20 Dec, 2014 বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক উন্নত করাই ওয়াশিংটনের লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেছেন বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা। সম্পর্কোন্নয়নের পথে বিভিন্ন বাধা আসবে বা মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হবে কিন্তু, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এর মধ্যদিয়েই সম্পর্ক আরও ভালো করা। শনিবার গুলশানের অ্যামেরিকান ক্লাবে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস আয়োজিত বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীর সাম্প্রতিক মার্কিন বিরোধী মন্তব্যের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন,'আমি মন্তব্যগুলো শুনেছি। এটা ঠিক আছে।'
এ প্রসঙ্গে মার্কিন রাজনীতিবিদ মার্টিন লুথার কিং এর মন্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, 'কিপ ইয়োর আইস অন দি প্রাইজ [সবসময় পুরস্কারের দিকে লক্ষ্য রাখ]। আমার দৃষ্টি হচ্ছে পুরস্কারের দিকে'।
'আমি বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক উন্নত করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমার কোনও অভিযোগ নাই,' বলেন তিনি।
মজিনা ২০১১ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রপতির কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিচয়পত্র হস্তান্তরের মাধ্যমে তার কার্যক্রম শুরু করেন। রাষ্ট্রদূত হিসেবে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে আগামীকাল নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়াতে পরিবারের সঙ্গে বড়দিন উদযাপন করে জানুয়ারি মাসে তিনি অবসরে যাচ্ছেন।
আগামী মাসের শেষের দিকে তার উত্তরসূরী মারসিয়া বারনিক্যাট ঢাকায় আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বিদায়ী সৌজন্য সাক্ষাত হবে কিনা সে বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমার কোনও ধারণা নেই।' মার্কিন দূতাবাস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মজিনার বিদায়ী সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য সময় নির্ধারণের অনুরোধ করেছিল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠায়। কিন্ত এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দফতর এই সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
মানুষের ধারণা জানুয়ারি ৫ নির্বাচনের সময় আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছিল, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,'আমরা কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দেইনা।'
জানুয়ারি ৫ নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়ন কী এ বিষয়ে তিনি বলেন,'আমরা আমাদের অবস্থান পরিবর্তন করিনি।'
যুক্তরাষ্ট্র ওই নির্বাচনের কঠোর সমালোচনা করে ৬ জানুয়ারি একটি বিবৃতি দেয়। এরপর বারনিক্যাট সিনেটে বাংলাদেশে তার পদায়ন শুনানির সময় মজিনা বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অবশ্যই একটি ভুল ছিল।
রাষ্ট্রদূত হিসাবে তার সবচেয়ে বড় সফলতা কী এ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াটাই তার সবচেয়ে বড় সফলতা। এখন এই সম্পর্ক একটি কাঠামোর মধ্যে চলে এসেছে এবং এটা এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন,'এটা একটা বিরাট সাফল্য।'
২০১২ সালে প্রাক্তন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সফরের সময় বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য একটি কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তার ধারাবাহিকতায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে তিনটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মজিনা বলেন, তিনি কোনও গরীব বাংলাদেশকে জানেন না। 'আমি শুধু চিনি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ'। বাংলাদেশের চারটি খাত-বস্ত্র, চামড়া, ঔষধ এবং তথ্য প্রযুক্তি-সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বস্ত্রশিল্প সম্পর্ক তিনি বলেন এই খাতে সামগ্রিক পরিবর্তন হচ্ছে এবং আমার বিশ্বাস এই পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বস্ত্র রফতানিতে প্রথম স্থান দখল করবে। সাভারে নতুন ভাবে স্থাপিত চামড়া পল্লীর সম্ভাবনা সম্পর্কে বলেন এখানে বানানো জুতা, ব্যাগ ও অন্যান্য চামড়াজাত দ্রব্য একসময় গোটা আমেরিকায় পাওয়া যাবে।
ঔষধ শিল্পের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ড্রাগ এজেন্সি থেকে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসবে। 'আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ঔষধ আমেরিকায় রফতানি হবে এবং এই ঔষধের ক্রেতা হবে আমার মতো গরীব মার্কিন জনগণ।'
একজন মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বানানো সফটওয়্যার উন্নয়নের খরচ ভারতের ব্যাঙ্গালুরু থেকে ৬০ শতাংশ কম। সেই ব্যবসায়ী বাংলাদেশে ১ হাজার জন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারকে চাকরি দেওয়া জন্য খুঁজেছিল, কিন্তু মাত্র ৪৫ জন সে সুযোগ নিতে পেরেছে।
'বাংলাদেশের জন্য এখন দরকার শিক্ষা বিপ্লব' জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে কারণ এখানে এখনও শিক্ষা বিপ্লব হয়নি।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন