16 Dec, 2014 সোহরাওয়ার্দী একদিন আইয়ুব খানকে বলেছিলেন আপনি পাকিস্তানের জনগণকে গোলাম বানিয়ে ফেলেছেন। আমার অবস্থান কী? বলেন তো আমি এখন কার নেতা। গোলামদের নেতা? আওয়ামী লীগ এখন মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার দোহাই দিয়ে আমাদের গোলাম বানিয়ে রেখেছে।
সোমবার বাংলাভিশনের ‘নিউজ এন্ড ভিউজ’ টকশোতে এ তথ্য জানান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ টকশোতে সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন আলোচক ছিলেন।
তিনি বলেন, প্রবাসী সরকারের একজন মন্ত্রীও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে ভারতের বাইরে যাননি। তারা তাকিয়ে থাকতেন ইন্দিরা গান্ধীর মুখের দিকে। মুক্তিযুদ্ধের কোনো আগাম প্রস্তুতিই ছিল না।
২৫ মার্চের কালো রাত্রি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, আমার চাচা শ্বশুর সে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাঙালি অফিসারদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র ছিলেন। তার নেতৃত্বেই যুদ্ধ হওয়ার কথা ছিল। চাকরিরত অবস্থায় মার্চে তাকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান আর্মি। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে তাকে আটক রাখা হয়েছিল।
মইনুল হোসেন বলেন, তিনি গ্রেপ্তার অবস্থায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে অনুরোধ করেন তাকে যেন একবারের জন্য ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে ধানমন্ডি যেতে দেওয়া হয়। বন্দী সেনা কর্মকর্তাকে কয়েক ঘণ্টার জন্য ধানমন্ডি যেতে দেয়া হয়। আমার চাচা শ্বশুর ধানমন্ডি গিয়ে কর্নেল (অব.) ওসমানীকে ডাকেন এবং জানান আমাকে ওরা বন্দী করেছে।
তিনি বলেন, চাচা শশুর ওসমানীকে বলেছিলেন, পাকিস্তান আর্মি যেকোনো সময় বাংলাদেশের মানুষের ওপর আক্রমণ চালাবে। আপনি এ খবর বঙ্গবন্ধুকে দেন এবং আগে একটা কিছু করতে বলেন। যদি আমরা আগে কিছু করতে পারি তাহলে পাকিস্তান বাহিনীর মনোবল দুর্বল হবে। এ তথ্য পাওয়ার পর ওসমানী ৩২ নম্বরে যান বঙ্গবন্ধুর কাছে। ওসমানী বঙ্গবন্ধুকে এ গোপন তথ্য জানিয়ে আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাঠে নামার ঘোষণা দেয়ার অনুরোধ করেন। সব শুনে বঙ্গবন্ধু বলেন, তুমি যাও। কখন কী করতে হয় আমি জানি। সময় হলে যা করার আমি করবো।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা সীমান্ত পার হয়ে গিয়েছিল তারা মনে করেন তারাই মুক্তিযোদ্ধা। দেশের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করলো সেটা তাদের কাছে কিছুই না। অথচ তারা দাবি করেন ‘৭১-এ জনযুদ্ধ হয়েছে। জনযুদ্ধতো জনগণের যুদ্ধ। গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা যুদ্ধ করলো তাদের খবর নেই।
তিনি বলেন, মার্চে দেশে জাতীয় পতাকা উঠানো হলো। কিন্তু যুদ্ধের সময় এই পতাকা উড়ানো নেতারা কোথায় ছিলেন? তারা তো যুদ্ধের মাঠে না গিয়ে ভারতে নিরাপদে ছিলেন। যুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকার গঠন করা হলো। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস এ সরকারের কোনো মন্ত্রী ভারতের বাইরে যাননি।
তিনি বলেন, পাক বাহিনীর নৃশংসতা তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়তে তারা কোথাও না গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ইন্দিরা গান্ধীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। গান্ধীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন সবাই। ‘৭১-এ যারা ওপাড়ে নিরাপদে ছিলেন তারা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে ভারতের সহায়তাকে বড় করে দেখতে অভ্যস্ত।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণের নির্বাচন হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী একদিন আইয়ুব খানকে বলেছিলেন আপনি পাকিস্তানের জনগণকে গোলাম বানিয়ে ফেলেছেন। আমার অবস্থান কী? বলেন তো আমি এখন কার নেতা। গোলামদের নেতা? আওয়ামী লীগ এখন মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার দোহাই দিয়ে আমাদের গোলাম বানিয়ে রেখেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, সাংবাদিকরা এখন কেউ আওয়ামী লীগ কেউ বিএনপি করেন। স্বাধীন সাংবাদিকতা কী আওয়ামী লীগ আর বিএনপির দল করে হয়? মানিক মিয়া, জহুর হোসেন, সালাম খানের কাছে আমাদের সাংবাদিকরা কি শিখলেন? সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, ফজলুল হকের কাছে নেতানেত্রীরা কী শিখলেন?
তিনি বলেন, কথায় কথায় দুই নেত্রীর দোহাই দেয়া হয়। এই দুই নেত্রী (শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া) দেশের রাজনীতি ধ্বংস করেছেন। একই কায়দায় তারা প্রতিটি সেক্টরে রাজনীতি ডুকিয়েছেন। শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারী সর্বত্র দলীয়করণ করেছেন। আমি কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে চাই না। দুই নেত্রী যা করছেন, বলছেন তা নিয়ে মাথা ঘামাই না।
ব্যরিস্টার মইনুল আরো বলেন, দুই নেত্রী রাজনীতিকে ব্যবসার পণ্যে পরিণত করেছেন। নিজেরা ব্যবসা করছেন। রাজনীতি এখন ব্যবসা। রাজনীতি করতে হলে গাড়ি-বাড়ি থাকতে হবে। আমরা কি শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়ার গোলামীর রাজনীতি করবো? আগে যারা রাজনীতি করেছেন তারা আদর্শের কথা বলতেন। সোহরাওয়ার্দীর মতো নেতার চিকিৎসা করার অর্থ ছিল না। তাদের ত্যাগের কথা আমরা ভুলে যাচ্ছি। গোলামির মানসিকতা, নতজানু ভাব শিক্ষিত মানুষের মধ্যে না থাকলে রাজনীতির এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
তিনি বলেন, নিরপেক্ষ ভোট করুক। শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়া কেউ নির্বাচিত হতে পারবেন না। তোষামোদ ও ব্যক্তিকে বড় করে দেখাকে গণতন্ত্র বলে না। অথচ সেটাই চলছে রাজনীতির নামে। আমাদের বিদ্যাবুদ্ধি নেই। দুদক-নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করলাম। কিন্তু কি দেখছি?
মইনুল বলেন, নেতানেত্রীরা কথায় কথায় অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেন। সহনশীলতা নেই, লাজ-লজ্জা নেই। এ জন্য মুখে যা আছে সেই অশ্রাভ্য ভাষা ব্যবহার করেন অবলিলায়। এ সরকার জনগণকে তোয়াক্কা করে না। সে জন্য তাদের প্রধান শক্তি দুর্নীতি। সে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপমন্ত্রী নিশা দেশাইকে দুই আনার মন্ত্রী রাষ্ট্রদূত মজিনাকে বাড়ির কাজের মেয়ের সঙ্গে তুলনা করেন। দেশ নিয়ে এদের ভবিষ্যৎ চিন্তা নেই শুধু পকেট ভারী করাই লক্ষ্য।
তিনি বলেন, সুন্দরবন নিয়ে উদ্বেগ নেই। কিভাবে আয় রোজগার করা যায় সেটা নিয়েই বেশি ব্যস্ত। আর ৫ জানুয়ারির আরেক ঘটনা। ভোট ছাড়াই সংসদে গিয়ে সরকারে থাকতে হবে বিরোধী দলেও থাকতে হবে। কী বিচিত্র। যার কারণে চরিত্র হননের রাজনীতি জেঁকে বসেছে। নতজানু থাকা মানে স্বাধীনতা নয়। আমরা ভারতের ব্যাপারে যে অবস্থায় রয়েছি তা গোলামী।
তিনি আরো বলেন, যারা চেতনার কথা বলছেন তাদের মুক্তি সংগ্রাম গেল কই? গণতন্ত্র হত্যা করে কি ‘নির্বাচিত’ হওয়া যায়। সরকার মনে করে জনগণ কিছুই নয়। প্রধানমন্ত্রীই সব। যার জন্য দুদক দুর্নীতি দমনের নামে তামাশা করছে। অন্যেরাও তাই।
উৎসঃ অনলাইন বাংলা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন