এসব দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারীদের মধ্যে থাকেন ছাত্র, বেকার, পোশাক কারখানার শ্রমিক, মুদি দোকানি, দোকানের কর্মচারী। মোট কথায় বেশিরভাগই থাকেন সাধারণ জনতা।
ফলে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান চালানোর প্রয়োজনীয়তা কোথায়?
শুক্রবার বিকেল থেকে আজ (শনিবার) বিকেল পর্যন্ত বাংলাদেশসহ সমগ্রবিশ্বের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল রাজধানীর শাজাহানপুরে ওয়াসার পরিত্যক্ত পাইপের ভেতর আটকে থাকা শিশু জিহাদের উদ্ধারের অপেক্ষায়।
দুপুর আড়াইটার দিকে পাইপে শিশু জিহাদের অস্তিত্ব নেই ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রি. জেনারেল আহাম্মেদ আলী খান।
অথচ এই ঘোষণার মাত্র আধাঘন্টা পর বেলা ৩টায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুই দুঃসাহসিক পাম্প ক্লিনার রহমত ও ফারুক তাদের নিজস্ব স্ক্যাচার দিয়ে শিশু জিহাদকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাইপ থেকে বের করে আনেন।
বাংলাদেশের দুটি হৃদয়বিদারক ঘটনায় পেশাদার উদ্ধারকারীরা তেমন সফলতার মুখ না দেখলেও তাক লাগিয়ে দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী আনাড়ি উদ্ধারকর্মীরা।
দুটি ঘটনার একটি হল রানা প্লাজা ধস এবং অপরটি শাহজাহানপুরের শিশু জিহাদ উদ্ধার। দুটি ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবীদের তৎপরতা এবং সফলতা দেশবাসীর অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অগ্নিকাণ্ডসহ নানান ধরনের দুর্যোগের পর উদ্ধারকাজে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও পেশাদারদের চেয়ে এগিয়ে থাকেন স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মীরা।
এর চিত্র দেখা যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর, আইলা ও রানা প্লাজায় এবং সর্বশেষ শিশু জিহাদ উদ্ধার অভিযানে। পেশাগতরা উদ্ধার বিষয়ে নানান ধরনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলেও একেবারে প্রশিক্ষণবিহীন স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধার কর্মীদের কাজেই সফলতা দেখা যায়।
এমনকি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পিনাক-৬ ডুবে গেলে স্বেচ্চাসেবী উদ্ধারকারীরা অনেককে জীবিত এবং মৃত উদ্ধার করে। তাছাড়া সম্প্রতি সুন্দরবনের তেলবাহী টাঙ্কার সাউদার্ন স্টার-৭ ডুবির পরও ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েল অপসারণ করে স্থানীয়রা।
অন্যদিকে, গত বছরের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানাপ্লাজা ধসের উদ্ধারকাজে সরকারি বাহিনীর চেয়ে স্বেচ্ছাসেবীরা ব্যাপকভাবে প্রসংসিত হন। সে সময় উদ্ধারকাজে দগ্ধ হয়ে প্রাণ দেন স্বেচ্ছাসেবক উদ্ধারকর্মী ইজাজ উদ্দিন চৌধুরী কায়কোবাদ। পরে তাকে বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
এছাড়া আরো অনেকে নিজের জীবনবাজী রেখে উদ্ধার কাজে অংশ নেন। দুটি ঘটনাতেই স্থানীয়রা প্রশাষনের বিরুদ্ধে উদ্ধারে অভিযানে গাফলতির অভিযোগ আনেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন