাণঘাতী ছোবল। যে ছোবলের রূপ হয় নানারকম। মানসিক যন্ত্রণায় বিপন্নতা, শারীরিক আঘাতে পঙ্গুত্ববরণ, প্রাণঘাতী হামলায় মৃত্যু, কারাবন্দীত্বের নিঃসঙ্গ যাতনা কিংবা প্রহসনের বিচারে জীবনাবসান। এসবই ছিল যুগে যুগে সাংবাদিক জীবনের অনিবার্য উপাদান। আবদুল কাদের মোল্লার জীবনেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।
সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় একসময় সাংবাদিকতার পেশাকে বিদায় জানাতে হয় তাঁকে। কিন্তু যে পেশা তার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে এর মহত্বকে তিনি ধারণ করতেন সবসময়।
লেখক কাদের মোল্লা: জনাব মোল্লা দেশ-বিদেশের সমসাময়িক বিষয়ের উপর একাধিক কলাম ও প্রবন্ধ লিখেছেন। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংগ্রাম, পালাবদল, মাসিক পৃথিবী, কলম ইত্যাদি নানা জায়গায় তার লেখা ছাপা হয়েছে। প্রত্যাশিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে দেশে-বিদেশে তিনি বিভিন্ন সেমিনার সিম্পোজিয়ামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে তার গুরুত্বপূর্ণ লেখা পাওয়া যায়। তার লেখা কলাম ও প্রবন্ধ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ও বস্তুবাদ ও কম্যুনিজমের উপরে তার বৈজ্ঞানিক সমালোচনা শিক্ষিত মহলের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় তিনি প্রথমে আবদুল কাদের নামে লেখা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি বীক্ষণ ছদ্মনামে লেখা শুরু করেন ও উনার লেখাগুলো খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, সমসাময়িক সমস্যা ইত্যাদি নানা বিষয়ে তার লেখা মানুষের চিন্তা-চেতনার জগতে ঢেউ তুলতে শুরু করে।
রাজনৈতিক জীবন: আবদুল কাদের মোল্লার রয়েছে সংগ্রামী রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যায়ন কালেই তিনি কম্যুনিজমের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি এ সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার পর তাফহীমুল কুরআনের হৃদয়স্পর্শী ছোঁয়ায় তিনি ইসলামের প্রতি প্রবলভাবে আকর্ষীত হন এবং আলোকিত জীবনের সন্ধান পেয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে তিনি ছাত্রসংঘের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান শাখায় যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে তিনি এ সংগঠনের সদস্য হন। ছাত্রসংঘের শহিদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি ও একই সাথে কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতের রুকন (সদস্য) হয়ে যান। তিনি অধ্যাপক গোলাম আযমের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি এবং ঢাকা মহানগরীর শূরা সদস্য ও কর্মপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অল্পদিনের ব্যবধানেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশ-এ-শূরার সদস্য হন। ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি ও পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালের প্রথম দিকে ঢাকা মহানগরীর নায়েবে আমীর, অতঃপর ১৯৮৭ সালে ভারপ্রাপ্ত আমীর এবং ১৯৮৮ সালের শেষ ভাগে তিনি ঢাকা মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তিনি জামায়াতের প্রধান নির্বাচনী মুখপাত্র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯১ সালে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও ২০০০ সালে জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মনোনীত হন। তিনি ২০০৪ সালের মার্চ মাসে স্বল্প সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। উক্ত দায়িত্বের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে তিনি চারদলীয় জোটের লিয়াজো কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশর প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা। বিশেষ করে ৯০এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। তখন কমিটিতে গৃহীত আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে ব্রিফিং করতেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম এবং তা বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করতেন আবদুল কাদের মোল্লা। এরই প্রেক্ষিতে বিএনপি দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাসহ উভয় দলের সিনিয়র নেত্রীবৃন্দের সাথে তিনি আন্দোলনের নীতি নির্ধারণী সভাতে মিলিত হতেন বলে জানা যায় ।
কারাবরণ: আবদুল কাদের মোল্লাকে বিভিন্ন মেয়াদে পাঁচবার জেলে যেতে হয়। আইয়ুব সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের দায়ে ১৯৬৪ সালে প্রথম বারের মত তিনি বাম রাজনীতিক হিসেবে গ্রেফতার হন। ১৯৭১ সালে তিনি আবার গ্রেফতার হন কিন্তু স্থানীয় জনতার বিক্ষোভের মুখে পুলিশ তাকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন কাস্টোডী থেকেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। জেনারেল এরশাদের শাসনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কারণে আবদুল কাদের মোল্লাকে আবারও আটক করে রাখা হয় ১৯৮৫ সালের ২২শে এপ্রিল থেকে ১৪ই আগস্ট। প্রায় চারমাস আটক থাকার পরে উচ্চ আদালত তার এ আটকাদেশকে অবৈধ ঘোষণা করলে তিনি মুক্ত হন। এরপর ১৯৯৬ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের সাথে একই দিনে গ্রেফতার হন। সাত দিন পরে তিনি মুক্ত হন। সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেট থেকে গ্রেফতার হন আবদুল কাদের মোল্লা।
কারাগারেও নির্যাতন: আবদুল কাদের মোল্লা ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করে বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করছে। তিনি বলেন, গত দু’দিন যাবৎ আমি আমার অসুস্থতার অতি জরুরি কোন ওষুধই পাচ্ছি না। এমনকি আমি কারাগারে ঠিকমতো নামাযও পড়তে পারছি না। কেন্দ্রীয় কারাগারে আমাকে ৬ নং সেলের এমন একটি কক্ষে নিয়ে রাখে যেখানে আমি নামাযও পড়তে পারছি না। এত ছোট একটি কক্ষে আমাকে রাখা হয়েছে যে সেখানে আমি রুকু সিজদাও ঠিকমতো আদায় করে নামায পড়তে পারছি না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোন প্রকার আগাম প্রস্তুতি ছাড়াই গতকাল ( বুধবার) আমাকে কাশিমপুর কারাগারে না নিয়ে কারাকর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আমাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (৬নং) সাধারণ বন্দীদের সেলে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে এমন এক কক্ষে নিয়ে রাখা হয়েছে যেখানে আমি প্রাকৃতিক কাজও সারতে পারছি না। এছাড়া আমার দীর্ঘ ২১ বছর যাবৎ ব্যবহৃত কোন ওষুধও আমি পাইনি। কেননা আমার সব ওষুধই রয়ে গেছে কাশিমপুর কারাগারে।
সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কাদের মোল্লার মামলায় প্রসিকিউশনের যুক্তি উপস্থাপনের আগে কাদের মোল্লা দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মাননীয় আদালত, আমার স্ত্রীকে এই সরকার গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। আমি আন্তরিকভাবে খুবই দুঃখিত এই জন্য যে আমি নিজে অত্যন্ত আবেগ নিয়ে আজ কিছু কথা আপনাদের বলছি। আমাকেও কর্তৃপক্ষ নানাভাবে নির্যাতন করছে। আমি ক্রমেই আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আজও আমাকে আবার সেন্ট্রাল জেলে যেতে হবে। অথচ আমার ব্যবহৃত সকল ওষুধপত্রই রয়ে গেছে আমি যেখানে ছিলাম সেই কাশিমপুর কারাগারে। গতকালও অনেকটা হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আমাকে আজকের বৃহস্পতিবারের হরতালের কারণে কাশিমপুরে না নিয়ে সেন্ট্রাল জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। আর আমাকে নির্ধারিত ডিভিশন সুবিধা না দিয়ে আমাকে রাখা হয়েছে সাধারণ বন্দিদের ৬ নং সেলে। অথচ আমাকে রাখার কথা ছিল ২৬ নং সেলে। কর্তৃপক্ষ সেই কাজটি না করে আমাকে কষ্ট দিয়েছে।
কাদের মোল্লা বলেন, মাননীয় আদালত আপনাদের নিকটে ছাড়াতো আমার কথা বলার কোন জায়গাও নেই। তাই বলছি, আমাকে যদি মেরে ফেলাই সরকারের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে গুলী করে মেরে ফেলুক। এত কষ্ট করা হচ্ছে কেন ? সরকারের আচরণ দেখে বুঝা যাচেছ এই সরকার আমাকে হয়তো মেরেই ফেলবে। তাই আমি আবারও বলবো আপনারা সবাই মিলে এত কষ্ট না করে গুলীর অর্ডার দিয়ে আমাকে মেরে ফেলুন।
মামলার ধারাক্রম: ২০১০ সালের ১৩ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের প্রধান গেট থেকে কাদের মোল্লাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ট্রাইব্যুনালে তদন্তকারী সংস্থার এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট কাদের মোল্লাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক রাখার আদেশ দেয়া হয়।
২০১২ সালের ৭ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। এরপর ২০১২ সালের ২৫ মার্চ দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ মামলাটি সেখানে স্থানান্তর করা হয়।
২০১২ সালের গত ২৮ মে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগের ঘটনায় চার্জ গঠন করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ৩ জুলাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ১২ জন এবং আসামী পক্ষে ছয় জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করে।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
২০১৩ সালের ৩১ মার্চ প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন এর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের আপিল বেঞ্চ গঠন করা হয় আপিল আবেদন শুনানির জন্য। ১ এপ্রিল থেকে শুনানি শুরু হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদ- দেয় কাদের মোল্লাকে। ৫ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ৮ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। এরপরই শুরু হয়ে যায় ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ : গত বছরের ৫ ডিসেম্বর আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়টি মোট ৭৯০ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ২৫২ পৃষ্ঠা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২২৭ পৃষ্ঠা এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী ৩১০ পৃষ্ঠা লিখেন।
যে অভিযোগে ফাঁসি হয় আব্দুল কাদের মোল্লার: রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ছয়টি অভিযোগ এনেছিল। ট্রাইব্যুনাল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দুইটি অভিযোগে যাবজ্জীবন, তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে কারাদ- এবং একটি অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছিল। আপিল বিভাগের রায়ে একটি যাবজ্জীবনের সাজা বাড়িয়ে আব্দুল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ- দিয়েছে। এ অভিযোগটি হল মিরপুরে কালাপানি লেনে হযরত আলী, তার ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে হত্যা ও মেয়েদের ধর্ষণের ঘটনা। এটি ছিল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ছয় নং অভিযোগ। এছাড়া ট্রাইব্যুনাল চার নং অভিযোগে কেরানীগঞ্জ ঘাটার চর হত্যাকা-ের অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছিল। আপিল বিভাগ খালাস বাতিল করে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের প্রদত্ত অপর একটি অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং তিনটি অভিযোগে ১৫ বছর করে দন্ড বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
ছয়টি অভিযোগে আব্দুল কাদের মোল্লার সাজা হয় ৪:১ ভিত্তিতে। অর্থাৎ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা আপিল বিভাগের ছয়টি সাজার ক্ষেত্রেই ভিন্ন মত এবং ভিন্ন রায় প্রদান করেন। ছয়টি অভিযোগের মধ্য থেকে পাঁচটি অভিযোগ থেকে তিনি আব্দুল কাদের মোল্লাকে সম্পূর্ণরূপে খালাস দেন। এগুলো হল মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লব হত্যা, মিরপুরে কবি মেহেরুন্নেসা হত্যা, মিরপুরে সাংবাদিক আইনজীবী খন্দকার আবু তালেব হত্যা, কেরানীগঞ্জে ঘাটারচর গণহত্যা এবং মিরপুর আলুবদি গণহত্যা। একটি অভিযোগ যথা মিরপুরে হযরত আলী পরিবার হত্যার অভিযোগে তিনি ট্রাইব্যুনালের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখেন।
আইনের পরিবর্তন: ২০১৩ সালের পাঁচ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজার রায় দেয়া হয়। এ রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনকারীদের দাবি আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিতে হবে। এ দাবির প্রেক্ষিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয় সরকার পক্ষের জন্য আপিলের বিধান রেখে। আইন সংশোধনের পর সরকার আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দাবি করে আপিল আবেদন করে।
ট্রাইব্যুনাল আইনে পূর্বের বিধান ছিল আসামী পক্ষ সাজার বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। আসামীর সাজা হলে রাষ্ট্রপক্ষের জন্য আপিলের বিধান ছিলনা। আসামীকে খালাস দেয়া হলে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের জন্য আপিলের বিধান ছিল। ১৮ ফেব্রুয়ারি আইন সংশোধন করে উভয় পক্ষকে আপিলের সমান সুযোগ দেয়া হয় এবং আইনের সংশোধনীকে ২০০৯ সাল থেকে কার্যকারিতা প্রদান করা হয়।
আইনের সংশোধনীর কারণে আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল শুনানি শেষ পর্যন্ত অ্যামিকাস কিউরি পর্যন্ত গড়ায়। এটিও ছিল এ মামলার অন্যতম একটি আলোচিত অধ্যায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি আইনের যে সংশোধন করা হয়েছে তা আব্দুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি-না জানতে চেয়ে ২০ জুলাই সুপ্রীম কোর্টের সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয় আপিল বিভাগ। এরা হলেন, সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, সাবেক এটর্নি জেনারেল প্রবীণ আইনবিদ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।
সাক্ষী জালিয়াতির অভিযোগ: ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর আব্দুল কাদের মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে সাক্ষী নিয়ে জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী প্রকৃত মোমেনা বেগমকে হাজির না করে তার স্থলে অপর এক মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে হাজির করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করেছে আব্দুল কাদের মোল্লার পরিবার। সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন মিলনায়তনে জনাকীর্ণ এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ উত্থাপন করেন আব্দুল কাদের মোল্লার স্ত্রী সানোয়ার জাহান।
রাষ্ট্রপক্ষের বিরুদ্ধে সাক্ষী নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগের পক্ষে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকৃত মোমেনা বেগমের ছবি মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে রক্ষিত আছে। মিরপুর জল্লাদখানা যাদুঘরে যে মোমেনা বেগমের ছবি রয়েছে তাকে হাজির করা হয়নি। তার স্থলে অপর মহিলাকে হাজির করা হয়েছে মোমেনা বেগম সাজিয়ে। তিনি বলেন, জল্লাদখানা যাদুঘরে রক্ষিত মোমেনা বেগমের ছবির সন্ধান পাওয়ার পরই তারা সাক্ষী নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে সানোয়ার জাহান দাবি করেন, সর্বশেষ আমরা জানতে পেরেছি যে, একমাত্র সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আমার স্বামীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে সেই মোমেনা বেগম আদৌ আদালতে সাক্ষী দিতেই আসেননি। ক্যামেরা ট্রায়ালের নামে গোপন বিচারে ভুয়া একজন মহিলাকে মোমেনা বেগম সাজিয়ে আদালতে বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে জল্লাদখানায় সংরক্ষিত প্রকৃত মোমেনা বেগমের ছবি দেখে আমাদের আইনজীবীরা নিশ্চিত করেছেন, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া মোমেনা বেগম প্রকৃত মোমেনা বেগম ছিলেন না। আমরা মনে করি, সংবিধান প্রদত্ত রিভিউ এর সুযোগ পেলে সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়গুলো তুলে ধরার মাধ্যমে আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদ-ের রায় পাল্টে যাওয়া সম্ভব।
গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন মিলনায়তনে জনাকীর্ণ এক সাংবাদিক সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে একই দাবি করা হয়।
১০ ডিসেম্বর ফাঁসি কার্যকরের চেষ্টা ব্যর্থ হয় যেভাবে: সরকারের নির্দেশে ১০ ডিসেম্বর রাতেই আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। রাত ৮টায় আত্মীস্বজনদের সাথে শেষ সাক্ষাতের জন্য জরুরি ভিত্তিতে তাদের চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠানো হয় ওই দিন। তার আগে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করে দেয়া হয় মহড়া। ছয়জন জল্লাদকে কারাগারে আনা হয়। ওই দিন জেল কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের দু’জন প্রতিমন্ত্রীও ঘোষণা করেন রাত ১২টা ১ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর করা হবে। কিন্তু ফাঁসি কার্যকরের মাত্র দেড় ঘণ্টা আগে চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ফাঁসি কার্যকর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করে আদেশ দেন।
আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিত করা এবং রিভিউ আবেদন নিয়ে রাতে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এর বাসায় যান আসামী পক্ষের আইনজীবীরা। সেখানে শুনানি শেষে পরদিন সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। ১০ ডিসেম্বর রাতে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এর বাসভবন থেকে বের হয়ে আব্দুল কাদের মোল্লার পক্ষে সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এবং তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের মৃত্যুদ- কার্যক্রম স্থগিত হওয়ার আদেশের বিষয়ে অবহিত করেন।
রিভিউ আবেদন শুনানি : রিভিউ আবেদনের বিষয়ে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ট্রাইব্যুনাল আইনে রিভিউ আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। এটি একটি বিশেষ আইন এবং বিশেষ আদালত। সংবিধানের ৪৭ ক (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবে না।’ তাই রিভিউ আবেদন চলতে পারে না বলে তিনি যুক্তি তুলে ধরেন।
অপর দিকে আবদুল কাদের মোল্লার প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংবিধানের ১০৫ ধারায় বলা হয়েছে ‘সংসদের যেকোন আইনের বিধানাবলীর-সাপেক্ষে এবং আপিল বিভ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন