আমিনুল হক |
মানুষ কতটা মহৎ হতে পারে তা হয়ত অজানাই থেকে যেত যদি না আমার উস্তাজ ড. মুহাম্মদ উমরের সাথে দেখা হত। উনাকে নিয়ে এর আগেও লিখেছি। আবারও লিখতে বাধ্য হলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, (তোমরা যদি শোকরিয়া কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের আরো বাড়িয়ে দিব)।
১. গতকাল একসাথে কাজ করছিলাম দুজনে। কথায় কথায় আমার পায়ের তলায় ব্যাথার কথা শেয়ার করেছিলাম স্যারের সাথে। বলছিলাম, ডাক্তার ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, মলম দিয়েছে, কোনো কিছুতেই আরাম বোধ করছি না। উনি বললেন, ডাক্তার ভুল ওষুধ দিয়েছে। উনি একটা ওষুধ বের করে তখনি আমাকে খাওয়ালেন। নতুন এক বক্স ওষুধ দিলেন পরে খাওয়ার জন্য। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলেন কোন পানি পান কর তোমরা। আমি বললাম, বাসায় পানি ফুটিয়ে পান করি। গাড়ি না থাকার কারনে দোকান থেকে পানির গ্যালন কিনে আনা সম্ভব না। তিনি বললেন, তোমার রোগ সারাতে হলে দোকান থেকে ভালো ব্রান্ডের পানি কিনে পান করতে হবে। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে। আপনার আদেশ পালিত হবে ইনশাআল্লাহ........
২. কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা জামা কাপড় কি দিয়ে ধৌত কর? আমি বললাম, আল্লাহর দেয়া হাত আর সাবান। আরো বললাম, বউ খুব তাগাদা দিচ্ছে ওয়াশিং মেশিন ক্রয় করার জন্য। আমি তাঁকে কথা দিয়েছি অচিরেই কিনে দিব। কিন্তু অচিরেই করতে করতে আজ তিন বছর কেটে গেছে........
৩. আজ সকালে উস্তাজ ফোন করলেন...। বাবা তুমি কোথায় আছ। বাসায় নাকি বাইরে? আমি বললাম, বাসায় আছি। উনি বললেন আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসতেছি।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে, উস্তাজ এখনো আসছে না। ২.৩০ দিকে তিনি তাঁর গাড়িসহ হাজির হলেন। গাড়ি থেকে নেমে আমাকে গাড়ির কাছে আসার আদেশ করলেন। বললেন, আল আইন কোম্পানির এই পানির গ্যালনটা বাসায় রেখে আবার আস। আর মনে রেখ, এই কোম্পানির পানি ছাড়া আর কখনো অন্য কোনো পানি পান করবে না।
বাসায় পানি রেখে আবার গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি এলজি কোম্পানির বিশাল এক ওয়াশিং মেশিন। আমি তো আসমান থেকে পড়ে গেলাম। উস্তাজ বললেন, হতবাকের কি আছে। এটি আমার পক্ষ থেকে তোমাকে উপহার দিলাম। আমি রাগ করি এমন কোনো বাক্য তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই না এখন।
এরপর আমি তাঁকে বললাম, উস্তাজ একটু বাসায় আসেন। তিনি বললেন, ওয়াশিং মেশিন খোজার জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুরেছি। আমি এই কোম্পানির একটি ওয়াশিং মেশিন গত সাত বছর যাবত ধরে ব্যবহার করতেছি। কোনো সমস্যা করছে না। তাই আমি চেয়েছি হুবহু আমার মতই একটা তোমাকে একটা গিফট করি। এজন্য একটু দেরী হল।
আমার বাসায় এক কাপ চা পান করে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন তার বাসায়। উস্তাজকে বিদায় দিয়ে ভাবতে লাগলাম আসলেই এমন মানুষ এই যুগে পাওয়া বড় কষ্টকর। আল্লাহ তুমি আমাদেরকেও ভালো হওয়ার তাওফিক দাও.........
হে আল্লাহ আমার উস্তাজকে উত্তম প্রতিদান দান কর। আমীন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন